বিসিসিতে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ by জাহিদ হাসান

মানবিক শাখায় স্নাতকোত্তর পাস করে তথ্যপ্রযুক্তিতে এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা করেন মো. রকিবুল হাসান। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) থেকে ইন্টার্নশিপ শেষ করে এখন সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে রয়েছে কাজের ব্যাপক চাহিদা ও বৈচিত্র্য।


তবে এ চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করার জন্য নিতে হবে বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ, থাকতে হবে শেখার আগ্রহ। যাঁরা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী, তাঁরা রকিবুল হাসানের মতো প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মজীবন গড়তে পারেন। বিসিসি থেকে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। সম্প্রতি তারা ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

ভাতাসহ ইন্টার্নশিপ: বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাবে কর্মক্ষেত্রে অনেককে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে বিসিসিতে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জনের জন্য ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা আছে। এটি ছয় মাসমেয়াদি প্রশিক্ষণ। আবেদনপত্র ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনলাইনে জমা দিতে হবে। বিসিসিতে বছরে দুবার ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা: এ প্রসঙ্গে বিসিসির প্রশিক্ষণ পরিচালক সরকার আবুল কালাম আজাদ জানান, কম্পিউটার বিষয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের হাতেকলমে শেখার জন্য রয়েছে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা। ইন্টার্নশিপ কোর্সের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী হাতেকলমে শিখতে পারেন এবং দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থীর দক্ষভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে কোর্সটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ কোর্স শেষে সনদপত্র দেওয়া হয়, যা তাঁদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

ভর্তির যোগ্যতা: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কম্পিউটার বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী ও এ বিষয়ের শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে আইসিটি বিষয়ে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমাধারী অথবা যেকোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি পাসসহ আইসিটি বা সমমানের বিষয়ে এক বছর মেয়াদি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বা স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারবেন। বিদেশ থেকে একই ধরনের ডিগ্রিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্যও আবেদনের সুযোগ আছে।

আবেদনের প্রক্রিয়া: প্রার্থীকে অনলাইনে www.bcc.net.bd—এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার সময় সব শিক্ষাগত যোগ্যতার নম্বরপত্র ও এক কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি স্ক্যান করে জমা দিতে হবে। অনলাইন থেকে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হবে।

নির্বাচন প্রক্রিয়া: বিসিসি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করে। প্রার্থীকে ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। পরীক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির মৌলিক বিষয় ও সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। প্রতি ব্যাচে ৫০০ জন প্রার্থীকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়।

সুযোগ-সুবিধা: এখানে ভর্তি হলে একজন প্রশিক্ষণার্থীর মাসিক আট হাজার টাকা ভাতা পাওয়ার সুযোগ আছে। এর ৬০ শতাংশ সরকার ও বাকি ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দেয়। তবে প্রার্থীর উপস্থিতি ৮০ শতাংশের নিচে হলে ইন্টার্নশিপ বাতিল হবে। অনেক সময় ইন্টার্নশিপ শেষে প্রার্থীকে দক্ষতার ভিত্তিতে ওই প্রতিষ্ঠান স্থায়ী নিয়োগ দিয়ে থাকে। এতে একদিকে প্রতিষ্ঠান খুঁজে পায় দক্ষ লোক, অন্যদিকে প্রার্থীরাও সরাসরি চাকরিদাতাকে দক্ষতা দেখানোর সুযোগ পান বলে জানান বিসিসির পরিচালক।

যোগাযোগ: বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বিসিসি ভবন, আগারগাঁও, ঢাকা। ফোন: ০২-৮১৪৪০৪৬, ওয়েবসাইট: www.bcc.net.bd।

ছয়টি আঞ্চলিক কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ
এদিকে বিসিসি চাহিদার ভিত্তিতে ও প্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে রাজধানীর বাইরেও ছয়টি আঞ্চলিক কেন্দ্রে তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক প্রশিক্ষণের সুযোগ দিচ্ছে। আগ্রহী ব্যক্তিদের ২৬ আগস্টের মধ্যে নির্দিষ্ট আঞ্চলিক কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মোট ৩৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন। বছরে দুবার ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়।

পড়ানো হবে: জানা গেছে, প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছয় মাস। প্রার্থীকে ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান পাস হতে হবে। আগে এলে আগে ভর্তি—এ নিয়মে ভর্তি করা হবে। তবে কম্পিউটার বিষয়ে প্রার্থীর প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে। এতে পড়ানো হবে কম্পিউটার ফান্ডামেন্টাল অ্যান্ড অফিস অটোমেশন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং উইথ সি/সি++/সি, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্যাড, হার্ডওয়্যার মেইনটেনেন্স অ্যান্ড ট্রাভেল স্যুটিং, ডেটা কমিউনিকেশন অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং, ইন্টারনেট অ্যান্ড ওয়েব টেকনোলজি ও প্রজেক্ট প্রভৃতি বিষয়ে।

প্রশিক্ষণের গুরুত্ব: বিসিসির প্রশিক্ষণ পরিচালক সরকার আবুল কালাম আজাদ বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এ ধরনের প্রশিক্ষণ এখন খুবই জরুরি। এ ছাড়া যাঁরা স্কুল-কলেজে কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষকতা করতে আগ্রহী, তাঁদের এ ধরনের প্রশিক্ষণ থাকতেই হবে। বিসিসি থেকে এ প্রশিক্ষণ নিলে শিক্ষক নিবন্ধন ও স্কুল-কলেজে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ ছাড়া আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়।

খরচপাতি: প্রশিক্ষণার্থীকে ভর্তির সময় প্রশিক্ষণ ফি বাবদ এককালীন ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। প্রশিক্ষণার্থীদের সুবিধায় প্রতিটি কেন্দ্রে তিনটি শাখায় যেমন—সকাল, দিবাকালীন ও সান্ধ্যকালীন ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে।

যোগাযোগ: ফরিদপুর: ০১৭১৫৭১১৬৮৬, রাজশাহী: ০১৭১১৯০৪৫৩৩, চট্টগ্রাম: ০১৫৫২৪২৭৫৮৪, খুলনা: ০১৭১৫১৪৪৫৮৬, বরিশাল: ০৪৩১-২১৭৩৭৬৪ ও সিলেট: ০১৭১৫০২১৯২৬।

No comments

Powered by Blogger.