প্রত্যাশিত মৈত্রী গঠনের অভিপ্রায় by শিনজো আবে
প্রশান্ত
মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর আমরা জাপানিরা গভীর
অনুশোচনা নিয়ে নিজ দেশের পুনর্নির্মাণ শুরু করি, নতুন পথে যাত্রা শুরু
করি। আমাদের পূর্বসূরিদের কাজের কারণে এশিয়ার মানুষকে প্রভূত কষ্ট পেতে
হয়েছে। সে সত্য থেকে আমাদের মুখ ফিরিয়ে থাকলে চলবে না। জাপানের সাবেক
প্রধানমন্ত্রীরা এ প্রসঙ্গে যা বলেছেন, আমি তার সঙ্গে একমত পোষণ করি।
এই স্বীকৃতি ও অনুশোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জাপানিরা বহুদিন ধরে ভেবেছি, এশিয়ার উন্নতিতে আমাদের যা যা করা দরকার, আমরা তা করব। এ অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতকরণে আমাদের যা করণীয়, সেটা আমরা করব।
আমরা যে পথ নিয়েছি, তার জন্য আমি গর্ব বোধ করি, কিন্তু সে পথে শুধু আমরা একাই হাঁটিনি। আজ থেকে ৭০ বছর আগে জাপান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল, আর প্রতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা আমাদের শিশুদের জন্য দুধ, গরম সোয়েটার, এমনকি ছাগলও পাঠিয়েছে। যুদ্ধের পরের কয়েকটি বছরেই যুক্তরাষ্ট্র জাপানে ২ হাজার ৩৬টি মার্কিন ছাগল পাঠায়। আগের শত্রুরা ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হয়।
আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রথম উপকারভোগী হচ্ছে জাপান। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র নিজের বাজার খুলে দেয়, উদার বিশ্ব অর্থনীতি প্রবর্তনের আহ্বান জানায়। ১৯৮০-এর দশকের পর থেকে আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া, তাইওয়ান ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর উত্থান দেখেছি, আর সম্প্রতি আমরা চীনকেও দেখলাম। আর এসবই সম্ভব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবর্তিত উন্মুক্ত বিশ্বব্যবস্থার কারণে।
আর জাপানও নিশ্চিতভাবে চুপচাপ বসে থাকেনি, সে এসব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজি ও প্রযুক্তি সহায়তা দিয়েছে। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই এ অঞ্চলে সমৃদ্ধির নীতি গ্রহণ করেছিল, যেটা আসলে শান্তির বীজতলা। আজ জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে, তাদের নিয়মনীতিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা লালনে নেতৃত্ব দিতে হবে। একক কোনো জাতিরাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারিতামুক্ত ন্যায্য, গতিশীল ও টেকসই ব্যবস্থা, যার আওতায় সব দেশেরই সমৃদ্ধি ঘটতে পারে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাজার দুনিয়ার অন্যতম বিশাল প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র, আমরা সেখানকার পরিবেশগত চাপ উপেক্ষা করতে পারি না। এখন আমরা শুধু মুক্ত সওয়ারিদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বিনষ্ট করতে দিতে পারি। তার বদলে আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিতে হবে, তা লালন করতে হবে: আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা।
ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপে এ-ই আছে, এর বেশি কিছু নয়। এর কৌশলগত মূল্য অর্থনৈতিক মূল্যের চেয়েও বেশি। এর লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্বের ৪০ শতাংশ অর্থনীতি ও এক-তৃতীয়াংশ বাণিজ্যের কেন্দ্রকে আমাদের সন্তান ও তাদের সন্তানদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রে পরিণত করা। মার্কিন-জাপান আপসের ক্ষেত্রে লক্ষ্য একদম পরিষ্কার। আসুন, যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে এটাকে সফল পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
আমি জানি, এ পথ কতটা বন্ধুর। ২০ বছর আগে আমি নিজেই জাপানের কৃষিবাজার উন্মুক্ত করার বিপক্ষে মত দিয়েছিলাম। এমনকি জাপানে ডায়েটের সামনে কৃষক প্রতিনিধিদের এক সমাবেশেও যোগ দিয়েছিলাম।
কিন্তু জাপানের কৃষি খাত বিগত দুই দশকে ছোট হয়ে গেছে। আমাদের কৃষকদের গড় বয়স ১০ বছর বেড়ে ৬৬ হয়েছে। আমাদের কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এর ব্যাপক সংস্কার করতে হবে, আমাদের কৃষি সমবায়কেও এর বাইরে রাখা যাবে না, গত ৬০ বছরে যে সমবায়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
জাপানের ব্যবসায়ও পরিবর্তন আসবে। জাপানের করপোরেট সুশাসন বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ আমরা এটাকে শক্তিশালী করেছি। আর ওষুধ ও জ্বালানি খাতে যে সংস্কার চলছে, তাতেও আমি নেতৃত্ব দিচ্ছি।
তার পরও জাপানের শ্রমশক্তির কমে যাওয়া রোধে যা করা দরকার, আমি তা করতে রাজি। আমরা নিজেদের পুরোনো অভ্যাসগুলো পাল্টানোর চেষ্টা করছি। বিশেষ করে, আমরা নারীদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করছি, যাতে তাঁরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে অংশ নিতে পারেন।
সংক্ষেপে বললে, জাপান আরও উন্মুক্ত ভবিষ্যতের লক্ষ্যপানে দীর্ঘমেয়াদি পালাবদলের মধ্যে রয়েছে। সফলতার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে যেতে আমরা বদ্ধপরিকর।
কিন্তু সংস্কার করতে গেলে শান্তি ও নিরাপত্তা অটুট রাখতে হবে, যেটা আসলে মার্কিন নেতৃত্বের উত্তরাধিকার। আমার পিতামহ নোবুসুকে কিসি ১৯৫০-এর দশকে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে গণতন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বের পথ বেছে নিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সমমনা গণতন্ত্রীদের সঙ্গে আমরা শীতল যুদ্ধে জিতেছিলাম। আমি সেই পথে থাকতে চাই, আর এর বিকল্প আছে বলেও মনে হয় না।
আমাদের বন্ধন মজবুত করতে সব চেষ্টাই করতে হবে। সে কারণে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ‘পুনঃ ভারসাম্য’ নীতি সমর্থন করি। জাপান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই প্রচেষ্টায় সমর্থন দিয়ে যাবে।
জাপান অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়ন করে সেটা করে যাচ্ছে, আবার আসিয়ানভুক্ত দেশ ও গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার পরিসর বাড়িয়েছে। মার্কিন-জাপান মৈত্রীতে এদের যুক্ত করা হলে এ অঞ্চলের স্থিতাবস্থা আরও পাকাপোক্ত হবে। আর জাপান এখন ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার দিয়ে গুয়ামের মার্কিন ঘাঁটির উন্নয়ন ঘটাবে, ভবিষ্যতে যার আরও বৃহৎ কৌশলগত তাৎপর্য পরিলক্ষিত হবে।
এশিয়ার সমুদ্রসীমাবিষয়ক বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আমার সরকারের তিনটি নীতির গুরুত্ব উল্লেখ করা দরকার। প্রথমত, সব রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ভূখণ্ড দাবি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বল প্রয়োগ করে দাবি আদায় করা যাবে না। তৃতীয়ত, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিপুল সমুদ্র অঞ্চলকে শান্তি ও স্বাধীনতার অঞ্চলে রূপান্তরিত করতে হবে, যেখানে সবাই আইনের শাসন মেনে চলবে। এই কারণেও মার্কিন-জাপান মৈত্রীকে আরও সংহত করা আমাদের দায়িত্ব।
সে কারণে আমরা আমাদের নিরাপত্তার আইনি ভিত্তিকে দৃঢ় করার চেষ্টা করছি। এই দৃঢ়তর ভিত্তি মার্কিন সেনাবাহিনী ও জাপানি আত্মরক্ষা বাহিনীর সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করবে, মৈত্রীকে আরও সংহত করবে। এটা এই অঞ্চলের শান্তি সুরক্ষায় বিশ্বাসযোগ্য নিরোধক হিসেবে কাজ করবে। এসব আইনি পরিবর্তন এই গ্রীষ্মের মধ্যেই হয়ে গেলে জাপান সংকটের সর্বক্ষেত্রেই নির্ভুল অবস্থান নিতে পারবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই হবে সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী আইনি পরিবর্তন।
যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যকার নতুন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নির্দেশিকার উদ্দেশ্যও একই, আগামী বছরগুলোতে তা এ অঞ্চলের শান্তি সুরক্ষিত করতে সহায়তা করবে।
শেষমেশ জাপান তার বৈশ্বিক দায়িত্ব পালনে এখন আরও বেশি আগ্রহী। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী পারস্য উপসাগর অঞ্চল থেকে মাইন অপসারণ করেছে। ভারত মহাসাগরে আমরা ১০ বছর ধরে সন্ত্রাসবাদ ও অস্ত্র সরবরাহ রুখতে মার্কিন অভিযানে সহায়তা করেছি। কম্বোডিয়া, গোলানের চূড়া, ইরাক, হাইতি ও দক্ষিণ সুদানে আমাদের আত্মরক্ষা বাহিনীর সেনারা মানবিক সহায়তা দিয়েছে, শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছে। এসব তৎপরতায় পর্যন্ত ৫০ হাজার কর্মী অংশ নিয়েছে।
এই স্বীকৃতি ও অনুশোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জাপানিরা বহুদিন ধরে ভেবেছি, এশিয়ার উন্নতিতে আমাদের যা যা করা দরকার, আমরা তা করব। এ অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতকরণে আমাদের যা করণীয়, সেটা আমরা করব।
আমরা যে পথ নিয়েছি, তার জন্য আমি গর্ব বোধ করি, কিন্তু সে পথে শুধু আমরা একাই হাঁটিনি। আজ থেকে ৭০ বছর আগে জাপান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল, আর প্রতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা আমাদের শিশুদের জন্য দুধ, গরম সোয়েটার, এমনকি ছাগলও পাঠিয়েছে। যুদ্ধের পরের কয়েকটি বছরেই যুক্তরাষ্ট্র জাপানে ২ হাজার ৩৬টি মার্কিন ছাগল পাঠায়। আগের শত্রুরা ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হয়।
আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রথম উপকারভোগী হচ্ছে জাপান। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র নিজের বাজার খুলে দেয়, উদার বিশ্ব অর্থনীতি প্রবর্তনের আহ্বান জানায়। ১৯৮০-এর দশকের পর থেকে আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া, তাইওয়ান ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর উত্থান দেখেছি, আর সম্প্রতি আমরা চীনকেও দেখলাম। আর এসবই সম্ভব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবর্তিত উন্মুক্ত বিশ্বব্যবস্থার কারণে।
আর জাপানও নিশ্চিতভাবে চুপচাপ বসে থাকেনি, সে এসব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজি ও প্রযুক্তি সহায়তা দিয়েছে। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই এ অঞ্চলে সমৃদ্ধির নীতি গ্রহণ করেছিল, যেটা আসলে শান্তির বীজতলা। আজ জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে, তাদের নিয়মনীতিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা লালনে নেতৃত্ব দিতে হবে। একক কোনো জাতিরাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারিতামুক্ত ন্যায্য, গতিশীল ও টেকসই ব্যবস্থা, যার আওতায় সব দেশেরই সমৃদ্ধি ঘটতে পারে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাজার দুনিয়ার অন্যতম বিশাল প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র, আমরা সেখানকার পরিবেশগত চাপ উপেক্ষা করতে পারি না। এখন আমরা শুধু মুক্ত সওয়ারিদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বিনষ্ট করতে দিতে পারি। তার বদলে আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিতে হবে, তা লালন করতে হবে: আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা।
ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপে এ-ই আছে, এর বেশি কিছু নয়। এর কৌশলগত মূল্য অর্থনৈতিক মূল্যের চেয়েও বেশি। এর লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্বের ৪০ শতাংশ অর্থনীতি ও এক-তৃতীয়াংশ বাণিজ্যের কেন্দ্রকে আমাদের সন্তান ও তাদের সন্তানদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রে পরিণত করা। মার্কিন-জাপান আপসের ক্ষেত্রে লক্ষ্য একদম পরিষ্কার। আসুন, যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে এটাকে সফল পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
আমি জানি, এ পথ কতটা বন্ধুর। ২০ বছর আগে আমি নিজেই জাপানের কৃষিবাজার উন্মুক্ত করার বিপক্ষে মত দিয়েছিলাম। এমনকি জাপানে ডায়েটের সামনে কৃষক প্রতিনিধিদের এক সমাবেশেও যোগ দিয়েছিলাম।
কিন্তু জাপানের কৃষি খাত বিগত দুই দশকে ছোট হয়ে গেছে। আমাদের কৃষকদের গড় বয়স ১০ বছর বেড়ে ৬৬ হয়েছে। আমাদের কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এর ব্যাপক সংস্কার করতে হবে, আমাদের কৃষি সমবায়কেও এর বাইরে রাখা যাবে না, গত ৬০ বছরে যে সমবায়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
জাপানের ব্যবসায়ও পরিবর্তন আসবে। জাপানের করপোরেট সুশাসন বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ আমরা এটাকে শক্তিশালী করেছি। আর ওষুধ ও জ্বালানি খাতে যে সংস্কার চলছে, তাতেও আমি নেতৃত্ব দিচ্ছি।
তার পরও জাপানের শ্রমশক্তির কমে যাওয়া রোধে যা করা দরকার, আমি তা করতে রাজি। আমরা নিজেদের পুরোনো অভ্যাসগুলো পাল্টানোর চেষ্টা করছি। বিশেষ করে, আমরা নারীদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করছি, যাতে তাঁরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে অংশ নিতে পারেন।
সংক্ষেপে বললে, জাপান আরও উন্মুক্ত ভবিষ্যতের লক্ষ্যপানে দীর্ঘমেয়াদি পালাবদলের মধ্যে রয়েছে। সফলতার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে যেতে আমরা বদ্ধপরিকর।
কিন্তু সংস্কার করতে গেলে শান্তি ও নিরাপত্তা অটুট রাখতে হবে, যেটা আসলে মার্কিন নেতৃত্বের উত্তরাধিকার। আমার পিতামহ নোবুসুকে কিসি ১৯৫০-এর দশকে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে গণতন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বের পথ বেছে নিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সমমনা গণতন্ত্রীদের সঙ্গে আমরা শীতল যুদ্ধে জিতেছিলাম। আমি সেই পথে থাকতে চাই, আর এর বিকল্প আছে বলেও মনে হয় না।
আমাদের বন্ধন মজবুত করতে সব চেষ্টাই করতে হবে। সে কারণে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ‘পুনঃ ভারসাম্য’ নীতি সমর্থন করি। জাপান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই প্রচেষ্টায় সমর্থন দিয়ে যাবে।
জাপান অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়ন করে সেটা করে যাচ্ছে, আবার আসিয়ানভুক্ত দেশ ও গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার পরিসর বাড়িয়েছে। মার্কিন-জাপান মৈত্রীতে এদের যুক্ত করা হলে এ অঞ্চলের স্থিতাবস্থা আরও পাকাপোক্ত হবে। আর জাপান এখন ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার দিয়ে গুয়ামের মার্কিন ঘাঁটির উন্নয়ন ঘটাবে, ভবিষ্যতে যার আরও বৃহৎ কৌশলগত তাৎপর্য পরিলক্ষিত হবে।
এশিয়ার সমুদ্রসীমাবিষয়ক বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আমার সরকারের তিনটি নীতির গুরুত্ব উল্লেখ করা দরকার। প্রথমত, সব রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ভূখণ্ড দাবি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বল প্রয়োগ করে দাবি আদায় করা যাবে না। তৃতীয়ত, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিপুল সমুদ্র অঞ্চলকে শান্তি ও স্বাধীনতার অঞ্চলে রূপান্তরিত করতে হবে, যেখানে সবাই আইনের শাসন মেনে চলবে। এই কারণেও মার্কিন-জাপান মৈত্রীকে আরও সংহত করা আমাদের দায়িত্ব।
সে কারণে আমরা আমাদের নিরাপত্তার আইনি ভিত্তিকে দৃঢ় করার চেষ্টা করছি। এই দৃঢ়তর ভিত্তি মার্কিন সেনাবাহিনী ও জাপানি আত্মরক্ষা বাহিনীর সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করবে, মৈত্রীকে আরও সংহত করবে। এটা এই অঞ্চলের শান্তি সুরক্ষায় বিশ্বাসযোগ্য নিরোধক হিসেবে কাজ করবে। এসব আইনি পরিবর্তন এই গ্রীষ্মের মধ্যেই হয়ে গেলে জাপান সংকটের সর্বক্ষেত্রেই নির্ভুল অবস্থান নিতে পারবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই হবে সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী আইনি পরিবর্তন।
যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যকার নতুন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নির্দেশিকার উদ্দেশ্যও একই, আগামী বছরগুলোতে তা এ অঞ্চলের শান্তি সুরক্ষিত করতে সহায়তা করবে।
শেষমেশ জাপান তার বৈশ্বিক দায়িত্ব পালনে এখন আরও বেশি আগ্রহী। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী পারস্য উপসাগর অঞ্চল থেকে মাইন অপসারণ করেছে। ভারত মহাসাগরে আমরা ১০ বছর ধরে সন্ত্রাসবাদ ও অস্ত্র সরবরাহ রুখতে মার্কিন অভিযানে সহায়তা করেছি। কম্বোডিয়া, গোলানের চূড়া, ইরাক, হাইতি ও দক্ষিণ সুদানে আমাদের আত্মরক্ষা বাহিনীর সেনারা মানবিক সহায়তা দিয়েছে, শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছে। এসব তৎপরতায় পর্যন্ত ৫০ হাজার কর্মী অংশ নিয়েছে।
শিনজো আবে |
জাপানের এজেন্ডা খুব সাদামাটা ও সোজাসাপটা: ঘরে সংস্কার করা আর
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় নিজ উদ্যোগে
অংশগ্রহণ করা। এই কার্যক্রম জাপান ও এশিয়াকে আরও স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ
ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে, এটাই তার প্রতিশ্রুতি।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
শিনজো আবে: জাপানের প্রধানমন্ত্রী।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
শিনজো আবে: জাপানের প্রধানমন্ত্রী।
No comments