ক্ষুব্ধ চেয়ারপারসনঃ বিএনপির কোন্দল ঠেকাতে প্রয়োজনে বহিষ্কার
বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের নিজের জেলা ছিল মানিকগঞ্জ। তিনি মহাসচিব থাকার সময়ে দ্বন্দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে মানিকগঞ্জে দলীয় কমিটি করতে পারেননি। সেই কোন্দলের ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। ফলে সেখানে এখনো বিএনপির কমিটি নেই। গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ আরো কয়েকটি জেলার অবস্থাও প্রায় একই রকম।
এসব জেলার কোথাও বিএনপির কমিটি নেই, আবার কোথাও আছে পাল্টাপাল্টি কমিটি। এ অবস্থায় আজ শনিবার বিকেলে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা ডেকেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সূত্র জানায়, সভায় সমস্যাসংকুল বিভিন্ন জেলা বিএনপির বর্তমান ও সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে মির্জা ফখরুল কোন্দল নিরসনের চেষ্টা করবেন। বিরোধপূর্ণ জেলায় দলীয় কমিটি চূড়ান্ত করার কথাও রয়েছে। যাঁরা এ কমিটির বিরোধিতা করবেন, তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ দল থেকে বহিষ্কার করার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। সভায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে সব জেলার নেতা-কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হবে।বিএনপির একটি সূত্র জানায়, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বিএনপির আন্দোলন সফল করার কৌশল ও এ ক্ষেত্রে বাধা-বিপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বিভিন্ন জেলায় বিএনপির দুর্বলতা চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। খালেদা জিয়া দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের প্রয়োজনে বহিষ্কার করার নির্দেশ দেন।
খালেদা জিয়া গত ঈদুল ফিতরের আগে মির্জা ফখরুলসহ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আরেকটি বৈঠক করেন। সেখানেও তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁর ওই নির্দেশের পর দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের হুঁশিয়ার করে দেন মির্জা ফখরুল। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় চলতি মাসে দল ও সহযোগী কয়েকটি সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এমন কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত সোমবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, জেলা কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব যেকোনো মূল্যে দূর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি সফলভাবে পালন করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতেও বলা হয়েছে। এসব নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের দায়ে ঢাকা জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুলতান নাসের, ঢাকা জেলা কৃষক দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক কাওছার, জাসাসের উপদেষ্টা লায়ন নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতাকে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি সংগঠনের থানা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। রাজধানীতে যুবদলের উত্তরা থানা কমিটি গত বুধবার বিলুপ্ত করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।
সাংগঠনিক স্থবিরতার কারণে সম্প্রতি নীলফামারী জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাতিল করা হয়। নতুন কমিটি গঠন করতে গত বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব একটি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সদস্য প্লাবন শেখ পিলুকে বহিষ্কার এবং সহসভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
বিএনপির এমন কঠোর অবস্থান সম্পর্কে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'প্রতিটি দলের একটি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থাকে। সে অনুযায়ী দল পরিচালিত হয়। কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটাও এর মধ্যে পড়ে। কেউ শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করলে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে_এটাই স্বাভাবিক।'
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু বলেন, 'গত সোমবারের বৈঠকে আমরা দলের সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা করেছি। যেখানে কমিটি নেই সেখানে কমিটি করা, দ্বন্দ্ব থাকলে তা নিরসন করা, আন্দোলন-সংগ্রামে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা_এসব বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে। যেসব জায়গায় কমিটি নেই, সেখানে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। ওই কমিটি কেউ না মানলে তাঁকে বহিষ্কার করার মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।' অন্যদিকে যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, 'দল ও সংগঠনের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করলে যে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
No comments