ক্রিস্টচার্চ মসজিদে হামলায় নিহত ৪৯, ছবিতে ক্রাইস্টচার্চে হামলার পরের দৃশ্য


নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে হামলায় নিহত হয়েছেন ৪৯ জন। এক বিবৃতিতে এ সংখ্যা নিশ্চিত করেছে দেশটির পুলিশ। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ২০ জন। এর আগে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা আরডেন নিহতের সংখ্যা ৪০ জন জানিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধারনা করা হচ্ছে, এদের মধ্যে ৩ জনই হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।
এই হামলাকে জেসিন্দা আরডেন সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি জানান, যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত তারা সকলেই সন্ত্রাসী। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারির তালিকায় তাদের নাম ছিল না।
এর আগে হামলার পর এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে এটি নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে অন্যতম কালো দিন হিসেবে অভিহিত করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, নিশ্চিতভাবেই যা ঘটেছে তা অস্বাভাবিক ও ভয়াবহ মাত্রার অপরাধ।

নিউজিল্যান্ডের মসজিদগুলোতে শুক্রবারই সবথেকে বেশি মানুষ নামাজ পড়তে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারী একাই অস্ত্র হাতে নিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ওই হামলাকারীর ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করেছে। তার নাম ব্রেন্টন ট্যারান্ট ফ্রম। সে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। হামলার পর এর সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৮৭ পাতার একটি ঘোষণা প্রকাশ করে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ বলছে ওই একাউন্টের মালিকও হামলায় যুক্ত ছিল। ঘোষণায় তারা, মুসলিম শরনার্থী বিদ্বেষী বক্তব্য তুলে ধরে। তবে এতে কারো কোনো সাক্ষর ছিল না।
ক্রাইস্টচার্চের হামলায় নিহতের মধ্যে দুজন বাংলাদেশি
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল নুর মসজিদসহ দুটি মসজিদে হামলার ঘটনায় নিহতের মধ্যে দুজন বাংলাদেশি রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম সুফিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতদের একজন হলেন কৃষিবিদ ড. আবদুস সামাদ। তিনি ক্রাইস্টচার্চের লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তার স্ত্রীরও সন্ধান পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। মিসেস হোসনে আরা ছবি নামে আরেক বাংলাদেশির নিহত হবার খবর দিয়েছেন। এছাড়া চার পাচজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশংকাজনক।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আরও কয়েক জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।  আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে মসজিদে নামাজ শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে একজন বন্দুকধারী সিজদায় থাকা মুসল্লিদের ওপর গুলি ছুড়লে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।নিউ প্লাইমাউথে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জেসিনডা আর্ডোন ক্রিস্টচার্চে হামলার ঘটনাকে নিউজিল্যান্ডের জন্য একটি অন্ধকার দিন উল্লেখ করে এই হামলাকে চরম এবং নজিরবিহীন সহিংসতা বলেছেন।
ছবিতে ক্রাইস্টচার্চে হামলার পরের দৃশ্য
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এ সময় ওই মসজিদ দুটিতে জুমার নামাজ আদায় করতে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন। তাদের ওপর অতর্কিতে গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা।  এতে কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জাসিনদা আরডেন। হামলার পরের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে অনলাইন বিবিসি।  এখানে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো।
ভাগ্যের ফেরে বেঁচে গেলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা

নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট খেলতে বর্তমানে ক্রিস্টচার্চ এলাকাতেই অবস্থান করছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। দেশটির হেগলি পার্কে তারা অনুশীলন করছিলেন। সেসময়ই সেখানকার দুটি মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এতে ব্যাপক হতাহতের খবর পাওয়ার গেছে। ভয়াবহ এ ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কয়েকজন সদস্যকেও। নামাজ পড়তে তারা ওই সময় মসজিদে ঢুকছিলেন। প্রবেশের ঠিক আগেই মসজিদে গোলাগুলি শুরু হয়। রয়টার্স জানিয়েছে, তারা সকলেই নিরাপদে ওই স্থান ত্যাগ করতে পেরেছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রায় ২ ঘন্টা হেগলি পার্কের হোটেলে অবরুদ্ধ ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা।
জানা যায়, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন তাদের বাস নিয়ে মসজিদের কাছে একজন রক্তাক্ত নারীকে দেখতে পান। এসময় পাশের আরেক নারী তাদেরকে সাবধান করে বলেন যে, ভেতরে গোলাগুলি হচ্ছে। তিনি সাবধান না করলে হয়ত ক্রিকেটাররা ভেতরে ঢুকেই যেতেন। ঘটনার পর ফেসবুকে বাংলাদেশ দলে ক্রিকেটাররাও তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম লিখেছেন, ক্রিস্টচার্চ মসজিদে হামলার সময় আল্লাহ আজ আমাদের রক্ষা করেছেন। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান। তামিম ইকবাল ফেসবুকে লিখেছেন, পুরো দল বন্দুকধারীদের হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে!!! ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হলো, সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, বাসে করে দলের বেশিরভাগ সদস্যই মসজিদে গিয়েছিল। ঠিক যখন হামলার ঘটনাটি ঘটে তারা মসজিদের ভেতর প্রবেশ করছে। তিনি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন যে, তারা নিরাপদে আছে। তবে তারা মানসিকভাবে তারা হতবাক। তাদেরকে আপাতত হোটেল থেকে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ঘটনার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের খবর সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা সাংবাদিক মোহাম্মদ ইসাম হামলার বিষয়ে টুইটারে লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেন, ক্রিকেট দল হেগলি পার্কের কাছে একটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলার ঘটনা থেকে বাঁচতে পেরেছেন। তবে এখনো ভেতরে আমার বন্ধুরা রয়েছে। আমার বন্ধু বেঁচে আছে কি-না সেটা নিয়ে আমি আমি ভীত।
এদিকে সর্বশেষ তথ্যমতে আগামি কাল থেকে শুরু হতে চলা বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড টেস্ট ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড ইতিমধ্যে টুইটারে এটি নিশ্চিত করেছে। ফলে আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই বাংলাদেশে ফিরছে ক্রিকেট দলের সদস্যরা। তবে কখন তারা ফিরবেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।



No comments

Powered by Blogger.