মিটফোর্ড হাসপাতাল অনুসন্ধান-১: অভ্যর্থনায় দালাল! by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
স্যার
সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। মিটফোর্ড হাসপাতাল নামেই যার
পরিচিতি। ঢাকার একটি বড় অংশের চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য জায়গা। নদীপথে বরিশাল ও
চাঁদপুর অঞ্চলের অনেক রোগীও আসেন এখানে। নানা সমস্যা নিয়ে চলা এ
হাসপাতালের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দালালদের উৎপাত। হাসপাতালের মূল ফটক
দিয়ে ভেতরে রোগী নিয়ে যাওয়ার পথেই মুখোমুখি হতে হয় দালালদের। তারাই মূলত
হাসপাতালে রোগীদের অভ্যর্থনা জানায়। সাহায্য দেয়ার নামে তারা হাতিয়ে নেয়
অর্থ। আবার কেউ কেউ প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী বাগিয়ে
নেয়ার কাজ করে কৌশলে। গত এক মাস আগে আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে ৩০ জন নিরাপত্তা
কর্মী নিয়োগ দিয়েও দালাল চক্রের তৎপরতা বন্ধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
উপরন্তু দালালরা নিরাপত্তা কর্মীদের কব্জা (কনভিন্স) করে দিব্যি তাদের কাজ
চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায়। আর এ বাবদ নিরাপত্তা কর্মীরা
বিভিন্ন ক্লিনিকের কিছু দালাল এবং ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে
সপ্তাহ শেষে উপঢৌকন নিচ্ছেন বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, নতুন কোন রোগী হাসপাতালে এলেই তাকে চতুর্দিকে ঘিরে ধরছে দালালরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সব সময়ই জটলা পাকিয়ে থাকে তারা। কোন রোগী এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে এই চক্র। জরুরি বিভাগের সামনে থেকে টাকার বিনিময়ে রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে সব বিষয়ে হাত বাড়াতে ওরা সদা প্রস্তুত। ইদানীং নারী দালালের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। নারী কোন রোগী এলেই এসব দালাল সাহায্য করার নামে ছুটে যায়। পরে গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল রোগীর কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।
গত ৪ ও ৫ই জুলাই জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, দালাল সেলিনা, রহিমা ও নাসরিন হাসপাতালে আগত রোগীকে দ্রুত ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নিচ্ছে। জরুরি বিভাগে কোন রোগী আসলেই তারা দ্রুত রোগীর স্বজনকে পরামর্শ দেয়ার কাজ করছেন। কখনও ক্লিনিকে নেয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন। গত ৫ই জুলাই জরুরি বিভাগে হাসপাতালের এক কর্মচারী এই প্রতিবেদকের সামনেই দালাল সেলিনাকে জিজ্ঞাসা করেন তুমি হাসপাতালে কী করছো? তখন সেলিনা তার উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য সেখান থেকে সটকে পড়েন। কিন্তু আধা ঘণ্টা পরেই আবার জরুরি বিভাগে এসে চার থেকে পাঁচ জন রোগীকে একই কায়দায় সহযোগিতার নামে টাকা চেয়ে নিচ্ছেন।
হাসপাতালে ভাসমান দালাল হিসেবে মিটফোর্ড রোডস্থ ‘বাঁধন’ ক্লিনিকের ওয়াসিম, আলমগীর, হেনা আর ‘ডক্টরস’ ক্লিনিকের রুরেল, মোস্তাফাসহ অন্যান্য দালালরা হাসপাতালে বেশি ঘুরাফেরা করছে। ডাক্তাররা তাদের সহকারীদের মাধ্যমে বহির্বিভাগে দালালদের সঙ্গে রোগীদের দরকষাকষি করে। এখানে ডাক্তারদের কক্ষের সামনেই তারা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকেন। ডাক্তাররা রোগীকে কোন ধরনের প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ দিচ্ছেন কিনা। রোগী ডাক্তারদের কক্ষ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোগীর স্লিপ দেখার জন্য দালালরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এরকম এক রোগীর স্লিপ নিয়ে কয়েকজন দালালকে টানাহেঁচড়া করতেও দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে কয়েকজন ডাক্তারের সহকারীকে দালালদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে নিচ তলায়। ৪ ও ৫ই জুলাই মিটফোর্ড হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১১৭, ১১৮, ১১১, ১১২, ২১২, ২০৮ ও ২০৯ কক্ষের সামনে ব্যাপক জটলা দেখা যায়।
বহির্বিভাগের ২১২, ২০৮ ও ২০৯ কক্ষে শিশু বিভাগের রোগী দেখা হয়। এখানে দু’জন বয়স্ক মহিলা রোগীর আত্মীয়র কাছ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা চেয়ে নিতে দেখা গেছে। অনেককে টাকা না দিতে চাইলে তাদেরকে বলা হচ্ছে ‘সিরিয়াল’ পরে। আর যারা দিচ্ছেন তাদেরকে দ্রুতই ডাক্তার দেখার ব্যবস্থা করাচ্ছেন তারা। ১১৭ ও ১১৮ নম্বর কক্ষের সামনে ডাক্তারের সহকারীকে দেখা গেছে, দালাল ও কোম্পানির লোকদের সঙ্গে ব্যাপক সখ্য রেখে রোগী বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দালালদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
রোগীদের যত অভিযোগ: রোগীরা অভিযোগ করেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা অনেক সময় রোগীকে দেখার সময়ই চিকিৎসকদের কক্ষে ঢুকে পড়েন। এসময় তারা চিকিৎসকদের মনোযোগ কেড়ে নেন। ফলে ডাক্তাররা কখনো কখনো মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। তখন ডাক্তাররা কোন রকম রোগী দেখেই বিদায় করেন। সকাল থেকেই হাসপাতালের বহির্বিভাগে কোম্পানির লোকেরা ব্যাগ নিয়ে ঘুরাঘুরি করেন। অথচ সপ্তাহে দুইদিন ডাক্তার ভিজিট করার নিয়ম থাকলেও তারা শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিনই আসছেন হাসপাতালে। হাসপাতাল থেকে ডাক্তাররা রোগীকে যে ওষুধ লিখেছেন তা ঠিক মতো না পাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এরকম একজন ফুলতানি বেগম। গত ৫ই জুলাই বহির্বিভাগ থেকে ডাক্তার তাকে তিনটি ওষুধ লিখেছেন। ফুলতানি ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, একটিও পাননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার কি আমাদের জন্য কোন ওষুধ রাখেনি। একই তারিখে দুই মাসের শিশু আলবিকে দেখাতে আসেন তার বাবা মো. ইমরান। তিনি শিশুটিকে কোলে নিয়ে শিশু বিভাগের সামনে ঘুরছেন। এসময় তার কাছে পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলাম ওষুধ পেয়েছেন। তিনি উত্তরে বললেন, ওকে (আলবি) চর্ম রোগের ডাক্তার দেখাতে এনেছি। ডাক্তার একটি ওষুধ লিখেছেন। কিন্তু সেটি এখান থেকে পাইনি। আরেক রোগী শাহাদাত। তাকে চিকিৎসক ৬টি ওষুধ লিখেছেন তার ব্যবস্থাপত্রে। কিন্তু একটি ওষুধ দিয়ে হাসপাতালের দায়িত্ব শেষ। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, সরকার আমাদের নামে ওষুধ বরাদ্দ করে, তাহলে ওই ওষুধ যায় কোথায়?
হাসপাতালটিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা থাকলেও এক শ্রেণীর অসাধু কর্মচারীর জন্য পদে পদে রোগীকে টাকা গুনতে হয়। রোগীকে জরুরি বিভাগের সামনে থাকা ট্রলি দিয়ে ওয়ার্ডে পৌঁছানোর জন্য গুনতে হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে সব সময়ই চাপ থাকে। তবে, টাকা দিলে সহজেই দ্রুত কাজ সমাধা করা যায়। এক্সরের জন্য ওয়ার্ড বয়দের ২০-৩০ টাকা আর টেকনিশিয়ানদের দিতে হয় ৫-১০ টাকা। টাকা ছাড়া ঠিকমতো এসব সেবা পাওয়া দুরূহ। ঘুষ নেয়ার অভিযোগে চলতি বছরে সোহরাব নামের এক কর্মচারীকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক কর্মচারী বলেছেন, আগে তারা বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সেলাইসহ রোগীর ওষুধ চুরি করলেও এখন আর করছেন না। হাসপাতালে সরকারি খরচে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকার পরও প্রতিটি ওয়ার্ডে দালালদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন ক্লিনিকের প্রতিনিধিরা ব্যাগ নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরেন। এরা রোগীর কাছে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে দেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময়ে অনেকে আবার লাইনে দাঁড়ানোর ভয়ে এসব দালালের স্মরণাপন্ন হন। বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিরা সুযোগ পেলেই রোগীদের ভাগিয়ে তাদের নিজস্ব ক্লিনিক বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
গাইনি বিভাগের আয়া ও নার্সদের বিরুদ্ধে রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আসে অহরহ। অভিযোগ আছে, কোন নবজাতককে অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বের করার সময় আয়াদের টাকা দিতে হয়। রোগীর আর্থিক অবস্থা দেখে ২০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় তাদেরকে। গাইনি ওয়ার্ডে ২০-২৫ জন প্রাইভেট আয়াদের উৎপাতে রোগীরা অনেক সময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। হাসপাতালের ১১ তলা ভবনের ছয় তলার এই ওয়ার্ডে নাসরিনের নেতৃত্বে আয়াদের ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম্স (এমআইএস) বিভাগের (স্বাস্থ্য বুলেটিন) ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে নারী, পুরুষ ও শিশু মিলে ১৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বহির্বিভাগে দিয়ে এক হাজার ৬৮২ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। গড়ে মারা গেছে ৫ জন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, জরুরি বিভাগ দিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে নিয়মিত ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী থাকছেন। বেড সংখ্যা মাত্র ৬০০ হলেও গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী হাসপাতালে অবস্থান করছে। বাকি প্রায় ২শ’ থেকে ৩শ’ রোগীকে প্রতিদিন গাদাগাদি করে মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। হাসপাতালটিকে ৮শ’ শয্যায় উন্নীত করার জন্য তারা ইতিমধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এ হাসপাতালে ডাক্তার আছেন ৩৫০ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে কর্মরত পদ ২৩৩ জন এবং মেডিক্যাল কলেজের ১৩০ জনের মতো ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দেন। ফলে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। হাসপাতালটিতে ৩৩২ জন নার্স, ২ জন সেবা ও উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক এবং এমএলএসএস আছেন ২৫০ জন।
সুযোগ-সুবিধা: হাসপাতালে ৩০টি ওয়ার্ড এবং ৩৭টি বিভাগ রয়েছে। সিটি এমআরআই, আলট্রাসনোগ্রাম, এনড্রোসকপি, সিটিস্কেন ক্যাথল্যাব (এনজিওগ্রাম), ইসিজি, ইকো সহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখানে করা হয় বলে এক কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। তবে, যেসব টেস্ট সব সময় প্রয়োজন হয় না সেগুলো এই হাসপাতালে করা হয় না বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রায়ই যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। ফলে রোগীরা আধুনিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালটিতে আইসিইউ থেকে ৮টি এবং সিসিইউ’তে ৩০টি শয্যা রয়েছে। প্রতিটি বেড বা শয্যার বিপরীতে বছরে ১৬ হাজার টাকা করে মেডিসিন বরাদ্দ দেয়া হয় বলে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সেই হিসাবে ৬০০ শয্যার জন্য সরকার থেকে হাসপাতালটি ৯৬ লাখ টাকা ওষুধ বরাদ্দ পাচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। হাসপাতালটিতে একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন ১২৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। চারবেলা রোগীকে খাবার সরবরাহ করা হয়।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের নানা অনিয়ম আর অবহেলার ব্যাপারে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল মজিদ-এর সঙ্গে। তিনি তার দপ্তরে মানবজমিনকে বলেন, দালাল আছে। তবে, ডাক্তারদের নির্দেশনা দেয়া আছে, যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালে করার সুযোগ আছে সেগুলো এখানেই করতে হবে। তারপরও অনেক সময় প্রতিটি সেন্টারে ভিড় থাকে তখন সুযোগসন্ধানী দালালরা ভাল ভাল কথা বলে রোগীদের অন্য কোথাও ভাগিয়ে নিয়ে যায়। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে কর্তৃপক্ষ। মাঝে মধ্যে ধরে পুলিশকেও দেয়া হয়। দালাল নিয়ন্ত্রণে এক মাস আগে ৩০ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীরাও তো ঘুষ খাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি ঠিক নয়। রোগীকে ওষুধ কম বা না দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোগীদের প্রথমে দুই বা তিন দিনের ওষুধ দেয়ার নিয়ম। সেই হিসাবে ডাক্তাররা ওষুধ লিখেন।
২ দশমিক ৮ একর জায়গাজুড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালটি অবস্থিত। বৃটিশ ভারতে ঢাকার কালেক্টর স্যার রবার্ট মিটফোর্ড ১৮২০ সালে মিটফোর্ড হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু তার উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে ১৮৩৬ সালে ইংল্যান্ডে মৃত্যুর আগে তিনি উইল করেন সম্পত্তির অনেকখানি (তখনকার সময় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা) ঢাকায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য নানা উন্নয়ন কর্মের জন্য তৎকালীন বাংলার প্রাদেশিক সরকারকে এই সম্পত্তি দান করে যান। পরবর্তীকালে লর্ড ডালহৌসির উদ্যোগে ওই ফান্ড দিয়ে ১৮৫৪ সালে বর্তমান স্থানে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৮৫৮ সালের মে মাসে মিটফোর্ড হাসপাতাল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। তখন এতে পুরুষদের জন্য দু’টি ও মহিলাদের জন্য একটি ওয়ার্ডসহ ৯২টি বেড ছিল।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, নতুন কোন রোগী হাসপাতালে এলেই তাকে চতুর্দিকে ঘিরে ধরছে দালালরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সব সময়ই জটলা পাকিয়ে থাকে তারা। কোন রোগী এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে এই চক্র। জরুরি বিভাগের সামনে থেকে টাকার বিনিময়ে রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে সব বিষয়ে হাত বাড়াতে ওরা সদা প্রস্তুত। ইদানীং নারী দালালের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। নারী কোন রোগী এলেই এসব দালাল সাহায্য করার নামে ছুটে যায়। পরে গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল রোগীর কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।
গত ৪ ও ৫ই জুলাই জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, দালাল সেলিনা, রহিমা ও নাসরিন হাসপাতালে আগত রোগীকে দ্রুত ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নিচ্ছে। জরুরি বিভাগে কোন রোগী আসলেই তারা দ্রুত রোগীর স্বজনকে পরামর্শ দেয়ার কাজ করছেন। কখনও ক্লিনিকে নেয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন। গত ৫ই জুলাই জরুরি বিভাগে হাসপাতালের এক কর্মচারী এই প্রতিবেদকের সামনেই দালাল সেলিনাকে জিজ্ঞাসা করেন তুমি হাসপাতালে কী করছো? তখন সেলিনা তার উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য সেখান থেকে সটকে পড়েন। কিন্তু আধা ঘণ্টা পরেই আবার জরুরি বিভাগে এসে চার থেকে পাঁচ জন রোগীকে একই কায়দায় সহযোগিতার নামে টাকা চেয়ে নিচ্ছেন।
হাসপাতালে ভাসমান দালাল হিসেবে মিটফোর্ড রোডস্থ ‘বাঁধন’ ক্লিনিকের ওয়াসিম, আলমগীর, হেনা আর ‘ডক্টরস’ ক্লিনিকের রুরেল, মোস্তাফাসহ অন্যান্য দালালরা হাসপাতালে বেশি ঘুরাফেরা করছে। ডাক্তাররা তাদের সহকারীদের মাধ্যমে বহির্বিভাগে দালালদের সঙ্গে রোগীদের দরকষাকষি করে। এখানে ডাক্তারদের কক্ষের সামনেই তারা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকেন। ডাক্তাররা রোগীকে কোন ধরনের প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ দিচ্ছেন কিনা। রোগী ডাক্তারদের কক্ষ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোগীর স্লিপ দেখার জন্য দালালরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এরকম এক রোগীর স্লিপ নিয়ে কয়েকজন দালালকে টানাহেঁচড়া করতেও দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে কয়েকজন ডাক্তারের সহকারীকে দালালদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে নিচ তলায়। ৪ ও ৫ই জুলাই মিটফোর্ড হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১১৭, ১১৮, ১১১, ১১২, ২১২, ২০৮ ও ২০৯ কক্ষের সামনে ব্যাপক জটলা দেখা যায়।
বহির্বিভাগের ২১২, ২০৮ ও ২০৯ কক্ষে শিশু বিভাগের রোগী দেখা হয়। এখানে দু’জন বয়স্ক মহিলা রোগীর আত্মীয়র কাছ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা চেয়ে নিতে দেখা গেছে। অনেককে টাকা না দিতে চাইলে তাদেরকে বলা হচ্ছে ‘সিরিয়াল’ পরে। আর যারা দিচ্ছেন তাদেরকে দ্রুতই ডাক্তার দেখার ব্যবস্থা করাচ্ছেন তারা। ১১৭ ও ১১৮ নম্বর কক্ষের সামনে ডাক্তারের সহকারীকে দেখা গেছে, দালাল ও কোম্পানির লোকদের সঙ্গে ব্যাপক সখ্য রেখে রোগী বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দালালদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
রোগীদের যত অভিযোগ: রোগীরা অভিযোগ করেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা অনেক সময় রোগীকে দেখার সময়ই চিকিৎসকদের কক্ষে ঢুকে পড়েন। এসময় তারা চিকিৎসকদের মনোযোগ কেড়ে নেন। ফলে ডাক্তাররা কখনো কখনো মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। তখন ডাক্তাররা কোন রকম রোগী দেখেই বিদায় করেন। সকাল থেকেই হাসপাতালের বহির্বিভাগে কোম্পানির লোকেরা ব্যাগ নিয়ে ঘুরাঘুরি করেন। অথচ সপ্তাহে দুইদিন ডাক্তার ভিজিট করার নিয়ম থাকলেও তারা শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিনই আসছেন হাসপাতালে। হাসপাতাল থেকে ডাক্তাররা রোগীকে যে ওষুধ লিখেছেন তা ঠিক মতো না পাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এরকম একজন ফুলতানি বেগম। গত ৫ই জুলাই বহির্বিভাগ থেকে ডাক্তার তাকে তিনটি ওষুধ লিখেছেন। ফুলতানি ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, একটিও পাননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার কি আমাদের জন্য কোন ওষুধ রাখেনি। একই তারিখে দুই মাসের শিশু আলবিকে দেখাতে আসেন তার বাবা মো. ইমরান। তিনি শিশুটিকে কোলে নিয়ে শিশু বিভাগের সামনে ঘুরছেন। এসময় তার কাছে পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলাম ওষুধ পেয়েছেন। তিনি উত্তরে বললেন, ওকে (আলবি) চর্ম রোগের ডাক্তার দেখাতে এনেছি। ডাক্তার একটি ওষুধ লিখেছেন। কিন্তু সেটি এখান থেকে পাইনি। আরেক রোগী শাহাদাত। তাকে চিকিৎসক ৬টি ওষুধ লিখেছেন তার ব্যবস্থাপত্রে। কিন্তু একটি ওষুধ দিয়ে হাসপাতালের দায়িত্ব শেষ। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, সরকার আমাদের নামে ওষুধ বরাদ্দ করে, তাহলে ওই ওষুধ যায় কোথায়?
হাসপাতালটিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা থাকলেও এক শ্রেণীর অসাধু কর্মচারীর জন্য পদে পদে রোগীকে টাকা গুনতে হয়। রোগীকে জরুরি বিভাগের সামনে থাকা ট্রলি দিয়ে ওয়ার্ডে পৌঁছানোর জন্য গুনতে হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে সব সময়ই চাপ থাকে। তবে, টাকা দিলে সহজেই দ্রুত কাজ সমাধা করা যায়। এক্সরের জন্য ওয়ার্ড বয়দের ২০-৩০ টাকা আর টেকনিশিয়ানদের দিতে হয় ৫-১০ টাকা। টাকা ছাড়া ঠিকমতো এসব সেবা পাওয়া দুরূহ। ঘুষ নেয়ার অভিযোগে চলতি বছরে সোহরাব নামের এক কর্মচারীকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক কর্মচারী বলেছেন, আগে তারা বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সেলাইসহ রোগীর ওষুধ চুরি করলেও এখন আর করছেন না। হাসপাতালে সরকারি খরচে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকার পরও প্রতিটি ওয়ার্ডে দালালদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন ক্লিনিকের প্রতিনিধিরা ব্যাগ নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরেন। এরা রোগীর কাছে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে দেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময়ে অনেকে আবার লাইনে দাঁড়ানোর ভয়ে এসব দালালের স্মরণাপন্ন হন। বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিরা সুযোগ পেলেই রোগীদের ভাগিয়ে তাদের নিজস্ব ক্লিনিক বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
গাইনি বিভাগের আয়া ও নার্সদের বিরুদ্ধে রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আসে অহরহ। অভিযোগ আছে, কোন নবজাতককে অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বের করার সময় আয়াদের টাকা দিতে হয়। রোগীর আর্থিক অবস্থা দেখে ২০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় তাদেরকে। গাইনি ওয়ার্ডে ২০-২৫ জন প্রাইভেট আয়াদের উৎপাতে রোগীরা অনেক সময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। হাসপাতালের ১১ তলা ভবনের ছয় তলার এই ওয়ার্ডে নাসরিনের নেতৃত্বে আয়াদের ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম্স (এমআইএস) বিভাগের (স্বাস্থ্য বুলেটিন) ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে নারী, পুরুষ ও শিশু মিলে ১৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বহির্বিভাগে দিয়ে এক হাজার ৬৮২ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। গড়ে মারা গেছে ৫ জন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, জরুরি বিভাগ দিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে নিয়মিত ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী থাকছেন। বেড সংখ্যা মাত্র ৬০০ হলেও গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী হাসপাতালে অবস্থান করছে। বাকি প্রায় ২শ’ থেকে ৩শ’ রোগীকে প্রতিদিন গাদাগাদি করে মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। হাসপাতালটিকে ৮শ’ শয্যায় উন্নীত করার জন্য তারা ইতিমধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এ হাসপাতালে ডাক্তার আছেন ৩৫০ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে কর্মরত পদ ২৩৩ জন এবং মেডিক্যাল কলেজের ১৩০ জনের মতো ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দেন। ফলে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। হাসপাতালটিতে ৩৩২ জন নার্স, ২ জন সেবা ও উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক এবং এমএলএসএস আছেন ২৫০ জন।
সুযোগ-সুবিধা: হাসপাতালে ৩০টি ওয়ার্ড এবং ৩৭টি বিভাগ রয়েছে। সিটি এমআরআই, আলট্রাসনোগ্রাম, এনড্রোসকপি, সিটিস্কেন ক্যাথল্যাব (এনজিওগ্রাম), ইসিজি, ইকো সহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখানে করা হয় বলে এক কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। তবে, যেসব টেস্ট সব সময় প্রয়োজন হয় না সেগুলো এই হাসপাতালে করা হয় না বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রায়ই যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। ফলে রোগীরা আধুনিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালটিতে আইসিইউ থেকে ৮টি এবং সিসিইউ’তে ৩০টি শয্যা রয়েছে। প্রতিটি বেড বা শয্যার বিপরীতে বছরে ১৬ হাজার টাকা করে মেডিসিন বরাদ্দ দেয়া হয় বলে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সেই হিসাবে ৬০০ শয্যার জন্য সরকার থেকে হাসপাতালটি ৯৬ লাখ টাকা ওষুধ বরাদ্দ পাচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। হাসপাতালটিতে একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন ১২৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। চারবেলা রোগীকে খাবার সরবরাহ করা হয়।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের নানা অনিয়ম আর অবহেলার ব্যাপারে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল মজিদ-এর সঙ্গে। তিনি তার দপ্তরে মানবজমিনকে বলেন, দালাল আছে। তবে, ডাক্তারদের নির্দেশনা দেয়া আছে, যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালে করার সুযোগ আছে সেগুলো এখানেই করতে হবে। তারপরও অনেক সময় প্রতিটি সেন্টারে ভিড় থাকে তখন সুযোগসন্ধানী দালালরা ভাল ভাল কথা বলে রোগীদের অন্য কোথাও ভাগিয়ে নিয়ে যায়। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে কর্তৃপক্ষ। মাঝে মধ্যে ধরে পুলিশকেও দেয়া হয়। দালাল নিয়ন্ত্রণে এক মাস আগে ৩০ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীরাও তো ঘুষ খাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি ঠিক নয়। রোগীকে ওষুধ কম বা না দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোগীদের প্রথমে দুই বা তিন দিনের ওষুধ দেয়ার নিয়ম। সেই হিসাবে ডাক্তাররা ওষুধ লিখেন।
২ দশমিক ৮ একর জায়গাজুড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালটি অবস্থিত। বৃটিশ ভারতে ঢাকার কালেক্টর স্যার রবার্ট মিটফোর্ড ১৮২০ সালে মিটফোর্ড হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু তার উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে ১৮৩৬ সালে ইংল্যান্ডে মৃত্যুর আগে তিনি উইল করেন সম্পত্তির অনেকখানি (তখনকার সময় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা) ঢাকায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য নানা উন্নয়ন কর্মের জন্য তৎকালীন বাংলার প্রাদেশিক সরকারকে এই সম্পত্তি দান করে যান। পরবর্তীকালে লর্ড ডালহৌসির উদ্যোগে ওই ফান্ড দিয়ে ১৮৫৪ সালে বর্তমান স্থানে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৮৫৮ সালের মে মাসে মিটফোর্ড হাসপাতাল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। তখন এতে পুরুষদের জন্য দু’টি ও মহিলাদের জন্য একটি ওয়ার্ডসহ ৯২টি বেড ছিল।
No comments