ব্রিটেনের প্রাথমিক বিদ্যালয়: শিক্ষা যেখানে আনন্দ by কাজী রুনা
আবহাওয়া
বৈরি, বৃষ্টি হচ্ছে ঝিরঝির। এর মধ্যেও ছাতা হাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
হাসিমুখে চা-কফি আর স্ন্যাক্স দিয়ে যাচ্ছেন অভিভাবকদের। প্রতি সপ্তাহে
মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্য এরকম বিনামূল্যে
চা পানের ব্যবস্থা রাখে লন্ডনের ক্রইডনের ডেভিডসন প্রাইমারি একাডেমি
কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানালেন, মঙ্গলবারের এই সকালটাকে
শিক্ষক-অভিভাবক সকাল হিসেবে উদযাপন করেন যাতে পারস্পরিক সম্পর্ক আরো
হৃদ্ধতাপূর্ণ হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাঙালি বংশোদ্ভূত। নাম ফারজানা বেগম।
তার মা-বাবা ইংল্যান্ডে আসেন অনেক বছর আগে। তার জন্ম হয়েছে ইংল্যান্ডে।
চলনে-বলনে দারুন স্মার্ট এই শিক্ষক কথা বলছিলেন বৃটেনের প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে, দেশটিতে কিভাবে বাচ্চাদেরকে আনন্দদানের
মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া হয়। তিনি জানান, স্কুলে পড়ুয়া প্রত্যেক বাচ্চাকে তারা
সমান দৃষ্টিতে দেখেন। এখানে ধনী-গরীব, উচু-নীচু, সাদা-কালো বলে যেমন কোন
পার্থক্য করা হয় না, তেমনি কোমলমতি এই শিশুদের মধ্যে মেধার মানদণ্ডে কোন
বিভাজন করা হয় না। বিদ্যালয়টির স্লোগান হলো, ‘হয়ার এভরি চাইল্ড কাউন্টস’
অর্থাৎ সবশিশুকে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়। কোন শিশু যদি মনে হয় পিছিয়ে পড়ছে
তার জন্য অতিরিক্ত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়।
বৃটেনের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বাচ্চাদের কোন পরীক্ষা দিতে হয় না। এমনকি মুখস্থ বিদ্যার বিষয়টা এখানকার বাচ্চারা বোঝেও না। এখানে একটি শিশুর স্কুল শুরু হয় তিন বছর থেকে। তিন থেকে পাঁচ এই ২ বছর তারা নার্সারি ও রিসিপশন শেষ করে ইয়ার ওয়ান শুরু করে। এগার বছরে তারা পড়ে ইয়ার সিক্সে। পুরো প্রাইমারিতে কোন পরীক্ষা পদ্ধতি নাই। মুলত ইয়ার সিক্সে গিয়ে তাদের পরীক্ষায় বসতে হয়। তাই প্রাইমারি স্কুলের সময়টা প্রতিটা বাচ্চার জন্য স্বপ্নময় জগৎ। এদেরকে কাধে বহন করতে হয় না ভারী কোন ব্যাগ। বই খাতা কলম পেন্সিল সব কিছু স্কুল থেকে দেয়া হয়। আবার সেগুলো স্কুলেই রেখে দেয়া হয়। ছোটদের ক্লাশে বেশির ভাগই ধাধা মেলানো, লেগো দিয়ে নতুন কিছু তৈরি, ছবি আঁকা, রং করা এসবের মধ্য দিয়ে শেখানো হয়। বৃটেনের স্কুলগুলোতে ছোটকাল থেকেই বাচ্চাদের নারী-পুরুষ বৈষম্যহীনতার শিক্ষার সংস্কৃতি চালু করে খেলনা ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। ডেভিডসন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফারজানা বেগম জানান, বৃটেনে বাচ্চারা যখন খেলে তখন ছেলে মেয়ে হিসেব করে বল বা হাড়িপাতিল দেয়া হয় না বরং এখানে সবাই সব কিছু নিয়ে খেলতে পারে। এখানে ইংরেজি, অংক , বিজ্ঞান, ভূগোল যেমন পড়ানো হয় তেমনি বাস্তববাদি শিক্ষার ওপরও জোর দেয়া হয়। এখানে শারিরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। প্রতিটা বাচ্চাকে সাঁতার শেখানোর আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্পোর্টস ক্লাবে ভর্তি করানো হয় স্কুলের মাধ্যমেই। শেখানো হয় নাচ, গান। যে বাচ্চা যে দিকে পারদর্শী সেটা বিবেচনায় নিয়ে তাকে সেভাবেই গড়তে চায় এখানকার শিক্ষকরা। ফারজানা বেগম বলেন, তাদের মূল্য লক্ষ্য সামাজিকতা, নৈতিকতা শিক্ষার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠতে শিশুকে সাহায্য করা।
ফারজানা বেগমের শেকড় বাংলাদেশে যদিও তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে খুব ভালো জানেন না। তাই তার কৌতূহলি প্রশ্ন ছিলো সেখানে এরকম আনন্দদানের মাধ্যমে পড়ানো হয় কিনা। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতিতেও আনন্দময় পরিবেশে শিশুদের মানসিক ও শারিরিক বিকাশের উপযোগি শিক্ষা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এসব নীতি শুধু কাগুজে বিধান ছাড়া আর কিছু নয়। দেশে প্রাক-প্রাথমিক বা প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের ওপর পড়াশোনার চাপ যেন সবচেয়ে বেশি। সরকারের জাতীয় শিক্ষা নীতিতে যে খেলাধুলা, শারিরিক ব্যায়াম, সাংস্কৃতিক, বিনোদন ও অবকাশ যাপনের সমান সুযোগ রয়েছে। কিন্তু একমাত্র পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে বেশিরভাগ অভিভাবকেরই আগ্রহ নাই। বেশিরভাগ অভিভাবকরা চায় শিশুরা শুধু পড়াশোনা করুক। পড়াশোনার প্রতিযোগিতার চাপে শিশু বয়সে হারিয়ে যায় তার সৃষ্টিশীলতা। বৃটেনেসহ ইউরোপের দেশগুলোতে খেলার মাঠ ছাড়া কোন স্কুল কল্পনা করা যায় না। অথচ আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যে উদয়ন স্কুল তারই খেলার মাঠ নেই। প্রতিটি শিশু তার জীবনের মূল্যবান ৫টি বছর কাটাচ্ছে খেলার মাঠ ছাড়াই!
লন্ডনে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন রেবেকা ইকবাল। তার দুই ছেলে মেয়ে এরই মধ্যে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে পড়ছে। তিনি জানালেন বাংলাদেশের সাথে বৃটেনের শিক্ষা ব্যবস্থার পার্থক্য অনেক। বিশেষ করে চাপমুক্তভাবে শিশুদের শেখানোর পদ্ধতির কারণে এখানকার অভিভাবকদের কোন চিন্তা করতে হয় না বলে মনে করেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছে, শিশুদের ওপর পড়াশোনার চাপ কমাতে আগামি বছর থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোন পরীক্ষা নেয়া হবে না। পরীক্ষার চাপে যেন শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সরকার জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বলছে, উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে শিক্ষা ব্যবস্থা করার জন্য এ উদ্যোগ। কিন্তু শুধু একটা শ্রেনি পর্যন্ত পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করলে শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো সম্ভব নয়। শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রধান শর্ত শিশুর বিকাশ ও বিকাশের জন্য প্রায়োগিক সব কিছুর ব্যবস্থা করা। এর মাধ্যমে শিশুরা জ্ঞানার্জন করবে আনন্দের সঙ্গে। আর তা না হলে পড়াশোনার চাপে হারিয়ে যাবে শিশুর সোনালি শৈশব।
বৃটেনের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বাচ্চাদের কোন পরীক্ষা দিতে হয় না। এমনকি মুখস্থ বিদ্যার বিষয়টা এখানকার বাচ্চারা বোঝেও না। এখানে একটি শিশুর স্কুল শুরু হয় তিন বছর থেকে। তিন থেকে পাঁচ এই ২ বছর তারা নার্সারি ও রিসিপশন শেষ করে ইয়ার ওয়ান শুরু করে। এগার বছরে তারা পড়ে ইয়ার সিক্সে। পুরো প্রাইমারিতে কোন পরীক্ষা পদ্ধতি নাই। মুলত ইয়ার সিক্সে গিয়ে তাদের পরীক্ষায় বসতে হয়। তাই প্রাইমারি স্কুলের সময়টা প্রতিটা বাচ্চার জন্য স্বপ্নময় জগৎ। এদেরকে কাধে বহন করতে হয় না ভারী কোন ব্যাগ। বই খাতা কলম পেন্সিল সব কিছু স্কুল থেকে দেয়া হয়। আবার সেগুলো স্কুলেই রেখে দেয়া হয়। ছোটদের ক্লাশে বেশির ভাগই ধাধা মেলানো, লেগো দিয়ে নতুন কিছু তৈরি, ছবি আঁকা, রং করা এসবের মধ্য দিয়ে শেখানো হয়। বৃটেনের স্কুলগুলোতে ছোটকাল থেকেই বাচ্চাদের নারী-পুরুষ বৈষম্যহীনতার শিক্ষার সংস্কৃতি চালু করে খেলনা ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। ডেভিডসন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফারজানা বেগম জানান, বৃটেনে বাচ্চারা যখন খেলে তখন ছেলে মেয়ে হিসেব করে বল বা হাড়িপাতিল দেয়া হয় না বরং এখানে সবাই সব কিছু নিয়ে খেলতে পারে। এখানে ইংরেজি, অংক , বিজ্ঞান, ভূগোল যেমন পড়ানো হয় তেমনি বাস্তববাদি শিক্ষার ওপরও জোর দেয়া হয়। এখানে শারিরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। প্রতিটা বাচ্চাকে সাঁতার শেখানোর আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্পোর্টস ক্লাবে ভর্তি করানো হয় স্কুলের মাধ্যমেই। শেখানো হয় নাচ, গান। যে বাচ্চা যে দিকে পারদর্শী সেটা বিবেচনায় নিয়ে তাকে সেভাবেই গড়তে চায় এখানকার শিক্ষকরা। ফারজানা বেগম বলেন, তাদের মূল্য লক্ষ্য সামাজিকতা, নৈতিকতা শিক্ষার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠতে শিশুকে সাহায্য করা।
ফারজানা বেগমের শেকড় বাংলাদেশে যদিও তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে খুব ভালো জানেন না। তাই তার কৌতূহলি প্রশ্ন ছিলো সেখানে এরকম আনন্দদানের মাধ্যমে পড়ানো হয় কিনা। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতিতেও আনন্দময় পরিবেশে শিশুদের মানসিক ও শারিরিক বিকাশের উপযোগি শিক্ষা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এসব নীতি শুধু কাগুজে বিধান ছাড়া আর কিছু নয়। দেশে প্রাক-প্রাথমিক বা প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের ওপর পড়াশোনার চাপ যেন সবচেয়ে বেশি। সরকারের জাতীয় শিক্ষা নীতিতে যে খেলাধুলা, শারিরিক ব্যায়াম, সাংস্কৃতিক, বিনোদন ও অবকাশ যাপনের সমান সুযোগ রয়েছে। কিন্তু একমাত্র পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে বেশিরভাগ অভিভাবকেরই আগ্রহ নাই। বেশিরভাগ অভিভাবকরা চায় শিশুরা শুধু পড়াশোনা করুক। পড়াশোনার প্রতিযোগিতার চাপে শিশু বয়সে হারিয়ে যায় তার সৃষ্টিশীলতা। বৃটেনেসহ ইউরোপের দেশগুলোতে খেলার মাঠ ছাড়া কোন স্কুল কল্পনা করা যায় না। অথচ আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যে উদয়ন স্কুল তারই খেলার মাঠ নেই। প্রতিটি শিশু তার জীবনের মূল্যবান ৫টি বছর কাটাচ্ছে খেলার মাঠ ছাড়াই!
লন্ডনে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন রেবেকা ইকবাল। তার দুই ছেলে মেয়ে এরই মধ্যে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে পড়ছে। তিনি জানালেন বাংলাদেশের সাথে বৃটেনের শিক্ষা ব্যবস্থার পার্থক্য অনেক। বিশেষ করে চাপমুক্তভাবে শিশুদের শেখানোর পদ্ধতির কারণে এখানকার অভিভাবকদের কোন চিন্তা করতে হয় না বলে মনে করেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছে, শিশুদের ওপর পড়াশোনার চাপ কমাতে আগামি বছর থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোন পরীক্ষা নেয়া হবে না। পরীক্ষার চাপে যেন শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সরকার জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বলছে, উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে শিক্ষা ব্যবস্থা করার জন্য এ উদ্যোগ। কিন্তু শুধু একটা শ্রেনি পর্যন্ত পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করলে শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো সম্ভব নয়। শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রধান শর্ত শিশুর বিকাশ ও বিকাশের জন্য প্রায়োগিক সব কিছুর ব্যবস্থা করা। এর মাধ্যমে শিশুরা জ্ঞানার্জন করবে আনন্দের সঙ্গে। আর তা না হলে পড়াশোনার চাপে হারিয়ে যাবে শিশুর সোনালি শৈশব।
No comments