ক্যাম্পাস হত্যার বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠান by মিজানুর রহমান খান
লাল বাতি জ্বলে, কিন্তু গাড়ি চলে। সবুজ বাতি জ্বলে, গাড়ির চাকা বন্ধ থাকে। রাজধানীতে এ দৃশ্য চিরচেনা হয়ে উঠেছে। এখন রাজনীতিতেও খটকা চলছে। এ থেকে আমরা আসলে এক সংকেত-অসংবেদনশীল জাতিতে পরিণত হচ্ছি। এটা এক ধরনের বিকার বটে।
ছাত্রলীগের বেপরোয়া সন্ত্রাস বন্ধে সরকারি দলের অব্যাহত কঠোর হুঁশিয়ারিও এক ধরনের বৈকল্য। আপাত মনে হয় ভালোই তো। সরকারি দল কত নিরপেক্ষ। কত উদার। আমাদের শাসকদের দিল কত নরম। তারা কত উত্তম সরকার। আসলে তা কোনোটিই নয়। আমাদের বিরোধী দল মানে বিএনপি-জামায়াত এখন ছাত্রলীগের হানাহানি ও রক্তপাত উপভোগ করছে। তারা এক ধরনের অমানবিক মজা পাচ্ছে। তারা একটি বিষয়ে সতর্ক। ক্যাম্পাস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তারা করবে না। ক্যাম্পাসের রক্তগঙ্গা, সহিংসতার বিষয়ে কোনো তদন্তও তাদের চিন্তার অতীত।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ভাষণ দিচ্ছেন দেশের সরকারপ্রধান। এর ফলে আইনের চেতনা নস্যাত্ হচ্ছে। অথচ অনেকে এমন ভাষণ শুনে তাঁকে বাহবা দিচ্ছে। আমাদের গণমাধ্যমেও তা ইতিবাচকভাবেই ছাপা হচ্ছে। এটাও একটা বিকৃতি। আমরা বিকৃতি-বৃত্তে বন্দী।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে ১৫৩খ নামে একটি ধারা আছে। এখন এটা প্রয়োগের সময়। কেউ এর প্রয়োজনীয়তা বা বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। তাহলে জবাব হবে, এটা অবৈধ হলে সংসদে বিল আনতে হবে। সংশোধনী আনতে হবে। আইন রেখে আইন ভাঙা যাবে না। রাজনীতির অপরাধকরণ তো ঘটেছেই। এখন ব্যাপকতা বাড়ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। ছাত্রলীগের ছেলেরা খুন হচ্ছে। কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মেয়াদ বাড়ছে। অথচ নিহত ছাত্রলীগ কর্মীদের অভিভাবকেরা অসহায় ও বিপন্ন বোধ করছেন। তাঁরা বড় গলায় বিচার চাওয়ার অধিকার পর্যন্ত পাচ্ছেন না। তাঁদের কেউ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। যে বাবা-মায়ের বুক খালি, ক্ষতি শুধু তাঁদেরই। ছাত্রশিবির রগ কাটে। এই সন্ত্রাস অতীব দানবীয়। কিন্তু কেউ বলবে না, ছাত্রশিবির কর্মী খুন হলে তার বিচার লাগবে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র খুনের মূল আসামি এখন হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক। তিনি সাবেক জাসদ-ছাত্রলীগ নেতা। গত সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের টিকিটপ্রার্থী ছিলেন। পাননি। তাঁকে বিচারক করা হবে। তাই আসামি হিসেবে তাঁর নাম প্রত্যাহার করা হলো। অথচ অনেক আগেই সেই মামলার দ্রুত বিচার অনুষ্ঠান সম্ভব ছিল।
ছাত্ররাজনীতি এখন অনেকের কাছে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। আমাদের রাজনীতিটা পেশিশক্তিনির্ভর। আর এই পেশির চৌকস জোগানদাতা ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের দিকে তাই অনেকের শকুনের চোখ। ১৯৮৮-তে ছাত্রশিবির কর্মী খুনের ওই মামলায় অভিযোগ গঠিত হয়েছিল। সেই মামলা থেকে নির্বাচিত কতিপয় নাম তুলল সরকার। তৈরি করল নতুন দৃষ্টান্ত। সেই সঙ্গে একটি বার্তা পৌঁছাল। সেই বার্তার ভাষা বোধগম্য।
ছাত্রলীগ কর্মীর খুনের বিচার এখন কী কারণে হয় না? যে কারণে ছাত্রশিবির কর্মীর হত্যার বিচার হয় না। অন্যান্য ক্যাম্পাস-নাশকতার বিচার হয় না। জাহাঙ্গীরনগরের সেই অস্ত্রধারী মাস্তান ফুরফুরে মেজাজে থাকে। বুঝতে হবে, এসব কারণের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর কারণ কালোত্তীর্ণ। ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রলীগ কিংবা প্রতিপক্ষের হাতে প্রতিপক্ষ হত্যা ও তার বিচার না হওয়া একই সূত্রে গাঁথা।
দণ্ডবিধির ১৫৩খ ধারার শিরোনাম বড় স্পষ্ট। বড় দল। বড় নেতা। বড় ওষুধ। এর শিরোনাম ‘রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের জন্য ছাত্রগণকে প্ররোচিত করা’। এই ধারায় বলা আছে, ‘যে ব্যক্তি কথিত বা লিখিত শব্দাবলীর সাহায্যে বা সংকেতসমূহের বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তিসমূহের সাহায্যে বা প্রকারান্তরে যে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী শ্রেণী বা ছাত্রদের ব্যাপারে আগ্রহশীল বা তাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে এমন কোন রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের জন্য প্ররোচিত করে বা প্ররোচিত করার উদ্যোগ করে যা গণশৃংখলা নষ্ট বা খর্ব করে, অথবা যার গণশৃংখলা নষ্ট বা খর্ব করার সম্ভাবনা রয়েছে—সে ব্যক্তি কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
আমাদের নেতারা ছাত্রদের ব্যবহার করছেন। প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেছেন, ‘কোনো ধরনের টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি সহ্য করা হবে না। টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজদের দলে রাখা হবে না।’ কিন্তু ছাত্রদের তাঁরা দলে রাখার কথা বলেন প্রকাশ্যেই। অথচ আইনবলে ছাত্রদের তাঁরা দলে টানতে পারেন না। ছাত্রদের দলীয় কাজে ব্যবহার বেআইনি।
ছাত্র অপরাধীদের বিচার না করাও বেআইনি। যে ছাত্রটি প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় টেন্ডারবাজ, সে কিন্তু শিক্ষক-সহপাঠীর সঙ্গে মেশে। শ্রেণীকক্ষে বসে। সহজে কল্পনা করা চলে, শ্রেণীকক্ষে টেন্ডারবাজের উদ্ধত উপস্থিতি। সবার জন্য অস্বস্তিকর। টেন্ডারবাজের ছাতি ফোলা থাকে। চলাফেরায় থাকে উগ্রতা। টেন্ডারবাজ পড়াশোনার পরিবেশ দূষিত করে। তার স্পর্ধায় শিক্ষক মর্মযাতনায় ভোগেন। আত্মসম্মানের ভয়ে প্রায়ই তা চেপে যান।
প্রধানমন্ত্রী-বর্ণিত টেন্ডারবাজের পুঁজি কী? পেশি। ফোলায় কে? নেতা। কীভাবে? ফুঁ দিয়ে। এর প্রমাণ থাকে না। টেন্ডারবাজি ৫০৬ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। টেন্ডারবাজ সামলানো পুলিশের রুটিন কাজ। তারা রুটিন মামলা করতে পারে। পুলিশ সেই কাজ করতে অক্ষম। কেন অক্ষম? বিষয়টি মোটেই লুকোছাপার ব্যাপার নয়। সোজা উত্তর, পুলিশ ওপরের হুকুম পায়। গায়েবি হুকুম। প্রকাশ্য হুকুমও আছে। তাই বলি, পুলিশকে কাজ করতে দিন।
সম্পাদকেরা বাসি খবর ছাপেন না। সম্পাদক মতিউর রহমান তা ছাপেন। একই শিরোনাম দুবার ছাপালেন, ‘ছাত্রলীগকে সামলান’। হলফ করে বলতে পারি, তিনি এমন সুযোগ আরও পাবেন। এ দেশে সব খবর বাসি হয় না। সব সময় তরতাজা থাকে। এটা তেমন এক জাতের খবর।
আমি বলব, ছাত্রলীগকে সামলাতে হবে না। নির্বাহী ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী। সংবিধানের সেই বলদর্পী প্রধানমন্ত্রীকে সামলান। ছাত্রলীগ সামলে যাবে। আরও অনেক কিছু সামলানো হবে। সেটা তো অসম্ভব, তাই তো? বেশ কথা। তাহলে অন্তত পুলিশের কাজ পুলিশকে করতে দিন।
পুলিশকে ‘কঠোর নির্দেশ’ প্রদান বন্ধ করুন। পুলিশকে ‘কড়া হুঁশিয়ারি’ দেবেন না। এটা একটা ঠাট্টা। সস্তা, কিন্তু নিষ্ঠুর। এমন কাজ ছাত্রলীগ নেতারাও করেন। তাঁরা বলেন, ‘সন্ত্রাসী যে-ই হোক তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ তার মানে বোঝাই যাচ্ছে ছাড়পত্রটা কোথায়? ছাত্র নষ্ট হতে পারে। আপেলে পোকা থাকবেই। তাই নষ্ট পুলিশও মিলবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইন। এবং সেটা পুলিশেরই কাজ। এটা কারও হুকুমের অপেক্ষায় থাকার নয়। নষ্ট ছাত্র তার দুষ্কর্মের জন্য আইনের কোপানলে পড়বে। অন্যরা তা দেখবে। নিজেদের শোধরাবে। সেই স্বাভাবিক নিয়মরীতি একদম অনুপস্থিত। তাই ক্যাম্পাসে সহিংসতার শেকড় গেড়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি ঠুঁটো জগন্নাথ। দলের লেজুড়বৃত্তি আর ভিসিগিরি-প্রভোস্টগিরি কখনো সমার্থক। একটি গোষ্ঠী মওকার অপেক্ষায় থাকে। তারা স্বায়ত্তশাসন গেল গেল বলে চিল্লায়। কিন্তু ক্যাম্পাসে লাশ পড়লেও তারা শাসন করে না। শাসন কী জিনিস, বুঝতেই চায় না। তাই প্রশ্ন হলো, কুঁজো তো কুঁজোই। তার আবার চিত হওয়া না-হওয়া নিয়ে চিন্তা কেন। কিন্তু আমরা বাস্তবে তা-ই দেখি। কুঁজোর চিত হওয়ার শখ দেখি। তারা বিচার চায় না। কিন্তু হঠাৎ সহিংসতার বিনাশ চায়। সরকারি দলের শাসন চেয়ে গলা ফাটায়। ক্যাম্পাসে আকসার মরামরি হয়। খুনখারাবি হয়। উদ্যত পিস্তল কিংবা কিরিচ হাতে ছাত্রের ছবি তো কম ছাপা হলো না। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরতে পারে না। পুলিশের এসব দেখে নিশ্চয় কান্না পায়। কিন্তু সেই কান্না কেউ শোনে না। ভিসিরা দম দেওয়া পুতুলের মতো আচরণ করেন। কখনো ইস্তফা দেন না। তাঁদের অনুমতি ছাড়া পুলিশ হলে ঢুকতে পারে না। ঢুকলে তাদের অপমান হয়। স্বায়ত্তশাসন বিস্বাদ ঠেকে।
ছাত্রনেতা ছাত্র-অপরাধী হলেই দায়মুক্তি। এটাই ক্যাম্পাস-সংস্কৃতি। ১৫৩খ ধারার বাক্য গঠন পরিষ্কার। নেতাদের লক্ষ্যে পরিচালিত। নেতারাই কোমলমতি ছাত্রদের ‘রাজনৈতিক কার্যকলাপে’ লিপ্ত হতে প্ররোচনা দেন।
তবে তর্কের খাতিরে বলি, দণ্ডবিধিতে আরও অনেক ধারা আছে, যার আওতায় ক্যাম্পাসও পড়ে। এই যুক্তিটা দিই এক বিশেষ কারণে। সমাজে একদল লোক আছে। যারা বিরাজনৈতিকীকরণের তত্ত্ব নিয়ে হাজির হবে। তারা প্রায় অন্ধ। তারা কোনটা রাজনীতি আর কোনটা দুর্বৃত্তায়ন তা আলাদা করতে পারে না। তারা তারস্বরে চিৎকার করবে। তর্ক তুলবে ছাত্ররাজনীতি ভালো না মন্দ। এ আরেক জ্বালা। এ ধরনের অনভিপ্রেত বিতর্ক বন্ধ করা কঠিন। এর জন্য বিকল্প দাওয়াই। মাফ চাই, ভাই। তওবা নাক খপ্তা। ১৫৩খ-এর তলায় আর যদি যাই। তবে এও বলি, যে আইন মানা যাবে না, সেই আইন রাখা কেন? আইন রেখে আইন ভাঙা ভারি মজার বলেই?
তাহলে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী সম্পর্ক যেমন আছে তেমনই থাকুক! অঙ্গসংগঠনও যা, সহযোগী সংগঠনও তা। কূটতর্ক বৃথা। পানিতে পানি থাক। দণ্ডবিধিতে আরও ধারা আছে। এসব বিধান ব্রিটিশদের করা। ক্যাম্পাসে ছাত্র খুন হলে, কেউ মাস্তানি করে বেড়ালে দায়মুক্তির কোনো বিধান আইনে নেই। যে যাকে যে কারণে মারুক-ধরুক, আইনে শাস্তির বিধান আছে। ক্যাম্পাসে গন্ডা চারেক অপরাধ ঘটছে হামেশা। মারামারি, দখল, টেন্ডারবাজি ও খুন। বহিরাগত মাস্তানদের সঙ্গে তাদের অনেকের আঁতাত আছে। অবৈধ অস্ত্রের জোগান আছে।
কেউ ভয় দেখালে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারা প্রযোজ্য। ক্যাম্পাসে এই ভয় দেখানোটা সবচেয়ে মামুলি ব্যাপার। এটা প্রায় অধিকার বলে গণ্য হচ্ছে। এই শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। ফৌজদারি অপরাধ করলে সতর্ক করার বিধান আইনে নেই। আবার তারা কী মর্যাদাবান! কী ভাগ্য তাদের! পাতিমন্ত্রীরা সতর্ক করেন না। অত মুরোদ তাঁদের নেই। ছোট মুখে বড় কথা তাঁদের সাজে না। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদকের নিচে কেউ তাদের সতর্ক করতে পারে না। ক্যাম্পাসে কুশীলবদের উঁচু মর্যাদা।
যুগান্তর ও সমকাল অভিন্ন শিরোনাম করেছিল সম্প্রতি। ‘ছাত্রলীগের কারণে সব অর্জন বিসর্জন দেওয়া যাবে না’। যুগান্তর-এর বিবরণ থেকে দেখা যায়, শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সব অর্জন ছাত্রলীগের কারণে বিসর্জন দেয়া যাবে না। আদু ভাই দিয়ে ছাত্রলীগ চলবে না। ছাত্ররাই ছাত্রলীগের রাজনীতি করবে। ছাত্রলীগ থেকে আংকেলদের সরে যেতে হবে। ছাত্রলীগ নিয়ে প্রতিদিনের পত্রপত্রিকায় যেসব সংবাদ দেখি, আর এ রকম সংবাদ দেখতে চাই না। দল ভারী করার জন্য দলে সন্ত্রাসী ঢোকানো যাবে না। সুবিধাভোগীদের চিনতে হবে।’
পক্ষকালের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরে সিলেটে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ছাত্রলীগকে সতর্ক করে দেন। এই সতর্কীকরণ মোটামুটি একটা রুটিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু দলে ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়া সন্ত্রাসীদের রোখা যাবে কীভাবে?
ক্যাম্পাসে গত সোয়া বছরে প্রায় ৫০টি সংঘর্ষ হয়েছে। শান্ত আবহাওয়ায় এত বড় দুর্যোগ বিরল। এর কারণ ও প্রতিকার নির্ধারণে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন করা হোক। এর প্রতিবেদন যথাসময়ে প্রকাশ করতে হবে। একই সময়ে ক্যাম্পাসে একাধিক হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হোক। সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে বিচার মিলবে। এই আইনের মেয়াদ সম্প্রতি দুই বছর বাড়ল। এই বিচারটা করলে মেয়াদ বৃদ্ধির একটা বড় তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যাবে। নিহত ছাত্রলীগ কর্মীর বাবা-মায়েরা সান্ত্বনা পাবেন। সরকারের ভাবমূর্তি খুবই উজ্জ্বল হবে! ছাত্ররা টের পাবে, দিন বদলাচ্ছে! আমরা সাম্প্রতিক খুনখারাবির বিচার পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ বছরে ৭৪টি খুনের মামলার বিচারেও হয়তো ঈষত্ আশাবাদী হতে পারব।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
ছাত্রলীগের বেপরোয়া সন্ত্রাস বন্ধে সরকারি দলের অব্যাহত কঠোর হুঁশিয়ারিও এক ধরনের বৈকল্য। আপাত মনে হয় ভালোই তো। সরকারি দল কত নিরপেক্ষ। কত উদার। আমাদের শাসকদের দিল কত নরম। তারা কত উত্তম সরকার। আসলে তা কোনোটিই নয়। আমাদের বিরোধী দল মানে বিএনপি-জামায়াত এখন ছাত্রলীগের হানাহানি ও রক্তপাত উপভোগ করছে। তারা এক ধরনের অমানবিক মজা পাচ্ছে। তারা একটি বিষয়ে সতর্ক। ক্যাম্পাস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তারা করবে না। ক্যাম্পাসের রক্তগঙ্গা, সহিংসতার বিষয়ে কোনো তদন্তও তাদের চিন্তার অতীত।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ভাষণ দিচ্ছেন দেশের সরকারপ্রধান। এর ফলে আইনের চেতনা নস্যাত্ হচ্ছে। অথচ অনেকে এমন ভাষণ শুনে তাঁকে বাহবা দিচ্ছে। আমাদের গণমাধ্যমেও তা ইতিবাচকভাবেই ছাপা হচ্ছে। এটাও একটা বিকৃতি। আমরা বিকৃতি-বৃত্তে বন্দী।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে ১৫৩খ নামে একটি ধারা আছে। এখন এটা প্রয়োগের সময়। কেউ এর প্রয়োজনীয়তা বা বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। তাহলে জবাব হবে, এটা অবৈধ হলে সংসদে বিল আনতে হবে। সংশোধনী আনতে হবে। আইন রেখে আইন ভাঙা যাবে না। রাজনীতির অপরাধকরণ তো ঘটেছেই। এখন ব্যাপকতা বাড়ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। ছাত্রলীগের ছেলেরা খুন হচ্ছে। কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মেয়াদ বাড়ছে। অথচ নিহত ছাত্রলীগ কর্মীদের অভিভাবকেরা অসহায় ও বিপন্ন বোধ করছেন। তাঁরা বড় গলায় বিচার চাওয়ার অধিকার পর্যন্ত পাচ্ছেন না। তাঁদের কেউ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। যে বাবা-মায়ের বুক খালি, ক্ষতি শুধু তাঁদেরই। ছাত্রশিবির রগ কাটে। এই সন্ত্রাস অতীব দানবীয়। কিন্তু কেউ বলবে না, ছাত্রশিবির কর্মী খুন হলে তার বিচার লাগবে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র খুনের মূল আসামি এখন হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক। তিনি সাবেক জাসদ-ছাত্রলীগ নেতা। গত সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের টিকিটপ্রার্থী ছিলেন। পাননি। তাঁকে বিচারক করা হবে। তাই আসামি হিসেবে তাঁর নাম প্রত্যাহার করা হলো। অথচ অনেক আগেই সেই মামলার দ্রুত বিচার অনুষ্ঠান সম্ভব ছিল।
ছাত্ররাজনীতি এখন অনেকের কাছে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। আমাদের রাজনীতিটা পেশিশক্তিনির্ভর। আর এই পেশির চৌকস জোগানদাতা ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের দিকে তাই অনেকের শকুনের চোখ। ১৯৮৮-তে ছাত্রশিবির কর্মী খুনের ওই মামলায় অভিযোগ গঠিত হয়েছিল। সেই মামলা থেকে নির্বাচিত কতিপয় নাম তুলল সরকার। তৈরি করল নতুন দৃষ্টান্ত। সেই সঙ্গে একটি বার্তা পৌঁছাল। সেই বার্তার ভাষা বোধগম্য।
ছাত্রলীগ কর্মীর খুনের বিচার এখন কী কারণে হয় না? যে কারণে ছাত্রশিবির কর্মীর হত্যার বিচার হয় না। অন্যান্য ক্যাম্পাস-নাশকতার বিচার হয় না। জাহাঙ্গীরনগরের সেই অস্ত্রধারী মাস্তান ফুরফুরে মেজাজে থাকে। বুঝতে হবে, এসব কারণের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর কারণ কালোত্তীর্ণ। ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রলীগ কিংবা প্রতিপক্ষের হাতে প্রতিপক্ষ হত্যা ও তার বিচার না হওয়া একই সূত্রে গাঁথা।
দণ্ডবিধির ১৫৩খ ধারার শিরোনাম বড় স্পষ্ট। বড় দল। বড় নেতা। বড় ওষুধ। এর শিরোনাম ‘রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের জন্য ছাত্রগণকে প্ররোচিত করা’। এই ধারায় বলা আছে, ‘যে ব্যক্তি কথিত বা লিখিত শব্দাবলীর সাহায্যে বা সংকেতসমূহের বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তিসমূহের সাহায্যে বা প্রকারান্তরে যে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী শ্রেণী বা ছাত্রদের ব্যাপারে আগ্রহশীল বা তাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে এমন কোন রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের জন্য প্ররোচিত করে বা প্ররোচিত করার উদ্যোগ করে যা গণশৃংখলা নষ্ট বা খর্ব করে, অথবা যার গণশৃংখলা নষ্ট বা খর্ব করার সম্ভাবনা রয়েছে—সে ব্যক্তি কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
আমাদের নেতারা ছাত্রদের ব্যবহার করছেন। প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেছেন, ‘কোনো ধরনের টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি সহ্য করা হবে না। টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজদের দলে রাখা হবে না।’ কিন্তু ছাত্রদের তাঁরা দলে রাখার কথা বলেন প্রকাশ্যেই। অথচ আইনবলে ছাত্রদের তাঁরা দলে টানতে পারেন না। ছাত্রদের দলীয় কাজে ব্যবহার বেআইনি।
ছাত্র অপরাধীদের বিচার না করাও বেআইনি। যে ছাত্রটি প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় টেন্ডারবাজ, সে কিন্তু শিক্ষক-সহপাঠীর সঙ্গে মেশে। শ্রেণীকক্ষে বসে। সহজে কল্পনা করা চলে, শ্রেণীকক্ষে টেন্ডারবাজের উদ্ধত উপস্থিতি। সবার জন্য অস্বস্তিকর। টেন্ডারবাজের ছাতি ফোলা থাকে। চলাফেরায় থাকে উগ্রতা। টেন্ডারবাজ পড়াশোনার পরিবেশ দূষিত করে। তার স্পর্ধায় শিক্ষক মর্মযাতনায় ভোগেন। আত্মসম্মানের ভয়ে প্রায়ই তা চেপে যান।
প্রধানমন্ত্রী-বর্ণিত টেন্ডারবাজের পুঁজি কী? পেশি। ফোলায় কে? নেতা। কীভাবে? ফুঁ দিয়ে। এর প্রমাণ থাকে না। টেন্ডারবাজি ৫০৬ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। টেন্ডারবাজ সামলানো পুলিশের রুটিন কাজ। তারা রুটিন মামলা করতে পারে। পুলিশ সেই কাজ করতে অক্ষম। কেন অক্ষম? বিষয়টি মোটেই লুকোছাপার ব্যাপার নয়। সোজা উত্তর, পুলিশ ওপরের হুকুম পায়। গায়েবি হুকুম। প্রকাশ্য হুকুমও আছে। তাই বলি, পুলিশকে কাজ করতে দিন।
সম্পাদকেরা বাসি খবর ছাপেন না। সম্পাদক মতিউর রহমান তা ছাপেন। একই শিরোনাম দুবার ছাপালেন, ‘ছাত্রলীগকে সামলান’। হলফ করে বলতে পারি, তিনি এমন সুযোগ আরও পাবেন। এ দেশে সব খবর বাসি হয় না। সব সময় তরতাজা থাকে। এটা তেমন এক জাতের খবর।
আমি বলব, ছাত্রলীগকে সামলাতে হবে না। নির্বাহী ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী। সংবিধানের সেই বলদর্পী প্রধানমন্ত্রীকে সামলান। ছাত্রলীগ সামলে যাবে। আরও অনেক কিছু সামলানো হবে। সেটা তো অসম্ভব, তাই তো? বেশ কথা। তাহলে অন্তত পুলিশের কাজ পুলিশকে করতে দিন।
পুলিশকে ‘কঠোর নির্দেশ’ প্রদান বন্ধ করুন। পুলিশকে ‘কড়া হুঁশিয়ারি’ দেবেন না। এটা একটা ঠাট্টা। সস্তা, কিন্তু নিষ্ঠুর। এমন কাজ ছাত্রলীগ নেতারাও করেন। তাঁরা বলেন, ‘সন্ত্রাসী যে-ই হোক তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ তার মানে বোঝাই যাচ্ছে ছাড়পত্রটা কোথায়? ছাত্র নষ্ট হতে পারে। আপেলে পোকা থাকবেই। তাই নষ্ট পুলিশও মিলবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইন। এবং সেটা পুলিশেরই কাজ। এটা কারও হুকুমের অপেক্ষায় থাকার নয়। নষ্ট ছাত্র তার দুষ্কর্মের জন্য আইনের কোপানলে পড়বে। অন্যরা তা দেখবে। নিজেদের শোধরাবে। সেই স্বাভাবিক নিয়মরীতি একদম অনুপস্থিত। তাই ক্যাম্পাসে সহিংসতার শেকড় গেড়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি ঠুঁটো জগন্নাথ। দলের লেজুড়বৃত্তি আর ভিসিগিরি-প্রভোস্টগিরি কখনো সমার্থক। একটি গোষ্ঠী মওকার অপেক্ষায় থাকে। তারা স্বায়ত্তশাসন গেল গেল বলে চিল্লায়। কিন্তু ক্যাম্পাসে লাশ পড়লেও তারা শাসন করে না। শাসন কী জিনিস, বুঝতেই চায় না। তাই প্রশ্ন হলো, কুঁজো তো কুঁজোই। তার আবার চিত হওয়া না-হওয়া নিয়ে চিন্তা কেন। কিন্তু আমরা বাস্তবে তা-ই দেখি। কুঁজোর চিত হওয়ার শখ দেখি। তারা বিচার চায় না। কিন্তু হঠাৎ সহিংসতার বিনাশ চায়। সরকারি দলের শাসন চেয়ে গলা ফাটায়। ক্যাম্পাসে আকসার মরামরি হয়। খুনখারাবি হয়। উদ্যত পিস্তল কিংবা কিরিচ হাতে ছাত্রের ছবি তো কম ছাপা হলো না। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরতে পারে না। পুলিশের এসব দেখে নিশ্চয় কান্না পায়। কিন্তু সেই কান্না কেউ শোনে না। ভিসিরা দম দেওয়া পুতুলের মতো আচরণ করেন। কখনো ইস্তফা দেন না। তাঁদের অনুমতি ছাড়া পুলিশ হলে ঢুকতে পারে না। ঢুকলে তাদের অপমান হয়। স্বায়ত্তশাসন বিস্বাদ ঠেকে।
ছাত্রনেতা ছাত্র-অপরাধী হলেই দায়মুক্তি। এটাই ক্যাম্পাস-সংস্কৃতি। ১৫৩খ ধারার বাক্য গঠন পরিষ্কার। নেতাদের লক্ষ্যে পরিচালিত। নেতারাই কোমলমতি ছাত্রদের ‘রাজনৈতিক কার্যকলাপে’ লিপ্ত হতে প্ররোচনা দেন।
তবে তর্কের খাতিরে বলি, দণ্ডবিধিতে আরও অনেক ধারা আছে, যার আওতায় ক্যাম্পাসও পড়ে। এই যুক্তিটা দিই এক বিশেষ কারণে। সমাজে একদল লোক আছে। যারা বিরাজনৈতিকীকরণের তত্ত্ব নিয়ে হাজির হবে। তারা প্রায় অন্ধ। তারা কোনটা রাজনীতি আর কোনটা দুর্বৃত্তায়ন তা আলাদা করতে পারে না। তারা তারস্বরে চিৎকার করবে। তর্ক তুলবে ছাত্ররাজনীতি ভালো না মন্দ। এ আরেক জ্বালা। এ ধরনের অনভিপ্রেত বিতর্ক বন্ধ করা কঠিন। এর জন্য বিকল্প দাওয়াই। মাফ চাই, ভাই। তওবা নাক খপ্তা। ১৫৩খ-এর তলায় আর যদি যাই। তবে এও বলি, যে আইন মানা যাবে না, সেই আইন রাখা কেন? আইন রেখে আইন ভাঙা ভারি মজার বলেই?
তাহলে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী সম্পর্ক যেমন আছে তেমনই থাকুক! অঙ্গসংগঠনও যা, সহযোগী সংগঠনও তা। কূটতর্ক বৃথা। পানিতে পানি থাক। দণ্ডবিধিতে আরও ধারা আছে। এসব বিধান ব্রিটিশদের করা। ক্যাম্পাসে ছাত্র খুন হলে, কেউ মাস্তানি করে বেড়ালে দায়মুক্তির কোনো বিধান আইনে নেই। যে যাকে যে কারণে মারুক-ধরুক, আইনে শাস্তির বিধান আছে। ক্যাম্পাসে গন্ডা চারেক অপরাধ ঘটছে হামেশা। মারামারি, দখল, টেন্ডারবাজি ও খুন। বহিরাগত মাস্তানদের সঙ্গে তাদের অনেকের আঁতাত আছে। অবৈধ অস্ত্রের জোগান আছে।
কেউ ভয় দেখালে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারা প্রযোজ্য। ক্যাম্পাসে এই ভয় দেখানোটা সবচেয়ে মামুলি ব্যাপার। এটা প্রায় অধিকার বলে গণ্য হচ্ছে। এই শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। ফৌজদারি অপরাধ করলে সতর্ক করার বিধান আইনে নেই। আবার তারা কী মর্যাদাবান! কী ভাগ্য তাদের! পাতিমন্ত্রীরা সতর্ক করেন না। অত মুরোদ তাঁদের নেই। ছোট মুখে বড় কথা তাঁদের সাজে না। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদকের নিচে কেউ তাদের সতর্ক করতে পারে না। ক্যাম্পাসে কুশীলবদের উঁচু মর্যাদা।
যুগান্তর ও সমকাল অভিন্ন শিরোনাম করেছিল সম্প্রতি। ‘ছাত্রলীগের কারণে সব অর্জন বিসর্জন দেওয়া যাবে না’। যুগান্তর-এর বিবরণ থেকে দেখা যায়, শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সব অর্জন ছাত্রলীগের কারণে বিসর্জন দেয়া যাবে না। আদু ভাই দিয়ে ছাত্রলীগ চলবে না। ছাত্ররাই ছাত্রলীগের রাজনীতি করবে। ছাত্রলীগ থেকে আংকেলদের সরে যেতে হবে। ছাত্রলীগ নিয়ে প্রতিদিনের পত্রপত্রিকায় যেসব সংবাদ দেখি, আর এ রকম সংবাদ দেখতে চাই না। দল ভারী করার জন্য দলে সন্ত্রাসী ঢোকানো যাবে না। সুবিধাভোগীদের চিনতে হবে।’
পক্ষকালের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরে সিলেটে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ছাত্রলীগকে সতর্ক করে দেন। এই সতর্কীকরণ মোটামুটি একটা রুটিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু দলে ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়া সন্ত্রাসীদের রোখা যাবে কীভাবে?
ক্যাম্পাসে গত সোয়া বছরে প্রায় ৫০টি সংঘর্ষ হয়েছে। শান্ত আবহাওয়ায় এত বড় দুর্যোগ বিরল। এর কারণ ও প্রতিকার নির্ধারণে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন করা হোক। এর প্রতিবেদন যথাসময়ে প্রকাশ করতে হবে। একই সময়ে ক্যাম্পাসে একাধিক হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হোক। সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে বিচার মিলবে। এই আইনের মেয়াদ সম্প্রতি দুই বছর বাড়ল। এই বিচারটা করলে মেয়াদ বৃদ্ধির একটা বড় তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যাবে। নিহত ছাত্রলীগ কর্মীর বাবা-মায়েরা সান্ত্বনা পাবেন। সরকারের ভাবমূর্তি খুবই উজ্জ্বল হবে! ছাত্ররা টের পাবে, দিন বদলাচ্ছে! আমরা সাম্প্রতিক খুনখারাবির বিচার পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ বছরে ৭৪টি খুনের মামলার বিচারেও হয়তো ঈষত্ আশাবাদী হতে পারব।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
No comments