চিকিৎসা-দর্শন by ড. মাহফুজ পারভেজ
শিক্ষাজীবনে মেডিকেলের ছাত্রদের গ্রিক
দার্শনিক হিপোক্রেটিস নির্দেশিত শপথবাক্য পাঠ করতে হয়- ‘রোগীকে ভালোবেসে
চিকিৎসা করব, অবহেলা বা অবজ্ঞা করব না।
চিকিৎসার বিনিময়ে
মুনাফা অর্জনের চেষ্টা থেকে বিরত থাকব।’ হিপোক্রেটিস বিশ্বাস করতেন, সব
ধরনের চিকিৎসাই নিঃস্বার্থ এবং মানবসেবার অন্তর্গত। তার এই দার্শনিকতা
বোধকে সারা বিশ্ব মর্যাদা দিয়েছে। এবং চিকিৎসকদের মধ্যে গভীর মূল্যবোধ গড়ে
তুলতে চেয়েছে। চিকিৎসাশাস্ত্রের পড়ুয়া এবং পেশাদার চিকিৎসকেরা এই দর্শনকে,
এই নৈতিকতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন- এটাই একান্ত কাম্য। বিশ্বের এবং আমাদের
দেশের মহান চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের সামান্য অংশ আদর্শ দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম
হয়েছেন। আবার এ রকম চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান আকছার দেখা গেছে, যারা
আর্থিক মুনাফাকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে পরিসেবা আর সেবাধর্মকে অবমাননা
করছেন। এ প্রবণতা বিপজ্জনক। এতে রোগী, চিকিৎসক, চিকিৎসা ব্যবস্থার
আন্তঃসম্পর্কের অবনতি ঘটে। ডাক্তারদের ব্যাপারে অপবাদ, অভিযোগ ও গুজবের
রাস্তাও প্রশস্ত হয়।
এটা ঠিক, অর্থ ছাড়া কারও সংসার চলে না। চিকিৎসকেরও টাকার প্রয়োজন। তাই বলে প্রয়োজনের সঙ্গে প্রলোভনকে, মোহকে, আত্মসর্বস্বতাকে, অহঙ্কারকে জড়িয়ে ফেলা উচিত নয়। অসুখ নিয়ে নিরুপায় হয়ে মানুষ আমাদের কাছে আসে। একজন সুচিকিৎসককে তখন তাদের প্রাথমিক পরীক্ষার পর যথাসম্ভব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করতে হয়- ‘চিকিৎসকের প্রধান লক্ষ্য কী? অর্থ উপার্জন? রোগ নির্ণয়? রোগীর উপশম?’ একজন সুচিকিৎককে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে যথাযথ চিকিৎসা আর নিরাময়ের মাধ্যমে। পাশাপাশি এ অব্যক্ত সঙ্কল্প পোষণ করতে হবে, রোগী যেন হাসতে হাসতে বাড়ি ফেরেন। এ সঙ্কল্পের সঙ্গে যে নৈতিকতা জড়িত, তার নাম চিকিৎসা দর্শন। যে কোনও সহজ বা দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে না পারা মানেই চিকিৎসকের পরাজয়। একজন চিকিৎসক যখন চিকিৎসা করেন, তখন তিনি একই সঙ্গে যোদ্ধা এবং শান্তির প্রবক্তা। তার যুদ্ধ রোগীর সঙ্গে বা অর্থ উপার্জনের সঙ্গে নয়। রোগের সঙ্গে। নিরাময়কে আয়ত্তের আনবার জন্য। চিকিৎসা একই সঙ্গে চিকিৎসক নিজের এবং রোগীর মুখে হাসি ফোটায়। চিকিৎসা দর্শন রোগী ও চিকিৎসকের মুখে হাসি দেখতে চায়। সাফল্য, বিজয়, আনন্দের হাসি। প্রসঙ্গত, আরেকটি কথা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভালবাসা। চিকিৎসকের প্রধান দায়িত্ব রোগীকে, মানুষকে ভালোবাসা। গভীর ও নিঃস্বার্থ ভালবাসা। এটা শুধু চিকিৎসার নয়, যে কোনও পরিসেবার প্রথম ও প্রাথমিক শর্ত। যদি কাউকে ভালবেসে চিকিৎসা শুরু করা হয়, তাহলে অনতিবিলম্বে ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে সুন্দর ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। যে রোগী ডাক্তারকে আপনজন ভাবার সুযোগ পায়, তার রোগের উপশম অপেক্ষাকৃত সহজ। কেননা আস্থা আর ভরসা রোগীর আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয়। ওষুধ প্রয়োগে তার প্রাণশক্তি দ্রুত বেগে আরও বেড়ে যায়। মানসিক চিকিৎসায় আমাদের এসব ব্যাপার মমতার সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হয়।
বাংলাদেশের চিকিৎসা-ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে উপরের কথাগুলোকে মেলানো যায় না। তত্ত্বকথা আর বাস্তব মিলতে চায় না। নারী ও প্রসূতি স্বাস্থ্য, মানসিক ও মাদকাসক্তির চিকিৎসা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য চিকিৎসায় মায়া-মমতা কতটুকু দেখানো হচ্ছে, সে প্রশ্ন উঠছে। সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার আদার্শক ও মানবিক দিকটিও উপেক্ষিত হচ্ছে। ঢাকা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের দিকে তাকাতে শিউরে উঠতে হয়। পত্রিকার পাতায় প্রতিদিন ছাড়া হয় চিকিৎসাহীনতা ও অমানবিকতার শত ঘটনা। এই পরিস্থিতির অবসান হওয়া দরকার।
এটা ঠিক, অর্থ ছাড়া কারও সংসার চলে না। চিকিৎসকেরও টাকার প্রয়োজন। তাই বলে প্রয়োজনের সঙ্গে প্রলোভনকে, মোহকে, আত্মসর্বস্বতাকে, অহঙ্কারকে জড়িয়ে ফেলা উচিত নয়। অসুখ নিয়ে নিরুপায় হয়ে মানুষ আমাদের কাছে আসে। একজন সুচিকিৎসককে তখন তাদের প্রাথমিক পরীক্ষার পর যথাসম্ভব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করতে হয়- ‘চিকিৎসকের প্রধান লক্ষ্য কী? অর্থ উপার্জন? রোগ নির্ণয়? রোগীর উপশম?’ একজন সুচিকিৎককে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে যথাযথ চিকিৎসা আর নিরাময়ের মাধ্যমে। পাশাপাশি এ অব্যক্ত সঙ্কল্প পোষণ করতে হবে, রোগী যেন হাসতে হাসতে বাড়ি ফেরেন। এ সঙ্কল্পের সঙ্গে যে নৈতিকতা জড়িত, তার নাম চিকিৎসা দর্শন। যে কোনও সহজ বা দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে না পারা মানেই চিকিৎসকের পরাজয়। একজন চিকিৎসক যখন চিকিৎসা করেন, তখন তিনি একই সঙ্গে যোদ্ধা এবং শান্তির প্রবক্তা। তার যুদ্ধ রোগীর সঙ্গে বা অর্থ উপার্জনের সঙ্গে নয়। রোগের সঙ্গে। নিরাময়কে আয়ত্তের আনবার জন্য। চিকিৎসা একই সঙ্গে চিকিৎসক নিজের এবং রোগীর মুখে হাসি ফোটায়। চিকিৎসা দর্শন রোগী ও চিকিৎসকের মুখে হাসি দেখতে চায়। সাফল্য, বিজয়, আনন্দের হাসি। প্রসঙ্গত, আরেকটি কথা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভালবাসা। চিকিৎসকের প্রধান দায়িত্ব রোগীকে, মানুষকে ভালোবাসা। গভীর ও নিঃস্বার্থ ভালবাসা। এটা শুধু চিকিৎসার নয়, যে কোনও পরিসেবার প্রথম ও প্রাথমিক শর্ত। যদি কাউকে ভালবেসে চিকিৎসা শুরু করা হয়, তাহলে অনতিবিলম্বে ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে সুন্দর ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। যে রোগী ডাক্তারকে আপনজন ভাবার সুযোগ পায়, তার রোগের উপশম অপেক্ষাকৃত সহজ। কেননা আস্থা আর ভরসা রোগীর আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয়। ওষুধ প্রয়োগে তার প্রাণশক্তি দ্রুত বেগে আরও বেড়ে যায়। মানসিক চিকিৎসায় আমাদের এসব ব্যাপার মমতার সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হয়।
বাংলাদেশের চিকিৎসা-ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে উপরের কথাগুলোকে মেলানো যায় না। তত্ত্বকথা আর বাস্তব মিলতে চায় না। নারী ও প্রসূতি স্বাস্থ্য, মানসিক ও মাদকাসক্তির চিকিৎসা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য চিকিৎসায় মায়া-মমতা কতটুকু দেখানো হচ্ছে, সে প্রশ্ন উঠছে। সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার আদার্শক ও মানবিক দিকটিও উপেক্ষিত হচ্ছে। ঢাকা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের দিকে তাকাতে শিউরে উঠতে হয়। পত্রিকার পাতায় প্রতিদিন ছাড়া হয় চিকিৎসাহীনতা ও অমানবিকতার শত ঘটনা। এই পরিস্থিতির অবসান হওয়া দরকার।
mahfuzparvez@gmail.com
No comments