বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক-ইতিবাচক অগ্রগতির প্রত্যাশা
বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আসন্ন সফরকালে ইতিবাচক অগ্রগতি সাধিত হবে এবং ঐতিহাসিক চুক্তি হবে_ ঢাকায় সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা রাওয়ের এ মন্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রায় দেড় বছর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন।
এ সফরের সময় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিনটি বিষয়ে চুক্তি এবং দুটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরে প্রকাশিত হয়েছিল ৫০ দফার যৌথ ঘোষণা। এভাবে নিকট প্রতিবেশী দুটি দেশের সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য উভয় দেশের নেতৃত্ব প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার প্রমাণ রেখেছেন। কিন্তু ভারতের তরফে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে প্রদত্ত সব অঙ্গীকার যথাসময়ে পূরণ করা হয়নি বলেই ঢাকার তরফে জোরালো অভিমত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ফিরতি সফর যে খানিকটা বিলম্বিত, সে বিষয়টিও নয়াদিলি্লর অজানা নয়। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সফর বিনিময় আনুষ্ঠানিকতার গণ্ডির বাইরে নিয়ে এসে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এসেছে। সার্কভুক্ত সব দেশের নেতাদের মধ্যেও পারস্পরিক আলোচনা রেওয়াজে পরিণত হলে আস্থা জোরদার হবে, সবার কল্যাণে দ্বিপক্ষীয় ও বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন সহজ হবে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মনমোহন সিংয়ের আসন্ন সফরকালে যাতে 'ঐতিহাসিক চুক্তি' সম্পাদিত হয় সে লক্ষ্য সামনে রেখে অভিন্ন নদী তিস্তার পানি বণ্টনে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি সই, অচিহ্নিত সীমানা নির্ধারণ, ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি হস্তান্তরের মতো বিষয়ে সমাধানে পেঁৗছতে দু'পক্ষ কাজ করছে। বাংলাদেশকে যে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা প্রদানের চুক্তি হয়েছে তা ব্যবহারের শর্ত ভারতের অনুকূল বলেও মত রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এবং সব শর্ত প্রয়োজনে পাল্টানোর সুযোগ রয়েছে_ ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের এ মন্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাই। সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যার বিষয়টি বহু বছর ধরেই উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য পররাষ্ট্র সচিব দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং প্রতিবিধানে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এমন আশ্বাস বারবার বিভিন্ন পর্যায় থেকে দেওয়া হয়েছে এবং তা রক্ষায় আন্তরিক মনোভাব কখনও প্রদর্শিত হয়নি বলেই ঢাকার অভিমত। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ইস্যুর ফয়সালা এবং ট্রানজিটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে সমঝোতায় পেঁৗছানোর লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর নিষ্পত্তি আর বিলম্বিত হওয়া উচিত নয় বলেই আমরা মনে করি। সমস্যা যত জমা হতে থাকবে তার সমাধান তত জটিল হবে, এটা স্বাভাবিক। তাছাড়া উভয় দেশেই সুযোগসন্ধানী একটি মহল রয়েছে যারা বন্ধুত্বের বিকাশ নয়, বরং তা আরও তিক্ততার পথে ঠেলে দিতে তৎপর। ঢাকা বা দিলি্ল কোনো তরফের আচরণ ও কার্যকলাপ যেন এ সুযোগ সৃষ্টি করে না দেয় সে বিষয় সতর্কতা প্রত্যাশিত। তবে বৃহৎ প্রতিবেশী এবং বিশ্ব অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে ওঠা ভারতের কাছে আমাদের প্রত্যাশা একটু বেশি থাকাই স্বাভাবিক। আমরা আশা করব যে, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের তারিখ দ্রুত নির্ধারিত হবে এবং এ সময়ে শুধু ঐতিহাসিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকই সই হবে না, একই সঙ্গে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ-পদক্ষেপ গ্রহণের রূপরেখাও ঘোষিত হবে।
No comments