পরিচালকের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন- ক্যানসার হাসপাতাল কি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান?

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকীর জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকার রহস্য কী? তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং খোদ সরকারকেই ধোঁকা দেওয়ার তথ্য মিলেছে; তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একজন ব্যক্তির অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের আশঙ্কা সৃষ্টি হবে, অথচ সরকার কিছুই করবে না—এটা কী করে হয়?


রোববারের প্রথম আলোয় পরিচালক মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকীর অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির কিছু বিবরণ রয়েছে। তাঁর নিজের ছেলে, ভাইয়ের ছেলে, চাচাতো ভাই, শ্যালকের স্ত্রী, ভায়রার ভাইয়ের ছেলে ক্যানসার হাসপাতালে চাকরি পেয়েছেন নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় অনিয়মের মাধ্যমে। তাঁর সময়ে তাঁর নিজের এলাকার ডজন খানেক মানুষ চাকরি পেয়েছেন আয়া, ওয়ার্ডবয়, স্ট্রেচার ও ট্রলিবাহক, ডেটা অ্যান্ট্রি অপারেটর, এমএলএসএস ইত্যাদি পদে।
নয় কোটি টাকা দামের একটি আধুনিক যন্ত্র কেনার সময় পরিচালক সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, এটাও তদন্তে ধরা পড়েছে। হাসপাতালের আয় প্রায় ৯৩ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেওয়ায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কারাভোগ করতে হয় ক্যাশিয়ারকে, কিন্তু পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই ক্যাশিয়ারকে তিনিই নিয়োগ দিয়েছিলেন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী থেকে পদোন্নতি দিয়ে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নথিপত্রে পরিচালক মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কেন? ক্যানসার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট লোকজনের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে, মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকীর বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়, অর্থাৎ তিনি প্রধানমন্ত্রীর এলাকার লোক বলেই এমন বেপরোয়াভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারে লিপ্ত রয়েছেন। আমাদের মনে হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানমর্যাদা রক্ষার স্বার্থেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। আর সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নিয়ম-বিধান মেনে চলা, সততা-নৈতিকতাসহ দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা, সর্বোপরি জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়টি তো রয়েছেই।

No comments

Powered by Blogger.