শান্তির পথে মিয়ানমার
মিয়ানমারের শাস্তি সম্মেলনে বুধবার বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে অং সান সুচি -এএফপি |
মিয়ানমারে দশকের পর দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি। বিদ্রোহী বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্র“পের সঙ্গে ঐতিহাসিক শান্তি সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। একুশ শতকের পাংলং শান্তি সম্মেলন নামের এ ঐতিহাসিক আলোচনাকে শান্তি প্রতিষ্ঠার অনন্য সুযোগ হিসেবে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। চার দিনব্যাপী এ সম্মেলন বুধবার রাজধানী নেইপিদোতে শুরু হয়েছে। সম্মেলনে সরকার, পার্লমেন্ট, সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধি, বিভিন্ন দলের আমন্ত্রিত রাজনীতিবিদ, সশস্ত্র ও অসশস্ত্র জাতি নিয়ে গঠিত বিভিন্ন সংগঠন এবং সুশীল সমাজের নাগরিকসহ প্রায় ১৬০০ প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। সম্মেলনের লক্ষ্য সংলাপের মাধ্যমে জাতিগত সবাইকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক ফেডারেল ইউনিয়ন গঠন করা। খবর এএফপি, বিবিসি ও মিয়ানমার টাইমসের। শান্তি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি, সেনাপ্রধান মিন ওয়াং হিয়াং। এতে প্রেসিডেন্ট উ টিন কিয়াও এবং দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এতে জাতিগত ১৭টি সশস্ত্র সংগঠনও অংশ নেয়।
সম্মেলনে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং মিয়ানমারে থাকা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে সুচি বলেন, এটা আমাদের সবার জন্য অনন্য সুযোগ, যা আমাদের ইতিহাসের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। আসুন এই অপূর্ব সুযোগটিকে প্রজ্ঞা, সাহস ও উদ্যমের সঙ্গে ব্যবহার করি এবং আলোকিত ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করি।’ তিনি বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত না আমরা জাতীয় সংহতি ও ঐক্য নিশ্চিত করতে পারছি, ততদিন আমরা টেকসই স্থায়ী ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হলেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।’ সুচি আরও বলেন, ঐতিহাসিক এ শান্তি আলোচনায় বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে সমান মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। এর আগে মঙ্গলবার জাতিসংঘের মহাসচিব এ শান্তি আলোচনা উপলক্ষে মিয়ানমারে পৌঁছেছেন। ওইদিন সুচির সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বান মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানের জন্য সুচির সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। মিয়ানমারের প্রায় ৬ কোটি জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশই উপজাতি গোষ্ঠীর। ১৯৬২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী।
তবে তারও আগে, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনতা ছিন্ন করে স্বাধীনতা লাভের সময় থেকেই দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী। গত কয়েক দশক ধরে গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সহিংসতায় কয়েক হাজার লোক নিহত হয়েছে। গত নভেম্বরে মিয়ানমারের ঐতিহাসিক নির্বাচনে দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ব্যবধানে জয় লাভ করে। এরপর বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানান সুচি, যিনি কার্যত দেশটির প্রকৃত নেতা। এর আগে গত অক্টোবরে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের সঙ্গে দেশটির আটটি সশস্ত্র গোষ্ঠী একটি চুক্তিতে সম্মত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের শান্তি আলোচনায় বিদ্রোহীরা অংশ নিয়েছে। নির্বাচনে জয়লাভের কয়েক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ বিদ্রোহী গ্রুপকে আলোচনার টেবিলে ফেরানো সুচির সফলতা বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
No comments