আসামের এনআরসি নাগরিকদের স্বীকৃতি দানের বদলে বিদেশী ঘোষণায় তৎপর by ইপসিতা চক্রবর্তী
জাতীয়
নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) উদ্দেশ্য ছিল আসামে বসবাসকারী প্রকৃত ভারতীয়
নাগরিকদের তালিকা তৈরি করা। ২০১৫ সালে এ উদ্যোগটি শুরু হয়েছিল তালিকা থেকে
কোনো ভারতীয়কে বাদ না দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। কিন্তু ব্যাপক পরিবর্তনের
ফলে অন্তর্ভুক্তি হয়ে পড়েছে বাদ দেয়ায়, একজন অবৈধ অভিবাসীও যাতে তালিকায়
স্থান না পায়, তা নিশ্চিত করাই যেন আসল বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এর ফলে প্রক্রিয়াটি এখন আসামের সবচেয়ে গরিব ও সবচেয়ে অরক্ষিত কিছু অধিবাসীকে রাষ্ট্রহীন করার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
ভুল, অসামঞ্জস্যতা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ নিয়ে আসামে চলছে বিদেশী চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া। নাগরিক হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে হলে আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে তারা বা তাদের পূর্বপুরুষেরা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের (বাংলাদেশ যুদ্ধের সূচনার দিন) আগে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু রাজ্যটির অধিবাসীদের অনেককে বারবার তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বলা হয়েছে, এনআরসি কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে তাদের নিজেদের পূর্বেকার সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয় যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটিই এর প্রমাণ।
গত জুলাই মাসে এনআরসি তাদের নিবন্ধনের চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করে ৩.২৯ কোটি আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৪০.৭ লাখের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হয়। তারপর চলতি বছরের ২৬ জুন আসামের নাগরিকত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিবেচিত ১.০২ লাখ লোকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। সরকারি এনআরসি বিবৃতিতে বলা হয়, চূড়ান্ত খসড়ায় তাদের নাম ভুলবশত অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তাদের নাম এখন অতিরিক্ত বাদ পড়া তালিকায় প্রকাশ করা হবে।
মাত্র গত বছর ভারতীয় নাগরিক হিসেবে যাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে আরো এক লাখ লোককে বাদ দিতে এনআরসি অফিস কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে। এতে বলা হয়, এসব লোককে ট্রাইব্যুনাল বিদেশী ঘোষণা করেছিল বা তাদের মামলাগুলো স্থগিত ছিল, কিংবা তারা ছিল নির্বাচন কমিশনের সন্দেহজনক ভোটার।
কিন্তু গত বছর চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশিত হওয়ার সময় এনআরসি সমন্বয়কারী দাবি করেছিলেন যে বাদ পড়াদের নাম ইতোমধ্যেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
গত বছর যারা তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল, তাদেরকে আবার আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে ফের এনআরসি কর্মকর্তাদের সামনে শুনানিতে যেতে হবে বলে বলা হয়। আবার যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, কিন্তু তা নিয়ে অন্যদের আপত্তি আছে, তাদের বিষয়টিও শোনা হবে বলে জানানো হয়।
এখানেও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে হয়। এসব কর্মকর্তাকে বিপুল ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তারা চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে পর্যন্ত যেকোনো সময় কারো নাগরিকত্বের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
আর তারা ওই ক্ষমতা বারবারই প্রয়োগ করছেন। এনআরসি কর্মকর্তারা কোন নামটি তদন্ত করতে হবে সে ব্যাপারে কিভাবে সিদ্ধান্ত নেন, তা বোঝা যায় না। আসামে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে যাদের বোঝানো হয়, তাদের বেশির ভাগই যেহেতু বাংলাদেশ থেকে প্রবেশ করেছে বলে মনে হয়, কাজেই আবেদনে ভাষাগত ও জাতিগত পরিচিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রত্যায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে আসামের আদিবাসী হিসেবে বিবেচিত নামগুলো নিয়ে খুব কমই তদন্ত করা হয়েছে।
আরেকটি স্বেচ্ছাচারী প্রক্রিয়া
আগামী ৩১ জুলাই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার কথা। তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে, তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আরেকটি সুযোগ দেয়া হবে। এতে যারা ব্যর্থ হবে, তাদেরকে বিদেশী নাগরিকত্ব বিষয়ক সমস্যা সুরাহার জন্য গঠিত ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে হবে। এই ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে আটক কেন্দ্রে পাঠাতে পারে বা দেশ থেকে বহিষ্কার করতে পারে।
সম্প্রতি স্ক্রল.কমের খবরে বলা হয়, এই ট্রাইব্যুনালগুলোও স্বেচ্ছাচারমূলকভাবে কাজ করছে। তারা কাউকে বিদেশী ঘোষণার ক্ষেত্রে অভিন্ন নিয়ম অনুসরণ করছে না।
আসামের লাখ লাখ লোকের কাছে নাগরিকত্ব প্রমাণ করার বিষয়টি অসাধ্য কাজে পরিণত হয়েছে, সীমাহীন সংখ্যক অফিসে যেতে হয়, নথিপত্র সংগ্রহ করতে হয়। যে ব্যবস্থা নাগরিকদের স্বীকৃতির বদলে বিদেশী ঘোষণায় আগ্রহী, তাকে কিভাবে কেউ সন্তুষ্ট করতে পারে?
এর ফলে প্রক্রিয়াটি এখন আসামের সবচেয়ে গরিব ও সবচেয়ে অরক্ষিত কিছু অধিবাসীকে রাষ্ট্রহীন করার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
ভুল, অসামঞ্জস্যতা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ নিয়ে আসামে চলছে বিদেশী চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া। নাগরিক হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে হলে আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে তারা বা তাদের পূর্বপুরুষেরা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের (বাংলাদেশ যুদ্ধের সূচনার দিন) আগে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু রাজ্যটির অধিবাসীদের অনেককে বারবার তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বলা হয়েছে, এনআরসি কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে তাদের নিজেদের পূর্বেকার সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয় যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটিই এর প্রমাণ।
গত জুলাই মাসে এনআরসি তাদের নিবন্ধনের চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করে ৩.২৯ কোটি আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৪০.৭ লাখের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হয়। তারপর চলতি বছরের ২৬ জুন আসামের নাগরিকত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিবেচিত ১.০২ লাখ লোকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। সরকারি এনআরসি বিবৃতিতে বলা হয়, চূড়ান্ত খসড়ায় তাদের নাম ভুলবশত অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তাদের নাম এখন অতিরিক্ত বাদ পড়া তালিকায় প্রকাশ করা হবে।
মাত্র গত বছর ভারতীয় নাগরিক হিসেবে যাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে আরো এক লাখ লোককে বাদ দিতে এনআরসি অফিস কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে। এতে বলা হয়, এসব লোককে ট্রাইব্যুনাল বিদেশী ঘোষণা করেছিল বা তাদের মামলাগুলো স্থগিত ছিল, কিংবা তারা ছিল নির্বাচন কমিশনের সন্দেহজনক ভোটার।
কিন্তু গত বছর চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশিত হওয়ার সময় এনআরসি সমন্বয়কারী দাবি করেছিলেন যে বাদ পড়াদের নাম ইতোমধ্যেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
গত বছর যারা তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল, তাদেরকে আবার আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে ফের এনআরসি কর্মকর্তাদের সামনে শুনানিতে যেতে হবে বলে বলা হয়। আবার যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, কিন্তু তা নিয়ে অন্যদের আপত্তি আছে, তাদের বিষয়টিও শোনা হবে বলে জানানো হয়।
এখানেও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে হয়। এসব কর্মকর্তাকে বিপুল ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তারা চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে পর্যন্ত যেকোনো সময় কারো নাগরিকত্বের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
আর তারা ওই ক্ষমতা বারবারই প্রয়োগ করছেন। এনআরসি কর্মকর্তারা কোন নামটি তদন্ত করতে হবে সে ব্যাপারে কিভাবে সিদ্ধান্ত নেন, তা বোঝা যায় না। আসামে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে যাদের বোঝানো হয়, তাদের বেশির ভাগই যেহেতু বাংলাদেশ থেকে প্রবেশ করেছে বলে মনে হয়, কাজেই আবেদনে ভাষাগত ও জাতিগত পরিচিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রত্যায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে আসামের আদিবাসী হিসেবে বিবেচিত নামগুলো নিয়ে খুব কমই তদন্ত করা হয়েছে।
আরেকটি স্বেচ্ছাচারী প্রক্রিয়া
আগামী ৩১ জুলাই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার কথা। তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে, তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আরেকটি সুযোগ দেয়া হবে। এতে যারা ব্যর্থ হবে, তাদেরকে বিদেশী নাগরিকত্ব বিষয়ক সমস্যা সুরাহার জন্য গঠিত ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে হবে। এই ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে আটক কেন্দ্রে পাঠাতে পারে বা দেশ থেকে বহিষ্কার করতে পারে।
সম্প্রতি স্ক্রল.কমের খবরে বলা হয়, এই ট্রাইব্যুনালগুলোও স্বেচ্ছাচারমূলকভাবে কাজ করছে। তারা কাউকে বিদেশী ঘোষণার ক্ষেত্রে অভিন্ন নিয়ম অনুসরণ করছে না।
আসামের লাখ লাখ লোকের কাছে নাগরিকত্ব প্রমাণ করার বিষয়টি অসাধ্য কাজে পরিণত হয়েছে, সীমাহীন সংখ্যক অফিসে যেতে হয়, নথিপত্র সংগ্রহ করতে হয়। যে ব্যবস্থা নাগরিকদের স্বীকৃতির বদলে বিদেশী ঘোষণায় আগ্রহী, তাকে কিভাবে কেউ সন্তুষ্ট করতে পারে?
No comments