জঙ্গী অর্থায়ন ও মার্কিন তদন্ত রিপোর্ট by শাহীন রেজা নূর
মার্কিন সিনেটের তদন্ত বিষয়ক স্থায়ী সাব কমিটির এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে বাংলাদেশের ও বিদেশের কোন্ কোন্ প্রতিষ্ঠান জড়িত সে সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এই তদন্ত বিষয়ক সাব কমিটি কংগ্রেসের ওয়াচডগ হিসেবে সুবিদিত।
গত ১৭ জুলাই প্রকাশিত এর প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের দু’টি ব্যাংক যথা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে স¤পৃক্ত। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই দু’টি ব্যাংক জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত রয়েছে এমন তথ্য-প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশ ব্যাংকিং জায়ান্ট হিসেবে পরিচিত এইচএসবিসি ঐ দু’টি ব্যাংককে ডলার সরবরাহ করেছে। এইচএসবিসি’র নিজস্ব তদন্ত গ্রুপ ঐ দুই ব্যাংকের জঙ্গী কানেকশন স¤পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইতোপূর্বেই তথ্য-প্রমাণ প্রদানপূর্বক ঐ দু’টি ব্যাংকের সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়গুলো আরও কঠোর নজরদারিতে রাখার সুপারিশ করা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তা করেনি। এইচএসবিসি ব্যাংকের এই গাফিলতি রীতিমত বিস্ময়কর! উল্লেখ্য, তদন্তে দেখা গেছে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের মালিকানা স্বত্ব দু’টি জঙ্গী সংগঠনের কর্তৃত্বাধীনে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত প্রতিবেদনটিতে যা বলা হয়েছে তা রীতিমত পিলে চমকাবার মতো খবরই বটে! ঐ রিপোর্ট সন্দেহভাজন অর্থ লেনদেনের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে এইচএসবিসি’র অভ্যন্তরীণ পরিচালনা বিভাগের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সৌদি আরবের আল রাজি ব্যাংকও সন্দেহজনক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত বলে ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: যখন এইচএসবিসি’র যুক্তরাষ্ট্র শাখায় একটি ইউএস ডলার এ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন করেছিল তখন ব্যাংকটিতে সোদি আল রাজি ব্যাংকের শতকরা ৩৭ ভাগ মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে আল রাজি ব্যাংক সম্পৃক্ত রয়েছে আর ইসলামী ব্যাংকে এমন এক বাংলাদেশীর এ্যাকাউন্ট রয়েছে যার বিরুদ্ধে আছে সন্ত্রাসী বোমা হামলার অভিযোগ। উল্লেখ্য, জঙ্গীদেরকে ব্যাংকিং সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধ বিষয়ক আইন-কানুন লঙ্ঘনের দায়ে ইসলামী ব্যাংককে ইতোমধ্যেই তিনবার জরিমানা করা হয়েছে।
মার্কিন সিনেটের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সৌদি আল রাজি ব্যাংক বাংলাদেশের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে একটি করেসপনডেন্স এ্যাকাউন্ট খোলার বন্দোবস্ত করে। সৌদিভিত্তিক এনজিও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশন (আইআইআরও) বহু বছর এর একক বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার ছিল। এই ত্রাণ সংস্থাটিকে মার্কিন প্রশাসন জঙ্গী অর্থায়নের জন্য চিহ্নিত করে এবং যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোন প্রকার লেনদেন বা ব্যবসা-বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা হয়। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দ্বিতীয় শেয়ারহোল্ডার হচ্ছে ইসলামী দাতব্য সংস্থা হিসেবে পরিচিত সংগঠন লাযনাত আল বীর আল ইসলাম। এটি বেনিভোলেন্স ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন(বিআইএফ) নামেও পরিচিত। মার্কিন প্রশাসন সংস্থাটিকেও জঙ্গীদের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে শনাক্ত করেছে এবং এর সঙ্গে মার্কিন নাগরিকদের সকল প্রকার লেনদেনও নিষিদ্ধ করেছে। আল কায়েদাকে যে প্রধান ২০ টি সংগঠন অর্থ যোগান দিয়েছে তাদের মধ্যেও এটি একটি। আন্তর্জাতিক ইসলামী ত্রাণ সংস্থার এ্যাকাউন্ট এই দুই ব্যাংকেই রয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান দুই শেয়ারহোল্ডার ইসলামী ত্রাণ সংস্থা এবং বিআইএফ জঙ্গীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঐ ত্রাণ সংস্থাটি প্রত্যক্ষভাবে আল কায়েদা ও এর কয়েকটি অঙ্গসংগঠনকে অর্থ যোগান দিয়েছে। ওসামা বিন লাদেনের শ্যালক মোহাম্মদ জামাল হালিফা এই ত্রাণ সংস্থার ফিলিপিন্স শাখার প্রধান ছিলেন।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ তিনটি ব্যাংকের একটি। এর শতকরা ষাট ভাগ শেয়ারের মালিক হয় কোন সৌদি প্রতিষ্ঠান অথবা কোন সৌদি নাগরিক। আরব, কুয়েত এবং কাতারও এই ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশস্থ সৌদি রাষ্ট্রদূত আল ফুয়াদের উদ্যোগে ঢাকায় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে ব্যাংকটি বাংলাদেশের ইসলামী জঙ্গী এবং জামায়াতে ইসলামীর অর্থনৈতিক মেরুদ-ে পরিণত হতে থাকে। জামায়াতে ইসলামীর ছত্রছায়ায় বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদের প্রসার ঘটেছে। ইসলামী জঙ্গীবাদ প্রসারিত হবার পেছনে তাদের অর্থনৈতিক মদদদাতা, সমর্থক ও সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের নিকট থেকে প্রাপ্ত আর্থিক সহযোগিতাই প্রধান ভূমিকা পালন করছে এতে কোন সন্দেহই নেই। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রসার অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়ে চলেছে। এতে করে জঙ্গী অর্থায়নের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে অনেক বেশি। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধির হার শতকরা প্রায় ২০ ভাগ যা দেশের গোটা ব্যাংক ব্যবস্থার গড় হারের দ্বিগুণ। ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রমের কিছু দিক এইচএসবিসিসহ বিভিন্ন বহুজাতিক ব্যাংককেও আকৃষ্ট করেছে। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক এইচএসবিসি’র দুই ডজন এ্যাফিলিয়েটেড কাস্টমার।
এইচএসবিসি’র গোয়েন্দা রিপোর্টে দেখা যায়, জঙ্গী সংগঠন জমিয়তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান ও তার দক্ষিণ হস্ত হিসেবে পরিচিত সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়েরও এ্যাকাউন্ট ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে। শায়খ রহমান, বাংলাভাই ও অপর ৬ জেএমবি নেতাকে ২০০৭ সালে দুই বিচারককে হত্যার দায়ে মৃত্যুদ- প্রদান ও তা কার্যকর করা হয়। জেএমবি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রকে শয়তানের সৃষ্ট ব্যবস্থা বলে অভিহিত করে দেশে আল্লাহ্র শাসন বা ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত। যাহোক, ইতোপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের ২টি শাখা সন্দেহজনক অর্থ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে এমন প্রমাণ পায় এবং এই লেনদেনের তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে ব্যর্থ হওয়ায় ঐ ব্যাংকের ২০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেয়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টে সারা দেশের ৬৫টি জেলার মধ্যে ৬৪ টিতে জঙ্গীরা সিরিজ বোমা হামলা চালালে জঙ্গীদের ধর্মীয় উন্মাদনাপূর্ণ অপতৎপরতার বিষয়টি সকলের নজরে পড়ে। এক্ষেত্রে জেএমবি এবং ইসলামী ব্যাংকের কার্যকলাপের ওপর ব্যাপক নজরদারির প্রয়োজন পড়ে। ইসলামী ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত এমন তথ্য যখন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তখন একে হাল্কাভাবে নেয়ার কোন কারণ থাকতে পারে কি! একটি দেশের কাউন্টার টেররিজমের তালিকায় জঙ্গী অর্থায়নের বিষয়টি যে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবার দাবি রাখে তা তো বলাই বাহুল্য! এইচএসবিসি ব্যাংকের যুক্তরাষ্ট্র শাখার অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগে বাংলাদেশের এই ব্যাংক দু’টি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে, সন্দেহজনক এমন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে অর্থ পাচার করে চলেছে। শুধু তাই নয়, ইসলামী ব্যাংক জামায়াতে ইসলামীর জন্য বিদেশ থেকে অর্থ পাচারের সুযোগ ও সুবন্দোবস্ত করে দিয়েছে। বিদেশ থেকে ঐ অর্থ এনে জামায়াত তা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী এ জন্য ইসলামিক ব্যাংক ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন চালু করেছে যা ইসলামিক ব্যাংকের সকল প্রকল্প তদারক করে থাকে। এসব প্রকল্প থেকে অর্জিত মুনাফা এবং বিদেশী অনুদান থেকে লব্ধ কমিশন বা সুদ ইসলামী ব্যাংকের ঐ ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের এ্যাকাউন্টে জমা হয়। ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের প্রধান হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর কার্যকরী কমিটির সদস্য ও সৌদিভিত্তিক ইসলামী এনজিও রাবেতা-আল-আলম-আল-ইসলামীর কান্ট্রি ডিরেক্টর মীর কাশেম আলী। উল্লেখ্য, এনজিওটি বাংলাদেশে জামায়াতের কয়েকটি প্রকল্পে অর্থের যোগান দিয়ে থাকে আর মীর কাশেম আলীই আসলে জামায়াতে ইসলামীর অর্থ বিষয়ক কর্মকা-ের মূল নায়ক। বর্তমানে সে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
যাহোক, ২০০৭-এর দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার পর কুয়েতভিত্তিক আন্তর্জাতিক ইসলামী এনজিও রিভাইভ্যাল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটির কার্যক্রম নজরদারির আওতায় আনা হয় এবং ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় এই এনজিওর এ্যাকাউন্টটিতে ২০০৬ সালে কিছু অনিয়ম প্রাপ্তির দরুন তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ঐ এ্যাকাউন্ট থেকে গোয়েন্দারা জঙ্গী অর্থায়নের সুনির্দিষ্ট প্রমাণপঞ্জি উদ্ধার করেন তখন। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, ২০০৫’র নবেম্বরে ঐ এ্যাকাউন্ট থেকে ২ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছিল বাংলাদেশে আত্মঘাতী বোমা হামলার সূত্রপাত ঘটাবার উদ্দেশ্যে। তদন্তে বাংলাদেশী গোয়েন্দারা দেখতে পান যে, কুয়েতের ঐ এনজিও’র দু’জন কর্মকর্তা দেশী ও বিদেশী জঙ্গীদের ৭ লাখ ডলার ঐ ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: বাংলাদেশে কিছুকাল যাবৎ শরীয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং করে চলেছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকটি ভারতে কিছু যোগাযোগ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অবাঞ্ছিত ও সন্দেহজনক কার্যকলাপের কারণে এই ব্যাংকের কার্যকরী ভাইস প্রেসিডেন্ট শওকত আলীকে কলকাতা পুলিশ ২০০৬’র আগস্টে গ্রেফতারের পর কলকাতা থেকে বহিষ্কার করে। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে কলকাতায় অর্থ পাচার এবং সেখান থেকে ভারতের অন্যত্র ও ভারতের বাইরে জঙ্গীদের কাছে তা প্রেরণের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাংকটির যারা প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারা মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দা বলে জানা যায়।
সৌদিভিত্তিক অপর এনজিও আল হারমাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশনটি আল কায়েদার অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত। সংস্থাটি ঢাকায় এর কার্যালয় স্থাপন করেছিল ও ঢাকাস্থ আল্-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন চালাত। এই এনজিওর অর্থের প্রধান যোগানদার হচ্ছে সৌদি রাজপরিবারের সদস্যবৃন্দ। সৌদি আরবে সম্প্রতি বোমা হামলা এবং সৌদি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এর নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দেবার প্রেক্ষিতে এর তৎপরতা গভীর নজরদারির আওতায় আনা হয়। অতঃপর সৌদি সরকার আল-হারামাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে নিষিদ্ধকরণ এবং এর সকল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ও যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াফত করার অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে তদন্ত করে জানতে পারে যে, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের রংপুর ও কক্সবাজার শাখা থেকে কেবলমাত্র টেলিফোন বার্তার মাধ্যমেই আল হারামাইনের বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে। টেলিফোনে বার্তা পাবার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায়।
বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও অন্যসব ইসলামী ব্যাংকই তথাকথিত কতিপয় ধর্মীয় নেতা সমন্বয়ে গঠিত শূরা কাউন্সিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশে পরিচালিত হয়। অথচ, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সুনির্দিষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে, সকল ইসলামী ব্যাংক পরিচালিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত একটি গবর্নিং বডি দ্বারা। ২০০৬ সালে বিএনপি’র শরিক হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালে জামায়াতে ইসলামীর উপর্যুপরি চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে পূর্বোক্ত নির্দেশনামা শিথিল করে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের নতুন গাইডলাইন জারির মাধ্যমে গবর্নিং বডি এবং শূরা কাউন্সিল উভয়েরই বিধান বলবৎ করে। বর্তমানে দেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে আলাদা কোন গাইডলাইন নেই। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অর্থ পাচার রোধ বিষয়ক আইন প্রণয়ন এবং জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধের পাশাপাশি এসব বিষয়ে নজরদারি জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে যে, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০৬ সালে দেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে পরিচিত রূপালী ব্যাংককে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেবার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। তখন প্রায় দু’শ’ কোটি ডলার মূল্যমানের ব্যাংকটি সৌদি প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদ বাংলাদেশে ৬ শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগের শর্তে কেনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থপ্রদানের শর্ত পূরণে গড়িমসি করায় সামরিক সমর্থনপুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রিন্সের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি বাতিল করে দেয়। অবশ্য, এই চুক্তি বাতিলের দরুন সম্ভবত উপমহাদেশে ইসলামী জঙ্গীবাদকে চাঙ্গা করতে অডিট ছাড়া সৌদি অর্থ সরাসরি ও নিয়মবহির্ভূতভাবে জঙ্গীদের হাতে পৌঁছাবার পরিকল্পনাটি শেষতক ভেস্তে গিয়েছিল!
মার্কিন সিনেটের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সৌদি আল রাজি ব্যাংক বাংলাদেশের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে একটি করেসপনডেন্স এ্যাকাউন্ট খোলার বন্দোবস্ত করে। সৌদিভিত্তিক এনজিও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশন (আইআইআরও) বহু বছর এর একক বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার ছিল। এই ত্রাণ সংস্থাটিকে মার্কিন প্রশাসন জঙ্গী অর্থায়নের জন্য চিহ্নিত করে এবং যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোন প্রকার লেনদেন বা ব্যবসা-বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা হয়। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দ্বিতীয় শেয়ারহোল্ডার হচ্ছে ইসলামী দাতব্য সংস্থা হিসেবে পরিচিত সংগঠন লাযনাত আল বীর আল ইসলাম। এটি বেনিভোলেন্স ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন(বিআইএফ) নামেও পরিচিত। মার্কিন প্রশাসন সংস্থাটিকেও জঙ্গীদের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে শনাক্ত করেছে এবং এর সঙ্গে মার্কিন নাগরিকদের সকল প্রকার লেনদেনও নিষিদ্ধ করেছে। আল কায়েদাকে যে প্রধান ২০ টি সংগঠন অর্থ যোগান দিয়েছে তাদের মধ্যেও এটি একটি। আন্তর্জাতিক ইসলামী ত্রাণ সংস্থার এ্যাকাউন্ট এই দুই ব্যাংকেই রয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান দুই শেয়ারহোল্ডার ইসলামী ত্রাণ সংস্থা এবং বিআইএফ জঙ্গীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঐ ত্রাণ সংস্থাটি প্রত্যক্ষভাবে আল কায়েদা ও এর কয়েকটি অঙ্গসংগঠনকে অর্থ যোগান দিয়েছে। ওসামা বিন লাদেনের শ্যালক মোহাম্মদ জামাল হালিফা এই ত্রাণ সংস্থার ফিলিপিন্স শাখার প্রধান ছিলেন।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ তিনটি ব্যাংকের একটি। এর শতকরা ষাট ভাগ শেয়ারের মালিক হয় কোন সৌদি প্রতিষ্ঠান অথবা কোন সৌদি নাগরিক। আরব, কুয়েত এবং কাতারও এই ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশস্থ সৌদি রাষ্ট্রদূত আল ফুয়াদের উদ্যোগে ঢাকায় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে ব্যাংকটি বাংলাদেশের ইসলামী জঙ্গী এবং জামায়াতে ইসলামীর অর্থনৈতিক মেরুদ-ে পরিণত হতে থাকে। জামায়াতে ইসলামীর ছত্রছায়ায় বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদের প্রসার ঘটেছে। ইসলামী জঙ্গীবাদ প্রসারিত হবার পেছনে তাদের অর্থনৈতিক মদদদাতা, সমর্থক ও সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের নিকট থেকে প্রাপ্ত আর্থিক সহযোগিতাই প্রধান ভূমিকা পালন করছে এতে কোন সন্দেহই নেই। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রসার অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়ে চলেছে। এতে করে জঙ্গী অর্থায়নের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে অনেক বেশি। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধির হার শতকরা প্রায় ২০ ভাগ যা দেশের গোটা ব্যাংক ব্যবস্থার গড় হারের দ্বিগুণ। ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রমের কিছু দিক এইচএসবিসিসহ বিভিন্ন বহুজাতিক ব্যাংককেও আকৃষ্ট করেছে। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক এইচএসবিসি’র দুই ডজন এ্যাফিলিয়েটেড কাস্টমার।
এইচএসবিসি’র গোয়েন্দা রিপোর্টে দেখা যায়, জঙ্গী সংগঠন জমিয়তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান ও তার দক্ষিণ হস্ত হিসেবে পরিচিত সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়েরও এ্যাকাউন্ট ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে। শায়খ রহমান, বাংলাভাই ও অপর ৬ জেএমবি নেতাকে ২০০৭ সালে দুই বিচারককে হত্যার দায়ে মৃত্যুদ- প্রদান ও তা কার্যকর করা হয়। জেএমবি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রকে শয়তানের সৃষ্ট ব্যবস্থা বলে অভিহিত করে দেশে আল্লাহ্র শাসন বা ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত। যাহোক, ইতোপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের ২টি শাখা সন্দেহজনক অর্থ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে এমন প্রমাণ পায় এবং এই লেনদেনের তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে ব্যর্থ হওয়ায় ঐ ব্যাংকের ২০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেয়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টে সারা দেশের ৬৫টি জেলার মধ্যে ৬৪ টিতে জঙ্গীরা সিরিজ বোমা হামলা চালালে জঙ্গীদের ধর্মীয় উন্মাদনাপূর্ণ অপতৎপরতার বিষয়টি সকলের নজরে পড়ে। এক্ষেত্রে জেএমবি এবং ইসলামী ব্যাংকের কার্যকলাপের ওপর ব্যাপক নজরদারির প্রয়োজন পড়ে। ইসলামী ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত এমন তথ্য যখন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তখন একে হাল্কাভাবে নেয়ার কোন কারণ থাকতে পারে কি! একটি দেশের কাউন্টার টেররিজমের তালিকায় জঙ্গী অর্থায়নের বিষয়টি যে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবার দাবি রাখে তা তো বলাই বাহুল্য! এইচএসবিসি ব্যাংকের যুক্তরাষ্ট্র শাখার অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগে বাংলাদেশের এই ব্যাংক দু’টি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে, সন্দেহজনক এমন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে অর্থ পাচার করে চলেছে। শুধু তাই নয়, ইসলামী ব্যাংক জামায়াতে ইসলামীর জন্য বিদেশ থেকে অর্থ পাচারের সুযোগ ও সুবন্দোবস্ত করে দিয়েছে। বিদেশ থেকে ঐ অর্থ এনে জামায়াত তা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী এ জন্য ইসলামিক ব্যাংক ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন চালু করেছে যা ইসলামিক ব্যাংকের সকল প্রকল্প তদারক করে থাকে। এসব প্রকল্প থেকে অর্জিত মুনাফা এবং বিদেশী অনুদান থেকে লব্ধ কমিশন বা সুদ ইসলামী ব্যাংকের ঐ ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের এ্যাকাউন্টে জমা হয়। ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের প্রধান হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর কার্যকরী কমিটির সদস্য ও সৌদিভিত্তিক ইসলামী এনজিও রাবেতা-আল-আলম-আল-ইসলামীর কান্ট্রি ডিরেক্টর মীর কাশেম আলী। উল্লেখ্য, এনজিওটি বাংলাদেশে জামায়াতের কয়েকটি প্রকল্পে অর্থের যোগান দিয়ে থাকে আর মীর কাশেম আলীই আসলে জামায়াতে ইসলামীর অর্থ বিষয়ক কর্মকা-ের মূল নায়ক। বর্তমানে সে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
যাহোক, ২০০৭-এর দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার পর কুয়েতভিত্তিক আন্তর্জাতিক ইসলামী এনজিও রিভাইভ্যাল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটির কার্যক্রম নজরদারির আওতায় আনা হয় এবং ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় এই এনজিওর এ্যাকাউন্টটিতে ২০০৬ সালে কিছু অনিয়ম প্রাপ্তির দরুন তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ঐ এ্যাকাউন্ট থেকে গোয়েন্দারা জঙ্গী অর্থায়নের সুনির্দিষ্ট প্রমাণপঞ্জি উদ্ধার করেন তখন। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, ২০০৫’র নবেম্বরে ঐ এ্যাকাউন্ট থেকে ২ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছিল বাংলাদেশে আত্মঘাতী বোমা হামলার সূত্রপাত ঘটাবার উদ্দেশ্যে। তদন্তে বাংলাদেশী গোয়েন্দারা দেখতে পান যে, কুয়েতের ঐ এনজিও’র দু’জন কর্মকর্তা দেশী ও বিদেশী জঙ্গীদের ৭ লাখ ডলার ঐ ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: বাংলাদেশে কিছুকাল যাবৎ শরীয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং করে চলেছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকটি ভারতে কিছু যোগাযোগ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অবাঞ্ছিত ও সন্দেহজনক কার্যকলাপের কারণে এই ব্যাংকের কার্যকরী ভাইস প্রেসিডেন্ট শওকত আলীকে কলকাতা পুলিশ ২০০৬’র আগস্টে গ্রেফতারের পর কলকাতা থেকে বহিষ্কার করে। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে কলকাতায় অর্থ পাচার এবং সেখান থেকে ভারতের অন্যত্র ও ভারতের বাইরে জঙ্গীদের কাছে তা প্রেরণের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাংকটির যারা প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারা মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দা বলে জানা যায়।
সৌদিভিত্তিক অপর এনজিও আল হারমাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশনটি আল কায়েদার অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত। সংস্থাটি ঢাকায় এর কার্যালয় স্থাপন করেছিল ও ঢাকাস্থ আল্-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন চালাত। এই এনজিওর অর্থের প্রধান যোগানদার হচ্ছে সৌদি রাজপরিবারের সদস্যবৃন্দ। সৌদি আরবে সম্প্রতি বোমা হামলা এবং সৌদি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এর নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দেবার প্রেক্ষিতে এর তৎপরতা গভীর নজরদারির আওতায় আনা হয়। অতঃপর সৌদি সরকার আল-হারামাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে নিষিদ্ধকরণ এবং এর সকল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ও যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াফত করার অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে তদন্ত করে জানতে পারে যে, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের রংপুর ও কক্সবাজার শাখা থেকে কেবলমাত্র টেলিফোন বার্তার মাধ্যমেই আল হারামাইনের বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে। টেলিফোনে বার্তা পাবার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায়।
বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও অন্যসব ইসলামী ব্যাংকই তথাকথিত কতিপয় ধর্মীয় নেতা সমন্বয়ে গঠিত শূরা কাউন্সিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশে পরিচালিত হয়। অথচ, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সুনির্দিষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে, সকল ইসলামী ব্যাংক পরিচালিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত একটি গবর্নিং বডি দ্বারা। ২০০৬ সালে বিএনপি’র শরিক হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালে জামায়াতে ইসলামীর উপর্যুপরি চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে পূর্বোক্ত নির্দেশনামা শিথিল করে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের নতুন গাইডলাইন জারির মাধ্যমে গবর্নিং বডি এবং শূরা কাউন্সিল উভয়েরই বিধান বলবৎ করে। বর্তমানে দেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে আলাদা কোন গাইডলাইন নেই। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অর্থ পাচার রোধ বিষয়ক আইন প্রণয়ন এবং জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধের পাশাপাশি এসব বিষয়ে নজরদারি জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে যে, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০৬ সালে দেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে পরিচিত রূপালী ব্যাংককে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেবার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। তখন প্রায় দু’শ’ কোটি ডলার মূল্যমানের ব্যাংকটি সৌদি প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদ বাংলাদেশে ৬ শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগের শর্তে কেনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থপ্রদানের শর্ত পূরণে গড়িমসি করায় সামরিক সমর্থনপুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রিন্সের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি বাতিল করে দেয়। অবশ্য, এই চুক্তি বাতিলের দরুন সম্ভবত উপমহাদেশে ইসলামী জঙ্গীবাদকে চাঙ্গা করতে অডিট ছাড়া সৌদি অর্থ সরাসরি ও নিয়মবহির্ভূতভাবে জঙ্গীদের হাতে পৌঁছাবার পরিকল্পনাটি শেষতক ভেস্তে গিয়েছিল!
No comments