শোকের শহর মংলা by রাশিদুল ইসলাম ও একে আজাদ
প্রায়
২৪ ঘণ্টা পর মংলায় সেনাকল্যাণ সংস্থার ধসে পড়া ভবনের উদ্ধারকাজ সমাপ্ত
ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুরে সেনাকল্যাণ সংস্থার ভারপ্রাপ্ত
চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সেলিম আনুষ্ঠানিকভাবে এর সমাপ্তি
ঘোষণা করেন। এ দুর্ঘটনায় কতজন শ্রমিক নিখোঁজ এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা
পড়েছিল তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা। তবে এখনও ২০ থেকে ২৫ জন
শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন উদ্ধার হওয়া শ্রমিকরা। নিহতদের
প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের ৫ হাজার টাকা করে দেয়া
হয়েছে বলে জানিয়েছে মংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলী প্রিন্স।
এছাড়া নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে প্রদানের কথা জানিয়েছেন
কর্তৃপক্ষ। এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয়
কমিশনার ফারুক হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ
কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘সেনাকল্যাণ সংস্থার পরিচালিত এলিফ্যান্ট ব্র্র্যান্ড’ সিমেন্ট কারখানার নির্মাণাধীন ওই মিলিং হাউজের ছাদ ধসে পড়ে এবং রাতেই ধ্বংসস্তূপ থেকে ৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়। যাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা গ্রামের আমীর আকুঞ্জী, একই উপজেলার রাজনগর গ্রামের আবদুল লতিফ শেখের ছেলে ফারুখ শেখ, একই গ্রামের মারুফ হাওলাদার, একই উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ, খুলনা মহানগরীর নিরালা বাগমারা হাজীপাড়ার বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে আল আমিন, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার লাঙ্গলধারা গ্রামের বাসিন্দা শামসুর রহমানের ছেলে বাকীবিল্লাহ ও সিরাজুল ইসলাম। ঘটনার পর থেকে মংলা পরিণত হয়েছে শোকের শহরে।
টানা ২৪ ঘণ্টার উদ্ধার তৎপরতা শেষে শুক্রবার দুপুর ১ টায় উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেছে সেনাকল্যাণ সংস্থা। সংস্থার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সেলিম এক প্রেসব্রিফিংয়ে বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে যে ভেতরে কোন মরদেহ নেই।
নির্মাণ শ্রমিক মিজান মল্লিক বলেন, ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক এখনও নিখোঁজ রয়েছে। তার দাবির সঙ্গে আংশিক একমত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের খুলনা ও বরিশাল জোনের উপ-পরিচালক মো. শেখ মিজানুর রহমান গতকাল সকালে বলেন, খুলনা, বাগেরহাট, মংলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ৭টি ইউনিট উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও দু’-একটি লাশ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিন সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্থানীয় এমপি তালুকদার আবদুল খালেক। উদ্ধার কাজের তদারকি শেষে তিনি এ দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন। একই সঙ্গে হতাহতদের পরিবারের পাশে থাকার কথাও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাকল্যাণ সংস্থার মালিকানায় ১৯৯৪ সালে পশুর নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলিফ্যান্ট ব্র্যান্ড নামে সিমেন্ট বাজারজাত শুরু করে। কারখানাটি গুদাম নির্মাণে ১৪২ কোটি টাকায় চীনের সিএনবিএম ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেয়। ২০১৪ সালের ১০ই নভেম্বর ভবনটির কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ১০ই নভেম্বর ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীকালে চীনা কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশ আইটিসিএল নামক অপর একটি কোম্পানি এ কাজের সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজ শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে মোট ১৮০ জন শ্রমিক নিয়ে ১৪ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এ ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করে। এদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ জন শ্রমিক ছাদে ছিল এবং অন্যরা ভবনের নিচে কাজ করছিল। দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ৭ জনের মৃতদেহ ও ৪৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত স্বজনদের আর্তনাদ: ভবন ধসে নিহত ও আহতদের স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। একে একে যখন নিহতদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের লাশ শনাক্ত করতে আসেন তখন সবার চোখেমুখে ছিল স্বজন হারানোর বেদনার ছাপ। আহত শ্রমিক শহীদ শেখের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখায় আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আমাদের স্কুলপড়ুয়া ছেলে- মেয়ে আছে। এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এদিকে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার রাজনগর গ্রামের বাসিন্দা নিহত শ্রমিক মাহারুফের বৃদ্ধা মা রহিমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ২৫ দিন আগে এখানে কাজে আসেন মাহারুফ। কাজ শেষে পারিশ্রমিকের টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু তার সন্তান আর বাড়ি ফিরতে পারলো না। নিহতের স্ত্রী খাদিজা বাকরুদ্ধ সন্তানদের জড়িয়ে কান্নারত অবস্থায় বললেন, কে ওদের দেখবে। বাড়ির সামান্য জায়গাটুকু ছাড়া কোন অর্থসম্পদ নেই। কিভাবে কাটবে তাদের দিন। এদিকে বাবাকে হারিয়ে বিলাপ করছে মেয়ে খাদিজা (১৫) ও যমজ দুই ছেলে একরামুল ও হাকিম (৯)। তারা বলছিল, আব্বা তুমি আমাদের এভাবে রেখে চলে গেলে। ঢালাইয়ের কাজ শেষে টাকা নিয়ে বাড়ি আসবে, বাজার নিয়ে আসবে। কিন্তু আজ তুমি আমাদের এভাবে এতিম করে চলে গেলে।
সহায়তা দান: নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এক লাখ টাকা করে সহায়তা দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ফ্যাক্টরির উপ-মহাপরিচালক ক্যাপ্টেন সৈয়দ হেলাল হোসেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে তিনি একথা বলেন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে মংলা বন্দর হাসপাতালে আহতদের খোঁজ নিতে এসে বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক সাংবাদিকদের জানান, এ দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। পাশাপাশি আহতদের প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথামিকভাবে ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘সেনাকল্যাণ সংস্থার পরিচালিত এলিফ্যান্ট ব্র্র্যান্ড’ সিমেন্ট কারখানার নির্মাণাধীন ওই মিলিং হাউজের ছাদ ধসে পড়ে এবং রাতেই ধ্বংসস্তূপ থেকে ৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়। যাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা গ্রামের আমীর আকুঞ্জী, একই উপজেলার রাজনগর গ্রামের আবদুল লতিফ শেখের ছেলে ফারুখ শেখ, একই গ্রামের মারুফ হাওলাদার, একই উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ, খুলনা মহানগরীর নিরালা বাগমারা হাজীপাড়ার বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে আল আমিন, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার লাঙ্গলধারা গ্রামের বাসিন্দা শামসুর রহমানের ছেলে বাকীবিল্লাহ ও সিরাজুল ইসলাম। ঘটনার পর থেকে মংলা পরিণত হয়েছে শোকের শহরে।
টানা ২৪ ঘণ্টার উদ্ধার তৎপরতা শেষে শুক্রবার দুপুর ১ টায় উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেছে সেনাকল্যাণ সংস্থা। সংস্থার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সেলিম এক প্রেসব্রিফিংয়ে বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে যে ভেতরে কোন মরদেহ নেই।
নির্মাণ শ্রমিক মিজান মল্লিক বলেন, ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক এখনও নিখোঁজ রয়েছে। তার দাবির সঙ্গে আংশিক একমত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের খুলনা ও বরিশাল জোনের উপ-পরিচালক মো. শেখ মিজানুর রহমান গতকাল সকালে বলেন, খুলনা, বাগেরহাট, মংলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ৭টি ইউনিট উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও দু’-একটি লাশ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিন সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্থানীয় এমপি তালুকদার আবদুল খালেক। উদ্ধার কাজের তদারকি শেষে তিনি এ দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন। একই সঙ্গে হতাহতদের পরিবারের পাশে থাকার কথাও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাকল্যাণ সংস্থার মালিকানায় ১৯৯৪ সালে পশুর নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলিফ্যান্ট ব্র্যান্ড নামে সিমেন্ট বাজারজাত শুরু করে। কারখানাটি গুদাম নির্মাণে ১৪২ কোটি টাকায় চীনের সিএনবিএম ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেয়। ২০১৪ সালের ১০ই নভেম্বর ভবনটির কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ১০ই নভেম্বর ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীকালে চীনা কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশ আইটিসিএল নামক অপর একটি কোম্পানি এ কাজের সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজ শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে মোট ১৮০ জন শ্রমিক নিয়ে ১৪ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এ ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করে। এদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ জন শ্রমিক ছাদে ছিল এবং অন্যরা ভবনের নিচে কাজ করছিল। দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ৭ জনের মৃতদেহ ও ৪৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত স্বজনদের আর্তনাদ: ভবন ধসে নিহত ও আহতদের স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। একে একে যখন নিহতদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের লাশ শনাক্ত করতে আসেন তখন সবার চোখেমুখে ছিল স্বজন হারানোর বেদনার ছাপ। আহত শ্রমিক শহীদ শেখের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখায় আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আমাদের স্কুলপড়ুয়া ছেলে- মেয়ে আছে। এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এদিকে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার রাজনগর গ্রামের বাসিন্দা নিহত শ্রমিক মাহারুফের বৃদ্ধা মা রহিমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ২৫ দিন আগে এখানে কাজে আসেন মাহারুফ। কাজ শেষে পারিশ্রমিকের টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু তার সন্তান আর বাড়ি ফিরতে পারলো না। নিহতের স্ত্রী খাদিজা বাকরুদ্ধ সন্তানদের জড়িয়ে কান্নারত অবস্থায় বললেন, কে ওদের দেখবে। বাড়ির সামান্য জায়গাটুকু ছাড়া কোন অর্থসম্পদ নেই। কিভাবে কাটবে তাদের দিন। এদিকে বাবাকে হারিয়ে বিলাপ করছে মেয়ে খাদিজা (১৫) ও যমজ দুই ছেলে একরামুল ও হাকিম (৯)। তারা বলছিল, আব্বা তুমি আমাদের এভাবে রেখে চলে গেলে। ঢালাইয়ের কাজ শেষে টাকা নিয়ে বাড়ি আসবে, বাজার নিয়ে আসবে। কিন্তু আজ তুমি আমাদের এভাবে এতিম করে চলে গেলে।
সহায়তা দান: নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এক লাখ টাকা করে সহায়তা দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ফ্যাক্টরির উপ-মহাপরিচালক ক্যাপ্টেন সৈয়দ হেলাল হোসেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে তিনি একথা বলেন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে মংলা বন্দর হাসপাতালে আহতদের খোঁজ নিতে এসে বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক সাংবাদিকদের জানান, এ দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। পাশাপাশি আহতদের প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথামিকভাবে ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।
No comments