একজন আশাবাদী মানুষ by মোশারফ হোসেন
১৮ এপ্রিল ড. গোলাম মহিউদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী। গোলাম মহিউদ্দিন সম্পর্কে লিখতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছি। অল্প কথায় লিখতে গেলে বলতে হয়, সে ভালো লোক ছিল। এতে মনে হয় বেঠিক বলা হলো না, কিন্তু ঠিক বলাও হলো না। আবার মনের মধ্যে যে বর্ণনা আছে তা প্রকাশ করতে গেলে এত লিখতে হয় যে পাঠক পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাই এখানে যা লিখলাম তা আবার বলার সবটুকু নয়।
মহিউদ্দিনকে (লৌকিকতা বজায় রাখলে আবার মনে হয়, আন্তরিকতার অভাব ঘটে গেল। তাই আমি যেভাবে গোলাম মহিউদ্দিনকে ডাকতাম, সেভাবে তাকে রাখতে চাই বলে মহিউদ্দিন বলছি) ছাত্রাবস্থায় চতুর্থ বছরে পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন মনে করি (হবু শিক্ষকদের এই সময় লক্ষ করতাম)। মহিউদ্দিন কথায় পটু ও তার গলার স্বর উঁচু—দুটোই আমার দরকার; তবে মনে হলো (যদিও যুগ হিসেবে ঠিক ছিল) একটু ‘ফাস্ট’। আমি তো সেকেলের ‘স্লো’ রয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে নিতে বাধা হলো পদের সংখ্যা। তখন এত স্বাধীনতা ছিল না যে পদ খালি না থাকলেও শিক্ষক নেওয়া যেত। এ ব্যাপারে মহিউদ্দিনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমি বলেছিলাম, পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে এবং পরে দেখা যাবে। সে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বুয়েট) ভর্তি হয়েছিল। এই হলো গোড়ার দিকের কথা। বুয়েটের বাইরে চাকরি করার সময়ও আমার সঙ্গে আলাপ হতো। দেশের নানা বিষয় নিয়ে এবং ওর বিভাগ সম্পর্কে। এই যে মানসিক মুক্তি তার মধ্যে ছিল, তা থেকেই মানুষ হিসেবে তার গভীরতা বোঝা যায়। পরবর্তী সময়ে পিএইচডিতে ভর্তির কথা বলে এবং বিভাগে শিক্ষক হিসেবেও যোগদান করে। শিক্ষকতা করতে গেলে পিএইচডি লাগে। মহিউদ্দিনের বয়স হয়ে যাচ্ছিল এবং সে কাজকর্মে এবং অন্যান্যভাবে এত জড়িয়ে ছিল যে আমি মনে করেছিলাম, ওকে এখানেই পিএইচডি করতে হবে। বাইরে যাওয়াও কঠিন ছিল এবং আমরাও পিএইচডি ছাত্র পাব। তার ব্যস্ততার মধ্যে অনেক কিছু ছিল, যা আমার অগ্রাধিকারে আসেনি। কিন্তু সে তার কাজের পরিসর অনেক বড় করে নিয়েছিল। অনেকে তা পারে না। ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি), দেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ, প্রশিক্ষণ কোর্স, আইইবিতে সেমিনার ইত্যাদির মধ্যে নিজেকে অনেক বেশি ব্যস্ত রাখত বলে দু-একবার আমি আমার জন্য স্বার্থপর হয়ে তাকে নিজের কাজে মন দিতে বলেছি।
এরপর শেষের দিকের কথা। আইইবিতে তার অবদান অনেক। বিভিন্ন বিভাগওয়ারি কার্যক্রম আরম্ভ করা, অ্যানুয়াল পেপার মিট (এপিএম) চালু করা, আয়োজন করা, আইইবির সাংগঠনিক কাজ ইত্যাদি আমার নজরে এসেছে। কী করে সামাল দিত আমি বুঝে উঠতে পারতাম না। আইইবি মনে হয় তার দ্বিতীয় বাড়ি ছিল, আর প্রথম বাড়ি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। নিজের বাসা তো ‘বাসা’ ছিল না। ইদানীং সে আইইবির জন্য পি. ইঞ্জিনিয়ারিং, স্টাফ কলেজ, অ্যাক্রিডিটেশনের মধ্যে ব্যস্ত ছিল। যেহেতু আমার ও মহিউদ্দিনের অসুখ এক রকম ছিল, সুতরাং তার সঙ্গে এ ব্যাপারে অনেক আলাপ হয়েছে। সব সময় মনে হয়েছে যে সে আশাবাদী। হার মানার লোক নয় সে। মুম্বাইয়ে যাওয়া, খাওয়াদাওয়া ও চিকিৎসা সম্পর্কে আমি তার সঙ্গে অনেক আলাপ করেছি। সিঙ্গাপুরে যাওয়া নিয়েও আমরা এবং সিঙ্গাপুরের লোকেরা, বুয়েটের লোকেরা, ওর বিভাগ, ওর ব্যাচের বন্ধুরা, আইইবি এবং সর্বস্তরের লোক যেভাবে ব্যস্ত ছিল তা মহিউদ্দিনের কাজ, ব্যবহার, মূল্যবোধেরই প্রমাণ। মহিউদ্দিন তো নিজেকে সবার মধ্যে হারিয়ে ফেলেছিল। আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও আমি তার কাছে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ; কারণ সে ভাইস প্রেসিডেন্ট (অ্যাকাডেমিক) হিসেবে চিঠি দিয়েছিল যে আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সদস্য হতে পারবে।
ওই সময় বিষয়টি আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জন্য খুবই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৌশল ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষায়তন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে।
শেষ করতে চাই না, তাও শেষ করতে হয়। তার শেষ দিনগুলোতে সে ব্যস্ত থেকে ভুলতে চেয়েছিল তার অসুস্থতাকে। জীবনকে জয় করে নিয়েছে। হতাশা দেখায়নি। কতবার বলেছি যে কাজ কমিয়ে দাও। উত্তর পাই, ‘না স্যার, আমি ভালো আছি এবং অফিসে যাই। আমি শিক্ষকতা করাকে সাদকায়ে জারিয়া মনে করি।’ তাই তার অবদান তার ছাত্র, শিক্ষক, আইইবির প্রকৌশলীরা শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখবে বলে আশা করি।
মহিউদ্দিনকে (লৌকিকতা বজায় রাখলে আবার মনে হয়, আন্তরিকতার অভাব ঘটে গেল। তাই আমি যেভাবে গোলাম মহিউদ্দিনকে ডাকতাম, সেভাবে তাকে রাখতে চাই বলে মহিউদ্দিন বলছি) ছাত্রাবস্থায় চতুর্থ বছরে পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন মনে করি (হবু শিক্ষকদের এই সময় লক্ষ করতাম)। মহিউদ্দিন কথায় পটু ও তার গলার স্বর উঁচু—দুটোই আমার দরকার; তবে মনে হলো (যদিও যুগ হিসেবে ঠিক ছিল) একটু ‘ফাস্ট’। আমি তো সেকেলের ‘স্লো’ রয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে নিতে বাধা হলো পদের সংখ্যা। তখন এত স্বাধীনতা ছিল না যে পদ খালি না থাকলেও শিক্ষক নেওয়া যেত। এ ব্যাপারে মহিউদ্দিনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমি বলেছিলাম, পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে এবং পরে দেখা যাবে। সে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বুয়েট) ভর্তি হয়েছিল। এই হলো গোড়ার দিকের কথা। বুয়েটের বাইরে চাকরি করার সময়ও আমার সঙ্গে আলাপ হতো। দেশের নানা বিষয় নিয়ে এবং ওর বিভাগ সম্পর্কে। এই যে মানসিক মুক্তি তার মধ্যে ছিল, তা থেকেই মানুষ হিসেবে তার গভীরতা বোঝা যায়। পরবর্তী সময়ে পিএইচডিতে ভর্তির কথা বলে এবং বিভাগে শিক্ষক হিসেবেও যোগদান করে। শিক্ষকতা করতে গেলে পিএইচডি লাগে। মহিউদ্দিনের বয়স হয়ে যাচ্ছিল এবং সে কাজকর্মে এবং অন্যান্যভাবে এত জড়িয়ে ছিল যে আমি মনে করেছিলাম, ওকে এখানেই পিএইচডি করতে হবে। বাইরে যাওয়াও কঠিন ছিল এবং আমরাও পিএইচডি ছাত্র পাব। তার ব্যস্ততার মধ্যে অনেক কিছু ছিল, যা আমার অগ্রাধিকারে আসেনি। কিন্তু সে তার কাজের পরিসর অনেক বড় করে নিয়েছিল। অনেকে তা পারে না। ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি), দেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ, প্রশিক্ষণ কোর্স, আইইবিতে সেমিনার ইত্যাদির মধ্যে নিজেকে অনেক বেশি ব্যস্ত রাখত বলে দু-একবার আমি আমার জন্য স্বার্থপর হয়ে তাকে নিজের কাজে মন দিতে বলেছি।
এরপর শেষের দিকের কথা। আইইবিতে তার অবদান অনেক। বিভিন্ন বিভাগওয়ারি কার্যক্রম আরম্ভ করা, অ্যানুয়াল পেপার মিট (এপিএম) চালু করা, আয়োজন করা, আইইবির সাংগঠনিক কাজ ইত্যাদি আমার নজরে এসেছে। কী করে সামাল দিত আমি বুঝে উঠতে পারতাম না। আইইবি মনে হয় তার দ্বিতীয় বাড়ি ছিল, আর প্রথম বাড়ি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। নিজের বাসা তো ‘বাসা’ ছিল না। ইদানীং সে আইইবির জন্য পি. ইঞ্জিনিয়ারিং, স্টাফ কলেজ, অ্যাক্রিডিটেশনের মধ্যে ব্যস্ত ছিল। যেহেতু আমার ও মহিউদ্দিনের অসুখ এক রকম ছিল, সুতরাং তার সঙ্গে এ ব্যাপারে অনেক আলাপ হয়েছে। সব সময় মনে হয়েছে যে সে আশাবাদী। হার মানার লোক নয় সে। মুম্বাইয়ে যাওয়া, খাওয়াদাওয়া ও চিকিৎসা সম্পর্কে আমি তার সঙ্গে অনেক আলাপ করেছি। সিঙ্গাপুরে যাওয়া নিয়েও আমরা এবং সিঙ্গাপুরের লোকেরা, বুয়েটের লোকেরা, ওর বিভাগ, ওর ব্যাচের বন্ধুরা, আইইবি এবং সর্বস্তরের লোক যেভাবে ব্যস্ত ছিল তা মহিউদ্দিনের কাজ, ব্যবহার, মূল্যবোধেরই প্রমাণ। মহিউদ্দিন তো নিজেকে সবার মধ্যে হারিয়ে ফেলেছিল। আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও আমি তার কাছে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ; কারণ সে ভাইস প্রেসিডেন্ট (অ্যাকাডেমিক) হিসেবে চিঠি দিয়েছিল যে আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সদস্য হতে পারবে।
ওই সময় বিষয়টি আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জন্য খুবই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৌশল ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষায়তন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে।
শেষ করতে চাই না, তাও শেষ করতে হয়। তার শেষ দিনগুলোতে সে ব্যস্ত থেকে ভুলতে চেয়েছিল তার অসুস্থতাকে। জীবনকে জয় করে নিয়েছে। হতাশা দেখায়নি। কতবার বলেছি যে কাজ কমিয়ে দাও। উত্তর পাই, ‘না স্যার, আমি ভালো আছি এবং অফিসে যাই। আমি শিক্ষকতা করাকে সাদকায়ে জারিয়া মনে করি।’ তাই তার অবদান তার ছাত্র, শিক্ষক, আইইবির প্রকৌশলীরা শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখবে বলে আশা করি।
No comments