শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি বনাম শিক্ষার মান by মোঃ মুজিবুর রহমান
অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি হয়েছে। সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পদ তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড পদমর্যাদায় উন্নীত করার ঘোষণা কার্যকর করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ১৫ মে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।
শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে স্কুলগুলোয় পড়ালেখার গুণগত মান বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনার দাবি রাখে। শিক্ষকদের গুরুত্বের সঙ্গে উপলব্ধি করতে হবে, স্কুল শিক্ষার মান নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমাদের স্কুলগুলোয় শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষার মান সন্তোষজনক নয়। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকরা ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে পড়ানোর চেয়ে বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেন এবং সুকৌশলে পরীক্ষায় নম্বর কম দিয়ে তাদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। তবে সব শিক্ষকই এটি করেন না। আবার অনেকেই বিভিন্ন প্রকাশন সংস্থার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধালাভের বিনিময়ে অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত বই পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করায় ভূমিকা রাখেন। শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়।
আমরা অবাক হই যখন দেখি, অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা-পয়সা আদায় করার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা এ বিষয়টি বুঝতে পারলেও বাস্তবে তাদের কিছুই করণীয় থাকে না। অভিভাবকরা নিজ সন্তানের ভবিষ্যৎ ও নিরাপদ শিক্ষাজীবনের কথা ভেবে স্কুলগুলোর দাবিকৃত অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য হন। শুধু তাই নয়, কখনও কখনও স্কুলে কোচিং করানোর নামেও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। ভর্তির সময় ডোনেশনের নামে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এ নিয়ে দেশজুড়ে নিকট অতীতে অনেক সমালোচনা ও হইচই হয়েছে। কোনো কোনো স্কুলে বেতন আদায়ের রসিদের মাধ্যমে 'বিবিধ' খাতের পাশাপাশি 'অন্যান্য খাত' নাম দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়ে থাকে।
বর্তমানে জেএসসি ও এসএসসি পর্যায়ের পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সামগ্রিকভাবে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। গড় পাসের হারও বেড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পরীক্ষার ফলে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। এটি আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক এবং এ সাফল্যের অন্যতম দাবিদার শিক্ষকরা। কিন্তু পরীক্ষায় পাসের হার এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমে যদি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধের বিকাশ না ঘটে, উন্নত নৈতিক গুণাবলির উন্মেষ না হয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সহনশীল মনোভাব গঠিত না হয়, তাহলে আমরা কি ওই শিক্ষাকে গুণগত শিক্ষা বলব? নিশ্চয়ই না। শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার মান বৃদ্ধির বিশাল দায়িত্ব তাদের কাঁধে এসে পড়েছে। আমরা আশা করব, শিক্ষকদের পেশাজীবী সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষকরা স্কুলগুলোয় শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং পাঠদানের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য চেষ্টা আরও বাড়াবেন। তাহলেই জাতি শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধির সুফল পাবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষ শুধু অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের বোঝা বয়েই যাবে। তাদের প্রাপ্তি হবে শূন্য, যা প্রত্যাশিত নয় কারোরই।
ৎ সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ময়মনসিংহ
mujibur30@yahoo.com
আমরা অবাক হই যখন দেখি, অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা-পয়সা আদায় করার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা এ বিষয়টি বুঝতে পারলেও বাস্তবে তাদের কিছুই করণীয় থাকে না। অভিভাবকরা নিজ সন্তানের ভবিষ্যৎ ও নিরাপদ শিক্ষাজীবনের কথা ভেবে স্কুলগুলোর দাবিকৃত অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য হন। শুধু তাই নয়, কখনও কখনও স্কুলে কোচিং করানোর নামেও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। ভর্তির সময় ডোনেশনের নামে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এ নিয়ে দেশজুড়ে নিকট অতীতে অনেক সমালোচনা ও হইচই হয়েছে। কোনো কোনো স্কুলে বেতন আদায়ের রসিদের মাধ্যমে 'বিবিধ' খাতের পাশাপাশি 'অন্যান্য খাত' নাম দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়ে থাকে।
বর্তমানে জেএসসি ও এসএসসি পর্যায়ের পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সামগ্রিকভাবে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। গড় পাসের হারও বেড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পরীক্ষার ফলে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। এটি আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক এবং এ সাফল্যের অন্যতম দাবিদার শিক্ষকরা। কিন্তু পরীক্ষায় পাসের হার এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমে যদি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধের বিকাশ না ঘটে, উন্নত নৈতিক গুণাবলির উন্মেষ না হয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সহনশীল মনোভাব গঠিত না হয়, তাহলে আমরা কি ওই শিক্ষাকে গুণগত শিক্ষা বলব? নিশ্চয়ই না। শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার মান বৃদ্ধির বিশাল দায়িত্ব তাদের কাঁধে এসে পড়েছে। আমরা আশা করব, শিক্ষকদের পেশাজীবী সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষকরা স্কুলগুলোয় শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং পাঠদানের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য চেষ্টা আরও বাড়াবেন। তাহলেই জাতি শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধির সুফল পাবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষ শুধু অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের বোঝা বয়েই যাবে। তাদের প্রাপ্তি হবে শূন্য, যা প্রত্যাশিত নয় কারোরই।
ৎ সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ময়মনসিংহ
mujibur30@yahoo.com
No comments