পণ্যভর্তি ট্রাক ছিনতাই-নিরাপদ মহাসড়ক কি অসম্ভব?
কয়েকশ' মামলা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পুনঃপুন আবেদন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্বেগ সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন সড়কপথে বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে সংঘটিত পণ্যভর্তি ট্রাক ছিনতাই কমছে না কেন, আমাদের বোধগম্য নয়।
চোরের হাত কি আইনের হাতের চেয়েও লম্বা? আমরা বিশ্বাস না করলেও গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় এমন প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। বুধবার সমকালের অপরাধ পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, ছিনতাই হওয়া ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যানগুলোর বেশিরভাগই পরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ভেতরের পণ্য, বিশেষত তৈরি পোশাক হয় লাপাত্তা। এর একটিই অর্থ_ এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা সাধারণ অপরাধ হতে পারে না। তৈরি পোশাক ছাড়াও যে ধরনের সিমেন্ট, সিরামিক, টাইলস, তুলা ও মেলামাইনসহ রফতানি পণ্য ছিনতাই হয়ে থাকে, দেশের অভ্যন্তরে সেগুলোর বাজারজাত কঠিন। ছিনতাই হওয়ার পর সেগুলোই অন্য কোনোভাবে রফতানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির এই অভিযোগ যথেষ্ট গুরুতর যে, বন্দর থেকেও পণ্য চুরি যাচ্ছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং তার সঙ্গে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী, চালক-হেলপার, এমনকি পুলিশ জড়িত বলে যে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তরা করেছেন, তা অবিলম্বে ও গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হোক। বিভিন্ন সময়ে ছিনতাইকারী গ্রেফতার হলেও তাদের গডফাদাররা কীভাবে বেঁচে যায়_ সে প্রশ্নও পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে করতে চাই আমরা। বিভিন্ন বায়িং হাউসে ছিনতাইকৃত পণ্য পাওয়া যায় বলে ব্যবসায়ীরা যে অভিযোগ তুলেছেন, তা যেমন গুরুতর তেমনি ছিনতাইয়ের নেপথ্য নায়কদের ধরার জন্যও সহায়ক। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে দেশের রফতানি ও বাণিজ্য বিঘ্নকারী ছিনতাইয়ের এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কঠিন নয়। মহাসড়কগুলো নিরাপদ রাখার স্বার্থেই মহাসড়ক পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। তারাই-বা কী করে? আমরা মনে করি, সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নেই মহাসড়কে ছিনতাই বন্ধ করতে হবে। সব পক্ষ দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হলে নিরাপদ মহাসড়ক অসম্ভব নয়।
No comments