সমসময়-মোহাম্মদ কিবরিয়া_ কালোই যাঁর জন্য সেরা by আতাউস সামাদ

শিল্পী কিবরিয়ার চিত্রকর্ম বিদেশেও সমাদৃত হয়েছে বলে শুনেছি। তেমনি সুখ্যাতি পাওয়ার মতোই কাজ তাঁর। কেবলই রঙের ওপর রঙ। একেকটা ছবিতে সেই রঙের ক্ষেত্রবিন্যাস এবং রঙের গড়ন ও আভা এমন যে দর্শক তাই দেখে মোহাবিষ্ট হয়ে যায়।


এ ধরনের ছবি তার চারপাশে একটা আবহ তৈরি করে


বাংলাদেশের চিত্রকলা জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র মোহাম্মদ কিবরিয়া ৮৩ বছর বয়সে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন গত পরশু মঙ্গলবার (৭ জুন, ২০১১) সন্ধ্যায়। তার আগের দিন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও যুগস্রষ্টা সঙ্গীত শিল্পী আজম খানের ঘটনাবহুল দাফন ক্রিয়ার সময় মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর তৃতীয় জানাজায় অংশ নিয়েছি। গোরস্তানে সকল বয়স ও সকল শ্রেণীর মানুষ জমায়েত হয়ে নিঃশব্দে দেখিয়ে দিলেন, এই গায়ককে কত গভীরভাবে ভালোবাসতেন তাঁরা। গত পরশু সারাদিন আজম খানের চলে যাওয়ার ভাবনা আমাদের বাড়ির সবাইকেই ভারাক্রান্ত করে রেখেছিল। আমরা আরেক ধাক্কা খেলাম সন্ধ্যায় টেলিভিশনে খবর জেনে যে, আমাদের মহান শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া ইন্তেকাল করেছেন। আধুনিক চিত্রকলার দাপুটে বিমূর্ত ধারাটিকে তিনি খুবই সফলভাবে নিজ হাতে তুলে এনে মিলিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে। চেনা যায়, ছোঁয়া যায় এমন বিষয়বস্তু নিয়েও তাঁর খুবই ভালো ছবি আছে বেশ ক'টি। এগুলো শুধুই রঙনির্ভর তাঁর বিখ্যাত কাজগুলোর আগে করা। নদীর তীরে ক্ষেতের পাশে কাদার ওপর টেনে তুলে রেখে যাওয়া একটি নৌকা আর ক্ষেতের পর নিঃসীম আকাশ_ এই নিয়ে আঁকা তাঁর একটি ছবি দেখতাম প্রয়াত বন্ধুবর আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মাহবুবুর রহমান খানের বাড়িতে। আমাদের সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি জগতের প্রায় সব নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মাহবুব যোগাযোগ রাখতেন। তাঁর নেশা ছিল বই সংগ্রহ করা ও পড়া।
শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার সঙ্গে আমার পরিচয় নামমাত্র। তাঁর সঙ্গে বিনিময় করা বাক্যের সংখ্যা পাঁচ-সাতটির বেশি হবে না। কিন্তু সামান্য হলেও একটা কাজ করেছিলাম তাঁকে নিয়ে। অধুনালুপ্ত বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকা বিখ্যাত হয়েছিল সেটির প্রথম নামে_ পাকিস্তান অবজারভার। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এই পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকাই সর্বপ্রথম ট্যাবলয়েড সাইজে রঙিন সপ্তাহান্তের সাময়িকী বের করে। নাম ছিল 'সানডে অবজারভার'। এই আকারের ম্যাগাজিনটির প্রথম সম্পাদক সম্ভবত বেবী ভাই (সৈয়দ মাহবুব আলম চৌধুরী) এবং তারপর নিশাত সাদানী। ১৯৬৯-এ আমি অবজারভারের চিফ রিপোর্টার পদ থেকে বদলি নিয়ে ওই ম্যাগাজিনটির দায়িত্ব পাই। আমার আগেই সেখানে ছিলেন জিয়াউর রহমান খান (পরে ব্যারিস্টার ও বিএনপিদলীয় রাজনীতিক), তাহমিনা সাঈদ (যিনি বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকদের মধ্যে দেশে এবং বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন) এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা গীতিআরা শাফিয়া চৌধুরী। তখন তিনি আঙ্কল কিম এই ছদ্মনামে পত্রিকাটির শিশু-কিশোর বিভাগ 'ইয়ং অবজারভার' পরিচালনা করতেন। অবজারভার ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক ছিলেন সাংবাদিক ফজল এম কামাল। প্রত্যেক সপ্তাহে পুস্তক সমালোচনা লিখতেন অধ্যাপক এস এন কিউ জুলফিকার আলী। ওই ম্যাগাজিনের মান সমুন্নত রেখে চলা আর বেবী ভাইয়ের রেখে যাওয়া দারুণ সব রঙিন প্রচ্ছদের ঐতিহ্য ধরে রাখা আমার জন্য বেশ কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরই মধ্যে পাকিস্তানি সেনাশাসক আইয়ুব খানের পতনের পর সেই ঘটনাই একটা প্রচ্ছদ কাহিনীর বিষয়বস্তু নির্বাচন করলাম আমরা। 'ফল অব এ টাইটান' শিরোনামে প্রচ্ছদ কাহিনীটি খুব সম্ভবত আমিই লিখেছিলাম জিয়ার তুখোড় ইংরেজি সাহায্য নিয়ে। প্রচ্ছদের ছবি দিলেন বিখ্যাত আলোকচিত্রী নাইবউদ্দিন আহমেদের ছোট ভাই আরেক বিখ্যাত আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমেদ। তাঁর ছবিটি ছিল অসাধারণ। বিষয় ছিল আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের সময়ের একটা মশাল মিছিল। সেই মিছিল বেরিয়েছিল কারফিউ ভেঙে। ছবিতে দেখা যাচ্ছিল অন্ধকারের মধ্য দিয়ে যেন কয়েকটি বিদ্যুৎ ছুটে চলেছে। এ রকম ছবি ছাপাবার পর সমমানের প্রচ্ছদচিত্র সংগ্রহ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ল। বিষয়বস্তু নির্বাচন করতেও অনেক ভাবতে হতো। একবার আমরা বিষয় ঠিক করলাম পূর্ব পাকিস্তানের চিত্রকলা, তবে তা হবে সমসাময়িক অর্থাৎ জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের পর, কাজ নিয়ে। সাংবাদিক ও কবি সাইয়িদ আতিকুল্লাহ্ মাঝে মধ্যে চিত্রকলা নিয়ে লেখেন বলে শুনেছিলাম। তাঁকে গিয়ে ধরলাম। তিনি রাজি হলেন, তবে তিনি আমাদের বোঝালেন যে, কোনো একজন শিল্পীর কাজ নিয়েই আলোচনা হোক। আতিকুল্লাহ্ ভাই নিজেই সিদ্ধান্ত দিলেন যে, তিনি এ যাত্রা শুধুই শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার কাজ নিয়ে লিখবেন। আজ অকপটে স্বীকার করি, সেদিন আমি আদপেই জানতাম না যে, মোহাম্মদ কিবরিয়া কে বা কী আঁকেন। অবশ্য তা কোনোরকম বেয়াদবি ছিল না। আমার অজ্ঞতার মূল কারণ, প্রথমত শিল্প-সংস্কৃতি জগৎ সম্পর্কে আমার জ্ঞান নিরক্ষরতুল্য। দ্বিতীয়ত, মোহাম্মদ কিবরিয়া ছিলেন কেবল মৃদুভাষী নয়, প্রায় নিভৃতচারী। তবে সাইয়িদ আতিকুল্লাহ্ ভাইয়ের সঙ্গে তর্কে জড়াতাম না। তবে মনে মনে একটু বিস্মিত হলাম এ কারণ যে, বাংলাদেশে (তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান) আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে সুবিদিত ছিলেন শিল্পী আমিনুল হক, যিনি আতিকুল্লাহ্ ভাইয়ের সম্বন্ধী বটে। কিন্তু তিনি তাঁর কথা বলতেন না। দিন কয়েক পর আতিকুল্লাহ্ ভাই জানালেন যে, আমি যেন আমাদের ফটোগ্রাফার সঙ্গে নিয়ে আর্ট কলেজের হোস্টেলে গিয়ে কিবরিয়া সাহেবের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কয়েকটি চিত্রকর্মের ছবি তুলে নিয়ে আসি। কারণ, শিল্পী ক্যানভাসগুলো খবরের কাগজের ছাপাখানায় আনতে দিতে চান না। পাছে, ময়লা লেগে ছবি নষ্ট হয়। আমরা আতিক ভাইয়ের নির্দেশিত সময়মতো কিবরিয়া সাহেবের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি কয়েকটি ছবি দেখিয়ে বললেন, 'আতিকুল্লাহ্ এ ক'টা বেছে রেখে গেছেন। আপনারা ছবি তুলে নিন।' আমার জন্য সেই ছিল প্রথমবার তাঁর চিত্রকর্ম দেখা। আতিক ভাইয়ের পছন্দ করা সব ক'টা ছবি ছিল বিমূর্ত। শুধুই রঙের ক্ষেত্র। তাও কি একটা ছবিতে ছাই রঙের ওপর খানিকটা নিকষ কালো, আবার আরেকটাতে কালোর ওপর লাল (কোনোটাতে লাল ক্ষেত্রটি গোলাকার, কোনোটাতে আয়তক্ষেত্রের মতো) এ রকম মোট পাঁচটি কি ছয়টি ছবি। আমরা ছবিগুলো বারান্দায় নিয়ে চেয়ারের ওপর রেখে ফটোগ্রাফ তুললাম। শিল্পী নিঃশব্দে বসে চেয়ে চেয়ে দেখলেন। আমাদের কাজ হয়ে গেলে ছবিগুলো ঘরে রেখে তাঁর কাছে বিদায় চাইলাম। তিনি স্মিত হেসে বিদায় দিলেন। ব্যস, পরিচয় এবং আলাপ এ পর্যন্তই। যত দূর মনে পড়ে, কালো আর লাল কম্পোজিশনটি দিয়ে সানডে অবজারভারের প্রচ্ছদ করেছিলাম। খুব ভয় ছিল, কালো রঙকে প্রাধান্য দেওয়া ছবিগুলোর রেখাটির মেশিনের ঘূর্ণির টানে কী জানি দশা হয়। নাহ, ছবিগুলো মোটামুটি স্পষ্ট ছাপা হয়েছিল। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, শিল্পী কিবরিয়ার ওই শতভাগ বিমূর্ত ছবি এবং সাইয়িদ আতিকুল্লাহ্র লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর কারও কাছ থেকে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুনিনি। অফিসে সহকর্মীদের মধ্যে কাউকে কাউকে এক মনে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি। কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, 'এ ছবির অর্থ কী।' বলেছি 'দেখতে সুন্দর।' গতকাল বুধবার প্রথম আলো পত্রিকায় বিখ্যাত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর পূর্বসূরি ও গুরু মোহাম্মদ কিবরিয়া সম্পর্কে সামান্য কিছু (তাঁর জানার তুলনায়) যে লিখেছেন তাতে আছে, 'দেখলাম, নিজেকে বদলেছেন ছবির আঙ্গিকেও। বিষয়বস্তু উধাও ক্যানভাস থেকে। ফর্ম, স্পেস, টেক্সচার নিয়ে নতুন মাত্রার ছবি।' এ মন্তব্য জাপানে তিন বছর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর মোহাম্মদ কিবরিয়ার কাজের নতুন ধারা সম্পর্কে। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী আরও লিখেছেন যে, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে অধ্যাপক কিবরিয়ার অনুসারীই আছে, আর কারও তেমন নেই। শিল্পী কিবরিয়ার চিত্রকর্ম বিদেশেও সমাদৃত হয়েছে বলে শুনেছি। তেমনি সুখ্যাতি পাওয়ার মতোই কাজ তাঁর। কেবলই রঙের ওপর রঙ। একেকটা ছবিতে সেই রঙের ক্ষেত্রবিন্যাস এবং রঙের গড়ন ও আভা এমন যে দর্শক তাই দেখে মোহাবিষ্ট হয়ে যায়। এ ধরনের ছবি তার চারপাশে একটা আবহ তৈরি করে রাখে। আমরা সেটাও উপভোগ করি। মোহাম্মদ কিবরিয়ার আঁকা ছবিতে শুধুই রঙ থাকলেও তাঁর সৃষ্ট কল্পনার ভুবনটি বড় এবং সুন্দর। অন্য একজন শিল্পীর মুখে শুনেছি, সম্ভবত তাঁর ছাত্র স্বপন চৌধুরীর কাছে, যে মোহাম্মদ কিবরিয়া বলতেন, 'রঙের সেরা কালো।' প্রকৃতপক্ষেও নানা ঘনত্ব ও আভার কালো রঙ দিয়ে যদি হৃদয় আলো করা ছবি আঁকা যায় তাহলে তা অবশ্যই মহৎ কাজ। বাংলাদেশের বর্ষার মেখমেদুর কালো আকাশ তো সি্নগ্ধতায় মন ভরায়। অন্তত কারও মনের কলুষ দূর করে। মোহাম্মদ কিবরিয়া সেই আকাশ আত্মস্থ করেছেন এবং আমাদেরও তা করতে বলে গেছেন তাঁর ছবির মধ্য দিয়ে।
দুই. সাংবাদিক এবিএম মূসা পাকিস্তান অবজারভার অফিসে আমার কর্তা, যখন তিনি নিজ হাতে আমাদের পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তৈরি করছেন, তখন তিনি একদিন অফিসে সবার সামনে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, 'এ আমাদের অঘটন রিপোর্টার (ইংরেজিতে বলেছিলেন ঈধষধসরঃরড়ঁং ৎবঢ়ড়ৎঃবৎ)। এ যেখান দিয়ে যায় সেখানেই একটা হাঙ্গামা ঘটে।' তিনি যখন একথা বলেন তখন আমার বয়স ২৪ কি ২৫ বছর। এখন ৭৪ বছর বয়স পার করছি, তবুও তার কথাটি টিকে রইল। গত সোমবার বিশাল বায়তুল মোকাররম মসজিদের দিগভ্রান্ত হয়ে যুগস্রষ্টা গায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের জানাজায় শরিক হতে পারিনি। সঙ্গে আমার ছোট মেয়ে_ বৃদ্ধ বাপ বাইরে গেলে পাহারাদার হিসেবে সঙ্গ দেয় এবং এক্ষেত্রে শিল্পীর স্নেহধন্য ভক্ত, যার ইচ্ছা শিল্পীকে শেষবার দেখা। বায়তুল মোকাররমে ব্যর্থ হয়ে দু'জনে চলে গেলাম মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানে জীবনে প্রথমবার দেখলাম, একজনের জন্য স্থান পরিবর্তন করে দু'বার সমাধি তৈরি করা হলো।
শিল্পী আজম খানের মরদেহ নিয়ে 'শীতল গাড়ি' (রেফ্রিজারেটেড ভ্যান) শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পেঁৗছবার পর আমরা অপেক্ষা করছি যে, লাশ নামলে আজম খানের মুখ দেখব একবার আর দাফন হয়ে গেলে মোনাজাতে শামিল হবো। আমরা দাঁড়িয়েই আছি। প্রচণ্ড রোদ, তবু সমানে মানুষ আসছে_ আবালবৃদ্ধবনিতা। হঠাৎ শুনলাম, 'না, যেখানে কবর খোঁড়া হয়েছে সেখানে গোর হবে না। কারণ গোরস্তানের ওই অংশটি জনসাধারণের জন্য; কিন্তু ওই গোরস্তানে মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় জীবনে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমাধিস্থ করার জন্য খানিকটা জায়গা আলাদা করা আছে। আজম খানের সহযোদ্ধা, আত্মীয়স্বজন ও শিল্পী বন্ধুরা অনুরোধ করছেন যে, তাঁর কবর ওই বিশেষভাবে সংরক্ষিত স্থানে হোক। তাঁদের এ কামনা ছিল খুবই যুক্তিপূর্ণ। যাঁরা দোয়া করতে এসেছিলেন তাঁরাও একাট্টা হয়ে এই বিষয়ে স্লোগান তুললেন। অতঃপর সরকার ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে প্রথাগত বিশিষ্ট শিল্পীরা (হানিফ সংকেত, আইয়ুব বাচ্চু প্রমুখ) ফোনে আলোচনা করার পর অনুমতি পাওয়া গেল। তখন নতুনভাবে কবর খোঁড়া হলো শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায়। আজম খান সেখানে সমাহিত হলেন। ইতিমধ্যে আরও বহু মানুষ এসে গেছেন। আনুমানিক হাজার দুয়েক ভক্ত আজম খানের তৃতীয় ও শেষ জানাজা পড়লেন। আমিও তাঁদের একজন হতে পেরে স্বস্তিবোধ করেছি।
তবে এখানে আমার কথা হলো, মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী আজম খান ইন্তেকাল করেন শনিবার সন্ধ্যায়। তারপর থেকে দেশের রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সবাই শোকবাণী দিয়েছেন। কয়েকজন মন্ত্রী ও অনেক নেতা শহীদ মিনারে তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তারপরও কেন, কেউ উদ্যোগী হয়ে এবং দায়িত্ব নিয়ে আজম খানের কবর দেওয়ার জায়গাটি নির্ধারণ করে রাখলেন না?
এটাকে তাঁর প্রতি অবজ্ঞা নাকি স্রেফ দায়িত্ববোধের ঘাটতি। আমার মনে হয়, 'একবেলায় একজনের জন্য দুই কবর' খোঁড়ার প্রয়োজন হয়েছিল দ্বিতীয় কারণটির জন্য। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ববোধের অভাবই তো বাংলাদেশকে এগোতে দিচ্ছে না।

আতাউস সামাদ : সাংবাদিক
 

No comments

Powered by Blogger.