পশুর হাটের টেন্ডার নিয়ে বিপাকে ঢাকা উঃ ও দঃ সিটি কর্পোরেশন- ইজারা মূল্য উপযুক্ত না হওয়ায় দ্বিতীয় দফা টেন্ডার by রাজন ভট্টাচার্য

পশুর হাটের টেন্ডার নিয়ে বিপাকে পড়েছে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। হাটের ইজারা মূল্য সন্তোষজনক না হওয়ায় দ্বিতীয় দফা টেন্ডার আহ্বান করতে হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে দুই সিটি করপোরেশনের বেশিরভাগ হাট।


এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের নয়টি হাটের মধ্যে সাতটি ও দক্ষিণে ১০টির মধ্যে ৬টি হাটের দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার হাটের আর্থিক মূল্য কম হলে তৃতীয় দফা দরপত্র আহ্বানের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তবে ইজারাদাররা বলছেন, পছন্দের দরদাতাদের হাট ইজারা দিতেই দফায় দফায় টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণেই প্রথমবারের মতো এই প্রক্রিয়ায় টেন্ডার সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। তবে স্বচ্ছতার দাবি ডিসিসি শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের। দুই সিটি করপোরেশন মিলে এবার রাজধানীতে পশুর হাট বসছে ১৯টি। বাড়ছে ২০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন ফি। পশু বিক্রির ওপর পাঁচ শতাংশ হাসিল দিতে হবে।
উত্তরে সাত হাটের ফের দরপত্র ॥ তিন সেপ্টেম্বর নয়টি হাটের প্রথম পর্বের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর যাচাই-বাছাই শেষে সাতটি হাটের দরপত্রের মূল্য সন্তোষজনক না হওয়ায় দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্বে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিডিউল বিক্রি হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর জমা শেষে এই দিনই দরপত্র খোলা হবে।
এবারের দরপত্রে তালতলা বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন খালি জায়গার পরিচ্ছন্ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। সিডিউল মূল্য ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। আগারগাঁও বস্তির খালি জায়গার পরিচ্ছন্ন ফি ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা ও সিডিউল মূল্য ২১ হাজার ৬শ’ টাকা। বনানী-কাকলী রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন খালি জায়গার পরিচ্ছন্ন ফি ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা ও সিডিউল মূল্য সাত হাজার ৪শ’ টাকা। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠের পরিচ্ছন্ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা ও সিডিউল মূল্য তিন হাজার ৬শ’ টাকা, বারিধারা জে ব্লকের রাস্তার পাশের খালি জায়গার পরিচ্ছন্ন ফি ১৫ হাজার টাকা ও পরিচ্ছন্ন ফি তিন হাজার টাকা। মিরপুর সেকশন-৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গার পরিচ্ছন্ন ফি ২০ হাজার টাকা ও সিডিউল মূল্য চার হাজার টাকা। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁর জনপথসংলগ্ন খালি জায়গার পরিচ্ছন্ন ফি ২০ হাজার সিডিউল মূল্য চার হাজার টাকা।
দক্ষিণের সমস্যা কাটেনি ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রথম পর্বে হাট ইজারার জন্য ১০টি হাটের বিপরীতে ১শ’টি সিডিউল বিক্রি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জমা পড়ে ৩৫টি। এর মধ্যে বাছাই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত শেষে দরদাতাদের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিক বাছাইয়ের পরের দিন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাটের টেন্ডার যথাযথ হয়নি এমন আপত্তি জানিয়ে অন্তত অর্ধশত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগকারীদের অনেকে ফের টেন্ডার আহ্বানের দাবি জানিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে আরও ৬টি হাটের দ্বিতীয় দফা টেন্ডার আহ্বান করা হলেও এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি।
কম দর ওঠা হাটগুলো নিয়ে দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়া নিয়ে কারও সুনির্দিষ্ট আপত্তি থাকলে তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। এ কারণে আরও তিনটি পর্যায়ে টেন্ডার আহ্বানের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে ওই পর্যায়গুলোতে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি। তাই আগে থেকেই ইজারা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করি কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এ ব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
দক্ষিণের ১০ হাট ॥ ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০ হাটের মধ্যে রয়েছে, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, জিগাতলা-হাজারীবাগ খেলার মাঠ, মেরাদিয়া বাজার হাট, নারিন্দার সাদেক হোসেন খোকা মাঠ, গোলাপবাগ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ, উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠ, ধুপখোলা ক্লাব মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন খালি জায়গা এবং পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা। এর মধ্যে মেরাদিয়া ও নারিন্দার দর কমলেও বাকি হাটগুলোর দর বেড়েছে। ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ জানিয়েছে, গেল বছর মেরাদিয়া বাজার হাটের ইজারা দর উঠেছিল ৩৪ লাখ ৫শ’ টাকা। এবার এ হাটের দর প্রায় ২২ লাখ টাকা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। একইভাবে নারিন্দায় সাদেক হোসেন খোকা মাঠের এবারের দর গতবারের চেয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা কম।
সর্বোচ্চ দর আরমানিটোলা মাঠের ॥ প্রতিবারের মতো এ বছরও রাজধানীর আরমানিটোলা মাঠের সর্বোচ্চ দর হাঁকানো হয়েছে। চার কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকায় হাটের ইজারা পেয়েছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা হাজী আরমান। ২০ লাখ পাঁচ হাজার টাকায় ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠের টেন্ডার পেয়েছেন হাফিজউদ্দিন সোহেল নামের এক ব্যক্তি। ৬ লাখ ১৬ হাজার ৮ টাকায় রহমতগজ্ঞ খেলার মাঠের টেন্ডার পেয়েছেন হাজী শফি মাহামুদ। ১২ লাখ পাঁচ হাজার টাকায় মেরাদিয়া মাঠের টেন্ডার পেয়েছেন এবিএম আহমেদ, ৬ লাখ ৫২ হাজার টাকায় সাদেক হোসেন খোকা পশুর হাটের টেন্ডার পেয়েছেন আনোয়ার হোসেন।
১৬ হাটের দর ছিল আট কোটি এক লাখ ॥ অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গত বছর রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১৬টি পশুর হাট বসে। এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় বসছে ৬টি, দক্ষিণে ১০টি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তিন দফা টেন্ডার প্রক্রিয়া গ্রহণের বিষয়টি অনেকটাই চূড়ান্ত। অর্থাৎ কোন হাট নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তা নিষ্পত্তির জন্যই রাখা হয়েছে তৃতীয় বারের ব্যবস্থা। তবে আপত্তি না থাকলে প্রথমবারের টেন্ডার চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এবারের ১০টি হাটের টেন্ডার মূল্য ৫ কোটি ১৫ লাখ ৬ হাজার আট টাকা। অবিভক্ত ডিসিসির সময় ১০ হাট ৪ কোটি ১২ লাখ ৮২ হাজার এক টাকায় ইজারা হয়। সব মিলিয়ে গেল বছর ১৬ হাটের ইজারা হয় আট কোটি এক লাখ ১৫ হাজার ২৭৭ টাকায়।

No comments

Powered by Blogger.