ইসলামিক স্টেট এখন সিরিয়ার চেয়েও বড়
বাশার আল আসাদ কর্তৃত্বাধীন সিরিয়ার চেয়ে বৃহৎ এলাকার অধিকারী এখন ‘ইসলামিক স্টেট’। মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক ও সিরিয়ার মাঝখানে যেন আক্ষরিক অর্থেই রাষ্ট্রসীমা দখলে নিল ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বুধবার সিরিয়ার প্রাচীন নগরী পামিরায় হামলা চালিয়ে বৃহস্পতিবার তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে সংগঠনটি। হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের এ শহরে এখন ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা চলবে বলেই আশংকা করছে সংশ্লিষ্ট সবাই। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট এক প্রতিবেদনে এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ার মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা (এসওএইচআর) জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট বাশার বাহিনীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা পামিরা শহরের দখলের মাধ্যমে সিরিয়ার ৫০ শতাংশের বেশি ভূমি আইএসের দখলে চলে গেছে। সংস্থাটির পরিচালক রামি আবদুর রহমান বলেন, সিরিয়ার ৯৫ হাজার বর্গকিমি. জায়গা এখন আইএসের নিয়ন্ত্রণে। দেশটির হমস, রাকা, দেইর ইজর, হাসাকা, হামা, আলেপ্পো, দামেস্ক, রিফ দিমাস্ক ও সুয়াদা শহরগুলোতে আইএসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার রাতে সিরিয়ার প্রাচীন সভ্যতার সমৃদ্ধ নগরী পামিরা আইএসের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তাদমুর নামেও পরিচিত কেন্দ্রীয় অঞ্চলের শহর পামিরার প্রাচীন অংশটি দুই হাজার বছরের পুরনো।
এখানকার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো গত দুই হাজার বছর ধরে টিকে আছে। সিরিয়ার প্রতিবেশী ইরাকে আইএস ঐতিহাসিক অনেক প্রাচীন নিদর্শন ধ্বংস করেছে। পামিরাও জঙ্গিগোষ্ঠীটির বর্বরতার শিকার হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। আইএসের যোদ্ধারা শহরটির প্রাচীন অংশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল বলে এর আগে জানিয়েছিল সিরীয় টেলিভিশন। সিরিয়ার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মামুন আবদুল করিম শহরটির ঐতিহাসিক অংশটির স্থাপনাগুলো রক্ষার পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শহরটি থেকে কয়েকশ’ প্রাচীন মূর্তি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন তিনি। সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর সঙ্গে রাজধানী দামেস্ককে সংযুক্তকারী প্রধান সড়কের মধ্যেই পামিরার অবস্থান। আধুনিক সামরিক স্থাপনা সমৃদ্ধ শহরটি তাই সমর কৌশলগতভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর অধিকাংশই বিদ্রোহীদের দখলে আছে। পামিরা এলাকা থেকে ইন্টারনেটে আইএসের এক যোদ্ধা বলেছেন, ‘আল্লাহর রহমতে এটি স্বাধীন হয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন, শহরের যে হাসপাতালটি সিরীয় বাহিনীগুলো ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতো তা এখন আইএসের নিয়ন্ত্রণে আছে। শহরটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ওমার হামজা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘প্রশাসন সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। শহরের পশ্চিমে হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ এখন আইএসের হাতে।’ তিনি জানান, ‘আইএস যোদ্ধারা পামিরার উত্তরাঞ্চল পুরোপুরি দখলে নিয়েছে। রাস্তায় কোনো সাধারণ মানুষের দেখা নেই। অনেকেই স্কুল ঘরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।’
No comments