১১ তরুণ নিখোঁজ সাড়ে তিন মাস ধরে
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ১৩ তরুণ সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য সাড়ে তিন মাস আগে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তাঁরা নিখোঁজ।
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার সংবাদ শুনে নিখোঁজ এই তরুণদের পরিবারে চলেছে মাতম। ঠিক ওই সময় খবর আসে, তাঁরা বেঁচে আছেন। ইতিমধ্যে দুই তরুণ ফিরে এসেছেন। বাকি ১১ তরুণ এখনো আটকে আছেন।
এই ১৩ তরুণ হলেন দুপচাঁচিয়ার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের মোকছেদ আলীর ছেলে মুক্তার হোসেন (৩৫), মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে ফরিদ হোসেন (৩৩), আবদুস সামাদের ছেলে সোহেল রানা (২০), বনতেঁতুলিয়া গ্রামের আলেফ উদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিন (২৫), আবদুল জোব্বারের ছেলে আবদুস ছালাম (২৬), আবদুল মালেকের ছেলে গোলাম মোস্তফা (২২), চেঁচুলিয়া গ্রামের মৃত আরজুল্লাহর ছেলে বাদশা (২৭) এবং চামরুল ইউনিয়নের কোলগ্রামের বাবলু প্রামাণিকের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩২), আবদুস সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৩৪), ইসমাইল হোসেনের ছেলে নজরুল ইসলাম (২৫), কোরবান আলীর ছেলে শাহজাহান আলী (২৭), বেলাল হোসেনের ছেলে মনজুর রহমান (৩০) ও আনসার আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৩৫)।
এর মধ্যে নিখোঁজ বেলাল হোসেনের বাবা আবদুস সামাদ বাদী হয়ে সেই সময় দুপচাঁচিয়া থানায় মানব পাচার আইনে মামলা করেন। পুলিশ দুই নারী দালালকে গ্রেপ্তারও করে।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে কোলগ্রামের শাহজাহান আলী গত ২২ জুন এবং রবিউল ইসলাম ২ জুলাই বাড়ি ফিরেছেন। সম্প্রতি কোলগ্রামে গেলে শাহজাহান ও রবিউল তাঁদের দুর্বিষহ জীবনের কথা বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন, সংসারে সুদিন আনার জন্যই তাঁরা ছয়জন অবৈধ পথে বিদেশে যান। স্থানীয় দালালেরা কক্সবাজারের টেকনাফের জঙ্গলে নিয়ে মিয়ানমারের মাঝিদের হাতে তাঁদের তুলে দেয়। প্রথমে ট্রলারে, এরপর তাঁদের বড় জাহাজে তুলে দেয় দালালেরা। জাহাজে ৫০০ লোকের ভীষণ চাপ। বসে বসে ঘুমাতে হয়েছে তাঁদের। ছিল খাওয়ার কষ্ট। প্রথমে দিনে এক বেলা খাবার দিত, একসময় তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। খাবার বা পানি চাইলে মারপিট করত দালালেরা। প্রতিবাদ করলে জাহাজ থেকে সাগরে ফেলে দিত। ২ মাস ২০ দিনে চোখের সামনে শতাধিক লোককে সাগরে ফেলে দিয়েছে দালালেরা। করুণ পরিস্থিতির বর্ণনা করতে করতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা দুজন। তাঁরা আরও বলেন, একদিন রাতে মিয়ানমারের দালালেরা অস্ত্র নিয়ে স্পিডবোটে করে পালিয়ে যায়। এরপর সাগরে ভেসে থাকা জাহাজে খাবার নিয়ে মিয়ানমারের লোকজনের সঙ্গে বাংলাদেশিদের মারামারি চলে। কয়েক দিন পর মাছ ধরার একটি ট্রলার জাহাজটি উদ্ধার করে ইন্দোনেশিয়া পুলিশের কাছে দেয়। তাঁদের অন্য চার সঙ্গী এখনো ইন্দোনেশিয়ার ক্যাম্পেই আটক আছেন।
আরেক দালালের মাধ্যমে উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাত তরুণ মালয়েশিয়া যাওয়ার পর নিখোঁজ রয়েছেন। ওই সব তরুণের সঙ্গী ফিরোজ হোসেন নামের আরেক তরুণ মালয়েশিয়ার ক্যাম্প থেকে ১৮ জুন বাড়ি ফিরেছেন। ফিরোজ হোসেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের যুগিভিটা গ্রামের হবিবর রহমানের ছেলে।
ফিরোজ হোসেন বলেন, আরেক দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে বের হন তিনি। কক্সবাজারে গিয়ে দেখা হয় গোবিন্দপুরের এই সাত তরুণের সঙ্গে। তাঁরা একই ট্রলারে করে কক্সবাজার থেকে সাগরে পাড়ি জমান। ট্রলার থেকে তাঁদের ওঠানো হয় একটি জাহাজে। ৮০০ লোক নিয়ে ওই জাহাজটি চলা শুরু করে। সারা দিনে এক বেলা খাবার আর এক বোতল পানি। এ ছাড়া টাকার জন্য মুঠোফোনে বাড়িতে খবর দিতে বলা হতো এবং মারধর করা হতো। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ফিরোজ আরও বলেন, যাঁরা টাকার ব্যবস্থা করেছেন, তাঁদের একটি ছোট জাহাজে তুলে (দেড়-দুই শ লোক) পার করে দিয়েছে দালালেরা। তিনি এবং ওই সাত তরুণ কিছু টাকা পরিশোধ করায় তাঁদেরও ওই জাহাজে তোলা হয়। জাহাজটি মালয়েশিয়া পুলিশ উদ্ধার করে ব্ল্যাংটিক নামের একটি ক্যাম্পে তাঁদের নিয়ে যায়। তবে একদিন রাতে বড় জাহাজ থেকে দালালেরা অস্ত্র নিয়ে ট্রলারে করে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় দালালেরা গুলি করে ওই বড় জাহাজটি ফুটা করে প্রায় ৬০০ লোককে পানিতে ডুবিয়ে মারে।
গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের নিখোঁজ ফরিদ হোসেনের স্ত্রী মিনা বেগম বলেন, ‘হামাকেরে পাশের গ্রামের কয়েকজন বিদেশে যাইয়া সংসার বড় করিচে। ভটভটি চল্যা কষ্টে সংসার চালাতো স্বামী। তাই বিদেশে যাওয়ার জন্যি হামিই পীড়াপীড়ি করিচি।’
বগুড়ার গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক আবদুল করিম বলেন, ‘নিখোঁজ লোকদের খবর যাচাই করার জন্য ঢাকা থেকে তালিকা দেওয়া হয়েছে। দুপচাঁচিয়া গোবিন্দপুর ইউনিয়নের নিখোঁজ দুই তরুণের বিষয়ে তথ্য নিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়েছি।’
বগুড়া জেলা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘বৈধ পথে বিদেশ গমনের তথ্য আমাদের কাছে আছে। কম খরচে অবৈধ পথে যারা বিদেশে যায় তাদের বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না।’
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার সংবাদ শুনে নিখোঁজ এই তরুণদের পরিবারে চলেছে মাতম। ঠিক ওই সময় খবর আসে, তাঁরা বেঁচে আছেন। ইতিমধ্যে দুই তরুণ ফিরে এসেছেন। বাকি ১১ তরুণ এখনো আটকে আছেন।
এই ১৩ তরুণ হলেন দুপচাঁচিয়ার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের মোকছেদ আলীর ছেলে মুক্তার হোসেন (৩৫), মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে ফরিদ হোসেন (৩৩), আবদুস সামাদের ছেলে সোহেল রানা (২০), বনতেঁতুলিয়া গ্রামের আলেফ উদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিন (২৫), আবদুল জোব্বারের ছেলে আবদুস ছালাম (২৬), আবদুল মালেকের ছেলে গোলাম মোস্তফা (২২), চেঁচুলিয়া গ্রামের মৃত আরজুল্লাহর ছেলে বাদশা (২৭) এবং চামরুল ইউনিয়নের কোলগ্রামের বাবলু প্রামাণিকের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩২), আবদুস সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৩৪), ইসমাইল হোসেনের ছেলে নজরুল ইসলাম (২৫), কোরবান আলীর ছেলে শাহজাহান আলী (২৭), বেলাল হোসেনের ছেলে মনজুর রহমান (৩০) ও আনসার আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৩৫)।
এর মধ্যে নিখোঁজ বেলাল হোসেনের বাবা আবদুস সামাদ বাদী হয়ে সেই সময় দুপচাঁচিয়া থানায় মানব পাচার আইনে মামলা করেন। পুলিশ দুই নারী দালালকে গ্রেপ্তারও করে।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে কোলগ্রামের শাহজাহান আলী গত ২২ জুন এবং রবিউল ইসলাম ২ জুলাই বাড়ি ফিরেছেন। সম্প্রতি কোলগ্রামে গেলে শাহজাহান ও রবিউল তাঁদের দুর্বিষহ জীবনের কথা বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন, সংসারে সুদিন আনার জন্যই তাঁরা ছয়জন অবৈধ পথে বিদেশে যান। স্থানীয় দালালেরা কক্সবাজারের টেকনাফের জঙ্গলে নিয়ে মিয়ানমারের মাঝিদের হাতে তাঁদের তুলে দেয়। প্রথমে ট্রলারে, এরপর তাঁদের বড় জাহাজে তুলে দেয় দালালেরা। জাহাজে ৫০০ লোকের ভীষণ চাপ। বসে বসে ঘুমাতে হয়েছে তাঁদের। ছিল খাওয়ার কষ্ট। প্রথমে দিনে এক বেলা খাবার দিত, একসময় তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। খাবার বা পানি চাইলে মারপিট করত দালালেরা। প্রতিবাদ করলে জাহাজ থেকে সাগরে ফেলে দিত। ২ মাস ২০ দিনে চোখের সামনে শতাধিক লোককে সাগরে ফেলে দিয়েছে দালালেরা। করুণ পরিস্থিতির বর্ণনা করতে করতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা দুজন। তাঁরা আরও বলেন, একদিন রাতে মিয়ানমারের দালালেরা অস্ত্র নিয়ে স্পিডবোটে করে পালিয়ে যায়। এরপর সাগরে ভেসে থাকা জাহাজে খাবার নিয়ে মিয়ানমারের লোকজনের সঙ্গে বাংলাদেশিদের মারামারি চলে। কয়েক দিন পর মাছ ধরার একটি ট্রলার জাহাজটি উদ্ধার করে ইন্দোনেশিয়া পুলিশের কাছে দেয়। তাঁদের অন্য চার সঙ্গী এখনো ইন্দোনেশিয়ার ক্যাম্পেই আটক আছেন।
আরেক দালালের মাধ্যমে উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাত তরুণ মালয়েশিয়া যাওয়ার পর নিখোঁজ রয়েছেন। ওই সব তরুণের সঙ্গী ফিরোজ হোসেন নামের আরেক তরুণ মালয়েশিয়ার ক্যাম্প থেকে ১৮ জুন বাড়ি ফিরেছেন। ফিরোজ হোসেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের যুগিভিটা গ্রামের হবিবর রহমানের ছেলে।
ফিরোজ হোসেন বলেন, আরেক দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে বের হন তিনি। কক্সবাজারে গিয়ে দেখা হয় গোবিন্দপুরের এই সাত তরুণের সঙ্গে। তাঁরা একই ট্রলারে করে কক্সবাজার থেকে সাগরে পাড়ি জমান। ট্রলার থেকে তাঁদের ওঠানো হয় একটি জাহাজে। ৮০০ লোক নিয়ে ওই জাহাজটি চলা শুরু করে। সারা দিনে এক বেলা খাবার আর এক বোতল পানি। এ ছাড়া টাকার জন্য মুঠোফোনে বাড়িতে খবর দিতে বলা হতো এবং মারধর করা হতো। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ফিরোজ আরও বলেন, যাঁরা টাকার ব্যবস্থা করেছেন, তাঁদের একটি ছোট জাহাজে তুলে (দেড়-দুই শ লোক) পার করে দিয়েছে দালালেরা। তিনি এবং ওই সাত তরুণ কিছু টাকা পরিশোধ করায় তাঁদেরও ওই জাহাজে তোলা হয়। জাহাজটি মালয়েশিয়া পুলিশ উদ্ধার করে ব্ল্যাংটিক নামের একটি ক্যাম্পে তাঁদের নিয়ে যায়। তবে একদিন রাতে বড় জাহাজ থেকে দালালেরা অস্ত্র নিয়ে ট্রলারে করে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় দালালেরা গুলি করে ওই বড় জাহাজটি ফুটা করে প্রায় ৬০০ লোককে পানিতে ডুবিয়ে মারে।
গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের নিখোঁজ ফরিদ হোসেনের স্ত্রী মিনা বেগম বলেন, ‘হামাকেরে পাশের গ্রামের কয়েকজন বিদেশে যাইয়া সংসার বড় করিচে। ভটভটি চল্যা কষ্টে সংসার চালাতো স্বামী। তাই বিদেশে যাওয়ার জন্যি হামিই পীড়াপীড়ি করিচি।’
বগুড়ার গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক আবদুল করিম বলেন, ‘নিখোঁজ লোকদের খবর যাচাই করার জন্য ঢাকা থেকে তালিকা দেওয়া হয়েছে। দুপচাঁচিয়া গোবিন্দপুর ইউনিয়নের নিখোঁজ দুই তরুণের বিষয়ে তথ্য নিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়েছি।’
বগুড়া জেলা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘বৈধ পথে বিদেশ গমনের তথ্য আমাদের কাছে আছে। কম খরচে অবৈধ পথে যারা বিদেশে যায় তাদের বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না।’
No comments