রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অপেক্ষা by সাইফুদ্দীন চৌধুরী
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল বেঙ্গল কনফারেন্সে কলকাতার এক খ্যাতিমান কবি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতে এখন অনেকটা উপেক্ষিত। বাংলাদেশে তাঁকে নিয়ে যতটা তোড়জোড় চলে, তার কিছুই কলকাতায় হতে দেখা যায় না। ওই কবির খেদোক্তির খানিকটা যে সত্যতা রয়েছে, তা আমরা বাংলাদেশের মানুষ অনুমান করতে পারি।
এ কথা সত্য যে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি নেই। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া শিক্ষার্থীর পাঠ্যক্রম তৈরি হয় না, তাঁর গান-কবিতা ছাড়া অনুষ্ঠান থাকে অসম্পূর্ণ, তাঁর গান-কবিতা ছাড়া আন্দোলন-সংগ্রামে গতি আসে না। বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ—সব জায়গায়ই শক্তি আর উদ্যমের উৎস রবীন্দ্রনাথ।
সাতচল্লিশে দেশ ভাগ হওয়ার পর এ কারণে বারবার পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রদায়িকতার কবি, পাক-বাংলার মানুষের তামুদ্দুনিক জীবন নষ্ট হচ্ছে রবীন্দ্রচর্চার মাধ্যমে—একশ্রেণীর লেখক-বুদ্ধিজীবী ও তাঁদের মুখপাত্র এবং কিছু সংবাদপত্র এই বলে রবীন্দ্রনাথকে দেশে নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। তৎকালীন সরকার সুপরিকল্পিতভাবে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়। বেতার-টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ প্রায় নিষিদ্ধ হন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনগণ; বিশেষ করে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, প্রতিবাদ জানায়। একসময় পাকিস্তানি যুগের অবসান হয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্র অর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সূচনা ঘটে।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণাদাতা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মোৎসব পালিত হবে আগামী বছরের ২৫ বৈশাখ। বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যুক্তভাবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ উৎসব উদ্যাপন করবে; যা বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য অবশ্যই আশাব্যঞ্জক আনন্দের সংবাদ।
কবি রবীন্দ্রনাথের কাছে তো আমরা অনেকভাবে ঋণী। আমরা তাঁর কাছ থেকে নিয়েছি অনেক, দিয়েছি কতটা? সেভাবে হিসাব করলে দেখা যাবে, অকাতরে আমরা শুধু নিয়েই গেছি, তাঁর একটি গান দেশের জাতীয় সংগীত করা হয়েছে—এই যা। অথচ বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ বহুল পঠিত ও বহুল অনুশীলিত কবি সন্দেহ নেই।
প্রতিবছর সাড়ম্বরে দেশজুড়ে কবির জন্মোৎসব ও মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। বেতার-টিভির সর্বজনীন আকর্ষণ রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে যথার্থ অর্থে সম্মাননা জানিয়ে দেশে উচ্চতর কোনো বিদ্যাপীঠ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। অথচ দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সেই দাবি জানিয়ে আসছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ববঙ্গের অন্যতম জমিদারি ছিল পাবনা (বর্তমান সিরাজগঞ্জ) জেলার শাহজাদপুরে। ১২৯৭ থেকে ১৩০৪ বঙ্গাব্দে ইউসুফ শাহী পরগনার শাহজাদপুরের জমিদারিতে রবীন্দ্রনাথ বহুবার এসেছেন। রচনা করেছেন অসাধারণ কিছু গান, কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, স্বজনদের জন্য বেশ কিছু তথ্যনিষ্ঠ চিঠি; যা তাঁর সাহিত্যকে ভিন্ন এক মর্যাদা দান করেছে। কবির স্মৃতিধন্য এই শাহজাদপুরেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় সুবিধা হলো এখানকার চমৎকার যোগাযোগব্যবস্থা। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক দিয়ে দু-আড়াই ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া যায়। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতুতে যেতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। নৌবন্দরসহ বাণিজ্যকেন্দ্র হওয়ায় শাহজাদপুরের অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনুরূপ পরিবেশ রয়েছে।
সাংস্কৃতিক বিভাগগুলোর (সংগীত, নাটক, ফোকলোর, চারুকলা, সাহিত্য, দর্শন, নন্দনতত্ত্ব ইত্যাদি) প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে শাহজাদপুরেই ওই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি অনেক দিনের। ‘টেগর পিস্ ইউনিভার্সিটি’ নামে প্রায় দুই দশক আগে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য খ্যাতনামা লোকতত্ত্ববিদ অধ্যাপক মযহারুল ইসলাম। নানা কারণে অধ্যাপক ইসলাম তাঁর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারেননি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অধ্যাপক মযহারুল ইসলামের অনুজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক অগ্রজের নেওয়া সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন নতুন করে শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী মহোদয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টা শাহজাদপুরের সুধী সমাবেশে আশ্বাসও দিয়েছেন বিশ্বকবির নামে প্রতিষ্ঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয় শাহজাদপুরেই হবে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব জাতীয় সংসদ হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
আগামী বছরের ২৫ বৈশাখ কবিগুরুর সার্ধশত জন্মোৎসবে কবির স্মরণে ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত স্মারক রেলব্যবস্থা চালু করবে। উভয় বাংলার রবীন্দ্রপ্রেমীদের কাছে অবশ্যই এ এক আশাব্যঞ্জক সংবাদ। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমাদেরও প্রত্যাশা, ওই দিন বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে আমাদের সরকারও কবির অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে। অপরিশোধ্য ঋণের খানিকটা অন্তত পরিশোধ করা যাবে। অনেকের ধারণা, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে তিনি নিজেই যে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতেন সন্দেহ নেই। তাঁর সুযোগ্য তনয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সার্থক উত্তরসূরি হিসেবে কবির স্মৃতির প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধাবশত বাবার আরাধ্য কাজটি সম্পন্ন করবেন। আমাদের সবারই স্মরণে আছে, ১৯৬৯ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বারবার উল্লেখ করেছেন বাঙালির ভবিষ্যৎ সংগ্রামের সঙ্গে কবিগুরুর ভূমিকার কথা। পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশে বজ্রকঠোর ঘোষণা দিয়েছিলেন বেতার-টিভিতে রবীন্দ্রনাথের গানের ওপর থেকে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিতে।
সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জয়যাত্রা অব্যাহত রাখা এবং বাঙালিয়ানা সংরক্ষণের স্বার্থে সরকারি সব প্রক্রিয়া শেষ করে দেশবাসী আশা করে, ১৪১৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে বাবার সার্থক উত্তরাধিকার হিসেবে প্রিয় কবির স্মৃতি রক্ষার জন্য একটি বড় জাতীয় দায়িত্ব সম্পাদন করবেন। শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী ও মযহারুল ইসলাম ফোকলোর ইনস্টিটিউটই হতে পারে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর অবকাঠামো। একটি বছর শুধু অপেক্ষায় কাটুক।
ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী: গবেষক। অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
pr_saif@yahoo.com
এ কথা সত্য যে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি নেই। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া শিক্ষার্থীর পাঠ্যক্রম তৈরি হয় না, তাঁর গান-কবিতা ছাড়া অনুষ্ঠান থাকে অসম্পূর্ণ, তাঁর গান-কবিতা ছাড়া আন্দোলন-সংগ্রামে গতি আসে না। বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ—সব জায়গায়ই শক্তি আর উদ্যমের উৎস রবীন্দ্রনাথ।
সাতচল্লিশে দেশ ভাগ হওয়ার পর এ কারণে বারবার পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রদায়িকতার কবি, পাক-বাংলার মানুষের তামুদ্দুনিক জীবন নষ্ট হচ্ছে রবীন্দ্রচর্চার মাধ্যমে—একশ্রেণীর লেখক-বুদ্ধিজীবী ও তাঁদের মুখপাত্র এবং কিছু সংবাদপত্র এই বলে রবীন্দ্রনাথকে দেশে নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। তৎকালীন সরকার সুপরিকল্পিতভাবে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়। বেতার-টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ প্রায় নিষিদ্ধ হন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনগণ; বিশেষ করে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, প্রতিবাদ জানায়। একসময় পাকিস্তানি যুগের অবসান হয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্র অর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সূচনা ঘটে।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণাদাতা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মোৎসব পালিত হবে আগামী বছরের ২৫ বৈশাখ। বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যুক্তভাবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ উৎসব উদ্যাপন করবে; যা বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য অবশ্যই আশাব্যঞ্জক আনন্দের সংবাদ।
কবি রবীন্দ্রনাথের কাছে তো আমরা অনেকভাবে ঋণী। আমরা তাঁর কাছ থেকে নিয়েছি অনেক, দিয়েছি কতটা? সেভাবে হিসাব করলে দেখা যাবে, অকাতরে আমরা শুধু নিয়েই গেছি, তাঁর একটি গান দেশের জাতীয় সংগীত করা হয়েছে—এই যা। অথচ বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ বহুল পঠিত ও বহুল অনুশীলিত কবি সন্দেহ নেই।
প্রতিবছর সাড়ম্বরে দেশজুড়ে কবির জন্মোৎসব ও মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। বেতার-টিভির সর্বজনীন আকর্ষণ রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে যথার্থ অর্থে সম্মাননা জানিয়ে দেশে উচ্চতর কোনো বিদ্যাপীঠ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। অথচ দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সেই দাবি জানিয়ে আসছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ববঙ্গের অন্যতম জমিদারি ছিল পাবনা (বর্তমান সিরাজগঞ্জ) জেলার শাহজাদপুরে। ১২৯৭ থেকে ১৩০৪ বঙ্গাব্দে ইউসুফ শাহী পরগনার শাহজাদপুরের জমিদারিতে রবীন্দ্রনাথ বহুবার এসেছেন। রচনা করেছেন অসাধারণ কিছু গান, কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, স্বজনদের জন্য বেশ কিছু তথ্যনিষ্ঠ চিঠি; যা তাঁর সাহিত্যকে ভিন্ন এক মর্যাদা দান করেছে। কবির স্মৃতিধন্য এই শাহজাদপুরেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় সুবিধা হলো এখানকার চমৎকার যোগাযোগব্যবস্থা। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক দিয়ে দু-আড়াই ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া যায়। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতুতে যেতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। নৌবন্দরসহ বাণিজ্যকেন্দ্র হওয়ায় শাহজাদপুরের অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনুরূপ পরিবেশ রয়েছে।
সাংস্কৃতিক বিভাগগুলোর (সংগীত, নাটক, ফোকলোর, চারুকলা, সাহিত্য, দর্শন, নন্দনতত্ত্ব ইত্যাদি) প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে শাহজাদপুরেই ওই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি অনেক দিনের। ‘টেগর পিস্ ইউনিভার্সিটি’ নামে প্রায় দুই দশক আগে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য খ্যাতনামা লোকতত্ত্ববিদ অধ্যাপক মযহারুল ইসলাম। নানা কারণে অধ্যাপক ইসলাম তাঁর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারেননি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অধ্যাপক মযহারুল ইসলামের অনুজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক অগ্রজের নেওয়া সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন নতুন করে শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী মহোদয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টা শাহজাদপুরের সুধী সমাবেশে আশ্বাসও দিয়েছেন বিশ্বকবির নামে প্রতিষ্ঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয় শাহজাদপুরেই হবে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব জাতীয় সংসদ হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
আগামী বছরের ২৫ বৈশাখ কবিগুরুর সার্ধশত জন্মোৎসবে কবির স্মরণে ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত স্মারক রেলব্যবস্থা চালু করবে। উভয় বাংলার রবীন্দ্রপ্রেমীদের কাছে অবশ্যই এ এক আশাব্যঞ্জক সংবাদ। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমাদেরও প্রত্যাশা, ওই দিন বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে আমাদের সরকারও কবির অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে। অপরিশোধ্য ঋণের খানিকটা অন্তত পরিশোধ করা যাবে। অনেকের ধারণা, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে তিনি নিজেই যে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতেন সন্দেহ নেই। তাঁর সুযোগ্য তনয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সার্থক উত্তরসূরি হিসেবে কবির স্মৃতির প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধাবশত বাবার আরাধ্য কাজটি সম্পন্ন করবেন। আমাদের সবারই স্মরণে আছে, ১৯৬৯ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বারবার উল্লেখ করেছেন বাঙালির ভবিষ্যৎ সংগ্রামের সঙ্গে কবিগুরুর ভূমিকার কথা। পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশে বজ্রকঠোর ঘোষণা দিয়েছিলেন বেতার-টিভিতে রবীন্দ্রনাথের গানের ওপর থেকে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিতে।
সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জয়যাত্রা অব্যাহত রাখা এবং বাঙালিয়ানা সংরক্ষণের স্বার্থে সরকারি সব প্রক্রিয়া শেষ করে দেশবাসী আশা করে, ১৪১৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে বাবার সার্থক উত্তরাধিকার হিসেবে প্রিয় কবির স্মৃতি রক্ষার জন্য একটি বড় জাতীয় দায়িত্ব সম্পাদন করবেন। শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী ও মযহারুল ইসলাম ফোকলোর ইনস্টিটিউটই হতে পারে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর অবকাঠামো। একটি বছর শুধু অপেক্ষায় কাটুক।
ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী: গবেষক। অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
pr_saif@yahoo.com
No comments