মানিকগঞ্জে মরিচের বাম্পার ফলন, কাল হয়েছে কৃষকের by রিপন আনসারী
মানিকগঞ্জে
এবার মরিচের বাম্পার ফলন কৃষকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি কেজি মরিচ
বিক্রি হচ্ছে দেড় টাকা থেকে ২ টাকায়। আর প্রতিমণ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০
টাকায়। লাভ তো দূরের কথা চালান না ওঠায় বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। হাড়ভাঙা
পরিশ্রমের পর এখন হাহাকার বিরাজ করছে তাদের মাঝে। দেশের অন্যতম মরিচের আড়ত
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বরঙ্গাইল হাটে বস্তা বস্তা মরিচ নিয়ে কৃষক বসে
থাকলেও বিক্রি করতে পারছে না। সরজমিন দেখা গেছে, জেলার শিবালয়, ঘিওর,
হরিরামপুর ও সাটুরিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচের আবাদ হয়েছে। এসব এলাকার
প্রতিটি মরিচ গাছে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা মরিচ। মরিচের ঝাঁঝালো গন্ধ বিরাজ
করছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে। কিন্তু কাঁদছেন কৃষক। শিবালয় উপজেলার মরিচ
চাষী দলিল উদ্দিন ৪ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করে বেকায়দায় পড়েছেন। তার ক্ষেতে
এবার নজিরবিহীন মরিচের আবাদ হয়েছে। কিন্তু এই বাম্পার ফলনই কাল হয়ে
দাঁড়িয়েছে। এক কেজি মরিচ মাত্র দেড় টাকা। দলিল উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন,
‘গতবার দাম ভাল পাইলেও এবার মরিচ চাষ কইরা কি ধরাডাই খাইছি। লাভ দূরে থাক
চালানই উঠবো না’। ক্ষেত থেকে এক কেজি মরিচ তুলতে খরচ হয় ৩ টাকা। পরিবহন
খরচ কেজিপ্রতি এক টাকা। আর হাটে গিয়ে দাম পাই দেড় টাকা থেকে দুই টাকা।
ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে বলেই লোকসান দিয়ে হলেও মরিচ তুলতে হচ্ছে। তা না হলে
ক্ষেতের মরিচ ক্ষেতেই থাকতো। বানিয়াজুরী এলাকার অমর কান্তিশীল বলেন, যদি
পারতাম নিজের ক্ষেত নিজেই আগুন ধরিয়ে মনের জ্বালা মিটাতাম। বাজারে সব কিছুর
দাম আকাশ ছোঁয়া হলেও মরিচের দাম পানির চাইতে কম হওয়ায় আগামীতে মরিচ চাষে
সব আগ্রহ শেষ হয়ে গেছে।
মানিকগঞ্জের বরঙ্গাইল হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা কৃষক কামাল বলেন, রোদ, ঝড়- বৃষ্টিতে হাড়ভাঙ্গা কষ্ট কইর্যা মরিচ আবাদ করলাম কিন্তু কিছুই পেলাম না। হাটে আর মরিচ আনতে মন চায় না। শুধু কষ্ট ছাড়া আর কিছু নিয়ে যেতে পারি না। কথাগুলো বলার এক পর্যায়ে চোখের দু’পাশ দিয়ে পানি গড়াতে থাকে এই কৃষকের। মহাদেবপুরের খলিল মিয়া, অন্যের জমি এক বছরের জন্য ভাড়া নিয়ে দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছিলেন। হতদরিদ্র এই কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তাকে হাউ মাউ করে কাঁদতে দেখা যায়। কোন কথাই তার মুখ দিয়ে বের হয়নি।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করতে কমবেশি খরচ হয় সাত হাজার টাকা। তাদের হিসাবে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৮০০ চারা রোপণ করা যায়। এ বাবদ খরচ হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা। জমি চাষ করতে খরচ হয় ১০০০ টাকা। ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ সার বাবদ খরচ আছে ১৫০০ টাকা। স্বাভাবিক অবস্থায় কীটনাশক বাবদ খরচ হয় ৫০০ টাকা। সেচ বাবদ ব্যয় হয় ২০০০ টাকা। এই হিসাবে এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষের জন্য খরচ হয় ৬৬০০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে মরিচ উৎপাদন হয় ৫০ মণ। এ হিসাবে প্রতিমণ মরিচ উৎপাদন খরচ প্রায় ১৩২ টাকা। আর প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ হয় তিন টাকার একটু বেশি। এর সঙ্গে মরিচ তোলা বাবদ এবং হাটে আনার পরিবহন খরচ যোগ হয়। কৃষকরা জানান, এই হিসাবে বর্তমানে তাদের প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করে কোন লাভই থাকছে না।
বরঙ্গাইল বাজারের আড়তদার শাহিনুর বলেন, কয়েক দিন ধরে মরিচ কেনাবেচা হচ্ছে দেড় থেকে ২ টাকা কেজি দরে। আগামী আরও দশ পনের দিন বাজার এরকমই থাকবে। তিনি জানান, এই সময়টিতে প্রচুর মরিচ ধরে। ফলে এই সময়টিতে বাজারেও প্রচুর মরিচের আমদানি হয়। তিনি স্বীকার করেন এই মাসটি কৃষকদের ক্ষতি হবে। কিন্তু এরপর আবার মরিচের দর কমপক্ষে ২৫/৩০ টাকায় উঠে আসবে। মওসুমের শেষের দিকে ৭০/৮০ টাকাও হতে পারে।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. আলীমুজ্জামান মিয়া বলেন, এবার ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের চাষ হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে একশ’ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ বেশি হয়েছে। ফলন ভাল হওয়াতে এবার প্রায় আট হাজার টন মরিচ উৎপাদন হবে। বৃষ্টির পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদন বেশি হওয়াতে কৃষকরা মরিচের দাম পাচ্ছে না বলে মনে করেন জেলার এই কৃষি কর্মকর্তা।
মানিকগঞ্জের বরঙ্গাইল হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা কৃষক কামাল বলেন, রোদ, ঝড়- বৃষ্টিতে হাড়ভাঙ্গা কষ্ট কইর্যা মরিচ আবাদ করলাম কিন্তু কিছুই পেলাম না। হাটে আর মরিচ আনতে মন চায় না। শুধু কষ্ট ছাড়া আর কিছু নিয়ে যেতে পারি না। কথাগুলো বলার এক পর্যায়ে চোখের দু’পাশ দিয়ে পানি গড়াতে থাকে এই কৃষকের। মহাদেবপুরের খলিল মিয়া, অন্যের জমি এক বছরের জন্য ভাড়া নিয়ে দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছিলেন। হতদরিদ্র এই কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তাকে হাউ মাউ করে কাঁদতে দেখা যায়। কোন কথাই তার মুখ দিয়ে বের হয়নি।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করতে কমবেশি খরচ হয় সাত হাজার টাকা। তাদের হিসাবে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৮০০ চারা রোপণ করা যায়। এ বাবদ খরচ হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা। জমি চাষ করতে খরচ হয় ১০০০ টাকা। ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ সার বাবদ খরচ আছে ১৫০০ টাকা। স্বাভাবিক অবস্থায় কীটনাশক বাবদ খরচ হয় ৫০০ টাকা। সেচ বাবদ ব্যয় হয় ২০০০ টাকা। এই হিসাবে এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষের জন্য খরচ হয় ৬৬০০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে মরিচ উৎপাদন হয় ৫০ মণ। এ হিসাবে প্রতিমণ মরিচ উৎপাদন খরচ প্রায় ১৩২ টাকা। আর প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ হয় তিন টাকার একটু বেশি। এর সঙ্গে মরিচ তোলা বাবদ এবং হাটে আনার পরিবহন খরচ যোগ হয়। কৃষকরা জানান, এই হিসাবে বর্তমানে তাদের প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করে কোন লাভই থাকছে না।
বরঙ্গাইল বাজারের আড়তদার শাহিনুর বলেন, কয়েক দিন ধরে মরিচ কেনাবেচা হচ্ছে দেড় থেকে ২ টাকা কেজি দরে। আগামী আরও দশ পনের দিন বাজার এরকমই থাকবে। তিনি জানান, এই সময়টিতে প্রচুর মরিচ ধরে। ফলে এই সময়টিতে বাজারেও প্রচুর মরিচের আমদানি হয়। তিনি স্বীকার করেন এই মাসটি কৃষকদের ক্ষতি হবে। কিন্তু এরপর আবার মরিচের দর কমপক্ষে ২৫/৩০ টাকায় উঠে আসবে। মওসুমের শেষের দিকে ৭০/৮০ টাকাও হতে পারে।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. আলীমুজ্জামান মিয়া বলেন, এবার ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের চাষ হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে একশ’ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ বেশি হয়েছে। ফলন ভাল হওয়াতে এবার প্রায় আট হাজার টন মরিচ উৎপাদন হবে। বৃষ্টির পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদন বেশি হওয়াতে কৃষকরা মরিচের দাম পাচ্ছে না বলে মনে করেন জেলার এই কৃষি কর্মকর্তা।
No comments