মুণ্ডা বিদ্রোহের মহানায়ক by মানিক সরেন
'কেউ যদি আমাদের অরণ্য মাকে কেড়ে নিতে চায়, কেউ যদি আমাদের জাতিকে খারাপ বলে, কেউ যদি আমাদের ধর্মকে ধর্ম মনে না করে, কেউ যদি আমাদের শুধু শোষণ করে তবে আমি বিদ্রোহ করবই।' আদিবাসীদের নিজস্ব জীবনের জন্য যিনি লড়াই করে জীবন দিয়েছিলেন, আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকারের জন্য যিনি বন্দুক-কামানের বিরুদ্ধে
ছোট্ট তীর-ধনুক দিয়ে যুদ্ধ করেছিলের সেই কিংবদন্তি ও উলগুলানের (বিদ্রোহ) মহানায়ক যাকে আদিবাসীরা ভগবান বিরসা বলেই মানে এটা তার কথা। বিশ্বের সব আদিবাসীর পক্ষে আজ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আজ বিরসা মুণ্ডার ১১১তম মৃত্যুবার্ষিকী।
১৮৯৫-১৯০০ সালে সংঘটিত মুণ্ডা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন তিনি। ব্রিটিশ শাসন আমলে ভারতের ছোট নাগপুর এবং এর আশপাশ এলাকায় মুণ্ডা আদিবাসীদের ঘনবসতি ছিল। বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষাবাদের জন্য জমি তৈরি করেছিল সহজ-সরল মুণ্ডারা। কিন্তু তাদের ভূমিতে তাদেরই সবাই ঠকাতে শুরু করল। নেমে এলো অত্যাচার-নির্যাতন। ইংরেজ শাসক, জমিদার,মহাজন_ সবাই শোষণ শুরু করেছিল। খ্রিস্টান মিশনারিরাও প্রথমেই গরিব আদিবাসীদের টার্গেট করে। প্রথমে কয়েকজন ধর্মান্তরিত মুণ্ডা অত্যাচার, শোষণের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান মিশনে অভিযোগ জানায়। কিন্তু ফল হয়নি। এর মধ্যে ১৮৭৫ সালের ১৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন বিরসা মুণ্ডা। বৃহস্পতিবারে জন্ম নিয়েছিলেন বলে বাবা-মা ছেলের নাম রাখেন বিরসা। বয়সপ্রাপ্ত হয়ে বিরসা মুণ্ডাদের মুক্তির স্বপ্ন দেখতে থাকেন। মুণ্ডাদের বলেন, 'আমি তোমাদের নতুন ধর্ম শেখাব। আমি তোমাদের মরতে আর মারতে শেখাব।' বিরসার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং বিরসার ধর্মমন্ত্রে দীক্ষিতরা পরিচিত হতে থাকল 'বিরসাইত' নামে।
বিরসার কর্মকাণ্ডে ইংরেজ সরকার নড়েচড়ে বসে এবং তিনি গ্রেফতার হন। পরে মুক্তি পেয়ে ফের বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ১৮৯৯ সালে বড়দিনের আগে বিরসাইতদের নিয়ে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রথম আঘাত হিসেবে স্থানীয় খ্রিস্টান মিশনগুলোতে হামলা ও অগি্নসংযোগ করেন। এ সময় বেশকিছু ইংরেজ সাহেব, মিশনারি, পুলিশ, চৌকিদার হতাহত হয়। বিরসা জানতেন ইংরেজ ও খ্রিস্টান মিশনারি সাহেব আলাদা নয়। সাদারা কালোদের বন্ধু হতে পারে না। বলেছিলেন, 'মিশনারি আর অফিসার সবাই এক জাত_ সাহেব সাহেব এক ট্যোপি হ্যায়।' ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী বিদ্রোহ দমনের জন্য সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ১৯০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিরসা মুণ্ডা ধরা পড়েন এবং রাঁচি জেলে ১৯০০ সালের ৯ জুন মৃত্যুবরণ করেন। জেল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর কারণ কলেরা বলে জানায়। অনেকে মনে করেন, বিরসাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছিল।
ইংরেজ শাসকদের কামান-বন্দুকের কাছে বিরসার তীর-ধনুক পরাজিত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু মুণ্ডা জাতিগোষ্ঠীর তথা আদিবাসীদের মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে দিয়েছিলেন বিরসা মুণ্ডা। বিরসা মুণ্ডা আজ সবার কাছে বিরসা ভগবান হয়ে বেঁচে আছেন। ভারতে বিরসা মুণ্ডার স্মরণে বিরসা মুণ্ডা বিমানবন্দর হয়েছে। বিরসাকে নিয়ে ২০০৮ সালে 'গান্ধী সে পেহেলি গান্ধী' চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশে আজও আদিবাসীরা তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীর সব আদিবাসীসহ শোষিত-বঞ্চিত মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে_ ভগবান বিরসা মুণ্ডার এমন স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই।
ananimist@yahoo.com
১৮৯৫-১৯০০ সালে সংঘটিত মুণ্ডা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন তিনি। ব্রিটিশ শাসন আমলে ভারতের ছোট নাগপুর এবং এর আশপাশ এলাকায় মুণ্ডা আদিবাসীদের ঘনবসতি ছিল। বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষাবাদের জন্য জমি তৈরি করেছিল সহজ-সরল মুণ্ডারা। কিন্তু তাদের ভূমিতে তাদেরই সবাই ঠকাতে শুরু করল। নেমে এলো অত্যাচার-নির্যাতন। ইংরেজ শাসক, জমিদার,মহাজন_ সবাই শোষণ শুরু করেছিল। খ্রিস্টান মিশনারিরাও প্রথমেই গরিব আদিবাসীদের টার্গেট করে। প্রথমে কয়েকজন ধর্মান্তরিত মুণ্ডা অত্যাচার, শোষণের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান মিশনে অভিযোগ জানায়। কিন্তু ফল হয়নি। এর মধ্যে ১৮৭৫ সালের ১৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন বিরসা মুণ্ডা। বৃহস্পতিবারে জন্ম নিয়েছিলেন বলে বাবা-মা ছেলের নাম রাখেন বিরসা। বয়সপ্রাপ্ত হয়ে বিরসা মুণ্ডাদের মুক্তির স্বপ্ন দেখতে থাকেন। মুণ্ডাদের বলেন, 'আমি তোমাদের নতুন ধর্ম শেখাব। আমি তোমাদের মরতে আর মারতে শেখাব।' বিরসার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং বিরসার ধর্মমন্ত্রে দীক্ষিতরা পরিচিত হতে থাকল 'বিরসাইত' নামে।
বিরসার কর্মকাণ্ডে ইংরেজ সরকার নড়েচড়ে বসে এবং তিনি গ্রেফতার হন। পরে মুক্তি পেয়ে ফের বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ১৮৯৯ সালে বড়দিনের আগে বিরসাইতদের নিয়ে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রথম আঘাত হিসেবে স্থানীয় খ্রিস্টান মিশনগুলোতে হামলা ও অগি্নসংযোগ করেন। এ সময় বেশকিছু ইংরেজ সাহেব, মিশনারি, পুলিশ, চৌকিদার হতাহত হয়। বিরসা জানতেন ইংরেজ ও খ্রিস্টান মিশনারি সাহেব আলাদা নয়। সাদারা কালোদের বন্ধু হতে পারে না। বলেছিলেন, 'মিশনারি আর অফিসার সবাই এক জাত_ সাহেব সাহেব এক ট্যোপি হ্যায়।' ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী বিদ্রোহ দমনের জন্য সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ১৯০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিরসা মুণ্ডা ধরা পড়েন এবং রাঁচি জেলে ১৯০০ সালের ৯ জুন মৃত্যুবরণ করেন। জেল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর কারণ কলেরা বলে জানায়। অনেকে মনে করেন, বিরসাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছিল।
ইংরেজ শাসকদের কামান-বন্দুকের কাছে বিরসার তীর-ধনুক পরাজিত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু মুণ্ডা জাতিগোষ্ঠীর তথা আদিবাসীদের মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে দিয়েছিলেন বিরসা মুণ্ডা। বিরসা মুণ্ডা আজ সবার কাছে বিরসা ভগবান হয়ে বেঁচে আছেন। ভারতে বিরসা মুণ্ডার স্মরণে বিরসা মুণ্ডা বিমানবন্দর হয়েছে। বিরসাকে নিয়ে ২০০৮ সালে 'গান্ধী সে পেহেলি গান্ধী' চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশে আজও আদিবাসীরা তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীর সব আদিবাসীসহ শোষিত-বঞ্চিত মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে_ ভগবান বিরসা মুণ্ডার এমন স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই।
ananimist@yahoo.com
No comments