সৌভাগ্যবতী নীলা by সিরাজুস সালেকিন
সত্যিই
তিনি ভাগ্যবতী। নির্বাচনের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। দুই সপ্তাহ আগে
নির্বাচনী ময়দান থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। কিন্তু দমে যাননি। আপিলের পর আপিল
করে তিনি হেসেছেন বিজয়ের হাসি। উচ্চ আদালত থেকে তাকে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা
করার পর গতকাল প্রতীক পেয়ে পুরোদমে মাঠে নেমেছেন। তিনি আর কেউ নন। ঢাকা
উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী
আসমাত আরা জাহান চৌধুরী নীলা। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তার মনোনয়নপত্র গ্রহণ
করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার শাহ আলম। রোববার
মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে ওই প্রার্থীকে প্রতীক দিয়েছেন তিনি। পিঞ্জর
প্রতীক পেয়ে প্রচারণায় নেমেছেন নীলা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন
রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা যায়, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে সময় গত ১লা
এপ্রিল নীলার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। তার সমর্থনকারী সংশ্লিষ্ট এলাকার
ভোটার না হওয়ায় রিটার্নিং অফিসার এ সিদ্ধান্ত দেন। সিদ্ধান্তে লিখিতভাবে
রিটার্নিং অফিসারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমি স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন)
নির্বাচন বিধিমালা ২০১০-এর বিধি ১৪-এর বিধান অনুসারে এই মনোনয়নপত্রটি
পরীক্ষান্তে বাতিল করিলাম।’ এ ক্ষেত্রে কারণ উল্লেখ করা হয়, ‘মনোনয়নপত্রটি
যাচাই করা হলো। যাচাই অন্তে দেখা যায় যে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন
নির্বাচনে ০৫ নম্বর সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী
জনাবা আসমাত আরা চৌ., স্বামী মো. সামসুল হক চৌ. বাড়ী নং-ক/৬৮, চারআনী পাড়া,
পো: মিরপুর, থানা: মিরপুর, ঢাকা-এর মনোনয়ন পত্রে সমর্থনকারী মো. লুৎফর
রহমান (ভোটার নম্বর-২৬১০১১৯২৩৩৬৮) সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার নয়। স্থানীয়
সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০এর বিধি ১২ এর উপবিধি (২) এর
দফা (ক) অনুসারে উপরে উল্লিখিত জনাব আসমাত আরা জাহান চৌ.-এর মনোনয়নপত্র
বাতিল করা হলো। ওই দিন রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল
কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন নীলা। আবেদনের শুনানি হয় ৪ঠা এপ্রিল ঢাকা
বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান আবেদনের শুনানি করেন। সেখানেও মনোনয়নপত্র
বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। এ সময় নীলা সাংবাদিকদের জানান, তার
সমর্থনকারী সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার না হওয়ায় তার আবেদনপত্র বাতিল করা হয়।
তবে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন তিনি। এরপর বিভাগীয় কমিশনারের সিদ্ধান্তের
বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন নীলা। এতে ঢাকা উত্তর সিটির
রিটার্নিং অফিসার, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার ও
পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও
বিচারপতি মুস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চে এ রিট শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত
১৬ই এপ্রিল আদালত নীলার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে তা গ্রহণের জন্য আদেশ
দেন। এ রায়ের কপি বিবাদীদের হাতে পৌঁছার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের
নির্দেশ দেয়া হয়। ৭২ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা
উত্তর সিটির রিটার্নিং অফিসার শাহ আলম নীলার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন।
নীলার জন্য ৫ নম্বর সংরক্ষিত আসনে পিঞ্জর প্রতীক বরাদ্দ করেন তিনি। এ
প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, আমরা উচ্চ আদালতের আদেশ মানতে বাধ্য।
নির্বাচনের দুদিন আগেও কেউ যদি এরকম আদেশ নিয়ে আমাদের কাছে আসেন তবে আমরা
তা গ্রহণ করব। প্রতীক পেয়ে অত্যন্ত খুশি নীলা। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়
থেকে বের হয়ে তিনি বলেন, আমার নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আর কোন বাধা থাকল না।
ভোট সুষ্ঠু হলে আশা করি আমি জিতব।
No comments