চরাচর-সোনারঙের যমজ মঠ by আলম শাইন

সোনারং একটি গ্রামের নাম। প্রাচীন বাংলার রাজধানী বিক্রমপুরে অবস্থিত এ গ্রামটি। বিশেষ একটি কারণে এ গ্রামটি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। সেই বিশেষ কারণটি হচ্ছে, সোনারঙের টুইন টাওয়ার বা যমজ মঠ। যা দর্শন করতে এসেছিলেন সাবেক বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সমর সেন।


তিনি ১৯৭২ সালে হেলিকপ্টারে করে সোনারং এসেছেন শুধু এ যমজ মঠটি এক নজর দেখতে। যমজ মঠ প্রাঙ্গণে পেঁৗছেই তিনি নাকি খুব মোহিত হয়েছিলেন।
আসলে মঠ দুটি দেখে যে কেউই অভিভূত হয়ে পড়েন তাৎক্ষণিকভাবে। কারণটি হচ্ছে, এর শৈল্পিক দিকটি। সোনারঙের নির্জন স্থানে প্রায় ৭৫ বর্গফুট জায়গা দখল করে বিশাল দুটি মঠ কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। ১৮৪৩ সালে জমিদার রূপচন্দ্র কর্তৃক এই মঠদ্বয় নির্মিত হয়। বড় মঠটির উচ্চতা ১৮০ ফুট ও ছোটটির ১৪৪ ফুট। তখন মঠের ভেতর একটি ছোট্ট সুন্দর মন্দিরও ছিল। সেখানে বেশ কিছু দামি পাথরের মূর্তি ছিল, যা পরবর্তী সময়ে পাচার হয়ে ভিনদেশে চলে যায়।
মঠ দুটির গায়ে বিভিন্ন ধরনের কারুকাজ শোভা পাচ্ছে। যদিও এখন অযত্ন-অবহেলায় মঠের গায়ের পলেস্তারা খসে পড়েছে, তবুও সৌন্দর্যের ঘাটতি হয়নি বিন্দুমাত্র। বরং সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে শত শত টিয়া পাখির দঙ্গল। পুরো মঠের ফাঁক-ফোকরে টিয়া পাখি আশ্রয় নিয়েছে। সূর্যাস্তের কিছুটা আগে এলেই চমৎকার দৃশ্য নজরে পড়ে। টিয়া পাখি মঠের ফাঁক-ফোকর থেকে বাইরে গলা বের করে চমৎকার সুরে ডাকতে থাকে। যা শুনলে এবং দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। মনে হয়, কোনো পাখির অভয়ারণ্যে এসে পেঁৗছেছি।
মঠ দুটির কারুকার্যে সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। বড় মঠটির গায়ে বাড়তি যে জিনিসটি লক্ষণীয় তা হচ্ছে, এর চারদিকে ঘড়ির ছবি আঁকা। ঘণ্টার কাঁটা ৭-এর ঘরে এবং মিনিটের কাঁটা ১০-এর ঘরে। জনশ্রুতি রয়েছে, জমিদার রূপচন্দ্রের বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ৭-১০ মিনিটে সম্পন্ন করা হয়েছিল। অবশ্য এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘরের অধীনে মঠ দুটি থাকলেও এ ধরনের কোনো কিছু লেখা নেই। এমনকি নেই সংস্কারের ছিটেফোঁটাও। ১৯৩০ সালের দিকে বড় মঠটির মাথার ওপর বজ্রপাত হলে এর ত্রিশূলটি ভেঙে যায়। যা অদ্যাবধি ওই অবস্থায় রয়েছে।
নির্জনতার কারণে মঠ দুটির পাদদেশে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে লোকজন বেশ উৎসাহ বোধ করে। এসব কারণে এ পুরাকীর্তিটি হয়তো অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ ব্যাপারে সজাগ থাকলে হয়তো যমজ মঠ দুটি রক্ষা পেতে পারে।
আলম শাইন

No comments

Powered by Blogger.