অসামান্য ওর পরিভ্রমণ
১৫ বছর দুজন একসঙ্গে খেলছেন ভারতের হয়ে। চোটের কারণে রাহুল দ্রাবিড়ের বিদায়ী ওয়ানডে সিরিজে নেই শচীন টেন্ডুলকার। কিন্তু দীর্ঘদিনের সতীর্থকে নিয়ে লিখেছেন ভারতীয় একটি পত্রিকায় রাহুলকে নিয়ে কথা বলার জন্য আমি বুঝতে পারি না কোত্থেকে শুরু করব। ওর ওয়ানডে ক্যারিয়ার অসাধারণ এবং ভারতীয় ক্রিকেটে অবদান অনেক। আমাদের সবার জন্য ও ছিল আদর্শ এবং কোনো সন্দেহই নেই, আদর্শ হয়েই থাকবে। অসাধারণ এক ক্যারিয়ার থাকার পরও আমার মনে হয়, সীমিত ওভারের ক্রিকেটের রাহুল ভারতীয় ক্রিকেটের ‘আনসাং হিরো।’ ওর রানই বলে দেবে ওয়ানডে ক্রিকেট এবং দেশের হয়ে ওর অবদান।
ওর বিশেষ মুহূর্তগুলোর সঙ্গী হিসেবে থাকতে পারার অনুভূতি দারুণ। আমি জানি, ক্যারিয়ারে রাহুলের যা অর্জন, তা ছোঁয়া সহজ নয়। হায়দরাবাদে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওর সঙ্গে অসাধারণ জুটিটা আমার এখনো মনে পড়ে, যে জুটিতে আমরা ৩০০-র বেশি (ওয়ানডে রেকর্ড ৩৩১) রান করেছিলাম। ওটা ছিল ‘স্পেশাল’, দারুণ ইনিংস। দারুণ ব্যাটিং করেছিল রাহুল, সময়মতো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রানের গতিও বাড়িয়েছিল।রাহুলের একটি দারুণ ব্যাপার হলো ও সব সময়ই কঠোর পরিশ্রম করতে ভালোবাসে। সব সময়ই খেলাটার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পছন্দ করে। ওয়ানডে ক্রিকেট শুরু করার পর প্রথম দিকে ওর কিছু সমস্যা হয়েছিল, কিন্তু ও হার মানেনি। লড়াই করেছে, নিজের খুঁতগুলো নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে অনেক ব্যাটসম্যানই আছে যারা দ্রুতগতির সূচনা এনে দেয়, রান করে ঝোড়ো গতিতে। রাহুলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ছিল ভিন্ন।
ও হয়তো দ্রুতগতির সূচনা এনে দিতে পারবে না কিন্তু উইকেটে থাকা সময়টাকে কাজে লাগায়। এ ধরনের ক্রিকেটার দলে প্রয়োজন আছে এবং এই কাজের জন্য রাহুলই ছিল সবচেয়ে সেরা। দলের অন্যরা ওকে কেন্দ্র করেই খেলত, রাহুল খেলত পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী। এমন নয় যে ও দ্রুতগতিতে রান তুলতে পারত না, কিন্তু ও চাইত, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করতে। ওর টেস্ট ইনিংসগুলো অবশ্যই বেশি বিখ্যাত। কিন্তু ওর একটি ওয়ানডে ইনিংসের কথা আমার খুব মনে পড়ে, ২০০৭ সালে ব্রিস্টলে যেটায় ৯০ রান করেছিল ৬০-এর মতো বল খেলে (৬৩ বলে ৯২*)। আমাদের জন্য কিন্তু ওই ইনিংসটা বিস্ময় হয়ে আসেনি, এমনকি অতীতেও যখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই দুর্দান্ত ফিফটিটা করেছিল (২২ বলে, ভারতের হয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম)।
ম্যাচ শেষ করে আসার সামর্থ্যও ছিল রাহুলের। আমার মনে আছে, ৫ নম্বরে নেমে এবং অন্য পজিশনে নেমেও অনেকবার ও এই ভূমিকা পালন করেছে। গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য হিসেবে দলে জায়গা ধরে রাখার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল এটা। যখনই সুযোগ পেয়েছে, রাহুল চেষ্টা করেছে ম্যাচ শেষ করে আসার। সফল হয়েছে অসংখ্যবার।
ও আদর্শ ‘টিমম্যান।’ যখন ওকে উইকেটকিপিং করতে বলা হলো, আমরা জানতাম ও রাজি হবে কারণ একসময় ও কিপিং করেছে। পরে এটা ওকে সাহায্য করেছে, ভারতীয় দলকে তো অনেক সাহায্য করেছে ২০০৩ বিশ্বকাপে। ওই টুর্নামেন্টে সময়ের সঙ্গে ও উন্নতি করেছে, ব্যাট হাতেও রান করেছে দ্রুতগতিতে।
খেলা নিয়ে আমরা অনেক কথা বলতাম, দীর্ঘ আলোচনা হতো ব্যাটিং নিয়ে। সত্যি বলতে এখনো হয়। আলোচনা করি খেলার ধরন নিয়ে। এতগুলো বছর ধরে ওর সঙ্গে এতসব স্মরণীয় মুহূর্ত আছে যে একটিকে বেছে নেওয়া কঠিন। দলের জন্য ও ইনিংস শুরু করেছে, তিনে ব্যাট করেছে, নিচের দিকে খেলেছে। দল যেখানে চায় সেখানেই ব্যাট করেছে। সত্যিই অসামান্য ওর এই পরিভ্রমণ।
No comments