কাপাসিয়া নির্বাচনে নির্বিঘ্নে ভোটদান নিশ্চিত করা হবে ॥ সিইসি- ঢল নেমেছে সিমিন হোসেন রিমির পক্ষে প্রচারে
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রাকিবউদ্দীন বলেছেন, কাপাসিয়ার উপনির্বাচনে ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে এসে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেজন্য ভোট কেন্দ্রে নিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। আইন ও বিধিবহির্ভূত কোন কাজ নির্বাচন কমিশন বরদাশত করবে না।
নির্বাচনের দিনে কোন কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হলে, সে কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে। নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের দায়িত্বে শৈথিল্য কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না। কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। ভোটকেন্দ্রে যাতে কোন অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা বা বেআইনী কাজ না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা চাই সকল ভোটার যেন আনন্দঘন পরিবেশে বিনা বাধায় তাদের পছন্দনীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাপাসিয়ার নির্বাচনই প্রথম। তাই যে কোন মূল্যে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে হবে। আর এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের শুভযাত্রা হোক এটাই আমাদের কামনা। গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) শূন্য আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষে সোমবার সকালে কাপাসিয়া উপজেলা মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রাকিবউদ্দীন এসব কথা বলেছেন। কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ নূরুল ইসলাম। সভায় বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক, উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ, কাপাসিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন আলী, র্যাব-১ উপ-অধিনায়ক কাউছার মাহমুদ। এছাড়াও নির্বাচনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি, স্বতন্ত্র প্রার্থী আফসার উদ্দিন আহমদ খান ও সিপিবির মনোনীত প্রার্থী আসাদুল্লাহ বাদল।
তিনি প্রার্থীদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা ও আপনাদের কর্মী এবং সমর্থকরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলবেন। নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবেন। আচরণবিধি কাগজেপত্রে যতই লেখা থাক না কেন, যদি এটা আমরা প্রতিপালন না করি তাহলে এটা কাগজেই রয়ে যাবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা। নির্বাচন কমিশনের কাছে সকল প্রার্থী সমান। আমরা আশাবাদী এ ব্যাপারে প্রার্থী ও কর্মীরা সজাগ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেজন্য ভোটকেন্দ্রে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এসব ক্যামেরা দিয়ে সর্বক্ষণিক ছবি ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ডিটেইল প্যান তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনের তিন দিন আগে থেকে মোট পাঁচদিন নির্বাচনী এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল টিম, র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন থাকবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য দেশী, বিদেশী ও নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক দল নির্বাচনী এলাকা ও কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করবেন। এজন্য জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেন, নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটারদের নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে কেউ তাদের অহেতুক চাপ বা ভয় দেখাতে না পারে । সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য আমি আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নির্বিঘেœ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন। ভোট দেয়া আপনার নাগরিক অধিকার প্রয়োগের একটি মাধ্যম। আপনাদের বিবেক অনুযায়ী পছন্দনীয় প্রার্থীকে যাতে ভোট দিতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ইতোমধ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে কিছুর সত্যতা মিলেছে। এগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
র্যাব-১-এর উপ-অধিনায়ক মোঃ কাওসার মাহমুদ জানান, এ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চার শতাধিক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। তারা পুরো নির্বাচনী এলাকায় দু’ সেক্টরে বিভক্ত হয়ে ৪০টি টিমে কাজ করবে। এসব টিমে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিমও থাকবে।
পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন জানান, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে সকল পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।
নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চলছে
Ñসিমিন হোসেন রিমি
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল; যারা নির্বাচন বর্জন করেছে, তারা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনকে নজর রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নমিনেশন ও তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমি আচরণবিধি মেনে চলছি। আমার কর্মীদের নিয়ে এ বিষয়ে একাধিকবার বৈঠক করে তাদেরও মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছি।
সেনা মোতায়েনের দাবি আফসারের
স্বতন্ত্রপ্রার্থী এ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিন সভায় বলেন, আমার কর্মীদের প্রচারণা ও গণসংযোগে বাধা, মারধর ও মাইক ছিনতাইসহ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। রিটার্নিং অফিসে দরখাস্তের পর দরখাস্ত দেয়া হলেও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই রয়েছি। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সেনাসদস্য মোতায়েন, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, প্রার্থীর নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েনসহ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য লিখিত আবেদনও জানিয়েছেন সিইসির কাছে। এদিকে সিপিবি প্রার্থী এ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ বাদলও একই দাবি জানিয়েছেন। পরে সিইসি কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের পাশে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের সার্ভার স্টেশনটি পরিদর্শন করেন।
প্রিজাইডিং সহকারী প্রিজাইডিং পোলিং অফিসার নিয়োগ
সহকারী রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যেই ১০২ কেন্দ্র ও ৪৭২টি বুথের জন্য ১০২ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪৭২ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৯৪৪ পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। শনিবার তাঁদের প্রশিক্ষণও শেষ হয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কে কোন্ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন, তাও নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনের ফলে স্বচ্ছতার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত
উপ-নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে ততই বাড়ছে উত্তেজনা। নির্বাচনী পরিবেশ ও আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্বাচনী এলাকায় ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে তৎপর রয়েছে ৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও টহল পুলিশ। দিনভর এমনকি রাতেও তাঁরা অভিযান চালাচ্ছেন বিভিন্নস্থানে। এ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা করেছেন। এছাড়াও গাজীপুরের যুগ্ম জেলা জজ মোঃ বদরুল আলম ভূঞা ও জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আসম শহীদুল্লাহ কায়সার সমন্বয়ে গঠিত ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওই এলাকায় কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন আলী। তিনি আরও জানান, ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় অন্য জেলার কোন লোক ঢুকতে এবং অবস্থান নিতে পারবে না।
দু’প্রার্থীর জন্য পুলিশের ভিডিওম্যান
কাপাসিয়া থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেনের নির্দেশে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিনের নির্বাচনী কার্যক্রম নজরদারিতে রাখতে দুই ভিডিওম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে তারা গণসংযোগ, প্রচারণা ও জনসভার চিত্রধারণের কাজ শুরু করেছে।
প্রার্থীদের গণসংযোগ
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) উপ-নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা। সোমবার প্রার্থীরা ব্যস্ত ছিলেন জোর প্রচারে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁরা ছুটেছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডে, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। করেছেন গণসংযোগ, পথসভা ও উঠোনবৈঠক। দিনভর তারা ব্যস্ত ছিলেন গণসংযোগেও।
উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিতে আওয়ামী লীগ কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমির পক্ষে মূল দল ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের ঢল নেমেছে কাপাসিয়ায়। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তাঁরা ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের কাছে। ভোট চাইছেন দলীয় প্রার্থীর জন্য। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন। সোমবার রিমি সূর্য নারায়ণপুর ও বারিষাব ইউনিয়নের গাওরার এলাকায় দুটি মহিলা সমাবেশে যোগ দেন। বিকেলে ঘাগটিয়া চালা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তিনি বক্তব্য রাখেন। আব্দুল ওয়াহাব বন্দুকসীর সভাপতিত্বে এ নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আকম মোজাম্মেল হক এমপি, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, মেহের আফরোজ চুমকী এমপি, মোতাহার হোসেন মোল্লা, মোঃ শহীদুল্লাহ ও আমানত হোসেন খান।
অন্যদিকে রিমির চাচা এ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিন আহমদ খান ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ করলেও দলের সমর্থন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভাতিজির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সোমবার তিনি বরুণ, পাঁচুর বাজার, সুতিনদী বাজার, কোট বাজালিয়া, অঙ্গনাগেট, সূর্য নারায়ণপুর নতুন বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এছাড়াও সিপিবির প্রার্থী এ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ বাদল বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।
তিনি প্রার্থীদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা ও আপনাদের কর্মী এবং সমর্থকরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলবেন। নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবেন। আচরণবিধি কাগজেপত্রে যতই লেখা থাক না কেন, যদি এটা আমরা প্রতিপালন না করি তাহলে এটা কাগজেই রয়ে যাবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা। নির্বাচন কমিশনের কাছে সকল প্রার্থী সমান। আমরা আশাবাদী এ ব্যাপারে প্রার্থী ও কর্মীরা সজাগ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেজন্য ভোটকেন্দ্রে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এসব ক্যামেরা দিয়ে সর্বক্ষণিক ছবি ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ডিটেইল প্যান তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনের তিন দিন আগে থেকে মোট পাঁচদিন নির্বাচনী এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল টিম, র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন থাকবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য দেশী, বিদেশী ও নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক দল নির্বাচনী এলাকা ও কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করবেন। এজন্য জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেন, নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটারদের নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে কেউ তাদের অহেতুক চাপ বা ভয় দেখাতে না পারে । সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য আমি আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নির্বিঘেœ ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন। ভোট দেয়া আপনার নাগরিক অধিকার প্রয়োগের একটি মাধ্যম। আপনাদের বিবেক অনুযায়ী পছন্দনীয় প্রার্থীকে যাতে ভোট দিতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ইতোমধ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে কিছুর সত্যতা মিলেছে। এগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
র্যাব-১-এর উপ-অধিনায়ক মোঃ কাওসার মাহমুদ জানান, এ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চার শতাধিক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। তারা পুরো নির্বাচনী এলাকায় দু’ সেক্টরে বিভক্ত হয়ে ৪০টি টিমে কাজ করবে। এসব টিমে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিমও থাকবে।
পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন জানান, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে সকল পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।
নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চলছে
Ñসিমিন হোসেন রিমি
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল; যারা নির্বাচন বর্জন করেছে, তারা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনকে নজর রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নমিনেশন ও তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমি আচরণবিধি মেনে চলছি। আমার কর্মীদের নিয়ে এ বিষয়ে একাধিকবার বৈঠক করে তাদেরও মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছি।
সেনা মোতায়েনের দাবি আফসারের
স্বতন্ত্রপ্রার্থী এ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিন সভায় বলেন, আমার কর্মীদের প্রচারণা ও গণসংযোগে বাধা, মারধর ও মাইক ছিনতাইসহ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। রিটার্নিং অফিসে দরখাস্তের পর দরখাস্ত দেয়া হলেও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই রয়েছি। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সেনাসদস্য মোতায়েন, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, প্রার্থীর নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েনসহ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য লিখিত আবেদনও জানিয়েছেন সিইসির কাছে। এদিকে সিপিবি প্রার্থী এ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ বাদলও একই দাবি জানিয়েছেন। পরে সিইসি কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের পাশে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের সার্ভার স্টেশনটি পরিদর্শন করেন।
প্রিজাইডিং সহকারী প্রিজাইডিং পোলিং অফিসার নিয়োগ
সহকারী রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যেই ১০২ কেন্দ্র ও ৪৭২টি বুথের জন্য ১০২ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪৭২ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৯৪৪ পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। শনিবার তাঁদের প্রশিক্ষণও শেষ হয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কে কোন্ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন, তাও নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনের ফলে স্বচ্ছতার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত
উপ-নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে ততই বাড়ছে উত্তেজনা। নির্বাচনী পরিবেশ ও আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্বাচনী এলাকায় ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে তৎপর রয়েছে ৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও টহল পুলিশ। দিনভর এমনকি রাতেও তাঁরা অভিযান চালাচ্ছেন বিভিন্নস্থানে। এ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা করেছেন। এছাড়াও গাজীপুরের যুগ্ম জেলা জজ মোঃ বদরুল আলম ভূঞা ও জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আসম শহীদুল্লাহ কায়সার সমন্বয়ে গঠিত ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওই এলাকায় কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন আলী। তিনি আরও জানান, ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় অন্য জেলার কোন লোক ঢুকতে এবং অবস্থান নিতে পারবে না।
দু’প্রার্থীর জন্য পুলিশের ভিডিওম্যান
কাপাসিয়া থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেনের নির্দেশে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিনের নির্বাচনী কার্যক্রম নজরদারিতে রাখতে দুই ভিডিওম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে তারা গণসংযোগ, প্রচারণা ও জনসভার চিত্রধারণের কাজ শুরু করেছে।
প্রার্থীদের গণসংযোগ
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) উপ-নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা। সোমবার প্রার্থীরা ব্যস্ত ছিলেন জোর প্রচারে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁরা ছুটেছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডে, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। করেছেন গণসংযোগ, পথসভা ও উঠোনবৈঠক। দিনভর তারা ব্যস্ত ছিলেন গণসংযোগেও।
উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিতে আওয়ামী লীগ কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমির পক্ষে মূল দল ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের ঢল নেমেছে কাপাসিয়ায়। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তাঁরা ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের কাছে। ভোট চাইছেন দলীয় প্রার্থীর জন্য। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন। সোমবার রিমি সূর্য নারায়ণপুর ও বারিষাব ইউনিয়নের গাওরার এলাকায় দুটি মহিলা সমাবেশে যোগ দেন। বিকেলে ঘাগটিয়া চালা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তিনি বক্তব্য রাখেন। আব্দুল ওয়াহাব বন্দুকসীর সভাপতিত্বে এ নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আকম মোজাম্মেল হক এমপি, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, মেহের আফরোজ চুমকী এমপি, মোতাহার হোসেন মোল্লা, মোঃ শহীদুল্লাহ ও আমানত হোসেন খান।
অন্যদিকে রিমির চাচা এ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিন আহমদ খান ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ করলেও দলের সমর্থন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভাতিজির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সোমবার তিনি বরুণ, পাঁচুর বাজার, সুতিনদী বাজার, কোট বাজালিয়া, অঙ্গনাগেট, সূর্য নারায়ণপুর নতুন বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এছাড়াও সিপিবির প্রার্থী এ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ বাদল বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।
No comments