ভুল মানুষকেই কি ফাঁসি দেয়া হলো?
মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও ইয়াকুব মেমন বিশ্বাস করতে চাননি তার ফাঁসি হতে চলেছে |
১৯৯৩
সালের ১২ই মার্চ। ১৩ টা বিস্ফোরণ। কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে শেষ ২৫৭টা প্রাণ।
ছারখার শ’য়ে শ’য়ে পরিবার! দীর্ঘ ২২ বছর ধরে বিচারের প্রতীক্ষা। অবশেষে
ফাঁসি হলো ইয়াকুব মেমনের। কে এই মেমন?
ইংরেজী মাধ্যম থেকে স্কুল এবং কলেজ শেষ করে বাণিজ্য বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে তিনি চাটার্ড একাউনটেন্ট হন। তার একাউন্টেন্সি ফার্মটি খুব দ্রুতই সফলতা পেয়েছিলো এবং ১৯৯২ সালে তিনি সেরা চাটার্ড একাউনটেন্টও নির্বাচিত হন তিনি।
মুস্তাক মেমেন ওরফে টাইগার। এই টাইগার মেমেনেরই ভাই ইয়াকুব মেমন। টাইগারের মাধ্যমে ভারতে ব্যবসা চালাতেন দাউদ ইব্রাহিম। বিস্ফোরণের আগের দিন দুবাই পালিয়ে যান টাইগার। অভিযোগ রয়েছে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জবাবে দাউদের সঙ্গে মুম্বই বিস্ফোরণের ছক কষেছিলেন টাইগার। কিন্তু ফাঁসি কার্যকর হলো তার ভাই ইয়াকুব মেমনের।
পরস্পর বিপরীতধর্মী ছিলো এ দু’ ভাইয়। তাদের মতবিরোধের আরেকটি কারন ছিলো, টাইগার মেমন তার স্ত্রী সাবানার প্রতি ছিলেন খুবই নির্দয়, এবং তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কও ছিলো। এরকমই কোন এক টানাপোড়েনে টাইগার মেমন, তার স্ত্রী ও সন্তানদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। অবশ্য মুম্বাই হামলার আনুমানিক বছরখানেক আগে তারা সবাই আবারো পরিবারে সাথে যোগ দিয়েছিলেন।
দিল্লি পুলিশ স্বীকার করেছে যে, ত্রিশ বছর বয়সেই ইয়াকুব মেমন মুম্বাই পুলিশের কাছে সবচয়ে স্মার্ট এবং সহযোগীতাপূর্ণ আসামি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। ১৯৯৩ সালে ভারতের মুম্বাইতে সিরিজ বোমা হামলার অন্যতম আসামি ছিলেন মেমন ভাইদের মধ্যে তৃতীয়জন, এই ইয়াকুব মেমন।
১২ মার্চ, ১৯৯৩ সালে যখন মুম্বাই হামলা হয়, তখন মেমন পরিবার দুবাইতে ছিলো। ভারত সরকার তাদেরকে ফেরত দেয়ার জন্য দুবাই সরকারকে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু দুবাই সরকার মেমন পরিবারের উপস্থিতির কথা অস্বীকার করে।
পরে ভারত সরকার জানতে পারে যে, তারা পাকিস্তানের করাচিতে আছে। মেমন পরিবারের প্রত্যেককেই পাকিস্তানের পাসপোর্ট ছিলো। ভারত জাতিসংঘের কাছে তাকে ফেরত পাওয়ার আর্জি জানায়। ভারতের অব্যাহত পীড়াপীড়িতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে মেমনকে ভারতের কাছে ফেরত দিতে পাকিস্তানের প্রতি আহবান জানায়।
এমন অবস্থায় তাদেরকে ব্যাংককের একটি বাংলোতে গৃহবন্দী করে রাখা হয় এবং সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যাবস্থা করা হয়। কিন্তু এতে আপত্তি জানালে এবং করাচিতে ফিরতে চাইলে তারা আবার করাচিতে ফেরত আসে। এরপর পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই যান ইয়াকুব মেমন। কিন্তু সার্বক্ষনিক তিনি পাক সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন। এ অবস্থায় ইয়াকুব বুঝলেন, তিনি এবং তার পরিবার আর কোনদিন স্বাধীন জীবন যাপন করতে পারবেন না।
তার সামনে খোলা ছিলো মূলত দুটি পথ। এক, পাকিস্তানে ফেরত গিয়ে একরকম গৃহবন্দী অবস্থায় জীবন পার করা। আর দুই, ভারতে ফিরে গিয়ে বিচারের মুখোমুখি হওয়া এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ভারত সরকারকে এটা বোঝাবেন যে, মেমন পরিবারের বাকী সব সদস্য নির্দোষ। ১৯৯৪ সালে দিল্লি এক স্টেশন থেকে আটক করা হয় ইয়াকুবকে। তবে ইয়াকুব দাবি করেছেন, তিনি নিজেই আতœসমর্পন করেছেন। পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় তিনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। এজন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার এর সাবেক এক কর্মকর্তা এক চিঠিতে ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির বিপক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। ২০০৭ সালে লিখা এ চিঠিটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।
মেমনের ফাঁসি কার্যকরের পর পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন ভারতের মানুষ। বলিউড সুপারস্টার সালমান খান টুইটারে ইয়াকুবের সমর্থনে মুখ খুলে তাকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। পাশাপাশি, ইয়াকুবের ভাই টাইগার মেমনকে ফাঁসিতে ঝোলানোরও দাবি জানান বলিউডের এই অভিনেতা। সালমানের টুইট, টাইগারকে ফাঁসিতে ঝোলাও। ভাইকে নয়, তাকে প্যারেড করানো হোক। পরে অবশ্য সমালোচনার মুখে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।
‘বিভিন্ন হামলায় জামিন পেয়ে যাওয়া হিন্দু নেতাদের মতো ইয়াকুব মেমনকে লাউঞ্জে বসে থাকতে হবে না, বরং ইয়াকুব মেমন বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে’- আমান খান নামে এক ভারতীয় নাগরিকের এমন ফেসবুক পোস্ট ধরে ভারতের নন্দিত গায়ক কবীর সুমন লেখেন, ভারতের জনগণের ওপর নানান সময়ে যেসব আক্রমণ হয়েছে তার প্রতিটিতেই মুসলমানদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা হয়েছে। এই হত্যালীলার অপর আরেকজন অভিযুক্ত বিস্ফোরণের মূলচক্রী দাউদ ইব্রাহিমের ডান হাত ছোটা শাকিল ইয়াকুবের মৃত্যুদ-কে দেখছেন ‘আইনি হত্যা’ হিসেবে। শাকিল বলেন, ভারত সরকার কী বার্তা দিতে চাইল? একজন মানুষকে তার ভাইয়ের অপরাধের সাজা ভুগতে হল। ইয়াকুব মেমনের মৃত্যুর পরিণাম ভারতকে ভুগতে হবে, এভাবেই বদলার হুমকি দেন ছোটা শাকিল। বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন ইয়াকুব। মৃত্যুর আগে ইয়াকুব স্বীকার করেছিল মুম্বই হামলায় জড়িত ছিল তার ভাই। বলেছিল, ভাইয়ের পাপের বোঝা বইতে হচ্ছে আমাকে।
ইংরেজী মাধ্যম থেকে স্কুল এবং কলেজ শেষ করে বাণিজ্য বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে তিনি চাটার্ড একাউনটেন্ট হন। তার একাউন্টেন্সি ফার্মটি খুব দ্রুতই সফলতা পেয়েছিলো এবং ১৯৯২ সালে তিনি সেরা চাটার্ড একাউনটেন্টও নির্বাচিত হন তিনি।
মুস্তাক মেমেন ওরফে টাইগার। এই টাইগার মেমেনেরই ভাই ইয়াকুব মেমন। টাইগারের মাধ্যমে ভারতে ব্যবসা চালাতেন দাউদ ইব্রাহিম। বিস্ফোরণের আগের দিন দুবাই পালিয়ে যান টাইগার। অভিযোগ রয়েছে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জবাবে দাউদের সঙ্গে মুম্বই বিস্ফোরণের ছক কষেছিলেন টাইগার। কিন্তু ফাঁসি কার্যকর হলো তার ভাই ইয়াকুব মেমনের।
পরস্পর বিপরীতধর্মী ছিলো এ দু’ ভাইয়। তাদের মতবিরোধের আরেকটি কারন ছিলো, টাইগার মেমন তার স্ত্রী সাবানার প্রতি ছিলেন খুবই নির্দয়, এবং তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কও ছিলো। এরকমই কোন এক টানাপোড়েনে টাইগার মেমন, তার স্ত্রী ও সন্তানদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। অবশ্য মুম্বাই হামলার আনুমানিক বছরখানেক আগে তারা সবাই আবারো পরিবারে সাথে যোগ দিয়েছিলেন।
দিল্লি পুলিশ স্বীকার করেছে যে, ত্রিশ বছর বয়সেই ইয়াকুব মেমন মুম্বাই পুলিশের কাছে সবচয়ে স্মার্ট এবং সহযোগীতাপূর্ণ আসামি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। ১৯৯৩ সালে ভারতের মুম্বাইতে সিরিজ বোমা হামলার অন্যতম আসামি ছিলেন মেমন ভাইদের মধ্যে তৃতীয়জন, এই ইয়াকুব মেমন।
১২ মার্চ, ১৯৯৩ সালে যখন মুম্বাই হামলা হয়, তখন মেমন পরিবার দুবাইতে ছিলো। ভারত সরকার তাদেরকে ফেরত দেয়ার জন্য দুবাই সরকারকে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু দুবাই সরকার মেমন পরিবারের উপস্থিতির কথা অস্বীকার করে।
পরে ভারত সরকার জানতে পারে যে, তারা পাকিস্তানের করাচিতে আছে। মেমন পরিবারের প্রত্যেককেই পাকিস্তানের পাসপোর্ট ছিলো। ভারত জাতিসংঘের কাছে তাকে ফেরত পাওয়ার আর্জি জানায়। ভারতের অব্যাহত পীড়াপীড়িতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে মেমনকে ভারতের কাছে ফেরত দিতে পাকিস্তানের প্রতি আহবান জানায়।
এমন অবস্থায় তাদেরকে ব্যাংককের একটি বাংলোতে গৃহবন্দী করে রাখা হয় এবং সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যাবস্থা করা হয়। কিন্তু এতে আপত্তি জানালে এবং করাচিতে ফিরতে চাইলে তারা আবার করাচিতে ফেরত আসে। এরপর পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই যান ইয়াকুব মেমন। কিন্তু সার্বক্ষনিক তিনি পাক সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন। এ অবস্থায় ইয়াকুব বুঝলেন, তিনি এবং তার পরিবার আর কোনদিন স্বাধীন জীবন যাপন করতে পারবেন না।
তার সামনে খোলা ছিলো মূলত দুটি পথ। এক, পাকিস্তানে ফেরত গিয়ে একরকম গৃহবন্দী অবস্থায় জীবন পার করা। আর দুই, ভারতে ফিরে গিয়ে বিচারের মুখোমুখি হওয়া এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ভারত সরকারকে এটা বোঝাবেন যে, মেমন পরিবারের বাকী সব সদস্য নির্দোষ। ১৯৯৪ সালে দিল্লি এক স্টেশন থেকে আটক করা হয় ইয়াকুবকে। তবে ইয়াকুব দাবি করেছেন, তিনি নিজেই আতœসমর্পন করেছেন। পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় তিনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। এজন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার এর সাবেক এক কর্মকর্তা এক চিঠিতে ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির বিপক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। ২০০৭ সালে লিখা এ চিঠিটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।
মেমনের ফাঁসি কার্যকরের পর পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন ভারতের মানুষ। বলিউড সুপারস্টার সালমান খান টুইটারে ইয়াকুবের সমর্থনে মুখ খুলে তাকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। পাশাপাশি, ইয়াকুবের ভাই টাইগার মেমনকে ফাঁসিতে ঝোলানোরও দাবি জানান বলিউডের এই অভিনেতা। সালমানের টুইট, টাইগারকে ফাঁসিতে ঝোলাও। ভাইকে নয়, তাকে প্যারেড করানো হোক। পরে অবশ্য সমালোচনার মুখে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।
‘বিভিন্ন হামলায় জামিন পেয়ে যাওয়া হিন্দু নেতাদের মতো ইয়াকুব মেমনকে লাউঞ্জে বসে থাকতে হবে না, বরং ইয়াকুব মেমন বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে’- আমান খান নামে এক ভারতীয় নাগরিকের এমন ফেসবুক পোস্ট ধরে ভারতের নন্দিত গায়ক কবীর সুমন লেখেন, ভারতের জনগণের ওপর নানান সময়ে যেসব আক্রমণ হয়েছে তার প্রতিটিতেই মুসলমানদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা হয়েছে। এই হত্যালীলার অপর আরেকজন অভিযুক্ত বিস্ফোরণের মূলচক্রী দাউদ ইব্রাহিমের ডান হাত ছোটা শাকিল ইয়াকুবের মৃত্যুদ-কে দেখছেন ‘আইনি হত্যা’ হিসেবে। শাকিল বলেন, ভারত সরকার কী বার্তা দিতে চাইল? একজন মানুষকে তার ভাইয়ের অপরাধের সাজা ভুগতে হল। ইয়াকুব মেমনের মৃত্যুর পরিণাম ভারতকে ভুগতে হবে, এভাবেই বদলার হুমকি দেন ছোটা শাকিল। বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন ইয়াকুব। মৃত্যুর আগে ইয়াকুব স্বীকার করেছিল মুম্বই হামলায় জড়িত ছিল তার ভাই। বলেছিল, ভাইয়ের পাপের বোঝা বইতে হচ্ছে আমাকে।
No comments