ব্যালটের বিচার by সাজেদুল হক

বাংলাদেশে ভোটের ইতিহাস মোটা দাগে দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে কলঙ্কজনক, গায়েবি ভোট। অন্যদিকে, ভোটের উৎসব। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন কেমন হয়েছে তা সবারই জানা। এ নির্বাচনের কারণে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসাইনের মতো অনেকের মনেই প্রশ্ন ভিড় করেছে জীবদ্দশায় তারা আর নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কি-না? পিএসসির এই সাবেক চেয়ারম্যান তার শঙ্কার কথা খোলাখুলি বলেছেনও। অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশে আদৌ আর হবে কি-না সে প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ২৮শে এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের সামনে দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর সুযোগ আসছে। যদিও দুই সিটির তিন করপোরেশনের বাসিন্দারা শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন কি-না তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গেছে। এ নির্বাচনে আশা ও নিরাশার দুটি চিত্রই দেখা যাচ্ছে। আশার কথা হলো সব দল সমর্থিত প্রার্থীরাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু যাদের নিয়ে নির্বাচন, সে ভোটারদের মধ্যে এখন পর্যন্ত তেমন কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। কোথাও কোন উৎসবের আমেজ নেই। নির্বাচন যেন শুধু মিডিয়াতেই। এরই মধ্যে মাননীয় এক মন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিচার করবে। মন্ত্রী মহোদয়কে ধন্যবাদ দিতেই হয়, তিনি ব্যালটের বিচারের কথা বলেছেন। গণতান্ত্রিক দুনিয়ায় মুক্ত মানুষের বিরোধ নিষ্পত্তির সবচেয়ে বড় মাধ্যম ব্যালট। কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অতীতে সে ব্যালটকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গণতন্ত্র দরকার নেই, উন্নয়নই আসল। কিন্তু এরই মধ্যে সরকারি দলের নেতা ব্যালটের সীমাহীন ক্ষমতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে সামগ্রিকভাবে দেশের জনগণ এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে একমাত্র জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমেই। এবং জনগণ যদি সেটার সুযোগ পায় কেবল তখনই ব্যালটের মাধম্যে বিচার সম্ভব।
বিএনপির সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কৌশলগত দিক থেকে এ নির্বাচনে বিএনপি ভুল পথে হাঁটছে। চট্টগ্রামের বেলায় হয়তো এ কথা পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ সেখানকার বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সরব রয়েছেন। তাদের নেতৃত্বেই পরিচালিত হচ্ছে বিএনপির ভোটের ক্যাম্পেইন। কিন্তু ঢাকায় এক্ষেত্রে বিএনপি ভুল পথে হাঁটছে। যদিও গতকাল দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু নির্বাচন পরিচালিত হচ্ছে পেশাজীবীদের নেতৃত্বে। তাদের বিদ্যা-বুদ্ধি নিয়ে সংশয় না থাকলেও রাজনীতিতে কোন পরীক্ষাতেই ইতিপূর্বে তারা অংশ নেননি। রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত। এ নির্বাচনে প্রার্থী ইমেজ নয়, কেবলমাত্র রাজনীতিই বিএনপির সহজ জয় নিশ্চিত করতে পারে। সিটি নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির ইস্যু যত বেশি প্রাধান্য পাবে, ততই বিএনপির লাভ। আওয়ামী লীগ ও দলটির শীর্ষ নেতারা এরই মধ্যে নির্বাচনটিকে জাতীয় রাজনীতির রূপ দিয়েছেন। অথচ বিএনপি হাঁটছে উল্টোপথে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নারীদের প্রতি যে বর্বর আচরণ করা হয়েছে তা নিয়ে ধিক্কার উঠেছে চারদিকে। কিন্তু এ ধিক্কারের লক্ষ্যমাত্রা ভিন্ন। একই দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের সাময়িক বহিষ্কার করেছে।  ছাত্রলীগও অভিযুক্ত ৫ নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও একই ধরনের ঘটনায় এক ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এই যৌন নিপীড়কদের শাস্তি যেন কেবল সাময়িক বহিষ্কার। কয় দিন পরেই তারা আবার ফিরে আসবেন সদর্পে। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন সন্ত্রাসীরা চিহ্নিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সংঘটিত অপরাধের হোতারা এখনও চিহ্নিত হননি। পুলিশের বক্তব্যেও আশার কোন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এত বড় একটা ঘটনায় যাদের অবহেলা প্রমাণিত, তারা কি করছেন?
সাজেদুল হক
১৮ই এপ্রিল, ২০১৫
ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.