প্রথা ভেঙে হোলি উৎসবে ভারতীয় বিধবারা
ভারতে
এবার প্রথা ভেঙে হোলি উৎসবে যোগ দিলেন বিধবা নারীরা। কয়েক শতাব্দীর পুরনো
ওই প্রথা অনুযায়ী হোলি উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারেন না বিধবা নারীরা। কিন্তু
এবার ভারতের বৃন্দাবনের অনেক বিধবা নারী অংশ নিলেন হোলি উৎসবে, গায়ে রঙ
ছড়ালেন একে অপরের। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা। ওই বিধবা নারীদের একজন ৯০ বছর
বয়সী টুকনি দেবী। তিনি গত ৬৬ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম হোলি উৎসবে অংশ
নিলেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে বিধবা হন টুকনি দেবী। এরপরই নিজের পরিবারের কাছ
থেকে বিতাড়িত হয়ে ভারতের বারানসির বৃন্দাবনে একটি আশ্রমে বসবাস করতে শুরু
করেন। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে বিধবা নারীদের পশুর চেয়েও খারাপ চোখে দেখা
হয়। আমার পরিবারের কাছ থেকে আমি বিতাড়িত। সমাজ মনে করে, আমরা তাদের সঙ্গে
বসবাস করার উপযুক্ত নই, কেননা আমরা আমাদের স্বামীকে হারিয়েছি। তার মৃত্যুর
পর আমি কোন উৎসবই উদযাপন করিনি। পুরো ভারতে উদযাপিত হয় হোলি উৎসব। রঙের
উৎসব বলেও এটি পরিচিত। তবে রক্ষণশীল প্রথা অনুযায়ী, বিধবা নারীরা এ উৎসবে
অংশ নিতে পারবেন না। বিভিন্ন রঙের গুড়া ছিটিয়ে একে অপরের মুখে লাগিয়ে দেয়া
হয় এ উৎসবে। এ থেকেও বঞ্চিত থাকেন বিধবা নারীরা। এদের পরিস্থিতি মূল সমাজের
সামনে উপস্থাপন করা ও তাদেরকে সামাজিক কলঙ্কের হাত থেকে রক্ষা করতে, সুলভ
ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি এনজিও বারানসি ও বৃন্দাবনে বসবাসরত বিধবাদের
জন্য তিনদিনের হোলি উৎসবের আয়োজন করে। ভারতের উত্তর প্রদেশে এ দুই পবিত্র
শহর অবস্থিত। প্রায়ই এ দু’ শহরকে বিধবাদের শহর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
যেসব নারীর স্বামী মারা যাওয়ায় সমাজ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন তাদের অনেকের
ঠাঁই হয় এখানকার বিভিন্ন আশ্রমে। সুলভ ইন্টারন্যাশনালের ভাইস প্রেসিডেন্ট
বিনীতা বর্মা বলেন, ২০১১ সালে বৃন্দাবন ও বারানসিতে যেসব বিধবা বসবাস করেন,
তাদের দুরাবস্থা সমপর্কে সুপ্রিম কোর্টের একটি চিঠি পাই আমরা। তারা
ক্ষুধায় খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন, এমনকি দিনে একবারের খাবার জোগাড় করতেও তাদের
জন্য কঠিন হয়ে যেত। তাদের পরিস্থিতি প্রাণীদের চেয়েও কঠিন ছিল। আমরা তাদের
জন্য দিনে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা শুরু করি। এছাড়া আর্থিক সহায়তাও
প্রদান করি। তাদের জন্য হোলি উৎসব আয়োজনের মতো কর্মকাণ্ড তাদের অবস্থার
উন্নতির জন্য করা হয়েছে। আমরা সমাজের বহু রক্ষণশীল ব্যক্তির কাছ থেকে বাধার
সম্মুখীন হয়েছি। তবে আমরা হাল ছেড়ে দেব না। ঐতিহ্যগতভাবে তারা কেবল সাদা
শাড়ি পরার অনুমতি পান। তারা সৌন্দর্য চর্চাও করতে পারেন না। কিন্তু এ উৎসবে
তারা রঙ নিয়ে উৎসবে মেতেছেন, রঙবেরঙের পোশাক পরেছেন। তাদের অনেকে সৌন্দর্য
চর্চাও করেছেন। বৃন্দাবনের পাগলবাবা বিধবা আশ্রমে অনুষ্ঠিত ওই বিশেষ হোলি
উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন হাজারেরও অধিক বিধবা। সুলভ ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ওই
উৎসবে ১৪০০ কেজিরও বেশি ফুলের পাপড়ি ও ১০০০ কেজি রঙের গুড়া ব্যবহৃত হয়েছে।
৩৮ বছর বয়সী এক বিধবা অন্নপূর্না শর্মা জানান, আশ্রমে জীবন অনেক কঠিন। আমি
আমার আশ্রমে সবচেয়ে কনিষ্ঠ। তিন বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছি। এখন সব ধরনের
পার্থিব ইচ্ছা বিসর্জন ও মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করার কথা আমাদের। আমি এক
আশাহীন জীবনযাপন করছি বহুদিন ধরে, কেননা আমার বহুদিন বাঁচতে হতে পারে। তবে এ
উৎসব আমাকে আশা জুগিয়েছে। আমি এতটা খুশিী কখনও হইনি। ওই উৎসবে ৩৭ বছর বয়সী
আরেক বিধবা অংশ নিয়েছিলেন। তার বক্তব্যেও ছিল উচ্ছ্বাস ও আনন্দের
প্রতিচ্ছবি। তিনি জানান, আমার ইচ্ছা, পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন এ
উৎসবে অংশ নিতে পারবো আমি।
No comments