ঘটা করে চালুর পর বন্ধ

সরকারের তিনজন মন্ত্রী বিশাল অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে ঘটা করে কাজীরহাট-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু মাত্র দুই মাস পর কাজীরহাটের ঘাটটি ভেঙে যাওয়ায় এ পথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঘাটটি সংস্কার না করায় এ পথ দিয়ে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছে।


বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ১২টি রোরো ফেরি দিয়ে নগরবাড়ী-আরিচা ও আরিচা-দৌলতদিয়া পথে ফেরি চলাচল করত। পরে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় নগরবাড়ী থেকে ঘাট সরিয়ে পাবনার কাজীরহাট ও আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় নেওয়া হয়। ২০০৭ সালের মে মাসে পানির চাপে কাজিরহাট ঘাট ভেঙে যাওয়ায় অস্থায়ীভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৮ সালের মার্চ মাসে নতুন করে ঘাট মেরামত করে আবার ফেরি চলাচল শুরু হয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আবার তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর উত্তরবঙ্গের ট্রাকচালক, মালিক ও এলাকাবাসী পুনরায় এই পথে ফেরি চলাচল চালু করার দাবি তোলে।
তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ মে পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ারভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক কাজিরহাটে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঘাটটি আবার চালু করেন। এ সময় মালবাহী ট্রাক এবং যাত্রী পারাপারের জন্য দুটি কে-টাইপ ফেরি দেওয়া হয়।
উদ্বোধনের পর দুই মাস না যেতেই কাজীরহাটের ফেরিঘাটটি ভেঙে যায়। এ কারণে গত ২০ জুলাই বিআইডব্লিউটিসি এ নৌপথে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়। এরপর আর ঘাটটি চালু করা হয়নি। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের ঈদে ঘরমুখী মানুষ। বহু কষ্ট ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা শ্যালো-ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছে।
ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে পাবনায় আসা যাত্রী মো. জিয়াউর রহমান জানান, সোমবার সকালে তিনি ফেরি পার হয়ে পাবনায় আসবেন বলে পাটুরিয়া ঘাটে আসেন। কিন্তু ঘাটে এসে জানতে পারেন ফেরি চলাচল বন্ধ। শেষ পর্যন্ত বিকেলে শ্যালো-ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে নদী পার হন। তাঁর মতো হাজার হাজার যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে নদী পার হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গ ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন খান বলেন, ‘কে-টাইপ ফেরি দিয়ে চালুর সময়ই আমরা আশঙ্কা করেছিলাম ঘাট বন্ধ হয়ে যাবে। ঈদের আগে এভাবে ঘাট বন্ধ থাকায় আমাদের বেশ সমস্যা হচ্ছে।’
বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল জলিল বলেন, ‘নদীতে পানি বাড়ায় ঘাট ভেঙে গেছে। এ কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ বিআইডব্লিউটিসির ঢাকা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহাদত হোসেন বলেন, ‘ঘাট মেরামতের দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের। আমরা তিন দফা তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তারা ঘাটটি মেরামত করছে না।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা কার্যালয়ের কারিগরি প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাট মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। অর্থ বরাদ্দ পেলেই পুনরায় ঘাট মেরামত করা হবে।’

No comments

Powered by Blogger.