দেড় লাখ শিক্ষার্থীর মাথায় হাত by নুর মোহাম্মদ
মমিনুল হক। পিপলস ইউভার্সিটির মালিবাগ শাখা থেকে ইসলামিক স্টাডিজের ৭ম সেমিস্টার শেষ করলেও এখন তার পড়াশোনা বন্ধ। সম্প্রতি এই ক্যাম্পাসকে অবৈধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এতেই বিপত্তি। সাড়ে তিন বছর লেখাপড়া করার পর তার গতি থেমে গেছে। কারণ ক্যাম্পাস বন্ধ। এখন কি করবেন মমিনুল? মাত্র একটি সেমিস্টারের জন্য তিনি অনার্স শেষ করতে পারেননি। এমনকি পিপলসের মূল ক্যাম্পাসও তাকে নিতে রাজি হচ্ছে না। দীর্ঘদিন কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারে দ্বারে চেষ্টা করেও ভর্তি হতে পারেননি। কোন কূল-কিনারা না পেয়ে ইউজিসির শরণাপন্ন হন তিনি । সেখানেও কোন সমাধান পায়নি। তাহলে কি তার জীবন থেকে সাড়ে তিন বছর নষ্ট হয়ে যাবে? ফের অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তার পড়ালেখা এগিয়ে নিতে হবে? কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। শুধু মমিনুলই নন, এমন ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮টি ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কমপক্ষে দেড় লাখ শিক্ষার্থী এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব ক্যাম্পাস পড়াশোনা করে কোথাও ত্রেুডিট ট্রান্সফার বা মাস্টার্সে পর্যন্ত ভর্তি হতে পারছেন না অনেকে। বর্তমানে দারুল ইহসান ও প্রাইম, অতীশ দীপংকরসহ কালো তালিকাভুক্ত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি করে বারের পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারছেন না। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকভুক্ত করে রাখায় চরম বিপাকে সার্টিফিকেটধারীরা। ফলে অনেক কষ্টে অর্জিত সার্টিফিকেট এখন তাদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউজিসির তথ্যনুযায়ী, গত বছর ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮টি অবৈধ আউটার ক্যাম্পাসে এসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন সেমিস্টারে অধ্যয়নত। এসব ক্যাম্পাস অবৈধ হওয়ায় সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি ও শিক্ষা কার্যত্রুম বন্ধ করে দিয়েছে ইউজিসি। সংস্থাটির হিসেবে অবৈধ ক্যাম্পাস ৪৮টি হলেও বাস্তবে এ সংখ্যার দেড়শ’র বেশি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, সারা দেশে দারুল ইহসান একাই ৯১টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান ড. একে আজাদ চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, অবৈধভাবে চলা এসব ক্যাম্পাসকে আর পরিচালনা করতে দিতে পারি না। বন্ধ হওয়ায় এসব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা যদি ত্রেুডিট ট্রান্সফার করে মিরিট কোন ক্যাম্পাসে যেতে পারে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যারা এসব শিক্ষার্থীদের নেবে তাদের ব্যাপারে নির্দেশনা হলো যাচাই-বাছাই করে নিতে। ভুক্তভোগী এসব শিক্ষার্থী যাচাই-বাছাই করে এসব ক্যাম্পাসে ভর্তি হলো না কেন? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তার পরও তাদের জন্য ত্রেুডিট ট্রান্সফার করার অপশন ওপেন রেখেছি। কিন্তু কেউ যদি না নেয় তাহলে সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।
এসব ক্যাম্পাসে কি পরিমাণ ছাত্র পড়াশোনা করছে এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান দিতে পারেননি তিনি। বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্যাম্পাস চালাচ্ছে তাদের কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তারাও কখনও দেয়নি।
ইউজিসির সূত্রমতে, বর্তমানে ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১১৬টি শাখার সরকার ও ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ১১টিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানার দ্বন্দ্ব এবং অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনার মাধ্যমে সনদ-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেসরকারি ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮টি ক্যাম্পাসে ভর্তিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। যেসব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাদের ঠিকানাও প্রকাশ করেছিল ইউজিসি।
ইউজিসির এই নির্দেশনার পর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আউটার ক্যাম্পার বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বিপাকে পড়ে সেখানে অধ্যয়রত প্রায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। এসব ক্যাম্পাসে সঠিক পড়াশোনা হয়নি এসব অভিযোগের তারা ত্রেুডিট ট্রান্সফার করতে পারছে না কোথায়। বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থী এসব ক্যাম্পাস শাখা পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই অবস্থায় ইউজিসি বলছে, এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। যারা ভুক্তভোগীদের তাদেরকে এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
বেসরকারি শাখার উপ-পরিচালক জেসমিন আক্তার মানবজমিনকে বলেন, এসব ক্যাম্পাসের ব্যাপারে বক্তব্য স্পষ্ট। সেখানে অধ্যয়রত শিক্ষার্থীরা যদি কোথাও ত্রেুডিট ট্রান্সফার করতে পারে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু কেউ তাদের না নিলে এখানে আমাদের কিছু করার নেই। ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি মামলা-মোকদ্দমা করে সেটি তাকে নিজেই বহন করতে হবে।
ইউজিসির কর্মকর্তা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী অনুমোদিত ক্যাম্পাসের বাইরে কোন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন বা পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই। অথচ এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সারা দেশে শ’ শ’ অবৈধ ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষার নামে সনদ বাণিজ্য করছে। অনুমোদনহীন এসব ক্যাম্পাসে নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা, নিয়মিত পাঠদান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন উপযুক্ত পরিবেশও নেই। উচ্চতর শিক্ষার পরিবর্তে প্রদান করা হচ্ছে অবৈধ সার্টিফিকেট। চলছে বেআইনি ও মানহীন শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে দেশের অসংখ্য নিরীহ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ক্ষুণ্ন হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি। খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বাণিজ্যের এমন চিত্র।
সম্প্রতি সারা দেশের ৩৬টি জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯১টি অবৈধ ক্যাম্পাস দ্রুত বন্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠির সঙ্গে অবৈধ ক্যাম্পাস ও পরিচালনাকারীর নাম-ঠিকানাও পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব অবৈধ ক্যাম্পাস উচ্ছেদ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইউজিসির তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, পিপলস ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব চিটাগাং (আইআইইউসি) এই ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধভাবে আউটার ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এই এর আগে ৪ঠা আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রাইম ইউনিভার্সিটির ৫টি অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধে চিঠি দেয়া হয়। যদিও এসব ক্যাম্পাস বর্তমানে বন্ধ হয়েছে। কিন্তু সেখানে অধ্যয়রত প্রায় ৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী চরম বিপাকে পড়েছে। ভিন্ন মালিকানার কারণে এসব শিক্ষার্থীদের নিচ্ছে মূল প্রাইম শাখা। একই চিঠিতে বন্ধ করা হয়েছে পিপলসের উত্তরা, মালিবাগসহ ৩টি ক্যাম্পাস। সেখানে ৫ হাজারের বেশি ছাত্র, এশিয়ান বন্ধ করেছে মতিঝিলের অবৈধ শাখা। সেখানেও ৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ছিল। ইউজিসির নির্দেশনার পরও আউটার ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যত্রুম পরিচালনা করছে দারুল ইহসান, ইবাইস, অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান, সাউর্দান, নর্দান, বিজিবি ট্রাস্ট ও আইআইইউসি। বর্তমানে এসব আউটার ক্যাম্পাসে ২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়রত। এসব ক্যাম্পাসে কত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি ইউজিসি। সংস্থাটির বেসরকারি শাখার একজন উপ-পরিচালক বলেন, যাদের ক্যাম্পাসই অবৈধ তাদের শিক্ষার্থীও তো অবৈধ। তাই তাদের কোন পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। তবে সেখানে নতুন করে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে না বলেও তিনি জানান।
এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছর ২৬শে জুন অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনার করছে এরকম ১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠায়। এই ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা ও অন্যান্য জটিলতাও রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি অবৈধ ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কেউ কেউ উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে চালাচ্ছে এই সনদ বাণিজ্য। অবৈধভাবে পরিচালিত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি না হওয়ার পরামর্শ দেয় ইউজিসি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলে এক ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আসন সংখ্যার কোন সঙ্কট নেই। তাই ইউজিসির ওয়েবসাইট দেখে ও খোঁজখবর নিয়েই শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার পরামর্শ ছিল ইউজিসি’র।
ইউজিসির তথ্যনুযায়ী, গত বছর ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮টি অবৈধ আউটার ক্যাম্পাসে এসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন সেমিস্টারে অধ্যয়নত। এসব ক্যাম্পাস অবৈধ হওয়ায় সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি ও শিক্ষা কার্যত্রুম বন্ধ করে দিয়েছে ইউজিসি। সংস্থাটির হিসেবে অবৈধ ক্যাম্পাস ৪৮টি হলেও বাস্তবে এ সংখ্যার দেড়শ’র বেশি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, সারা দেশে দারুল ইহসান একাই ৯১টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান ড. একে আজাদ চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, অবৈধভাবে চলা এসব ক্যাম্পাসকে আর পরিচালনা করতে দিতে পারি না। বন্ধ হওয়ায় এসব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা যদি ত্রেুডিট ট্রান্সফার করে মিরিট কোন ক্যাম্পাসে যেতে পারে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যারা এসব শিক্ষার্থীদের নেবে তাদের ব্যাপারে নির্দেশনা হলো যাচাই-বাছাই করে নিতে। ভুক্তভোগী এসব শিক্ষার্থী যাচাই-বাছাই করে এসব ক্যাম্পাসে ভর্তি হলো না কেন? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তার পরও তাদের জন্য ত্রেুডিট ট্রান্সফার করার অপশন ওপেন রেখেছি। কিন্তু কেউ যদি না নেয় তাহলে সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।
এসব ক্যাম্পাসে কি পরিমাণ ছাত্র পড়াশোনা করছে এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান দিতে পারেননি তিনি। বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্যাম্পাস চালাচ্ছে তাদের কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তারাও কখনও দেয়নি।
ইউজিসির সূত্রমতে, বর্তমানে ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১১৬টি শাখার সরকার ও ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ১১টিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানার দ্বন্দ্ব এবং অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনার মাধ্যমে সনদ-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেসরকারি ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮টি ক্যাম্পাসে ভর্তিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। যেসব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাদের ঠিকানাও প্রকাশ করেছিল ইউজিসি।
ইউজিসির এই নির্দেশনার পর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আউটার ক্যাম্পার বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বিপাকে পড়ে সেখানে অধ্যয়রত প্রায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। এসব ক্যাম্পাসে সঠিক পড়াশোনা হয়নি এসব অভিযোগের তারা ত্রেুডিট ট্রান্সফার করতে পারছে না কোথায়। বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থী এসব ক্যাম্পাস শাখা পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই অবস্থায় ইউজিসি বলছে, এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। যারা ভুক্তভোগীদের তাদেরকে এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
বেসরকারি শাখার উপ-পরিচালক জেসমিন আক্তার মানবজমিনকে বলেন, এসব ক্যাম্পাসের ব্যাপারে বক্তব্য স্পষ্ট। সেখানে অধ্যয়রত শিক্ষার্থীরা যদি কোথাও ত্রেুডিট ট্রান্সফার করতে পারে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু কেউ তাদের না নিলে এখানে আমাদের কিছু করার নেই। ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি মামলা-মোকদ্দমা করে সেটি তাকে নিজেই বহন করতে হবে।
ইউজিসির কর্মকর্তা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী অনুমোদিত ক্যাম্পাসের বাইরে কোন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন বা পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই। অথচ এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সারা দেশে শ’ শ’ অবৈধ ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষার নামে সনদ বাণিজ্য করছে। অনুমোদনহীন এসব ক্যাম্পাসে নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা, নিয়মিত পাঠদান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন উপযুক্ত পরিবেশও নেই। উচ্চতর শিক্ষার পরিবর্তে প্রদান করা হচ্ছে অবৈধ সার্টিফিকেট। চলছে বেআইনি ও মানহীন শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে দেশের অসংখ্য নিরীহ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ক্ষুণ্ন হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি। খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বাণিজ্যের এমন চিত্র।
সম্প্রতি সারা দেশের ৩৬টি জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯১টি অবৈধ ক্যাম্পাস দ্রুত বন্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠির সঙ্গে অবৈধ ক্যাম্পাস ও পরিচালনাকারীর নাম-ঠিকানাও পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব অবৈধ ক্যাম্পাস উচ্ছেদ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইউজিসির তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, পিপলস ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব চিটাগাং (আইআইইউসি) এই ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধভাবে আউটার ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এই এর আগে ৪ঠা আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রাইম ইউনিভার্সিটির ৫টি অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধে চিঠি দেয়া হয়। যদিও এসব ক্যাম্পাস বর্তমানে বন্ধ হয়েছে। কিন্তু সেখানে অধ্যয়রত প্রায় ৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী চরম বিপাকে পড়েছে। ভিন্ন মালিকানার কারণে এসব শিক্ষার্থীদের নিচ্ছে মূল প্রাইম শাখা। একই চিঠিতে বন্ধ করা হয়েছে পিপলসের উত্তরা, মালিবাগসহ ৩টি ক্যাম্পাস। সেখানে ৫ হাজারের বেশি ছাত্র, এশিয়ান বন্ধ করেছে মতিঝিলের অবৈধ শাখা। সেখানেও ৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ছিল। ইউজিসির নির্দেশনার পরও আউটার ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যত্রুম পরিচালনা করছে দারুল ইহসান, ইবাইস, অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান, সাউর্দান, নর্দান, বিজিবি ট্রাস্ট ও আইআইইউসি। বর্তমানে এসব আউটার ক্যাম্পাসে ২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়রত। এসব ক্যাম্পাসে কত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি ইউজিসি। সংস্থাটির বেসরকারি শাখার একজন উপ-পরিচালক বলেন, যাদের ক্যাম্পাসই অবৈধ তাদের শিক্ষার্থীও তো অবৈধ। তাই তাদের কোন পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। তবে সেখানে নতুন করে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে না বলেও তিনি জানান।
এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছর ২৬শে জুন অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনার করছে এরকম ১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠায়। এই ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা ও অন্যান্য জটিলতাও রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি অবৈধ ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কেউ কেউ উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে চালাচ্ছে এই সনদ বাণিজ্য। অবৈধভাবে পরিচালিত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি না হওয়ার পরামর্শ দেয় ইউজিসি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলে এক ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আসন সংখ্যার কোন সঙ্কট নেই। তাই ইউজিসির ওয়েবসাইট দেখে ও খোঁজখবর নিয়েই শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার পরামর্শ ছিল ইউজিসি’র।
No comments