দরকার মনে করলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করব: ইনু
তথ্যমন্ত্রী
ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু জানিয়েছেন,
জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকার এখনো শক্ত অবস্থানে
আছে। দরকার মনে করলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে। তবে সরকার আদালতের রায়ের
দিকে তাকিয়ে আছে যে, আদালত কী বলে। বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের ১২২তম পর্বে
অংশ নিয়ে শনিবার তিনি এসব কথা বলেন। সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ানবাজারের
টিসিবি ভবন মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হয়। এতে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ
এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রওনক জাহান এবং সাবেক কূটনৈতিক
এম হুমায়ন কবির। তথ্যমন্ত্রী বলেন, “জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারটি এখনো আমরা
শক্তভাবে ধরে আছি। আদালতের সর্বোচ্চ রায়ের অপেক্ষায় আছি। তবে মাঝে মধ্যে
মহাজোটের নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখেন। জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল
এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমি মনে করি এবং আমরা জোটের নেতারা মনে করি জামায়াত
গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে যায় না। গেলেও এইটা…।”(এরপর তথ্যমন্ত্রী অন্য
প্রসঙ্গে চলে যান)। জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকারের একটা নীতিগত
অবস্থান আছে। তাহলে কেন তাদের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না? - এ
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সরকার নির্বাহী আদেশে যেকোনো গোষ্ঠি-দলকে
নিষিদ্ধ করতে পারে এবং ইতিমধ্যে গত ছয়-সাত বছরে বেশ কয়েকটা দলকে নিষিদ্ধ
ঘোষণা করাও হয়েছে। এটা আমরা পরীক্ষা করে দেখছি। যদি মনে করি যে নিষিদ্ধ করা
দরকার তাহলে করব। আর যেহেতু আদালতে মামলা তো আছেই। প্রশাসনিক আদেশে এই
মুহূর্তে আমরা নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছি না। আদালতের অপেক্ষায় আছি যে আদালত কী
বলে।” বিএনপি ভাঙার ব্যাপারে সরকারের প্রচেষ্টা ও এর পরিণাম সম্পর্কে
জানতে চাইলে সংলাপের প্যানেল অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন
আহমেদ বলেন, “এটা নতুন কিছু নয়। অতীতেও সরকারগুলো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে
ভাঙার চেষ্টা করেছে।” তিনি বলেন, “এ ধরনের কোনো প্রচেষ্টা সরকারের দিক
থেকে হচ্ছে কি না, তা তার জানা নেই।” হাফিজউদ্দিন বলেন, “বহুল আলোচিত
একটি দল জামায়াতে ইসলামী। তাদের সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। তাদের ওপর অনেক
ধরণের দোষ আরোপ করা হয়েছিল।কিন্তু ইদানীং আমরা দেখতে পাচ্ছি দলে দলে তারা
আওয়ামী লীগে যোগদান করছে। সুতরাং দল ভাঙার চেষ্টা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীকে ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরপর হয়তো বিএনপিকে ভাঙার
চেষ্টা হবে। তবে এটি সম্ভব নয়।” তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকার বিএনপি ভাঙার
প্রচেষ্টা চালাচ্ছে না। বরং বিএনপি নেতাদের কথাবার্তায় এমন কথা উঠে আসছে।
তিনি বলেন, “বিএনপি ভাঙার প্রয়োজন সরকারের নেই। কেননা জামায়াত ও জঙ্গিদের
সঙ্গে মিশে গিয়ে, তারেক রহমানের কারণে ভুল রাজনীতি করে বিএনপি চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়া নিজেই রাজনীতিতে খরচের খাতায় চলে গেছেন।” যুক্তরাষ্ট্রের
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, এ ধরনের প্রচেষ্টার
কোনো তথ্য তার কাছে নেই। তবে তা হলে নেতিবাচক হবে। কেননা অন্য দল ভেঙে
নেতাদের দলে আনলে ওই দলের আদর্শ প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। সাবেক কূটনীতিক এম
হুমায়ুন কবির বলেন, “দল ভাঙা যায় না। কেননা শূন্যতা পূরণ হয়ে যায়।” ভারতের
আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প প্রসঙ্গে প্যানেল অতিথিরা বলেন, এ ব্যাপারে সরকারকে
প্রতিবাদ করতে হবে। দ্বিপক্ষীয় ভাবে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে।
দেশে বিদেশে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনমত গড়ে তুলতে হবে। সবশেষে যেতে
হবে জাতিসংঘের কাছে। অবশ্য তথ্যমন্ত্রী সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, “বিশ্ব
পরিস্থিতি এখন এমন নেই যে, কোনো বড় রাষ্ট্র ছোট রাষ্ট্রের ওপর হাত দেবে।
সুতরাং এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিএনপি নেতা ও সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী
হাফিজ বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা এত সহজ হবে না। বাংলাদেশকে ছোট করে
দেখার কিছু নেই।” সিলেটে শেখ সামিউল আলম (রাজন) হত্যার ঘটনাকে সমাজের
মূল্যবোধের অভাব বলে মন্তব্য করেন অতিথিরা। তারা এই ঘটনায় জড়িতদের
দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করেন। জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই মামলায় সবাইকে
গ্রেফতার করা হচ্ছে।
No comments