পাকিস্তান-আইএসআই কেন মিথ্যা বলছে? by হামিদ হারুন

বর্তমানে এপিএনএস সাংবাদিকদের জীবনের ওপর যেসব গুরুতর হুমকি রয়েছে সেগুলো তদন্তে একটি তদন্ত সংস্থা গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিউইয়র্কের প্রটেক্ট দ্য জার্নালিস্ট, পাকিস্তান প্রেসের নেতৃস্থানীয়রা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাকিস্তান সাংবাদিক হত্যার দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম দেশ।


আর এ ধরনের পরিবেশ গণতন্ত্রের জন্যও ক্ষতিকর। সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শাহবাজের হত্যা তদন্তকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া এবং তার শেষ বক্তব্যকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করা উচিত


হংকংভিত্তিক এশিয়া টাইমস অনলাইনের ব্যুরো চিফ সালিম শাহজাদের ই-মেইলের ওপর ভিত্তি করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আনা অভিযোগকে আন্তঃসার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) এক মুখপাত্র সরকারি বার্তা সংস্থার সঙ্গে কথা বলার সময় ভিত্তিহীন উল্লেখ করার বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা অপহরণের পর শাহজাদকে ইসলামাবাদের কাছে হত্যা করে।
পাকিস্তানের লাহোরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মনিটর আলী দায়ানের কাছে শাহবাজের পাঠানো যে ই-মেইলটি রয়েছে, একই ই-মেইল তিনি এশিয়া টাইমস অনলাইন কর্তৃপক্ষ ও তার সাবেক নিয়োগকারী অর্থাৎ আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন। আইএসআইর বিরুদ্ধে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যে অভিযোগের আঙুল তুলেছে, সেটা নিহত সাংবাদিকের ই-মেইলের বিষয়বস্তুর ভিত্তিতেই করা এবং আমিও তাই মনে করি। বুধবার আইএসআইর মুখপাত্র এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু যারা সালিম শাহবাজের বিভীষিকাময় হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছেন, সেসব তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, নিহত হওয়ার আগে গত পাঁচ বছরে অন্তত তিনটি উপলক্ষে শাহবাজ আইএসআইর বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে মৃত্যুর হুমকি পেয়েছিলেন। এসব অভিযোগের সারবত্তা যাই হোক না কেন, এগুলোই শাহবাজের সর্বশেষ প্রামাণিক সাক্ষ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। শাহবাজ আইএসআইর মর্যাদাহানির উদ্দেশ্য নিয়ে তিনজন সংশ্লিষ্ট সহকর্মীকে বিষয়টি জানিয়েছেন, তা ঠিক নয়। তিনি সম্ভবত তার জীবনের ওপর আসা হুমকিকে এড়ানোর উদ্দেশ্যেই এটা করে থাকবেন। আমার কাছে পাঠানো শাহবাজের যে ই-মেইলটির কথা এখানে উল্লেখ করব সেটি আমার কাছে ২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর ভোর ৪টা ১১ মিনিটে পোস্ট করা। সে সময় আইএসআইর সদর দফতরে সংস্থাটির মিডিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আদনান নাজির ও মিডিয়া উইংয়ের উপ-মহাপরিচালক কমডোর খালিদ পারভিজ তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আলোচনাটা বাহ্যত আফগান তালেবান কমান্ডার মোল্লা বারদারকে পাকিস্তান সরকার মুক্ত করে দিচ্ছে বলে এশিয়া টাইমসে প্রকাশিত শাহবাজের রিপোর্ট নিয়ে চলে। তাদেরকে শাহবাজ জানান, তিনি সংবাদটি ইন্টেলিজেন্স চ্যানেলের মাধ্যমেই প্রথমে জানতে পারেন এবং পরে বিশ্বাসযোগ্য তালেবান সূত্র থেকেও এর সত্যতা মেলে। তখন উপস্থিত আইএসআই র্কমকর্তারা স্টোরিটি আনুষ্ঠানিকভাবে অসত্য বলে প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য চাপ দেন। কিন্তু শাহবাজ এটা বাস্তবসম্মত নয় উল্লেখ করে স্টোরিটি প্রত্যাহার করে নিতে অস্বীকার করেন।
তখন শাজবাজের কাছে আইএসআই কর্মকর্তাদ্বয় ইন্টেলিজেন্স সূত্র জানার জন্য চেষ্টা করেন এবং তারা বলেন, ইন্টেলিজেন্সের উচ্চতর পর্যায় থেকে এ ধরনের খবর ফাঁস হয়ে যাওয়াটা লজ্জাজনক। তখন রিয়ার অ্যাডমিরাল শাজবাজকে ভজানোর মতলবে কিছু বাড়তি তথ্য দেওয়ার ভান করেন। তার কথাটি হুবহু এ রকম ছিল :'আমরা সম্প্রতি এক সন্ত্রাসীকে আটক করেছি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার কাছ থেকে অনেক তথ্য, ডায়েরি ও অন্যান্য ম্যাটেরিয়াল পাওয়া গেছে। ঐ সন্ত্রাসীর কাছে একটি হিট লিস্ট আছে। ওই লিস্টের নামগুলোর মধ্যে আপনার নাম রয়েছে কি-না তা অব্যশ্যই আমি আপনাকে জানাব।' শাহবাজ আমার কাছে পাঠানো ওই ই-মেইলে এই আলোচনাকে কার্যত তার জীবনের ওপর সরাসরি হুমকি বলে উল্লেখ করেন।
অল পাকিস্তান নিউজপেপারস সোসাইটি (এপিএনএস) ও পাকিস্তানের নেতৃস্থানীয় মিডিয়া গ্রুপের প্রধান হিসাবে আমি সাংবাদিকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয় বলে মনে করি। বর্তমানে এপিএনএস সাংবাদিকদের জীবনের ওপর যেসব গুরুতর হুমকি রয়েছে সেগুলো তদন্তে একটি তদন্ত সংস্থা গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিউইয়র্কের প্রটেক্ট দ্য জার্নালিস্ট, পাকিস্তান প্রেসের নেতৃস্থানীয়রা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাকিস্তান সাংবাদিক হত্যার দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম দেশ। আর এ ধরনের পরিবেশ গণতন্ত্রের জন্যও ক্ষতিকর। সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শাহবাজের হত্যা তদন্তকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া এবং তার শেষ বক্তব্যকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করা উচিত।
১৮ অক্টোবরের ঘটনা হোক, অথবা করাচির নৌ এস্টাবলিশমেন্টে আল কায়দার অনুপ্রবেশ নিয়ে তার লেখা এশিয়া টাইমসে প্রকাশিত রিপোর্টের কারণে শাহবাজ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে থাকুন না কেন, সেটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব বর্তায় সরকারি তদন্তের ওপর। আইএসআইসহ কেউই আইনের ঊধর্ে্ব নয়।

হামিদ হারুন :এপিএনএস-এর
প্রেসিডেন্ট : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
থেকে ভাষান্তর, সুভাষ সাহা
 

No comments

Powered by Blogger.