সুমাইয়ার আঙুলে সুচ দিয়ে খোঁচাত বৃষ্টি
মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার কথা বললেই শিশু সুমাইয়ার ওপর নির্যাতন চালাত বৃষ্টি। লাঠিপেটা, চড়-থাপ্পড়, এমনকি ওর কচি হাতের আঙুলের মাথায় সুচ দিয়ে নির্মমভাবে খোঁচাত পাষণ্ড বৃষ্টি। শুধু তাই নয়, কান্নাকাটি করলেই গালে, গলায় চিমটি দিয়ে ধরে চুপ করতে বলত। উদ্ধারের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার কামরাঙ্গীরচরে টিনশেডের ভাড়া বাসায় এসব অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা দেয় শিশু সুমাইয়া। ছোট সন্তানের মুখে নির্যাতনের এমন বর্ণনা শুনে নিজেদের ধরে রাখতে পারছিলেন না জাকির হোসেন ও মা মুন্নি আক্তার। কান্নায় চোখ ভিজে ওঠে তাদের। অপহরণের পর ২৪ দিন ধরে একমাত্র সন্তান হারানোর বেদনায় নিজেদের দুই চোখের পাতা এক করতে পারেননি এই দম্পতি। সুমাইয়াকে উদ্ধারের জন্য কখনও থানা কখনও র্যাব অফিসে ছোটাছুটি করেছেন। কিন্তু কোথাও মিলছিল না প্রিয় সন্তানের খোঁজ। অবশেষে কদমতলী থানার দক্ষিণ দনিয়ার কামালের বাড়ি থেকে শিশু সুমাইয়াকে উদ্ধার করে মা-বাবার কোলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। একমাত্র সন্তানকে ফিরে পেয়ে স্বস্তি ফিরে আসে এই দম্পতির মনে। সুমাইয়াকে ফিরে পাওয়ায় কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রাম এলাকার বাসিন্দারাও খুশি। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। ৩ এপ্রিল রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে কৌশলে সুমাইয়াকে (৫) অপহরণ করা হয়। তবে অপহরণকারীরা কোনো মুক্তিপণ দাবি করেনি। শিশু সুমাইয়াকে উদ্ধারের সময় দুই অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন আদালতে সুমাইয়ার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। জবানবন্দিতে সুমাইয়া বলে, আমাকে বৃষ্টি নিয়ে গিয়ে একটা ঘরে তালা দিয়ে আটকে রাখে। ঠিকমতো খেতেও দেয়নি। বৃষ্টি আমাকে হাতে, গালে ও পিঠে অনেক মেরেছে। আমাকে বলেছে, ‘কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবি, আমার মা-বাবা মারা গেছে, যদি এই কথা না বলিস তাহলে তোকে মেরে ফেলব।’ জবানবন্দিতে সুমাইয়া আরও বলে, স্যার ওকে (বৃষ্টি) অনেক শাস্তি দেবেন। আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে, আমার আব্বু-আম্মুকেও কষ্ট দিয়েছে। ও সবাইকে কষ্ট দিয়েছে, তেমন কষ্ট ওকেও দেবেন।
তা না হলে বৃষ্টি আরও অনেককে এমন কষ্ট দেবে। স্যার ওকে ফাঁসি দেবেন। ওকে ছাড়বেন না।’ শিশু সুমাইয়ার মা মুন্নি আক্তার বলেন, মেয়ে হারানোর পর অনেকের কাছেই গিয়েছি। তবে পুলিশ আমাকে আশ্বস্ত করেছিল দেশের যে প্রান্তেই থাকুক, যদি বেঁচে থাকে আপনার মেয়েকে উদ্ধার করে আনব। তারা আমার মেয়েকে উদ্ধার করেছে। আমি পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই। এ বিষয়ে অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজির আহমেদ খান যুগান্তরকে জানান, ভুক্তভোগী শিশু আজ (শুক্রবার) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওয়ায়েজ করুনী সুমাইয়ার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তিনি বলেন, এই ঘটনায় বেলাল নামের আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লালবাগের এডিসি জানান, রিমান্ডের প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদে আমরা বুঝতে পেরেছি যে মেয়েটিকে পাচারের উদ্দেশ্যেই অপহরণ করেছিল সাবিনা আক্তার বৃষ্টি। এদিকে শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সুমাইয়ার বাসায় গেলে দেখা যায়, সুমাইয়া রুমের সামনেই ছোটাছুটি করছে। কিছুক্ষণ মায়ের কোলে বসে, আবার ছুটে যায় বাবার কাছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সে বারবার হাসিতে আত্মহারা হয়ে পড়ছিল। প্রতিবেশীরাও তাদের দেখতে আসছে। তার সঙ্গে কথা বলছে, অপহৃত থাকার দিনগুলোর বিষয়ে জানতে চাইছে তারা।
No comments