এবার সবজির দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে
মাছের দাম বাড়ায় তা এরই মধ্যে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সবজির দামও বেড়েই চলছে। প্রায় সব ধরনের সবজি ৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। তাদের মতে, সবজির দাম এতই বেড়েছে যে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য সব পণ্যের মতো সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বাড়ছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বৃষ্টির কারণে ফলন কমেছে। রাস্তা ভালো না থাকায় সরবরাহও কমেছে।
রাস্তায় ক্ষমতাসীন দলের পরিবহন শ্রমিক ও পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। এসব কারণে সবজির দামে চড়া ভাব বিরাজ করছে। তারা আরও জানান, দাম বাড়ায় বিক্রি কমেছে; ফলে অস্বস্তিতে রয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। এদিকে আবারও নিম্নচাপ হলে সবজির দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।রাজধানীর কারওয়ানবাজার, হাতিরপুলসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে এবং ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে সব সবজির দামই চড়া। উচ্চমূল্যের এ বাজারে এত দিন যারা সবজি কিনে বাজারের থলে ভরেছেন তারা এখন বাজারে ঢুকতেই সাহস পাচ্ছেন না। যারা বাধ্য হয়ে বাজারে ঢুকেছেন তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। চড়া দামের কারণে অল্পস্বল্প পরিমাণে সবজি কিনেই বাড়ি ফিরছেন। অনেকে দাম শুনেই নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। অনেককে আবার খুচরা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে গালাগালা করতেও দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানান, গত কয়েক দিন আগে বৃষ্টির কারণে সবজি উত্পাদনকারী এলাকা যেমন যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নরসিংদী, ফরিদপুর, মাগুরা, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরের অনেক জায়গায় ফলন নষ্ট হয়েছে। এসব জায়গা থেকে ঢাকায় সবজি সরবরাহ কমে গেছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি পটল ৪০-৫০ টাকা, করল্লা ৬০, টমেটো ৭০-৮০, লম্বা বেগুন ৫০-৬০, চিচিঙ্গা ৫০, ঝিঙা ৪০-৫০ ও কাঁচামরিচ ১২০-১৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। রাজধানীর নিকেতনের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, নিকেতন বাজার থেকে প্রতি কেজি করল্লা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০, কচুর লতি ৬০, পটল ৪০, ছড়া কচু ৪০ ও একপিস ছোটো লাউ ৬০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। তিনি জানান, অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে। মগবাজারের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি করল্লা ৬০, চিচিঙ্গা ৫০, বরবটি ৬০ ও সিম ১২০ টাকা দরে কিনেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আবহাওয়া ভালো। তারপরও দাম বাড়ছে। কেন বাড়ছে, তার উত্তর পাওয়া যায় না।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেটের সবজি ব্যবসায়ী রেজাউল করীম জানান তিনি পটল ৪৫-৫০ টাকা, সিম ৮০, লম্বা বেগুন ৬০, গোল বেগুন ৪০-৫০, টমেটো ৮০, কাঁচামরিচ ১২০-১৩০ ও বরবটি ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। সবজির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। আমরা তো লোকসান দিয়ে ব্যবসা করব না। সরকার কৃষিখাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিলেও সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত উত্পাদন না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন চাঁদাবাজির কারণে দাম বাড়ছে বলেও জানান তিনি। একই বাজারের আরেক সবজি ব্যবসায়ী মো. কুদ্দুস সবজির দাম বাড়ার কথা জানিয়ে বলেন, সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। তিনি প্রতি কেজি করল্লা ৬০ টাকা, শসা ৩০, লম্বা বেগুন ৫০, গোল বেগুন ৪৫, কাঁচামরিচ ১২০, সিম ৮০, পেঁপে ১৬, চিচিঙ্গা ৫০, ঝিঙা ৪০ ও ঢেঁড়শ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
সবজির পাইকারি বাজার ঘুরেও দাম বাড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কারওয়ানবাজারের লতিফ চেয়ারম্যান গদির বিক্রেতা মো. আজাহার আলী জানান, একপাল্লা (৫ কেজি) ধুন্দল ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন, আগে তা ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানান, গতকাল প্রতি কেজি বরবটি ৫৫ টাকা, পেঁপে ১০, চিচিঙ্গা ৩৫, সিম ৬৫, কাঁচামরিচ ১০০, গোল বেগুন ২৬, লম্বা বেগুন ৩৫, ঝিঙা ৪৪ ও ঢেঁড়শ ৩৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
No comments