ক্ষমতাধর দুই নেত্রীর বিরল বাকযুদ্ধ
ব্রেক্সিট ইস্যুতে এই প্রথমবারের মতো বাকযুদ্ধে জড়িয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ না করে গাণিতিক ফর্মুলা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন মার্কেল। এ বিলম্বে যেন ব্রেক্সিট আলোচনা ভণ্ডুল না হয়ে যায় সে হুশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে এ কালক্ষেপণের জন্য ব্রিটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টি ও ইইউয়ের ওপর দোষারোপ করেছেন তেরেসা মে। তার কনজারভেটিভ পার্টির বিরুদ্ধে ইইউ নেতারা একাট্টা হয়েছেন বলে অভিযোগ মে’র। খবর বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ানের। বৃহস্পতিবার জার্মানির পার্লামেন্টের নিন্মকক্ষ বান্দেসটাগে মার্কেল বলেন, ‘ব্রিটিশ নেতারা এখনও একটি মরীচিকার মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের ধারণা, ইইউ ছাড়লে ব্রিটেন তার সব অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিজেদের করায়ত্ত করতে পারবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশটি এখন আমাদের কাছে তৃতীয় পক্ষের মতো। ইইউয়ের অন্যান্য সদস্য দেশের মতো দেশটি এখন আর একই ধরনের অধিকার পেতে পারে না। ইইউভুক্ত ২৭ রাষ্ট্র ও ইইউয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে একমত।’ এজন্য অতি শিগগিরই তা বাস্তবায়নের পথে হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন মার্কেল। মে’র প্রতি আঘাত হেনে মার্কেল আরও বলেন, ইইউয়ের প্রতি ব্রিটেনের অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কীভাবে ভবিষ্যৎ যুক্তরাজ্য ও ইইউ সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে সমঝোতায় আসা যায় সে ব্যাপারে তার কোনো ‘জ্ঞান’ নেই। আর এজন্য তিনি (তেরেসা মে) সময় অপচয় করছেন।’ জবাবে তেরেসা মে বলেন, যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট অবস্থান নিয়ে মার্কেলের মন্তব্যে এটাই বোঝা যাচ্ছে, এ বিষয়ে সমঝোতা করতে ব্রিটেনের জন্য শক্তিশালী সম্ভাব্য সমর্থন প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘তার (মার্কেল) মন্তব্য বাস্তবায়ন করতে ব্রেক্সিট সমঝোতার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’ ইংল্যান্ডের লিড শহরে এক নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ব্রেক্সিট আলোচনার বিষয়টি এখন আরও কঠিন মুহূর্তের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। যেমনিভাবে আমাদের বিরোধী শক্তি তা ভেস্তে দেয়ার চেষ্টা করছে তেমনি এর বিরোধিতা করতে ইইউ নেতারা একজোট হয়েছেন।’ বিরোধী লেবার পার্টির অভিযোগ, টরি পার্টি ব্রেক্সিট আলোচনা বাস্তবায়নে কঠোর ও বেপরোয়া কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারণায় ‘জাতীয় স্বার্থে’ তাকে ভোট দেয়ার জন্য লেবার সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান তেরেসা মে।
তিনি বলেন, শক্তিশালী সমর্থনের মাধ্যমে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে যেন ইউরোপের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরদের সঙ্গে সামনের মাসেই আলোচনায় বসতে পারি। গত ২৯ মার্চ ইইউ থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরুর আনুষ্ঠানিক নোটিশ দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে ব্রেক্সিট কার্যকর হবে। এর তিন সপ্তাহের মাথায় হঠাৎ করেই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন তেরেসা মে। আগামী ৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে ব্রিটেনের নির্বাচন। ইইউ সদস্য হতে পারে আয়ারল্যান্ড : আয়ারল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করা হতে পারে। শনিবার ইইউ নেতাদের এক শীর্ষ সম্মেলনে একীভূত আয়ারল্যান্ডকে সদস্য করার প্রস্তাব করা হবে। ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পর এই প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে বসছেন ২৭ দেশের জোটের নেতারা। আয়ারল্যান্ড ঐক্যবদ্ধ হলে তাদের সদস্য করা হবে বলে নেতারা ঘোষণা দিতে পারেন। এটা আইরিশ সরকারের জন্য একটি জয়। উত্তর ও দক্ষিণ আয়ারল্যান্ড গণভোটের মাধ্যমে ফের একীভূত হতে পারে, যেমনটা হয়েছিল বার্লিন প্রাচীর পতনের পর জার্মানি। আয়ারল্যান্ডকে সদস্য করার প্রস্তাব করা হলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে ব্রিটেন। তবে সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থাকতে চান উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৬২ ভাগ অধিবাসী, মাত্র ২২ ভাগ একীভূত হতে চান।
No comments