ডিভির দরজা বাংলাদেশের জন্য বন্ধ
বাংলাদেশীদের জন্য ডিভি ভিসার দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ডিভি লটারিতে অংশ নেয়ার আর সুযোগ পাচ্ছে না বাংলাদেশীরা। এই প্রথম ডিভি ভিসা কার্যক্রম থেকে বাংলাদেশীরা বাদ পড়ল। আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় বাংলাদেশের নাগরিকরা হতাশ। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালের ডাইভারসিটি ইমিগ্রান্টদের জন্য প্রচারিত ১৬ পৃষ্ঠার এক নির্দেশনায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে জানানো হয়, আগামী ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া এ লটারিতে বাংলাদেশ ছাড়া আরও ১৮টি দেশের নাগরিকরা অংশ নিতে পারবেন না।
তবে এ সুযোগ কতদিনের জন্য বাংলাদেশ হারাল তার কোনো ব্যাখ্যা না থাকায় বাংলাদেশীদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। ওয়েবসাইটে বাংলাদেশীরা যে ডিভি লটারিতে মোটেও অংশ নিতে পারবেন না তা আলাদাভাবে বলা আছে। অন্য দেশের ক্ষেত্রে এভাবে বলা নেই।এ ব্যাপারে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনার ব্যাখ্যা সম্পর্কে এখনও কিছু জানি না। বিস্তারিত জানতে কয়েকদিন সময় লাগবে’। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কিছু জানে না। ডিভি ভিসার সুযোগ হারানোর কারণ হিসেবে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘গত পাঁচ বছরে যেসব দেশের ৫০ হাজার নাগরিক আমেরিকায় অভিবাসী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, সেসব দেশের নাগরিকরা ২০১৩ সালের ডিভি লটারিতে অংশ নিতে পারবেন না’। তবে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ আবুল কাশেম বিবিসিকে জানান, মার্কিন কর্তৃপক্ষ যদিও বলছেন বাংলাদেশীদের ডিভিতে যাওয়ার সংখ্যা ৫০ হাজার হয়ে গেছে, আসলে এ পরিসংখ্যানটি ঠিক নয়। ডিভি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন ৪০ হাজার বাংলাদেশী।
অবশ্য ডিভি ভিসার সুযোগ বাংলাদেশসহ বাদপড়া দেশের নাগরিকরা আবার পাবেন কিনা অথবা কবে নাগাদ পেতে পারেন সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। তাই বাংলাদেশের নাগরিকরা হতাশ হয়েছেন। তারা গতকাল টেলিফোনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণ ও নির্দেশনাটির আওতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন। তাদের কেউ কেউ এটাও আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশীদের জন্য ডিভির দরজা হয়তো বন্ধ হয়ে গেল।
তাদের ডিভি ভিসার আশঙ্কার অন্যতম একটাই কারণ—নির্দেশনায় যে ১৮টি দেশের নাম দেয়া হয়েছে তার বাইরেও বাংলাদেশী নাগরিকরা (যে দেশেই অবস্থান করুক না কেন) লটারিতে মোটেও অংশ নিতে পারবেন না—এটা আলাদাভাবেও বলা হয়েছে, যা অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে বলা হয়নি। তবে এই প্রথমবারের মতো দক্ষিণ সুদান ও পোল্যান্ডের নাগরিকরা ডিভি লটারির জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।
ডিভি ভিসার মাধ্যমে আমেরিকায় যাওয়া বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়। গত ২০ বছর ধরে হাজার হাজার বাংলাদেশী ডিভি ভিসায় আমেরিকায় অভিবাসী হয়েছেন। ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ আবুল কাশেম বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ডিভি ভিসায় আমেরিকা যাওয়ার কোটা ছিল ৩ হাজার ৭৫০ জন। যদিও প্রতি বছর আমেরিকায় বাংলাদেশী নেয়া হয়েছে আড়াই হাজার, ২ হাজার ৮শ’ এমন সংখ্যায়। ডিভি লটারি পাওয়ার আশায় প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ২০ থেকে ৩০ লাখ দরখাস্ত পড়তো। টানা পাঁচ বছর ধরে ডিভি লটারির জন্য দরখাস্ত করেছেন সিলেটের আইনজীবী নিলেন্দ দেব। তিনি ডিভি ভিসা বাংলাদেশীদের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে শুনে বিবিসির কাছে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের আমেরিকা যাওয়ার সুযোগটা চলে গেল। একটি মডার্ন দেশে যাওয়ার, স্বপ্নের সেই দেশটাকে দেখার খুব আগ্রহ ছিল। সেই আশাটা বুঝি আর পূরণ হলো না।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবার ডিভির সুযোগ থেকে যেসব দেশের নাগরিকদের বঞ্চিত করছে সেগুলো হলো—বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, কলম্বিয়া, ডমিনিকান রিপাবলিক, ইকুয়েডর, এল সালভেদর, গুয়াতেমালা, হাইতি, ভারত, জ্যামাইকা, মেক্সিকো, পাকিস্তান, পেরু, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন (উপনিবেশসহ) ও ভিয়েতনাম। চীনের মূল ভূখণ্ডের নাগরিকরা ডিভির আবেদনের সুযোগ হারালেও হংকং, ম্যাকাউ ও তাইওয়ানের নাগরিকরা আবেদন করতে পারবেন। চলতি বছর ৫০ হাজার আবেদনকারী ডিভি ভিসা পাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতি বছর এ ভিসা কর্মসূচিটি পরিচালনা করে। এটা সাধারণভাবে গ্রিনকার্ড নামে পরিচিত।
নির্দেশনা অনুযায়ী আফ্রিকার ৫৪টি দেশের নাগরিক বা এসব দেশের অভিবাসীরা এবারের ডিভির জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। তবে এশিয়ার দেশ ফিলিস্তিনের গাজার অধিবাসীরা আফ্রিকান দেশ মিসরের মাধ্যমে আবেদনের সুযোগ পাবেন। এশিয়া থেকে সুযোগ পাবেন ৩২ দেশ। এবার এশিয়া থেকে বাদ গেছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের নাগরিকরা। অন্যদিকে ইউরোপের ৫৭টি দেশের নাগরিকরা ডিভির সুযোগ পাচ্ছেন।
মধ্য এশিয়ার আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরঘিজিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও তুরস্কের নাগরিকরা ইউরোপ মহাদেশের ক্যাটাগরিতে আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া ডিভি ভিসার জন্য ব্রিটেন ও তার বেশ কিছু উপনিবেশের নাগরিকরা আবেদন জানানোর সুযোগ না পেলেও আয়ারল্যান্ডের নাগরিকরা বিশেষ বিবেচনায় আবেদন জানানোর সুযোগ পাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নির্দেশনায় এটাও বলা হয়েছে, ‘ডাইভার্সিটি ভিসা (ডিভি) প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে যেসব দেশের অভিবাসী কম সেসব দেশ থেকে প্রতি বছর ৫০ হাজার জনকে স্থায়ী অধিবাসী ভিসা দেয়া হয়।’
No comments