সুদ ভর্তুকি ও বেতনে ব্যয় ৩১ শতাংশ
আগামী অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ৩১ শতাংশ ব্যয় হবে ঋণের সুদ, ভর্তুকি ও বেতন খাতে। ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে এই তিন খাতে। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় চলে যাবে ৫২ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৪২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা এবং সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা গুনতে হবে ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণে। সম্ভাব্য এ ব্যয় চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ২৬৭ কোটি টাকা। পহেলা জুন জাতীয় সংসদে তা ঘোষণা দেয়া হবে। তবে উল্লেখিত তিন খাতের সম্ভাব্য ব্যয় চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১৬ হাজার ১৯০ কোটি টাকা বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে এই তিন খাতে বরাদ্দ রয়েছে এক লাখ ৬ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শনিবার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, কৃষি খাতে ভর্তুকিসহ প্রয়োজনী বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
তবে কৃষি খাতে সরকার ব্যয় কম করছে। সাধারণ মানুষ এ খাতে খরচটা বেশি করছে। কৃষি খাতে অসাধারণ উন্নতির ধারা সামনেও বজায় রাখতে চাই। বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে প্রতি বছর। আগামী বাজেটেও এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সূত্র মতে, আগামী বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। এটি জিডিপিও (মোট দেশজ উৎপাদন) ১১ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা পরিশোধে। এ খাতে ব্যয় হবে জিডিপির ২ দশমিক ৪ শতাংশ বা টাকার হিসেবে ৫২ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হবে দেশি ও বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ। এ খাতের সম্ভাব্য ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ।
বেতন-ভাতা খাত : আগামী বাজেটে পেনশনভোগীদের জন্য নতুন ঘোষণা আসতে পারে। বিশেষ করে ৭০ বছরের ওপরে পেনশনভোগীরা নতুন করে পুরো পেনশনের সুবিধা পেতে পারেন। এছাড়া পেনশনভোগীদের মধ্যে যারা ১০০ শতাংশ বিক্রি করে দিয়েছেন তাদের পহেলা বৈশাখের ভাতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ফলে নতুন বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়বে। সরকারের সাড়ে ১২ লাখ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য চলতি অর্থবছরে বেতন খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৯ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ বাড়ছে ২ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা।
সুদ পরিশোধ : আগামী অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ২৯ হাজার ১২ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এছাড়া দেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে ৪৮ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা এবং ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে ২৫ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। বছর শেষে এসব ঋণের সুদ বাবদ ৪২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। চলতি অর্থবছরের এই ঋণের সুদ বাবদ পরিশোধ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ : আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। ওই হিসেবে ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাড়ছে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। সূত্র মতে, ভর্তুকি বাবদ আগামী বাজেটে খাদ্য খাতে ৪ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ১৫শ’ কোটি টাকা। প্রণোদনা বাবদ কৃষি খাতে সম্ভাব্য বরাদ্দ ৯ হাজার কোটি টাকা, রফতানিতে ৪ হাজার কোটি টাকা ও পাটজাত দ্রব্যে ৫শ’ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অনুকূলে ৫ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
সুদ পরিশোধ : আগামী অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ২৯ হাজার ১২ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এছাড়া দেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে ৪৮ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা এবং ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে ২৫ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। বছর শেষে এসব ঋণের সুদ বাবদ ৪২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। চলতি অর্থবছরের এই ঋণের সুদ বাবদ পরিশোধ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ : আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। ওই হিসেবে ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাড়ছে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। সূত্র মতে, ভর্তুকি বাবদ আগামী বাজেটে খাদ্য খাতে ৪ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ১৫শ’ কোটি টাকা। প্রণোদনা বাবদ কৃষি খাতে সম্ভাব্য বরাদ্দ ৯ হাজার কোটি টাকা, রফতানিতে ৪ হাজার কোটি টাকা ও পাটজাত দ্রব্যে ৫শ’ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অনুকূলে ৫ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ও পিডিবিকে দেয়া ঋণকেও এক ধরনের ভর্তুকি হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে। কারণ এসব ঋণ পারতপক্ষে সরকার ফেরত পায় না এবং পরে পুরো ঋণই অনুদান, ভর্তুকি ইত্যাদিতে রূপান্তরিত হয়। বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিদ্যুৎ পেতে পিডিবিকে ঋণ দেয় সরকার। জানা গেছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় বিপিসির জন্য কয়েক বছর কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি সরকারকে। আগামী বাজেটেও ভর্তুকি বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। ফলে নতুন করে এ খাতে এক টাকাও ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়নি।
No comments