সেই হিরন্ময় কণ্ঠ-দাঁড়িয়ে সম্মান জানান বিশ্বনেতারা- জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর প্রথম বাংলায় ভাষণ by মোরসালিন মিজান

খুব ভুল হবে না বললে এখন বক্তৃতার বাংলাদেশ। নেতারা বলতে ভীষণ ভালবাসেন। গর্জন শোনা যায় প্রচুর। কিন্তু যে বক্তৃতা মানুষকে জাগায়, অন্ধকারে পথ দেখায় সে বক্তৃতা কই? উত্তর খুঁজতে একটু পেছন ফিরে তাকাতেই হয়। আর তখন একজনই তর্জনী উঁচিয়ে সামনে দাঁড়ান।


তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশে শুধু নয়, বহির্বিশ্বেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা করেছেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে জাতিসংঘে দেয়া ভাষণটি। ১৯৭৪ সালের আজকের দিনে মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দিয়ে ইতিহাস গড়েন শেখ মুজিবুর রহমান। জাতিসংঘে তিনিই প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলাদেশের স্বপ্ন, এর জনগণের আকাক্সক্ষার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরেন। বাংলাদেশ কেন সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিল, কী তার সেক্রিফাইস, কোন্ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রটির এসব ইতিহাস চমৎকারভাবে উঠে আসে বক্তৃতায়। রাষ্ট্রপরিচালনার নীতি ব্যাখ্যা করে সারাবিশ্বের নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বাঙালীর মহান নেতা। অভূতপূর্ব এ ভাষণের পর বহুকাল অতিক্রান্ত হয়েছে। অনেক নেতা বাংলাদেশের হয়ে বক্তৃতা করেছেন। ঠিক এই মুহূর্তে জাতিসংঘে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা করবেন তিনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণকে অতিক্রম করা যেন অসম্ভব। এখনও সমকালীন শোনায় জাতির জনকের কণ্ঠ।
১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সর্বসম্মত অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এর কয়েক দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে প্রথমবারের মতো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষণের সময় উপস্থিত ছিলেন এমন সৌভাগ্যবানদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অত্যন্ত সচেতনভাবে নিজ থেকেই বাংলায় ভাষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাংলা ভাষা ও বাংলা নামের দেশটির জন্য যে সংগ্রাম, যে আত্মত্যাগ তার স্মরণেই এমন সিদ্ধান্ত। সেই ঐতিহাসিক ক্ষণের স্মৃতি থেকে একাধিক বিশিষ্টজন জানান, জাতিসংঘ অধিবেশনে সচরাচর সবাই উপস্থিত থাকেন না। অনেক চেয়ার খালি পড়ে থাকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সময় অধিবেশন কক্ষ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। গ্যালারিগুলোতেও ছিল অভিন্ন চিত্র। এর কারণ শেখ মুজিবুর রহমান তখন কেবল একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী নন। বরং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া একটি নতুন দেশের স্থপতি। সারাবিশ্বে আলোচিত তিনি। তাই সকলেই এই নেতাকে দেখার জন্য, বক্তৃতা শোনার জন্য অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। নিউইয়র্ক সময় বিকেল ৪টায় তাঁকে বক্তৃতার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এ সময় সাধারণ সভার সভাপতি আলজিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) আব্দুল আজিজ ব্যুতফলিকা নিজ আসন থেকে উঠে এসে বঙ্গবন্ধুকে মঞ্চে তুলে নেন। বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়ান গলাবন্ধ কোট, কালো ফ্রেমের খুব মানানসই চশমা, আর ব্যাকব্রাশ করা চুলের বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘদেহী স্মার্ট সুদর্শন আর আভিজাত্যপূর্ণ এক সৌম্য ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবকে দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারেননি নানা দেশের প্রতিনিধিরা।
নাতিদীর্ঘ ভাষণের সূচনায় বঙ্গবন্ধু বলেন ‘আজ এই মহামহিমান্বিত সমাবেশে দাঁড়াইয়া আপনাদের সঙ্গে আমি এই জন্য পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির ভাগিদার যে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ এই পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পূর্ণতা চিহ্নিত করিয়া বাঙালী জাতির জন্য ইহা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বাঙালীর দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনভাবে বাঁচিবার অধিকার অর্জনের জন্য এবং একটি স্বাধীন দেশে মুক্ত নাগরিকের মর্যাদা নিয়া বাঁচিবার জন্য বাঙালী জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী সংগ্রাম করিয়াছেন, তাঁহারা বিশ্বের সকল জাতির সঙ্গে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিয়া বাস করিবার জন্য আকাক্সিক্ষত ছিলেন। যে মহান আদর্শ জাতিসংঘ সনদে রক্ষিত আছে, আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন।’ ভাষণে তিনি স্বাধীন বাংলার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশের সংগ্রামে সমর্থনকারী সকল দেশ ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম সার্বিক অর্থে শান্তি এবং ন্যায়ের সংগ্রাম ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আর সে জন্যই জন্মলগ্ন হইতেই বাংলাদেশ বিশ্বের নিপীড়িত জনতার পাশে দাঁড়াইয়া আসিতেছে।’
সেই সময়ের বিশ্ব রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ পাওয়া যায় তাঁর সেই ভাষণে। বাঙালীর মহান নেতা বলেন ‘একদিকে অতীতের অন্যায় অবিচারের অবসান ঘটাইতে হইতেছে, অপর দিকে আমরা আগামী দিনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হইতেছি। আজিকার দিনের বিশ্বের জাতিসমূহ কোন্্ পথ বাছিয়া নিবে তাহা লইয়া সঙ্কটে পড়িয়াছে। এই পথ বাছিয়া নেওয়ার বিবেচনার উপর নির্ভর করিবে আমরা সামগ্রিক ধ্বংসের ভীতি এবং আণবিক যুদ্ধের হুমকি নিয়া এবং ক্ষুধা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের কশাঘাতে মানবিক দুর্গতিকে বিপুলভাবে বাড়াইয়া তুলিয়া আগাইয়া যাইব অথবা আমরা এমন এক বিশ্ব গড়িয়া তোলার পথে আগাইয়া যাইব যে বিশ্ব মানুষের সৃজনশীলতা এবং আমাদের সময়ের বিজ্ঞান ও কারিগরি অগ্রগতি আণবিক যুদ্ধের হুমকিমুক্ত উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের রূপায়ণ সম্ভব করিয়া তুলিবে। এবং যে বিশ্ব কারিগরি বিদ্যা ও সম্পদের পারস্পরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে সুন্দর জীবন গড়িয়া তোলার অবস্থা সৃষ্টি করিবে।’ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রথম হইতেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সকলের প্রতি বন্ধুত্ব এই নীতিমালার উপর ভিত্তি করিয়া জোট নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করিয়াছে।’ কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশই কষ্টলব্ধ জাতীয় স্বাধীনতার ফল ভোগ করিতে সক্ষম করিয়া তুলিবে বলে মত দেন তিনি।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশের অভ্যুদয় বস্তুতপক্ষে এই উপমহাদেশে শান্তির কাঠামো এবং স্থায়িত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অবদান সৃষ্টি করিবে। ইহা ছাড়া আমাদের জনগণের মঙ্গলের স্বার্থেই অতীতের সংঘর্ষ ও বিরোধিতার পরিবর্তে মৈত্রী ও সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে।’ বাঙালীর উদারতার সবটুকু বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে বক্তৃতায় তিনি বলেন ‘আমরা আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত ও নেপালের সঙ্গে শুধুমাত্র প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কই প্রতিষ্ঠা করি নাই, অতীতের সমস্ত গ্লানি ভুলিয়া গিয়া পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক করিয়া নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করিয়াছি।’ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখ-তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অন্যের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী সকল দেশের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বজায় বজায় রাখিবে। আমাদের অঞ্চলের এবং বিশ্বশান্তির অন্বেষায় সকল উদ্যোগের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকিবে।’
বাঙালীর ক্ষমতা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানতেন বঙ্গবন্ধু। সে কথা বিশ্ববাসীকে আরও একবার জানিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘জনাব সভাপতি, মানুষের অজেয় শক্তির প্রতি বিশ্বাস, মানুষের অসম্ভবকে জয় করার ক্ষমতা এবং অজেয়কে জয় করার শক্তির প্রতি অকুণ্ঠ বিশ্বাস রাখিয়া আমি আমার বক্তৃতা শেষ করিতে চাই। আমাদের মতো যেইসব দেশ সংগ্রাম ও আত্মদানের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে, এই বিশ্বাস তাঁহাদের দৃঢ়। আমরা দুঃখ ভোগ করিতে পারি। কিন্তু মরিব না। টিকিয়া থাকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করিতে জনগণের দৃঢ়তাই চরম শক্তি। আমাদের লক্ষ্য স্বনির্ভর। আমাদের পথ হইতেছে জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ প্রচেষ্টা।’ বক্তৃতার শেষ অংশে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গের অবতারণা করে তিনি বলেন ‘আমাদের নিজেদের শক্তির উপর আমাদের বিশ্বাস রাখিতে হইবে। আর লক্ষ্য পূরণ এবং সুন্দর ভাবীকালের জন্য আমাদের নিজেদেরকে গড়িয়া তুলিবার জন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই আমরা আগাইয়া যাইব।’ এমন অদ্ভুত সুন্দর স্বপ্নের কথা জানিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। জানা যায়, নেতার বক্তৃতা শেষ হলে সাধারণ সভার সভাপতিসহ অন্যরা দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দিত করেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কোন ভাষণ তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে পরামর্শ করে তৈরির নির্দেশ দিতেন বঙ্গবন্ধু। জাতিসংঘে দেয়া ভাষণটির বেলায়ও তাই হয়েছে। এ ভাষণটি লেখার কাজ করেছেন প্রখ্যাত কলামিস্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। জাতিসংঘে ভাষণটির ইংরেজী অনুবাদ পড়ে শোনান কূটনীতিবিদ ফারুক চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হয়ে এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ। সে সময়ের কথা বলতে গিয়ে এখনও গর্বে বুক ভরে যায় তাঁর। এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, তখন জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা ছিল মাত্র ছয়টি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তাই ইংরেজীতে বক্তৃতা করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাংলা ভাষার জন্য, বাংলা নামের দেশটির জন্য আজীবন সংগ্রাম করা বঙ্গবন্ধু নিজের মাতৃভাষাকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করতেই বাংলায় বক্তৃতা করেন। ভাষণ শেষে তাঁকে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বুকে জড়িয়ে ধরেন। আলিঙ্গন করেন। আমাদের তাঁরা বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু তোমাদের নয়, সারাবিশ্বের নিপীড়িত মানুষের নেতা তিনি। তোফায়েল আহমেদ জানান, জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব এ ভাষণের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় আমি আনন্দিত ও গর্বিত। তাঁর দেয়া ভাষণটি সহজ গঠনমূলক ও অর্থবহ।’ একই রকম প্রশংসা করা হয়েছিল জাতিসংঘের ডেলিগেট বুলেটিনে। এতে বঙ্গবন্ধুকে ‘কিংবদন্তির নায়ক মুজিব’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল। ভাষণ বিশ্লেষণ করে লেখা হয়েছিল ‘অতীতের অনগ্রসরতা, যুদ্ধের ধ্বংসলীলা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও প্রতিকূল বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভয়াবহ ফলশ্রুতি হিসেবে যে অসুবিধাজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বাংলা অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশের নেতা মুজিব তাঁর বক্তব্যে সেটি তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন।’ ঐতিহাসিক এ দিনটি এলে এখনও আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন বলে জানান তোফায়েল আহমেদ। জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে একই রকম আবেগ উচ্ছ্বাস শোনা যায় রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর কণ্ঠে। অত্যন্ত তরুণ বয়সে এ ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আসলে বঙ্গবন্ধুই। তাঁর সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। দেশের মতো বিদেশের মাটিতেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ। জাতিসংঘে কেবল একজন সরকার প্রধান হিসেবে যাননি তিনি। বরং ‘ক্রিয়েটর অব এ নিউ নেশন’ হওয়ায় পুরো হাউসের দৃষ্টি ছিল তাঁর দিকে। এদিন বিরল সম্মান দেখানো হয় তাঁকে। লম্বা চওড়া অত্যন্ত সুদর্শন বঙ্গবন্ধুকে দেখে অনেকে ভাবতেই পারেননি তিনি বাংলাদেশের মানুষ। বাংলায় দেয়া তাঁর ভাষণ বরাবরের মতোই সকলকে মুগ্ধ করে জানিয়ে মঞ্জু বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সময়ও সবাই উপস্থিত থাকেন না। কিন্তু বাঙালীর নেতা বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার সময় পুরো হাউস ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।
দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে কাটানো ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ার কয়েক দিন আগে নরওয়ে কনফারেন্সে বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধু। সে ভাষণটিও ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এর পর পরই জাতিসংঘে বক্তৃতা করেন তিনি। অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা সচেতনভাবেই জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে।
জাতির জনকের সেই ভাষণের আবেদন আজও ফুরোয়নি জানিয়ে প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, তাঁর বক্তৃতা থেকে আমাদের আজকের নেতাদের অনেক কিছু শেখার আছে। সেটি তাঁরা পারলে আরও অনেক গৌরবের ইতিহাস সৃষ্টি করা সম্ভব বলে মত দেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.