বাংলাদেশে নির্বাচনে কঠোর লড়াইয়ে বিরোধীরা by ভারত ভূষণ
গণতান্ত্রিক
নির্বাচনের উত্তেজনা আসে তার অনিশ্চিত ফলের কারণে। বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ
নির্বাচন ৩০ শে ডিসেম্বর। অনেকটা আগেই প্রত্যাশা করা যায় যে, স্বস্তির
সঙ্গেই ক্ষমতা ফিরবে আওয়ামী লীগ। তবে, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এই উত্তেজনাকে
বাড়িয়ে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগকে নার্ভাস হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ শতকরা ৭.৮৬ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তিনি উন্নয়ন রেকর্ড ও মেগা প্রকল্প নিয়ে প্রতিযোগিতা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মা ব্রিজ, ঢাকায় মেট্রো রেল, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রস্তাবিত বুলেট ট্রেন প্রকল্প এবং রূপপুর দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র।
বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণে বিনিয়োগ বেড়েছে। তিনি কার্যত তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্টার প্রচারক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে প্রচারণার দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘমেয়াদী জেলের কারণে খালেদা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। তার ছেলে তারেক রহমান রয়েছেন লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে।
আরও মূল্যবান বিষয় হলো, আঞ্চলিক দুটি বড় খেলোয়াড়- ভারত ও চীন উভয় পক্ষই ঢাকার সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করতে চায়। ভারতের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো তাদের নিরাপত্তা। অন্যদিকে চীনের বড় স্বার্থ হলো তাদের ব্যবসা। আঞ্চলিক এই দুই বৈরি পক্ষের সঙ্গে চমৎকারভাবে সম্পর্কে ভারসাম্য রক্ষা করছেন শেখ হাসিনা।
তাহলে আওয়ামী লীগ কেন উদ্বিগ্ন ?
আওয়ামী লীগের প্রত্যাশার বিপরীতমুখি বিষয় হলো, দৃশ্যত বিরোধীরা গতি পাচ্ছে। শীর্ষ দু’জন নেতাকে ছাড়াই বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধু তাই নয়, তারা বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে একটি জোট করেছে। যার নাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এসব দল বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করতে একমত হয়েছে। উচ্চাভিলাসী দু’নেত্রীর মধ্যে যে দলীয় সংকীর্ণতায় নির্বাচনী লড়াই হয়, সেই লড়াইকে আরো কঠোর করতে বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সাবেক আইনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন থেকে বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ‘বাঘ’ (আবদুল কাদের) সিদ্দিকী নির্বাচনী লড়াইয়ে ব্যবহার করছেন তাদের ব্যক্তিগত সুনাম।
বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে যে অপ্রত্যাশিত ভিড় দেখা গেছে তাতে আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন। নয়া পল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এতটাই ভিড় হয়েছিল যে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে রাবার বুলেট ব্যবহার করতে হয়েছে। স্কাইপ ব্যবহার করে লন্ডন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নিচ্ছিলেন তারেক রহমান। কিন্তু তা নিয়ে অভিযোগ তুলে সেই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চেষ্টা করেছিল সরকার। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইতিমধ্যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া যত এগিয়ে আসছে সরকার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে। যশোর থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন নেতা ঢাকায় নিখোঁজ হয়েছেন। এর চারদিন পরে বুড়িগঙ্গা থেকে তার মৃতদেহ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিরোধী দলীয় বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা মুলতবি অবস্থায় ছিল। সে সব মামলা অকস্মাৎ পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ হয়তো ভেবেছিল বিএনপি খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে আসবে না। এ দলটি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল। কিন্তু দৃশ্যত এ দলটি হয়তো বুঝতে পেরেছে তাদের জন্য এখন এ নির্বাচন হয়তো টিকে থাকা, না হয় তাদের নিবন্ধনে আঘাত। এবং বাংলাদেশ বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিষয়টি তারা বুঝতে পেরেছে। পর পর দু’টি নির্বাচন বর্জন করলে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করে দিতে পারে।
এই নির্বাচনটি বিরোধীদের জন্য একটি সহজ নির্বাচন নয়। দক্ষিণ এশিয়ায়, গণতান্ত্রিক বিরোধীরা সব সময়ই সন্দেহ করে থাকে যে, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে তাদের পক্ষে ভোট কারচুপি করে থাকে। এই আতঙ্ক হয়তো এবার বড় করে দেখা হতে পারে।
তবে ব্যাপকভাবে জালিয়াতি হয়তো কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ নির্বাচন হচ্ছে একই দিনে, ৩০ শে ডিসেম্বর। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আসন রয়েছে ৩০০। আর সারাদেশে ৪৪০০০ ভোটকেন্দ্রে ভোট নেয়া হয়। উপরন্তু এবার কিছু ভোটকেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচনে অনিয়ম প্রতিরোধ করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের নেতাকর্মীদের প্রতি স্থানীয়ভাবে গ্রুপ তৈরি করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। বলেছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। নির্বাচনের দিনে কি কোনো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করা উচিত হবে, যদি তাই হয় তাহলে ক্ষমতাসীন দলের যেকোন পেশিশক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে ‘পিপলস পাওয়ার’।
বিরোধী দলের উদ্বেগের আরো একটি কারণ হলো নির্বাচনের সময়সীমা। নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতে পারে ১লা জানুয়ারি। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বর্তমান মেয়াদ অব্যাহত থাকবে ২৮ শে জানুয়ারি পর্যন্ত। কারণ, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া হয় নি। যদি নির্বাচনের ফল বিরূপ হয় তাহলেও কিছু সময়ের জন্য ক্ষমতায় থাকবে শেখ হাসিনার সরকার। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগ যদি কোনো ‘ফাউল প্লে’ করে তাহলে বিরোধীরা ফল ঘোষণা ও নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তী সময়কে সংক্ষিপ্ত করার দাবি করবে।
বিএনপি যদি ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত ও পাকিস্তানপন্থি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নতুন করে জোট করতে পারে বলে ভারত উদ্বিগ্ন। বিএনপি ভারতে তার বন্ধুদের বলতে পারে যে, নির্বাচনী ফল ভারতের সঙ্গে বিরোধের সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত হবে না। তবে তাতে বরফ কমই কাটবে বলে মনে হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রতি সহনশীলতা আছে এমন জোটসঙ্গীদের ৪০ থেকে ৬০টি আসনে প্রার্থী দিতে পারে বিএনপি। এই আতঙ্কই হবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে আওয়ামী লীগের ট্রাম কার্ড।
আরও একটি সত্য কথা হলো। একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে ইসলামপন্থি দল থাকবেই। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলই এসব দলের ভোটকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাই ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিএনপিকে পিছনে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। তারা তাদের ইসলামী এজেন্ডা অনুমোদন করে হেফাজতে ইসলামকে সঙ্গে নিয়েছে। এর অধীনে কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে মাস্টার্স সমমূল্যায়নের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ফলে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও এসব শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়গুলোকে পর্যালোচনা করার কথা বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ‘অনৈসলামিক গডেস অব জাস্টিস’ মূর্তিকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল (তবে প্রতিবাদের মুখে তা আবার পুনঃস্থাপন করা হয়েছে)। এ ছাড়া মেয়েদের বিয়ের বয়স কমিয়ে ১৬ বছর করা হয়েছে। এমনটা ইসলাম-বান্ধব বলে দৃশ্যমান।
ডিসেম্বর মাসটি আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদের জন্য হবে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। আওয়ামী লীগ তার প্রত্যাশা ও সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারে না। ভোটার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের আচরণ নির্ভর করতে পারে বাতাসের গতিবিধির ওপর।
(ভারত ভূষণ ভারতের নয়াদিল্লিভিত্তিক সিনিয়র সাংবাদিক। তার লেখা এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন দ্য এশিয়ান এইজে। তারই অনুবাদ প্রকাশিত হলো।)
আওয়ামী লীগকে নার্ভাস হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ শতকরা ৭.৮৬ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তিনি উন্নয়ন রেকর্ড ও মেগা প্রকল্প নিয়ে প্রতিযোগিতা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মা ব্রিজ, ঢাকায় মেট্রো রেল, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রস্তাবিত বুলেট ট্রেন প্রকল্প এবং রূপপুর দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র।
বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণে বিনিয়োগ বেড়েছে। তিনি কার্যত তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্টার প্রচারক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে প্রচারণার দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘমেয়াদী জেলের কারণে খালেদা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। তার ছেলে তারেক রহমান রয়েছেন লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে।
আরও মূল্যবান বিষয় হলো, আঞ্চলিক দুটি বড় খেলোয়াড়- ভারত ও চীন উভয় পক্ষই ঢাকার সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করতে চায়। ভারতের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো তাদের নিরাপত্তা। অন্যদিকে চীনের বড় স্বার্থ হলো তাদের ব্যবসা। আঞ্চলিক এই দুই বৈরি পক্ষের সঙ্গে চমৎকারভাবে সম্পর্কে ভারসাম্য রক্ষা করছেন শেখ হাসিনা।
তাহলে আওয়ামী লীগ কেন উদ্বিগ্ন ?
আওয়ামী লীগের প্রত্যাশার বিপরীতমুখি বিষয় হলো, দৃশ্যত বিরোধীরা গতি পাচ্ছে। শীর্ষ দু’জন নেতাকে ছাড়াই বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধু তাই নয়, তারা বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে একটি জোট করেছে। যার নাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এসব দল বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করতে একমত হয়েছে। উচ্চাভিলাসী দু’নেত্রীর মধ্যে যে দলীয় সংকীর্ণতায় নির্বাচনী লড়াই হয়, সেই লড়াইকে আরো কঠোর করতে বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সাবেক আইনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন থেকে বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ‘বাঘ’ (আবদুল কাদের) সিদ্দিকী নির্বাচনী লড়াইয়ে ব্যবহার করছেন তাদের ব্যক্তিগত সুনাম।
বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে যে অপ্রত্যাশিত ভিড় দেখা গেছে তাতে আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন। নয়া পল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এতটাই ভিড় হয়েছিল যে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে রাবার বুলেট ব্যবহার করতে হয়েছে। স্কাইপ ব্যবহার করে লন্ডন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নিচ্ছিলেন তারেক রহমান। কিন্তু তা নিয়ে অভিযোগ তুলে সেই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চেষ্টা করেছিল সরকার। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইতিমধ্যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া যত এগিয়ে আসছে সরকার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে। যশোর থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন নেতা ঢাকায় নিখোঁজ হয়েছেন। এর চারদিন পরে বুড়িগঙ্গা থেকে তার মৃতদেহ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিরোধী দলীয় বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা মুলতবি অবস্থায় ছিল। সে সব মামলা অকস্মাৎ পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ হয়তো ভেবেছিল বিএনপি খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে আসবে না। এ দলটি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল। কিন্তু দৃশ্যত এ দলটি হয়তো বুঝতে পেরেছে তাদের জন্য এখন এ নির্বাচন হয়তো টিকে থাকা, না হয় তাদের নিবন্ধনে আঘাত। এবং বাংলাদেশ বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিষয়টি তারা বুঝতে পেরেছে। পর পর দু’টি নির্বাচন বর্জন করলে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করে দিতে পারে।
এই নির্বাচনটি বিরোধীদের জন্য একটি সহজ নির্বাচন নয়। দক্ষিণ এশিয়ায়, গণতান্ত্রিক বিরোধীরা সব সময়ই সন্দেহ করে থাকে যে, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে তাদের পক্ষে ভোট কারচুপি করে থাকে। এই আতঙ্ক হয়তো এবার বড় করে দেখা হতে পারে।
তবে ব্যাপকভাবে জালিয়াতি হয়তো কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ নির্বাচন হচ্ছে একই দিনে, ৩০ শে ডিসেম্বর। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আসন রয়েছে ৩০০। আর সারাদেশে ৪৪০০০ ভোটকেন্দ্রে ভোট নেয়া হয়। উপরন্তু এবার কিছু ভোটকেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচনে অনিয়ম প্রতিরোধ করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের নেতাকর্মীদের প্রতি স্থানীয়ভাবে গ্রুপ তৈরি করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। বলেছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। নির্বাচনের দিনে কি কোনো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করা উচিত হবে, যদি তাই হয় তাহলে ক্ষমতাসীন দলের যেকোন পেশিশক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে ‘পিপলস পাওয়ার’।
বিরোধী দলের উদ্বেগের আরো একটি কারণ হলো নির্বাচনের সময়সীমা। নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতে পারে ১লা জানুয়ারি। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বর্তমান মেয়াদ অব্যাহত থাকবে ২৮ শে জানুয়ারি পর্যন্ত। কারণ, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া হয় নি। যদি নির্বাচনের ফল বিরূপ হয় তাহলেও কিছু সময়ের জন্য ক্ষমতায় থাকবে শেখ হাসিনার সরকার। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগ যদি কোনো ‘ফাউল প্লে’ করে তাহলে বিরোধীরা ফল ঘোষণা ও নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তী সময়কে সংক্ষিপ্ত করার দাবি করবে।
বিএনপি যদি ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত ও পাকিস্তানপন্থি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নতুন করে জোট করতে পারে বলে ভারত উদ্বিগ্ন। বিএনপি ভারতে তার বন্ধুদের বলতে পারে যে, নির্বাচনী ফল ভারতের সঙ্গে বিরোধের সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত হবে না। তবে তাতে বরফ কমই কাটবে বলে মনে হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রতি সহনশীলতা আছে এমন জোটসঙ্গীদের ৪০ থেকে ৬০টি আসনে প্রার্থী দিতে পারে বিএনপি। এই আতঙ্কই হবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে আওয়ামী লীগের ট্রাম কার্ড।
আরও একটি সত্য কথা হলো। একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে ইসলামপন্থি দল থাকবেই। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলই এসব দলের ভোটকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাই ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিএনপিকে পিছনে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। তারা তাদের ইসলামী এজেন্ডা অনুমোদন করে হেফাজতে ইসলামকে সঙ্গে নিয়েছে। এর অধীনে কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে মাস্টার্স সমমূল্যায়নের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ফলে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও এসব শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়গুলোকে পর্যালোচনা করার কথা বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ‘অনৈসলামিক গডেস অব জাস্টিস’ মূর্তিকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল (তবে প্রতিবাদের মুখে তা আবার পুনঃস্থাপন করা হয়েছে)। এ ছাড়া মেয়েদের বিয়ের বয়স কমিয়ে ১৬ বছর করা হয়েছে। এমনটা ইসলাম-বান্ধব বলে দৃশ্যমান।
ডিসেম্বর মাসটি আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদের জন্য হবে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। আওয়ামী লীগ তার প্রত্যাশা ও সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারে না। ভোটার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের আচরণ নির্ভর করতে পারে বাতাসের গতিবিধির ওপর।
(ভারত ভূষণ ভারতের নয়াদিল্লিভিত্তিক সিনিয়র সাংবাদিক। তার লেখা এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন দ্য এশিয়ান এইজে। তারই অনুবাদ প্রকাশিত হলো।)
No comments