কোনো সুখবর নেই
রমজান মাসে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের সমাধান নিয়ে রোজাদারদের জন্য স্বস্তিকর কোনো খবর নেই। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এখন বিদ্যুতের যে চাহিদা তাতে ভাঙাচোরা সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেরামত করেও এটা সামাল দেয়া অসম্ভব। তাদের মতে, একমাত্র বৃষ্টিই পারে এ মুহূর্তে স্বস্তি দিতে। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে আসবে। জানা গেছে, বর্তমানে উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০০ মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও পিডিবির (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) হিসাব মতে, আজ (শনিবার) থেকে উৎপাদন হবে দশ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। তাদের হিসাবে মেরামতে থাকা ৮০০ মেগাওয়াটের ২-৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র আজ থেকে উৎপাদনে আসতে পারে। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খবর হল- এখনও মেরামত চলছে। অপরদিকে বিদ্যুতের অভাবে বর্তমানে পানির উৎপাদন কমে গেছে প্রায় ৫ কোটি লিটার। এর আগে ওয়াসার হিসাব মতে, পানির ঘাটতি ছিল ১৫ কোটি লিটার। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে শনিবার থেকে এই ঘাটতি বেড়ে দাঁড়াবে ২০ কোটি লিটারে। একই সঙ্গে উৎপাদিত গ্যাসের বিপুল পরিমাণ অংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করার সিদ্ধান্তে নগরজুড়ে ভয়াবহ গ্যাস সংকট দেখা দেবে। এতে রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী, শেকেরটেক,
মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, গোপীবাগ, আরকে মিশন রোড, স্বামীবাগ, মানিকনগর, গোলাপবাগ, ওয়ারী, উত্তর মৈশুরী, দয়াগঞ্জ, বকশিবাজার, দক্ষিণ কমলাপুর, মধুবাজার, বনশ্রী, পুর্ব-পশ্চিম রামপুরাসহ অনেক এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে। এছাড়া ঢাকার বাইরের বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা থেকেও গ্যাস কাটছাঁট করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে দেয়ার কথা রয়েছে। এতে রমজান মাসজুড়ে শত শত ছোট-বড় শিল্প-কারখানা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাবে না। যার কারণে আগামী ঈদকে কেন্দ্র করে উৎপাদনে থাকা শিল্প-কারখানাগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন সম্ভব হবে না। আর ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় নগরবাসী একসঙ্গে বিদ্যুৎ, পানি আর গ্যাস সুবিধা তো পাবেনই না। জানা গেছে, রমজানে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে ১০ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট। কিন্তু এই সময়ে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে কমপক্ষে ১২ হাজার মেগাওয়াট। যেভাবে গরম পড়ছে, বৃষ্টি না হলে প্রতিদিনই এ চাহিদা বাড়বে। এতে রমজানে বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকবে কমপক্ষে ১৮শ’ থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট। পাশাপাশি ঝড়ে বৈদ্যুতিক টাওয়ার ভেঙে পড়ায় উৎপাদন বাড়লেও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এতে সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি পোহাতেই হবে। অপরদিকে গ্যাসের ঘাটতিও থাকবে ২০ কোটি ঘনফুটের বেশি। বর্তমানে গ্যাসের মোট উৎপাদন ২৭৯ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে বাসাবাড়িতে দিচ্ছে ৩৮ কোটি ঘনফুট। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখতে এখান থেকেও গ্যাস কাটছাঁট করা হবে। এতে নগরবাসীকে অন্যান্য সময়ের মতো দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই পার করতে হবে রোজার মাস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সময়ে রাজধানীর চেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা হবে গ্রামে।
কারণ রাজধানীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গ্রামে বিদ্যুৎ-পানি ও গ্যাস সরবরাহ কাটছাঁট করা হবে। এতে রোজার মাসে গ্রামবাসীর দিন-রাত মিলিয়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আশ্বস্ত করেছেন, এবারের রমজানের প্রথম দিন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন দশ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করা সম্ভব হবে। আর সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সক্ষমতা আছে ১২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কাজেই রোজায় বিদ্যুৎ নিয়ে দুর্ভোগ হবে না। বিশেষ করে ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এই সময়ে কোনো ধরনের লোডশেডিং করতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আগে থেকে ঘোষণা দেয়া হবে, যাতে রোজাদাররা প্রস্তুতি নিতে পারেন। বিতরণ কোম্পানিগুলোর মতে, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের তেমন কোনো সমস্যা হবে না। এজন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছেন। বিদ্যুৎ বিভাগের মতে, গরমের কারণে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই এই লোডশেডিং শূন্য হয়ে যাবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রায় একই কথা বলেছেন ওয়াসা ও তিতাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে এসব খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, জোড়াতালি দিয়ে সংকট নিরসন করতে গিয়ে সব ক্ষেত্রে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হবে। তাদের মতে, বর্তমানে গ্যাসের ঘাটতি প্রায় ২০ কোটি ঘনফুট। সংকট নিরসনে রমজানে কিছু কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হবে। একই সঙ্গে অনেক এলাকার শিল্প-কারখানায়ও গ্যাস কমিয়ে দেয়া হবে।
এতে গ্যাসের সাশ্রয় হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংকট বাড়বে। এতে লোডশেডিং বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ না থাকার প্রভাব পড়বে পানি উত্তোলনে। অপরদিকে শিল্প-কারখানায় গ্যাস কমিয়ে দেয়া হলে ব্যাহত হবে শিল্পোৎপাদন। আর শিল্প উৎপাদন কম হলে শ্রমিক-কর্মচারীরা সমস্যায় পড়তে পারেন। ঈদের বেতন-বোনাস নিয়ে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মীর মসিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এ বছর রমজান মাসে গ্যাসের ঘাটতি থাকবে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই ঘাটতির কারণে নগরবাসীকে যাতে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য তিতাসের আওতাধীন সব স্টেশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার রমজান মাসের ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করা হয়েছে। সিস্টেমের অবস্থা ভালো। এবার লোড সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রথম রোজা থেকে পুরো লোড ডিসপার্স মনিটরিং করা হবে। যখন যেখানে লোড প্রয়োজন হবে সেখানে গ্যাস দেয়া হবে। কাজেই ইফতার, সেহরিতে গ্যাসের কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি আশা করছেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাবে রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে এগারো হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন হচ্ছে ৯ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। প্রথম রোজা থেকে এটা বাড়িয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট করা হবে। এতে তাদের হিসাবে ঘাটতি দাঁড়াবে ১ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই ঘাটতি লোডশেয়ারিং করে সমন্বয় করা হবে। তার মতে, এখন লোডশেডিং নেই। যা হচ্ছে তা লোডশেয়ারিং। পিডিবি চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বলেন, রমজানে সেহরি,
ইফতার ও তারাবির নামাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বিতরণ কোম্পানিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শহর এলাকার পাশাপাশি গ্রামেও। তবে আরইবির (রুরাল ইলেকট্রিসিটি বোর্ড) সূত্রে জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) বাধ্য হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং করছে। আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন ইতিমধ্যে সংস্থার ৮০টি সমিতির জেনারেল ম্যানেজারকে জানিয়ে দিয়েছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ার কারণে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ সমহারে বণ্টন করে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। রমজান মাসে মানুষজন যাতে নামাজ, তারাবি, ইফতার ও সেহরির সময় বিদ্যুৎ পায় সেদিকে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় লোডশেডিং থাকলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। আবার কেউ যেন এ সুযোগ নিয়ে অন্য কোনো ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেন। এক্ষেত্রে তিনি জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোরও তাগিদ দেন। গরমের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে গ্রাহকদের তা বোঝাতে হবে। উত্তম গ্রাহক সেবার পাশাপাশি গ্রাহকদের সঙ্গে সু-আচরণ করতে হবে। এদিকে গ্রীষ্মের শুরুতেই রাজধানীতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। পানি নিয়ে হাহাকারও শুরু হয়েছে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনের বেশির ভাগ সময় ওয়াসার পাইপ থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় রাতভর অপেক্ষা করতে হয় পানির জন্য। বহু এলাকায় ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিও আসছে ওয়াসার পাইপ থেকে। এবারের শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে পানির সংকট দেখা দেয়ায় এই মৌসুমে নগরীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও পানির পাম্প ঘেরাও করার ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানমণ্ডি, কলাবাগান, মগবাজার,
মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, শাহজাদপুর, পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোড, সতীশ সরকার লেন, মুরগিটোলা, মিরহাজীরবাগ, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, পোস্তগোলা, সুরিটোলা, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, মুগদাপাড়া এলাকায় প্রায় এক মাস ধরে চলছে তীব্র পানি সংকট। শাঁখারীবাজারের বাসিন্দা রঞ্জিত কুমার জানান, প্রায় এক মাস ধরে এই এলাকায় পানির তীব্র সংকট বিরাজ করছে। কখনও পানি পাওয়া যায়, কখনও পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে পানি উৎকট দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় সেসব পানি পানেরও উপযোগী থাকে না। মিরহাজীরবাগের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, চার দিন ধরে মিরহাজীরবাগ ও আশপাশের এলাকায় পানির সংকট চলছে। ওয়াসার কর্মকর্তাদের বলার পরও সংকট দূর হয়নি। রিয়াজউদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, মিরহাজীরবাগ আদর্শ স্কুলের সামনে ওয়াসার একটা পাম্প রয়েছে। কিছুদিন আগে এখানে নতুন পাম্প বসানো হয়। কিন্তু ওই পাম্প দিয়ে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে পাম্পের অপারেটর দাবি করেন। ফলে পুরো এলাকায় হাহাকার চলছে। ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা জানান, ধলপুরে অবস্থিত সায়েদাবাদ শোধনাগারের দুটি প্লান্ট থেকে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার পানি শোধন করে নগরীতে সরবরাহ করা হয়।
মাঝে মধ্যে সায়েদাবাদের দুটি পানি শোধনাগারেই বিঘœ দেখা দেয়। একই সঙ্গে পানি শোধনাগার দুটি বিকল হয়ে পড়লে ওই শোধনাগারের পানি যেসব এলাকায় সরবরাহ করা হয় সেসব এলাকায় কৃত্রিম সংকট দেখা দেয়। এছাড়া ঢাকা ওয়াসার যেসব পাম্প থেকে পানি উত্তোলন করা হয়, লোডশেডিং হলেও পানি উৎপাদন কমে যায়। অনেক পানি পাম্পে জেনারেটর ব্যবস্থা না থাকায় পানির সংকট তৈরি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী কামরুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, চাহিদার তুলনায় ঢাকা ওয়াসার বর্তমান সরবরাহ কম নয়। তবে কিছু এলাকার পাম্পে পানির উৎপাদন কম হওয়ায় বা পাম্পের যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয়ায় সেসব এলাকায় পানির সাময়িক সংকট তৈরি করছে। এক এলাকার পানির লাইনের সঙ্গে অন্য সব এলাকার নেটওয়ার্কিং না থাকায় অন্য পাম্প থেকে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। তবে আপৎকালীন আমরা গাড়িতে করে পানি সরবরাহ করে থাকি। তিনি আরও বলেন, ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদন সক্ষমতা দৈনিক ২৩০ কোটি লিটার। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ২৪৫ কোটি লিটার। সায়েদাবাদ-১, সায়েদাবাদ-২ ও চাঁদনীঘাট- এ তিনটি শোধনাগার এবং ৭৩০টি গভীর নলকূপ দিয়ে এ পানি উৎপাদন করা হয়।
No comments