উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে
উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখলে বড় ধরনের সংঘাত শুরু হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, কোরীয় উপদ্বীপের চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চান তিনি। এজন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছেন তিনি। তবে সামরিক অভিযানের বিষয়টিও তার বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান ট্রাম্প। সাক্ষাৎকারে উত্তর কোরিয়াকে মোকাবেলায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চেষ্টার প্রশংসা করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাতের মাধ্যমেও আমরা সমস্যার ইতি টানতে পারি। যদিও আমরা কূটনৈতিকভাবেই সমস্যার সমাধান করতে আগ্রহী, কিন্তু সেটা খুবই কঠিন।’ ৪২ মিনিটের সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি (কিম জং উন) যৌক্তিক হবেন। আর এখানে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে হতে যাওয়া এক বিশাল সংঘাত এড়ানোর পথ অবশ্যই আছে।’ উত্তর কোরিয়া তার জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বলেও মনে করেন ট্রাম্প। পিয়ংইয়ংকে নিয়ন্ত্রণে চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি নিরন্তর চেষ্টা করছেন বলেই আমার বিশ্বাস। তিনি নিশ্চিতভাবেই অশান্তি ও মৃত্যু দেখতে চান না। তিনি একজন ভালো মানুষ। সত্যিই আমি তাকে খুব ভালো মানুষ হিসেবেই জানি।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তিনি (জিনপিং) চীনকে ভালোবাসেন, তার দেশের জনগণকে ভালোবাসেন। অবশ্যই উত্তর কোরিয়াকে ঠেকাতে তিনি তার সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন।’ উত্তর কোরিয়া সংকট নিয়ে শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক করেছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সতর্ক করে বলেন, সেখানে বর্তমানে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে রাশিয়ার এক কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াং এ কথা বলেন বলে এক বিবৃতিতে জানায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশ্বের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র দেশ চীন। কিন্তু গত কয়েকমাসে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ও দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চীনের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরাসরি সংলাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র -টিলারসন : উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সরাসরি সংলাপে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। এনপিআর রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে টিলারসন বলেন, অবশ্যই সংকট সমাধানের এটাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য পন্থা। উত্তর কোরিয়া সঠিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি বলেও জানান তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সঠিক কর্মসূচি কখনও খুব সহজে সমাপ্তি হয় না। প্রয়োজন হয় কয়েক মাস, বছর ও আরও অধিক সময়। এ এজেন্ডা গত ২০ বছরের এজেন্ডা।’ তবে এ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংলাপের বার্তা দিতে চাইলেও এর আগে উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুশিয়ারির কথা জানান টিলারসন। তিনি বলেন, চীন তাদের প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়াকে আর কখনও পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা না করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যথায় একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়েও চীন সতর্ক করেছে বলেও জানান তিনি। তবে কি ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে সে বিষয়ে টিলারসন কিছু বলেননি। চীন প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়াকে এযাবৎকালের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কঠোর হুমকি দিল বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও চীন ফেব্রুয়ারিতেই উত্তর কোরিয়া থেকে কয়লা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রফতানি পণ্য কয়লা। উত্তর কোরিয়া উসকানিমূলক আচরণ অব্যাহত রাখলে তাদের তেলের চালানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে বলে এ মাসে চীনা গণমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশ পায়। দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর কোরিয়ার পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে চীন।
No comments