নামেই সরকারি স্পর্শকাতর স্থাপনা, বিটিসিএলের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে ফুটপাত দখল by আনোয়ার হোসেন
গুলিস্তানের
রমনা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কম্পাউন্ড প্রথম শ্রেণির সরকারি স্পর্শকাতর
স্থাপনা (কেপিআই-১)। এর ৬০ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে
অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু সেখানকার সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে ফুটপাতের মধ্যে ২০১৩
সালের জুনে প্রকাশ্যে প্রায় ৫০টি দোকান গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সেগুলো উচ্ছেদও করে। কিন্তু এখন ওই ফুটপাতে রীতিমতো পাকা ঘর করে চলছে দোকানদারি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কী নেই—বিরিয়ানির দোকান, সেলুন, ফলের দোকান, স্টেশনারি। সবই গড়ে উঠেছে সীমানাপ্রাচীরের দেয়াল ঘেঁষে। ইটের দেয়াল দেওয়া প্রতিটি দোকান আলাদা করা হয়েছে। ওপরে দেওয়া হয়েছে সিমেন্টের ছাউনি। স্থায়ী দোকানের পাশাপাশি ফুটপাতের ওপর আছে অস্থায়ী দোকানও। ফুটপাতের এই অংশে হাঁটার কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। ফলে বাধ্য হয়ে পথচারীদের সড়ক ধরে হাঁটতে হচ্ছে।
দোকানিরা জানান, প্রতিটি দোকান থেকে প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত এককালীন (জামানত) নিয়েছে। মাসে মাসে ভাড়া দিতে হয়। বিটিসিএল ভবনের উত্তর-পূর্ব কোনায় একটি ফটক আছে। সেটির ঠিক মুখে ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। এখন ওই ফটকটি পুরোপুরিই বন্ধ।
সিটি করপোরেশন, দোকানদার ও বিটিসিএল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে দোকান নির্মাণের পেছনে রয়েছে যুবলীগ দক্ষিণের প্রভাবশালী একটি দল। এখান থেকে পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের লোকজনও মাসোহারা পান।
সর্বশেষ ২২ মার্চও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চিঠি দিয়ে উচ্ছেদের আকুতি জানিয়েছে বিটিসিএল। এর আগেও কয়েক ডজন চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, টিঅ্যান্ডটি কার্যালয়ের পাশে একবার উচ্ছেদের পর উচ্চ আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা এনেছেন দোকান নির্মাণকারীরা। এ জন্য পুনরায় উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। অন্য স্থানগুলোতে তাঁরা উচ্ছেদ অভিযান চালান নিয়মিত। কিন্তু পরক্ষণেই আবার দখল হয়ে যাচ্ছে।
২০১২ সালের মার্চে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাত মুক্ত করার বিষয়ে রিট করা হয়। এ বিষয়ে রুলও জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর আদালতের পৃথক বেঞ্চে হকার্স ফেডারেশনও রিট করে। আদালত হকারদের পুনর্বাসনের রুল দেন। কিন্তু ফুটপাত দখলমুক্ত কিংবা হকারদের পুনর্বাসন—কোনোটাই হয়নি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, উচ্ছেদ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় হকাররা বসে যায়। গত ৫ জানুয়ারি থেকে অবরোধ-হরতাল শুরু হলে সিটি করপোরেশন কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালায়নি। কারণ, এ সময় পুলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র আরও জানায়, হকার সমিতিগুলো নির্বিঘ্নে দোকান করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার এবং পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। সিটি করপোরেশনও ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ফুটপাত আছে। আর ২০১৩ সালে ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের গবেষক মারুফ রহমানের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকার ৪৪ শতাংশ সড়কে ফুটপাত নেই। আর বাকি যে ৫৬ শতাংশ অংশে ফুটপাত আছে, তার কোথাও ৫০ শতাংশ এবং কোথাও ২০ শতাংশ হকারদের দখলে। রাজধানীর গুলিস্তান, ফার্মগেট ও নিউমার্কেট এলাকায় সমীক্ষা চালান তিনি।
সমীক্ষা অনুসারে, যেখানে ফুটপাত আছে, তার ৮২ শতাংশ উঁচু-নিচু, ভাঙাচোরা কিংবা চলাচলের জন্য মসৃণ নয়।
সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও হকার সমিতি—কারও কাছেই ঢাকার হকারের প্রকৃত সংখ্যা নেই। তবে এই তিন সংস্থার আনুমানিক হিসাব যোগ করলে ভাসমান, স্থায়ী ও অলিগলি মিলে হকারের সংখ্যা ১০ লাখের কম নয়। এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ কোনো না কোনো সমিতির সদস্য।
সূত্র জানায়, রাজধানীর ফুটপাত ও সড়ক মিলে প্রায় ২০০ হকার স্পট বা স্থান আছে। এগুলোর প্রতিটির জন্য একজন করে লাইনম্যান রয়েছেন। নির্দিষ্ট এলাকার চাঁদা আদায় করেন লাইনম্যান। প্রতিটি লাইনম্যানের নির্ধারিত এলাকাকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফুট’ হিসেবে। কয়েকটি ‘ফুটের’ দায়িত্ব থাকেন একজন ‘সর্দার’। সর্দারই মূলত চাঁদার ভাগ রাজনৈতিক প্রভাবশালী, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের যাদের যাদের দেওয়া দরকার, তা দেন।
আলাপ করে জানা গেছে, রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ২৫টি ফুট রয়েছে। প্রতিটি ফুট থেকে আকার ও স্থানভেদে দৈনিক ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হয়। সরকার পরিবর্তন হলে সর্দার ও লাইনম্যানও পরিবর্তন হয়। বর্তমানে সবচেয়ে দাম বেশি ফুট হচ্ছে গুলিস্তান, মতিঝিল, নিউমার্কেট এলাকা এবং শান্তিনগর বাজারের সামনে।
ঢাকায় হকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় গুলিস্তান, সদরঘাট, বঙ্গবাজার ও ধানমন্ডি এলাকায় একাধিক মার্কেট করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত হকাররা পুনর্বাসিত হয়নি।
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, বড় বড় মার্কেট হলেও হকাররা পুনর্বাসিত হয় না। অসাধু পুলিশ ও মাস্তানদের চাঁদা দিয়ে হকারদের আয় থাকে না। তাই তাদেরকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সেগুলো উচ্ছেদও করে। কিন্তু এখন ওই ফুটপাতে রীতিমতো পাকা ঘর করে চলছে দোকানদারি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কী নেই—বিরিয়ানির দোকান, সেলুন, ফলের দোকান, স্টেশনারি। সবই গড়ে উঠেছে সীমানাপ্রাচীরের দেয়াল ঘেঁষে। ইটের দেয়াল দেওয়া প্রতিটি দোকান আলাদা করা হয়েছে। ওপরে দেওয়া হয়েছে সিমেন্টের ছাউনি। স্থায়ী দোকানের পাশাপাশি ফুটপাতের ওপর আছে অস্থায়ী দোকানও। ফুটপাতের এই অংশে হাঁটার কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। ফলে বাধ্য হয়ে পথচারীদের সড়ক ধরে হাঁটতে হচ্ছে।
দোকানিরা জানান, প্রতিটি দোকান থেকে প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত এককালীন (জামানত) নিয়েছে। মাসে মাসে ভাড়া দিতে হয়। বিটিসিএল ভবনের উত্তর-পূর্ব কোনায় একটি ফটক আছে। সেটির ঠিক মুখে ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে। এখন ওই ফটকটি পুরোপুরিই বন্ধ।
সিটি করপোরেশন, দোকানদার ও বিটিসিএল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে দোকান নির্মাণের পেছনে রয়েছে যুবলীগ দক্ষিণের প্রভাবশালী একটি দল। এখান থেকে পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের লোকজনও মাসোহারা পান।
সর্বশেষ ২২ মার্চও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চিঠি দিয়ে উচ্ছেদের আকুতি জানিয়েছে বিটিসিএল। এর আগেও কয়েক ডজন চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, টিঅ্যান্ডটি কার্যালয়ের পাশে একবার উচ্ছেদের পর উচ্চ আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা এনেছেন দোকান নির্মাণকারীরা। এ জন্য পুনরায় উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। অন্য স্থানগুলোতে তাঁরা উচ্ছেদ অভিযান চালান নিয়মিত। কিন্তু পরক্ষণেই আবার দখল হয়ে যাচ্ছে।
২০১২ সালের মার্চে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাত মুক্ত করার বিষয়ে রিট করা হয়। এ বিষয়ে রুলও জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর আদালতের পৃথক বেঞ্চে হকার্স ফেডারেশনও রিট করে। আদালত হকারদের পুনর্বাসনের রুল দেন। কিন্তু ফুটপাত দখলমুক্ত কিংবা হকারদের পুনর্বাসন—কোনোটাই হয়নি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, উচ্ছেদ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় হকাররা বসে যায়। গত ৫ জানুয়ারি থেকে অবরোধ-হরতাল শুরু হলে সিটি করপোরেশন কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালায়নি। কারণ, এ সময় পুলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র আরও জানায়, হকার সমিতিগুলো নির্বিঘ্নে দোকান করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার এবং পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। সিটি করপোরেশনও ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ফুটপাত আছে। আর ২০১৩ সালে ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের গবেষক মারুফ রহমানের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকার ৪৪ শতাংশ সড়কে ফুটপাত নেই। আর বাকি যে ৫৬ শতাংশ অংশে ফুটপাত আছে, তার কোথাও ৫০ শতাংশ এবং কোথাও ২০ শতাংশ হকারদের দখলে। রাজধানীর গুলিস্তান, ফার্মগেট ও নিউমার্কেট এলাকায় সমীক্ষা চালান তিনি।
সমীক্ষা অনুসারে, যেখানে ফুটপাত আছে, তার ৮২ শতাংশ উঁচু-নিচু, ভাঙাচোরা কিংবা চলাচলের জন্য মসৃণ নয়।
সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও হকার সমিতি—কারও কাছেই ঢাকার হকারের প্রকৃত সংখ্যা নেই। তবে এই তিন সংস্থার আনুমানিক হিসাব যোগ করলে ভাসমান, স্থায়ী ও অলিগলি মিলে হকারের সংখ্যা ১০ লাখের কম নয়। এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ কোনো না কোনো সমিতির সদস্য।
সূত্র জানায়, রাজধানীর ফুটপাত ও সড়ক মিলে প্রায় ২০০ হকার স্পট বা স্থান আছে। এগুলোর প্রতিটির জন্য একজন করে লাইনম্যান রয়েছেন। নির্দিষ্ট এলাকার চাঁদা আদায় করেন লাইনম্যান। প্রতিটি লাইনম্যানের নির্ধারিত এলাকাকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফুট’ হিসেবে। কয়েকটি ‘ফুটের’ দায়িত্ব থাকেন একজন ‘সর্দার’। সর্দারই মূলত চাঁদার ভাগ রাজনৈতিক প্রভাবশালী, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের যাদের যাদের দেওয়া দরকার, তা দেন।
আলাপ করে জানা গেছে, রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ২৫টি ফুট রয়েছে। প্রতিটি ফুট থেকে আকার ও স্থানভেদে দৈনিক ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হয়। সরকার পরিবর্তন হলে সর্দার ও লাইনম্যানও পরিবর্তন হয়। বর্তমানে সবচেয়ে দাম বেশি ফুট হচ্ছে গুলিস্তান, মতিঝিল, নিউমার্কেট এলাকা এবং শান্তিনগর বাজারের সামনে।
ঢাকায় হকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় গুলিস্তান, সদরঘাট, বঙ্গবাজার ও ধানমন্ডি এলাকায় একাধিক মার্কেট করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত হকাররা পুনর্বাসিত হয়নি।
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, বড় বড় মার্কেট হলেও হকাররা পুনর্বাসিত হয় না। অসাধু পুলিশ ও মাস্তানদের চাঁদা দিয়ে হকারদের আয় থাকে না। তাই তাদেরকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া উচিত।
No comments