আমি কী ভাবছি সুয়োরানি-দুয়োরানির পালাবদল by নুরুল আলম আতিক
তারা ঝলমল ভুবনের মানুষেরা সব সময় ব্যস্ত
থাকেন নাটক-চলচ্চিত্রের কাজে। তাঁদের চিন্তাজগতে কত রঙের আলো খেলা করে?
জেনে নিন তারকাদের নিজের লেখায়...
আজ যে ঘুঁটেকুড়ানি কাল সে রাজরানি।
আজ যে ঘুঁটেকুড়ানি কাল সে রাজরানি।
আজ যে রাজা কাল সে পথের ফকির। রূপকথার গল্প নয় শুধু, জীবনেরও। প্রথম আলোর
গত ২ জুনে ছাপা দুটি সংবাদ বিনোদন জগতের সুয়োরানি আর দুয়োরানির কথা মনে
করিয়ে দিল। এরা সিনেমা আর টেলিভিশন। বিনোদন পাতায় ছিল নাটকের শিল্পী,
কলাকুশলী ও প্রযোজকদের এক সম্মিলনের খবর। প্রতিষ্ঠানের কাছে নানান দাবি।
নাটক দিন দিন তার অনন্যতা খুইয়ে দর্শক হারাচ্ছে, নাটকের মান নিম্নগামী,
বাজেটস্বল্পতা ইত্যাদি ইত্যাদি। সবকিছুর দাম বাড়ছে, কেবল টিভি প্রোডাকশনের
বাজেট বাড়ছে না বরং কমছে। বিষয়টা কষ্টের, বিষয়টা হতাশার। প্রায় একযুগের
একজন নির্মাণকর্মী হিসেবে ব্যথাতুর মনে এই সংবাদ পাঠ করি। আর ভাবি, প্রায়
একই ধরনের এতগুলো চ্যানেলের কি আদৌ দরকার ছিল? প্রিয় শিল্পীকে কেন একই
ভূমিকায় বারবার দেখতে হয়? পরিচালককে কেন একটাই গল্প বলতে হয়
চ্যানেলে-চ্যানেলে! বিনোদন-আলোয় ভুবন ভরিয়ে দেওয়ার বদলে কাজ ফেলে কেন এই
সভা করা?
এসবের উত্তর খোঁজার অবকাশ আমাদের হবে তো? সম্মিলনের সংগত দাবির প্রতি সমর্থনের হাত তুলেই বলছি, এই পরিণতির সঙ্গে নিজের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকাটুকু খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। টেলিভিশনের একটি ভিশন ছিল। সায়মন ড্রিং, ফরহাদ মাহমুদের মতো কিছু ভিশনারি মানুষের কল্যাণে একটি প্রজন্ম শিল্পমনস্ক নাটকের সম্ভাবনাকে সূচিত করতে পেরেছিলেন। চর্চায়, মননে জাগ্রত ছিল দর্শক ও শিল্পীর এই বিনোদন মেলা। আজ কেন সেই দর্শক মুখ ফিরিয়ে নেয়? টেলিভিশন কেন তার ভিশন হারাচ্ছে, তা তলিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে। আমাদের টেলিভিশন চলে বিজ্ঞাপনের পয়সায়। সে কারণেই নাটকে আমরা আর জীবনের বিজ্ঞাপন দেখি না। ক্ষণে ক্ষণে বিজ্ঞাপন, নাটকের সারাটা শরীরজুড়ে বিজ্ঞাপন। গল্পে, চরিত্রে, চরিত্রায়ণে, নির্মাণে, সর্বত্র বিজ্ঞাপন। নির্মাণকর্মীকেও তাই হতে হয় শিয়ালের মতো চালাক, একই কুমিরছানাকে বারবার দর্শকের সামনে হাজির করা। শিল্প-নির্মাণের আকাঙ্ক্ষার বীজ ধানটুকু তাকে খেয়ে ফেলতে হয়। স্বপ্নের পুষ্পোদ্যান তাই আগাছায় ভরে থাকে। ভরে থাকে অযোগ্যের অহেতুক ভিড়ে। নির্মম কথাটি হলো, টেলিভিশনে আজ আর ‘ডিরেক্টর’-এর প্রয়োজন পড়ে না, দরকার শুধু একজন ‘অ্যারেঞ্জার’-এর।
কেন হলো এসব? টেলিভিশনের কর্তব্যক্তিরাই বা কারা? কী তাদের অভিলাষ? প্রিয় সহকর্মীরা, অভিযোগের তর্জনী অন্যের দিকে তোলার আগে আয়নায় নিজের মুখখানি একবার দেখে নিন। জেনে নিন, সর্বনাশের এই উৎসবে আপনার নিজের ভূমিকাটুকু। জানি, বিষয়টা এত সহজ নয়। জটিল বলেই তাকে পাশ কাটিয়ে কোন সমাধানও সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত লাভের বর্তমানটুকু সামলে নেওয়ার রীতি বন্ধ হোক, সম্মিলনের আকাঙ্ক্ষা হোক আগামীর, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটি সুন্দর বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে নেওয়ার শুভকামনায়। ভবিষ্যৎ বিনোদন টেকনোলজির যে ধরনের পরিবর্তন সারা দুনিয়ায় ঘটতে যাচ্ছে, তার ইশারা থেকে বলছি, টেলিভিশনের ভবিষ্যৎ ভালো। টেলিভিশনের কর্তারা নিশ্চয়ই সে খবর জানেন।
২.
সার্কাসের বাঘ বুড়িয়ে গেলে ভয় পায় না ছোট্ট শিশুটিও। এদিকে নিত্যনতুন চমক নিয়ে হাজির হচ্ছেন নবীন ম্যাজিশিয়ান। এবার বলছি দুয়োরানির কথা। একই দিনে মুদ্রিত আরেকটি খবর, সিনেমার নতুন প্রস্তাবনা। কয়েক শ ডিজিটাল সিনেমা হল নির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কর্ণধার আবুল খায়ের। আরও খবর হলো—নবীন নির্মাতাদের সিনেমায় অর্থায়ন। প্রতিবছর প্রায় কুড়িটি ছবি নির্মানের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলেন তিনি। বানাবেন এ দেশের যেকোনো যোগ্য তরুণ নির্মাতা। এ দেশের সিনেমার দীর্ঘ সংকটের কালে বেঙ্গলের এই প্রকল্পটি নির্মাতা, দর্শক সবার জন্যেই একটি বড় খবর। প্রয়োজনীয় এই উদ্যোগকে এ দেশের অগুনতি নবীন নির্মাতাদের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই। এর সাফল্য কামনা করি। তবে শুভকামনাতেই সীমিত থাকলে চলবে না, আবারও মনে রাখা প্রয়োজন নিজের ভূমিকাটুকু। কিন্তু, নবীন নির্মাতারা, এত যে হাহাকার করি টাকা নাই টাকা নাই, প্রোজেকশন সিস্টেম নাই, প্রযোজক নাই...এখন সিনেমাটা হবে তো? হতে হবে। কারণ, এটা সময়ের দাবি। শুধু ফরম্যাট নিয়ে কিছু টার্মস আর টার্মিনোলজি আউড়ে ছবি বানাচ্ছি—এই ভঙ্গিতেই যেন ফুরিয়ে না যায় সব উদ্যম। ডিজিটাল টেকনোলজির ব্যাপারটা স্পষ্ট করে বুঝে নেওয়ার সঙ্গে জেনে রাখা প্রয়োজন, আমাদের এতদিনকার সিনেমার অর্জন-বিসর্জনের সবটা।
নবীন নির্মাতা আপনি প্রস্তুত তো? নিজের পুুরোনো কথাটা আবার বলি—
প্রথমত: সময় নাই।
দ্বিতীয়ত: এখনই সময়।
তৃতীয়ত: তুমি না থাকলেও ব্যাপারটা ঘটবে, তবু তোমাকেই চাই।
চতুর্থত: আসুন নতুন-ছবি-নির্মাতা, ফের পায়ে পায়ে রচনা করে নিই নিজস্ব পথটুকু।
এসবের উত্তর খোঁজার অবকাশ আমাদের হবে তো? সম্মিলনের সংগত দাবির প্রতি সমর্থনের হাত তুলেই বলছি, এই পরিণতির সঙ্গে নিজের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকাটুকু খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। টেলিভিশনের একটি ভিশন ছিল। সায়মন ড্রিং, ফরহাদ মাহমুদের মতো কিছু ভিশনারি মানুষের কল্যাণে একটি প্রজন্ম শিল্পমনস্ক নাটকের সম্ভাবনাকে সূচিত করতে পেরেছিলেন। চর্চায়, মননে জাগ্রত ছিল দর্শক ও শিল্পীর এই বিনোদন মেলা। আজ কেন সেই দর্শক মুখ ফিরিয়ে নেয়? টেলিভিশন কেন তার ভিশন হারাচ্ছে, তা তলিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে। আমাদের টেলিভিশন চলে বিজ্ঞাপনের পয়সায়। সে কারণেই নাটকে আমরা আর জীবনের বিজ্ঞাপন দেখি না। ক্ষণে ক্ষণে বিজ্ঞাপন, নাটকের সারাটা শরীরজুড়ে বিজ্ঞাপন। গল্পে, চরিত্রে, চরিত্রায়ণে, নির্মাণে, সর্বত্র বিজ্ঞাপন। নির্মাণকর্মীকেও তাই হতে হয় শিয়ালের মতো চালাক, একই কুমিরছানাকে বারবার দর্শকের সামনে হাজির করা। শিল্প-নির্মাণের আকাঙ্ক্ষার বীজ ধানটুকু তাকে খেয়ে ফেলতে হয়। স্বপ্নের পুষ্পোদ্যান তাই আগাছায় ভরে থাকে। ভরে থাকে অযোগ্যের অহেতুক ভিড়ে। নির্মম কথাটি হলো, টেলিভিশনে আজ আর ‘ডিরেক্টর’-এর প্রয়োজন পড়ে না, দরকার শুধু একজন ‘অ্যারেঞ্জার’-এর।
কেন হলো এসব? টেলিভিশনের কর্তব্যক্তিরাই বা কারা? কী তাদের অভিলাষ? প্রিয় সহকর্মীরা, অভিযোগের তর্জনী অন্যের দিকে তোলার আগে আয়নায় নিজের মুখখানি একবার দেখে নিন। জেনে নিন, সর্বনাশের এই উৎসবে আপনার নিজের ভূমিকাটুকু। জানি, বিষয়টা এত সহজ নয়। জটিল বলেই তাকে পাশ কাটিয়ে কোন সমাধানও সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত লাভের বর্তমানটুকু সামলে নেওয়ার রীতি বন্ধ হোক, সম্মিলনের আকাঙ্ক্ষা হোক আগামীর, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটি সুন্দর বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে নেওয়ার শুভকামনায়। ভবিষ্যৎ বিনোদন টেকনোলজির যে ধরনের পরিবর্তন সারা দুনিয়ায় ঘটতে যাচ্ছে, তার ইশারা থেকে বলছি, টেলিভিশনের ভবিষ্যৎ ভালো। টেলিভিশনের কর্তারা নিশ্চয়ই সে খবর জানেন।
২.
সার্কাসের বাঘ বুড়িয়ে গেলে ভয় পায় না ছোট্ট শিশুটিও। এদিকে নিত্যনতুন চমক নিয়ে হাজির হচ্ছেন নবীন ম্যাজিশিয়ান। এবার বলছি দুয়োরানির কথা। একই দিনে মুদ্রিত আরেকটি খবর, সিনেমার নতুন প্রস্তাবনা। কয়েক শ ডিজিটাল সিনেমা হল নির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কর্ণধার আবুল খায়ের। আরও খবর হলো—নবীন নির্মাতাদের সিনেমায় অর্থায়ন। প্রতিবছর প্রায় কুড়িটি ছবি নির্মানের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলেন তিনি। বানাবেন এ দেশের যেকোনো যোগ্য তরুণ নির্মাতা। এ দেশের সিনেমার দীর্ঘ সংকটের কালে বেঙ্গলের এই প্রকল্পটি নির্মাতা, দর্শক সবার জন্যেই একটি বড় খবর। প্রয়োজনীয় এই উদ্যোগকে এ দেশের অগুনতি নবীন নির্মাতাদের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই। এর সাফল্য কামনা করি। তবে শুভকামনাতেই সীমিত থাকলে চলবে না, আবারও মনে রাখা প্রয়োজন নিজের ভূমিকাটুকু। কিন্তু, নবীন নির্মাতারা, এত যে হাহাকার করি টাকা নাই টাকা নাই, প্রোজেকশন সিস্টেম নাই, প্রযোজক নাই...এখন সিনেমাটা হবে তো? হতে হবে। কারণ, এটা সময়ের দাবি। শুধু ফরম্যাট নিয়ে কিছু টার্মস আর টার্মিনোলজি আউড়ে ছবি বানাচ্ছি—এই ভঙ্গিতেই যেন ফুরিয়ে না যায় সব উদ্যম। ডিজিটাল টেকনোলজির ব্যাপারটা স্পষ্ট করে বুঝে নেওয়ার সঙ্গে জেনে রাখা প্রয়োজন, আমাদের এতদিনকার সিনেমার অর্জন-বিসর্জনের সবটা।
নবীন নির্মাতা আপনি প্রস্তুত তো? নিজের পুুরোনো কথাটা আবার বলি—
প্রথমত: সময় নাই।
দ্বিতীয়ত: এখনই সময়।
তৃতীয়ত: তুমি না থাকলেও ব্যাপারটা ঘটবে, তবু তোমাকেই চাই।
চতুর্থত: আসুন নতুন-ছবি-নির্মাতা, ফের পায়ে পায়ে রচনা করে নিই নিজস্ব পথটুকু।
No comments