বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাষণ-সংলাপ দিয়ে সংঘাত পরিহার সম্ভব

সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান এখন একেবারেই স্পষ্ট। নবম সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী দিনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সরকারের আগের অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটরের সঙ্গে আলোচনায়ও বলেছেন,


বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুসংহত করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাঁর সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু দিনাজপুরের জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আবারও বলেছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া কোনো নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না।
দিনাজপুরের জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া তাঁর নিজের দলসহ বিরোধীদলীয় মোর্চার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তাঁর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট হলো যে নির্বাচনের দিন যতই নিকটতর হবে, রাজনৈতিক সংকট ততই ঘনীভূত হবে। বাংলাদেশের রাজনীতির মূল সমস্যা হচ্ছে পারস্পরিক আস্থাহীনতা। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এই সংকট থেকে উত্তরণের প্রধান ও একমাত্র পথই হচ্ছে পারস্পরিক আস্থায় ফেরা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে পরস্পর থেকে মুখ ফিরিয়ে আছে, তাতে আস্থার সংকট কাটিয়ে ওঠা সহজ নয়। দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি সুদৃঢ় অঙ্গীকার থাকলেই শুধু এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। দেশবাসীর প্রত্যাশা, প্রধান দুই দল তাদের সে প্রত্যাশা পূরণে অতীতের সব দৈন্য ও সীমাবদ্ধতা ঝেড়ে ফেলে রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারার সূচনা করবে। গণতন্ত্র একটি বিকাশমান ধারা। গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক চর্চা সেদিক থেকে কতটা এগিয়েছে? আচরণগত দিক থেকে আমরা গণতন্ত্রকে কতটা বিকশিত হতে দিয়েছি- এমন প্রশ্নও এখন সামনে এসে পড়েছে। বস্তুত দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো গুণগত পরিবর্তন না আসাতেই আস্থার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না।
নির্বাচনকালীন সরকার হবে তত্ত্বাবধায়ক নাকি অন্তর্বর্তীকালীন- এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আস্থার সংকট থেকেই। রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থাহীনতা থেকে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে তার পরিণাম কী হতে পারে, তার উদাহরণ নিকট-অতীতে আমাদের আছে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরের আস্থায় ফিরতে হবে। পরস্পরের আস্থা অর্জন করতে হবে। যে রাজনৈতিক সংকটের পরিণতি সংঘাতময় পরিবেশ, সেই সংকট অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গেই বলতে হয়, আমাদের দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এখনো পরস্পরের প্রতি বিষোদ্গারকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছেন।
যেকোনো সমস্যা সমাধানের প্রধান পথ হচ্ছে সংলাপ। রাজনৈতিক দলগুলোকে এজেন্ডা নির্দিষ্ট করে সেই পথেই এগোতে হবে। সংলাপের ভেতর দিয়ে সংঘাতের পথ পরিহার করা সম্ভব। কোনোভাবেই দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না। এ জন্য প্রথমে দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটমেন্ট। তত্ত্বাবধায়ক কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন- নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা যে রূপেই আসুক না কেন, তা যেন পরস্পরের আলোচনার মধ্য দিয়েই আসে। আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা ফিরে আসুক। তাতে সংকট কেটে যাবে। দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ আরো সংহত হবে।

No comments

Powered by Blogger.