পাহাড়ধস ঠেকাতে নেই স্থায়ী উদ্যোগ- ৯ বছরে ১৯২ জন নিহত by প্রণব বল
চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার আমিন কলোনি এলাকার টাংকির পাহাড়ের পাদদেশ থেকে গতকাল ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করা হয় l ছবি: প্রথম আলো |
প্রতিবছর
বর্ষা এলেই পাহাড়ধস রোধে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ
উচ্ছেদের মতো অস্থায়ী কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু উপেক্ষিত থেকে যায়
পাহাড়ধস রোধে বিভিন্ন সময় দেওয়া মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশমালা। স্থায়ী
কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রতিবছর পাহাড়ধসে নিহতের ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে
না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ শনিবার চট্টগ্রামে পাহাড় ও দেয়ালধসে ছয়জন নিহত হয়। সবচেয়ে বড় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জুন। সেবার এক দিনে নগরের বিভিন্ন স্থানে ১২৭ জন নিহত হয়েছিল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৯২।
চট্টগ্রাম শহরে যেসব পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রয়েছে, তার বেশির ভাগের মালিকানা সরকারের। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড়ও আছে। সরকারি পাহাড় দখল করে অথবা ইজারা নিয়ে ঘর তৈরি করে ভাড়া দেয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
২০০৭ সালে পাহাড়ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটি পাহাড়ে নিহতের ঘটনা ঠেকাতে ৩৬ দফা সুপারিশ দিয়েছিল। একই ঘটনার পর প্রকৌশলগত প্রতিরোধ কমিটি আরেকটি প্রতিবেদন দেয়। এতেও দুর্ঘটনা এড়াতে ৩০ দফা সুপারিশ দিয়েছিল। দুটি সুপারিশমালা ছিল প্রায় অভিন্ন।
এসবের মধ্যে পাহাড় দখলমুক্ত করে বনায়ন করা, ঝুঁকিতে বসবাসকারী মানুষদের পুনর্বাসন, পাহাড় ইজারাদান এবং দখল বন্ধ করা অন্যতম। কিন্তু এসব সুপারিশ গত আট বছরে আলোর মুখ দেখেনি। ফলে দিন দিন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দার সংখ্যা বেড়েছে।
ধস রোধে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ না থাকার কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড়ধস রোধে অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু শনিবার হঠাৎ করে অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পড়ে। আর আমরা তাদের একদিক থেকে উচ্ছেদ করলে অন্যদিকে গিয়ে বসবাস শুরু করে।’ তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে বসবাস ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের ক্ষমতা অনেক সীমিত। পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু আইন রয়েছে। কিন্তু তাদের জনবল নেই। তবে মামলা করলে এগুলো দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রয়োজন।
বর্তমানে চট্টগ্রামে ৩০টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে লোকজন বসবাস করছে বলে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি চিহ্নিত করেছে। বর্তমানে স্বল্প ও অধিক ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা আনুমানিক ১০ লাখ বলে ধারণা করা হয়। ২০০৭ সালের ঘটনার পর জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সদস্যদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসন এই কমিটির তদারক করে।
প্রতিবছর বর্ষা এলে উচ্ছেদ চালানো হয়। এবারও ১১টি পাহাড়ের ৬৬৬টি পরিবারকে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলে। কিন্তু বৃষ্টি একটু কমলে তারা আবার পাহাড়ের ঝুঁকিতে গিয়ে বসবাস শুরু করে। ফলে শনিবারের আকস্মিক অতিবৃষ্টিতে নগরের লালখান বাজার ও বায়েজিদ এলাকায় পাহাড় ও দেয়ালধসের ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে সচেতন নাগরিক কমিটি চট্টগ্রামের আহ্বায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার জানান, পাহাড়ে বসতি ঠেকাতে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রতিবছর এখানে বসতি বাড়ছে। এ কারণে দুর্ঘটনাও ঘটছে।
তালিকার বাইরের পাহাড়ে ধস: শনিবার বায়েজিদ থানাধীন আমিন কলোনিতে টাংকি পাহাড় ধসে তিনজন নিহত হয়। এই পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তালিকায় নেই। এ বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘আমরা কত দিকে আর তাদের পাহারা দেব। একদিকে বন্ধ করলে অন্যদিকে গিয়ে বসতি গড়ে তোলে। কোনোভাবে মানুষকে বোঝানো যায় না। ভয়ও নেই তাদের।’
সরেজমিনে বায়েজিদ এলাকায় দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে, খাঁজে ছোট ছোট টিনের ঘর। বাবুল নামের এক বাসিন্দা জানান, ‘আমাদের এখানে আগে কখনো পাহাড়ধস হয়নি। এগুলো অনেক নিরাপদ।’
বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বল্প ভাড়ার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে পাহাড়ে বসতি গড়ে তোলে লোকজন। এক শ্রেণির দখলদার পাহাড় দখল করে গরিব লোকদের ভাড়া দেয়। কম ভাড়ার কারণে তারা সরতে চায় না।
বারবার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত: ২০০৭ সালের ১১ জুন ভয়াবহ ওই ঘটনার পর প্রতিবছর ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের বিষয়ে নানা সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখে না। ২০১২ সালের ২ জুলাই পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির দশম সভায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ এক সপ্তাহের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নে অগ্রগতি ছিল বেশ কম।
এরপর ২০১৩ সালে ৬ জুন পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির একাদশ সভায় নতুন করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। সেটাও আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালে পুনরায় উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা-ও পুরোপুরি আলোর মুখ দেখেনি।
থেমে নেই দুর্ঘটনা: পাহাড়ধসে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে ২০০৭ সালে। সে সময় নিহত হয় ১২৭ জন। এ ছাড়া গত বছর বায়েজিদ এলাকায় ১ জন, ২০১৩ সালে ২ জন, ২০১২ সালে ২৮ জন, ২০১১ সালে ১৭ জন, ২০১০ সালে ৩ জন ও ২০০৮ সালে ১৪ জন নিহত হয়। ২০০৯ সালে ৩ জন আহত হয়। ২০০৭ সালের আগেও পাহাড়ধসে একাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
সর্বশেষ শনিবার চট্টগ্রামে পাহাড় ও দেয়ালধসে ছয়জন নিহত হয়। সবচেয়ে বড় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জুন। সেবার এক দিনে নগরের বিভিন্ন স্থানে ১২৭ জন নিহত হয়েছিল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৯২।
চট্টগ্রাম শহরে যেসব পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রয়েছে, তার বেশির ভাগের মালিকানা সরকারের। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড়ও আছে। সরকারি পাহাড় দখল করে অথবা ইজারা নিয়ে ঘর তৈরি করে ভাড়া দেয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
২০০৭ সালে পাহাড়ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটি পাহাড়ে নিহতের ঘটনা ঠেকাতে ৩৬ দফা সুপারিশ দিয়েছিল। একই ঘটনার পর প্রকৌশলগত প্রতিরোধ কমিটি আরেকটি প্রতিবেদন দেয়। এতেও দুর্ঘটনা এড়াতে ৩০ দফা সুপারিশ দিয়েছিল। দুটি সুপারিশমালা ছিল প্রায় অভিন্ন।
এসবের মধ্যে পাহাড় দখলমুক্ত করে বনায়ন করা, ঝুঁকিতে বসবাসকারী মানুষদের পুনর্বাসন, পাহাড় ইজারাদান এবং দখল বন্ধ করা অন্যতম। কিন্তু এসব সুপারিশ গত আট বছরে আলোর মুখ দেখেনি। ফলে দিন দিন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দার সংখ্যা বেড়েছে।
ধস রোধে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ না থাকার কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড়ধস রোধে অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু শনিবার হঠাৎ করে অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পড়ে। আর আমরা তাদের একদিক থেকে উচ্ছেদ করলে অন্যদিকে গিয়ে বসবাস শুরু করে।’ তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে বসবাস ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের ক্ষমতা অনেক সীমিত। পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু আইন রয়েছে। কিন্তু তাদের জনবল নেই। তবে মামলা করলে এগুলো দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রয়োজন।
বর্তমানে চট্টগ্রামে ৩০টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে লোকজন বসবাস করছে বলে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি চিহ্নিত করেছে। বর্তমানে স্বল্প ও অধিক ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা আনুমানিক ১০ লাখ বলে ধারণা করা হয়। ২০০৭ সালের ঘটনার পর জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সদস্যদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসন এই কমিটির তদারক করে।
প্রতিবছর বর্ষা এলে উচ্ছেদ চালানো হয়। এবারও ১১টি পাহাড়ের ৬৬৬টি পরিবারকে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলে। কিন্তু বৃষ্টি একটু কমলে তারা আবার পাহাড়ের ঝুঁকিতে গিয়ে বসবাস শুরু করে। ফলে শনিবারের আকস্মিক অতিবৃষ্টিতে নগরের লালখান বাজার ও বায়েজিদ এলাকায় পাহাড় ও দেয়ালধসের ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে সচেতন নাগরিক কমিটি চট্টগ্রামের আহ্বায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার জানান, পাহাড়ে বসতি ঠেকাতে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রতিবছর এখানে বসতি বাড়ছে। এ কারণে দুর্ঘটনাও ঘটছে।
তালিকার বাইরের পাহাড়ে ধস: শনিবার বায়েজিদ থানাধীন আমিন কলোনিতে টাংকি পাহাড় ধসে তিনজন নিহত হয়। এই পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তালিকায় নেই। এ বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘আমরা কত দিকে আর তাদের পাহারা দেব। একদিকে বন্ধ করলে অন্যদিকে গিয়ে বসতি গড়ে তোলে। কোনোভাবে মানুষকে বোঝানো যায় না। ভয়ও নেই তাদের।’
সরেজমিনে বায়েজিদ এলাকায় দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে, খাঁজে ছোট ছোট টিনের ঘর। বাবুল নামের এক বাসিন্দা জানান, ‘আমাদের এখানে আগে কখনো পাহাড়ধস হয়নি। এগুলো অনেক নিরাপদ।’
বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বল্প ভাড়ার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে পাহাড়ে বসতি গড়ে তোলে লোকজন। এক শ্রেণির দখলদার পাহাড় দখল করে গরিব লোকদের ভাড়া দেয়। কম ভাড়ার কারণে তারা সরতে চায় না।
বারবার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত: ২০০৭ সালের ১১ জুন ভয়াবহ ওই ঘটনার পর প্রতিবছর ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের বিষয়ে নানা সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখে না। ২০১২ সালের ২ জুলাই পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির দশম সভায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ এক সপ্তাহের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নে অগ্রগতি ছিল বেশ কম।
এরপর ২০১৩ সালে ৬ জুন পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির একাদশ সভায় নতুন করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। সেটাও আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালে পুনরায় উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা-ও পুরোপুরি আলোর মুখ দেখেনি।
থেমে নেই দুর্ঘটনা: পাহাড়ধসে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে ২০০৭ সালে। সে সময় নিহত হয় ১২৭ জন। এ ছাড়া গত বছর বায়েজিদ এলাকায় ১ জন, ২০১৩ সালে ২ জন, ২০১২ সালে ২৮ জন, ২০১১ সালে ১৭ জন, ২০১০ সালে ৩ জন ও ২০০৮ সালে ১৪ জন নিহত হয়। ২০০৯ সালে ৩ জন আহত হয়। ২০০৭ সালের আগেও পাহাড়ধসে একাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
No comments