ছিটমহলে কি বিনিময় হবে?
পতাকা
হাতে নিয়ে শিশুরা ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে। আর বড়রা দলবদ্ধ হয়ে ভবিষ্যৎ
কর্মপরিকল্পনা কি হবে তা নিয়ে আলোচনায় মশগুল। বেশির ভাগ শিশুর হাতে ভারতের
তিন রঙের পতাকা। কয়েকজনের হাতে রয়েছে ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয়
কমিটির (বিবিইইসিসি) পতাকা। এ পতাকাটিও তিন রঙের। শুধু এতে নেই অশোক চক্র।
আর বাম দিকে রয়েছে লাল রঙের লম্বা একটি ডোরা। তাদের অভিপ্রায় স্পষ্ট।
পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার বাংলাদেশী ছিটমহলবাসীরা স্বাধীনতার পর থেকে যে
দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়েছেন তা সত্ত্বেও তারা ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ
করতে চান। এদের বেশিরভাগ হিন্দি ভাষা ব্যবহার করেন না। করলে হয়তো বলতেন,
আচ্ছে দিন আনে ওয়ালে হ্যায় (ভালো দিন আসছে)।
সরকার এবং বিবিইইসিসি পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, ছিটমহলবাসী বিনিময় শুরু হলে, বাংলাদেশী ছিটমহলগুলোর ১৪ হাজার নিবাসীর কেউই ভারত ছাড়তে চাইবে না। অবশ্য ভারতীয় ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থিত। সেখান থেকে প্রায় ১৭০০ অধিবাসী ভারতে আসতে চায়। জরিপের এ পরিসংখ্যান নিয়ে সম্মত নন অনেকে। তাদের বিশ্বাস ভারতে নিবন্ধিত ১৪ হাজার এবং বাংলাদেশে নিবন্ধিত ৩৭ হাজারের থেকে ছিটমহলবাসীর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। বাংলাদেশ থেকে ১৭০০ জন ভারতে যাবে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে, সে সংখ্যা ১৭ হাজার হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
তাহলে বিনিময় প্রক্রিয়াটা কতটা নির্ঝঞ্ঝাট হবে? নাকি পশ্চিমবঙ্গ আরেক দেশভাগের মতো অভিজ্ঞতার দিকে তাকিয়ে আছে। পোয়াতুনকুটির মতো বাংলাদেশী ছিটমহল রয়েছে, যেখানকার অধিবাসীরা প্রধানত মুসলিম। কিন্তু তাদের ভারত ছাড়ার কোন অভিপ্রায় নেই। বাকলিছড়া ছিটমহলের নিকটে সরকার প্রায় ১০০ বিঘা ভূমির ওপর জরিপ চালাচ্ছে। বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলের যে নিবাসীরা সীমানা পেরিয়ে আসবেন এখানে তাদের বসতির ব্যবস্থা করা হতে পারে।
পোয়াতুরকুটির এক নিবাসী বলেন, কেউই তাদের বাসাবাড়ি ছাড়তে চায় না, যেখানে তারা কয়েক প্রজন্ম ধরে বাস করে আসছে। মানুষ যদি ভারতীয় ছিটমহল থেকে তাদের বাড়ি ছাড়ে তাহলে সেটার কারণ হবে যে, তারা বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে কোন ভবিষ্যৎ দেখেন না। অথবা তারা এটা করবে দমন পীড়নের আশঙ্কায়। আমাদের ছিটমহলের বেশির ভাগই ভারত ছাড়তে চায় না। কারণ দেশটি যে নিরাপত্তা দিতে পারে সে জন্য। এমন উৎকণ্ঠা রয়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে যেসব হিন্দু সীমান্ত পার করে ভারতে যাবেন তাদের ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হবে যে তারা ধর্মের কারণে পীড়নের শিকার হয়েছেন। ছিটমহলবাসী হিসেবে আমরা যদি ভারতে যাই তাহলে ধরে নেয়া হয় যে ধর্মের ভিত্তিতে কখনও পীড়নের শিকার হইনি। কিন্তু বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহল থেকে যদি কোন হিন্দু বাংলাদেশে থেকে যান তাহলে তাদেরকে সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ বাংলাদেশী ছিটমহলগুলো হবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারেন তারা। ফলে ওইসব হিন্দু ভারতেই থাকতে চাইবেন।
বিবিইইসিসি নেতা অরুণ রায় বালাপুকুরি ছিটমহলের বাসিন্দা। তিনি ও অন্য নেতারা অবশ্য বলছেন, তাদের সংগঠন সব কিছু ঠিকঠাক হিসাব নিকাশ করে রেখেছে। তারা আত্মবিশ্বাসী যে, বাংলাদেশী ছিটমহলগুলো ভারতীয় সম্পত্তি হয়ে যাওয়ার পর যেসব ছিটমহলবাসীর বৈধ কাগজপত্র নেই তাদের জমি পেতে কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না। চাকরির খোঁজে ছিটমহল থেকে যারা অবৈধভাবে অন্যান্য ভারতীয় রাজ্যগুলোতে পাড়ি জমিয়েছে তাদেরকে ইতিমধ্যে বর্জন করা শুরু করেছে গ্রামের বেশিরভাগ নেতারা।
বাকালিছড়ার গোবিন্দ বর্মন বলেন, ‘ওই লোকজনের সঙ্গে কি করা হবে সে সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। আমরা মাথা ঘামাবো কেন? যেসব মানুষ আমাদের ৪১ বছরের সংগ্রামকে তোয়াক্কা না করে ছিটমহল ছেড়ে গেছে তারা আমাদের লক্ষ্যের জন্য এক রুপিও অবদান রাখেনি। বরং তারা সবসময়ই বলেছে যে, আমাদের সংগ্রাম কোন ফল বয়ে আনবে না।’
পুরো প্রক্রিয়ার অনেক কিছুই এখনও স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে সম্পদের অধিকারের বিষয়টি। বাংলাদেশী ছিটমহলবাসীরা আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে জমি হস্তান্তর করবে। আর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত সম্পদ তারা পাবে। পোয়াতুরকুটি’র আসগর আলি বলেন, ‘এরপর সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। তবে নিবাসীদের যখনই পরিবারের কারো বিয়ে বা চিকিৎসার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়েছে তখনই তারা নিজেদের মধ্যে সম্পদ হস্তান্তর অব্যাহত রেখেছে। আমাদের বিশ্বাস যখন সময় আসবে কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের কথা বিশ্বাস করবে এবং সেই মোতাবেক জমি নিবন্ধন করবে।’ মোঙ্গলিবাড়ির নিবাসীরা ততটা নিশ্চিত নয় এ বিষয়ে। বাংলাদেশী অপরাধীদের অভিযান তাদেরকে নিজ ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ করেছে। তারা অবস্থান নিয়েছে ভারতে পার্শ্ববর্তী একটি তিন বিঘা জমিতে। তাদের ওই জমির কোন কাগজপত্র নেই। তারা উদ্বিগ্ন যে তাদের বসবাসের স্থানে সরকার ভারতীয় ছিটমহল নিবাসীদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারে।
লেখক: জয়ন্ত গুপ্ত ও পিনাক প্রিয় ভট্টাচার্য, ১৭ই মে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টের অনুবাদ
সরকার এবং বিবিইইসিসি পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, ছিটমহলবাসী বিনিময় শুরু হলে, বাংলাদেশী ছিটমহলগুলোর ১৪ হাজার নিবাসীর কেউই ভারত ছাড়তে চাইবে না। অবশ্য ভারতীয় ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থিত। সেখান থেকে প্রায় ১৭০০ অধিবাসী ভারতে আসতে চায়। জরিপের এ পরিসংখ্যান নিয়ে সম্মত নন অনেকে। তাদের বিশ্বাস ভারতে নিবন্ধিত ১৪ হাজার এবং বাংলাদেশে নিবন্ধিত ৩৭ হাজারের থেকে ছিটমহলবাসীর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। বাংলাদেশ থেকে ১৭০০ জন ভারতে যাবে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে, সে সংখ্যা ১৭ হাজার হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
তাহলে বিনিময় প্রক্রিয়াটা কতটা নির্ঝঞ্ঝাট হবে? নাকি পশ্চিমবঙ্গ আরেক দেশভাগের মতো অভিজ্ঞতার দিকে তাকিয়ে আছে। পোয়াতুনকুটির মতো বাংলাদেশী ছিটমহল রয়েছে, যেখানকার অধিবাসীরা প্রধানত মুসলিম। কিন্তু তাদের ভারত ছাড়ার কোন অভিপ্রায় নেই। বাকলিছড়া ছিটমহলের নিকটে সরকার প্রায় ১০০ বিঘা ভূমির ওপর জরিপ চালাচ্ছে। বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলের যে নিবাসীরা সীমানা পেরিয়ে আসবেন এখানে তাদের বসতির ব্যবস্থা করা হতে পারে।
পোয়াতুরকুটির এক নিবাসী বলেন, কেউই তাদের বাসাবাড়ি ছাড়তে চায় না, যেখানে তারা কয়েক প্রজন্ম ধরে বাস করে আসছে। মানুষ যদি ভারতীয় ছিটমহল থেকে তাদের বাড়ি ছাড়ে তাহলে সেটার কারণ হবে যে, তারা বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে কোন ভবিষ্যৎ দেখেন না। অথবা তারা এটা করবে দমন পীড়নের আশঙ্কায়। আমাদের ছিটমহলের বেশির ভাগই ভারত ছাড়তে চায় না। কারণ দেশটি যে নিরাপত্তা দিতে পারে সে জন্য। এমন উৎকণ্ঠা রয়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে যেসব হিন্দু সীমান্ত পার করে ভারতে যাবেন তাদের ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হবে যে তারা ধর্মের কারণে পীড়নের শিকার হয়েছেন। ছিটমহলবাসী হিসেবে আমরা যদি ভারতে যাই তাহলে ধরে নেয়া হয় যে ধর্মের ভিত্তিতে কখনও পীড়নের শিকার হইনি। কিন্তু বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহল থেকে যদি কোন হিন্দু বাংলাদেশে থেকে যান তাহলে তাদেরকে সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ বাংলাদেশী ছিটমহলগুলো হবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারেন তারা। ফলে ওইসব হিন্দু ভারতেই থাকতে চাইবেন।
বিবিইইসিসি নেতা অরুণ রায় বালাপুকুরি ছিটমহলের বাসিন্দা। তিনি ও অন্য নেতারা অবশ্য বলছেন, তাদের সংগঠন সব কিছু ঠিকঠাক হিসাব নিকাশ করে রেখেছে। তারা আত্মবিশ্বাসী যে, বাংলাদেশী ছিটমহলগুলো ভারতীয় সম্পত্তি হয়ে যাওয়ার পর যেসব ছিটমহলবাসীর বৈধ কাগজপত্র নেই তাদের জমি পেতে কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না। চাকরির খোঁজে ছিটমহল থেকে যারা অবৈধভাবে অন্যান্য ভারতীয় রাজ্যগুলোতে পাড়ি জমিয়েছে তাদেরকে ইতিমধ্যে বর্জন করা শুরু করেছে গ্রামের বেশিরভাগ নেতারা।
বাকালিছড়ার গোবিন্দ বর্মন বলেন, ‘ওই লোকজনের সঙ্গে কি করা হবে সে সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। আমরা মাথা ঘামাবো কেন? যেসব মানুষ আমাদের ৪১ বছরের সংগ্রামকে তোয়াক্কা না করে ছিটমহল ছেড়ে গেছে তারা আমাদের লক্ষ্যের জন্য এক রুপিও অবদান রাখেনি। বরং তারা সবসময়ই বলেছে যে, আমাদের সংগ্রাম কোন ফল বয়ে আনবে না।’
পুরো প্রক্রিয়ার অনেক কিছুই এখনও স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে সম্পদের অধিকারের বিষয়টি। বাংলাদেশী ছিটমহলবাসীরা আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে জমি হস্তান্তর করবে। আর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত সম্পদ তারা পাবে। পোয়াতুরকুটি’র আসগর আলি বলেন, ‘এরপর সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। তবে নিবাসীদের যখনই পরিবারের কারো বিয়ে বা চিকিৎসার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়েছে তখনই তারা নিজেদের মধ্যে সম্পদ হস্তান্তর অব্যাহত রেখেছে। আমাদের বিশ্বাস যখন সময় আসবে কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের কথা বিশ্বাস করবে এবং সেই মোতাবেক জমি নিবন্ধন করবে।’ মোঙ্গলিবাড়ির নিবাসীরা ততটা নিশ্চিত নয় এ বিষয়ে। বাংলাদেশী অপরাধীদের অভিযান তাদেরকে নিজ ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ করেছে। তারা অবস্থান নিয়েছে ভারতে পার্শ্ববর্তী একটি তিন বিঘা জমিতে। তাদের ওই জমির কোন কাগজপত্র নেই। তারা উদ্বিগ্ন যে তাদের বসবাসের স্থানে সরকার ভারতীয় ছিটমহল নিবাসীদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারে।
লেখক: জয়ন্ত গুপ্ত ও পিনাক প্রিয় ভট্টাচার্য, ১৭ই মে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টের অনুবাদ
No comments