সংবিধানের আলোকেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব by মোস্তফা হোসেন
বর্তমানে
দেশে কী পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে
মনে করি না। কারণ, সামগ্রিক অবস্থাটি সবারই জানা। তবুও সংক্ষেপে বলতে হয়,
দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যার যার কঠোর অবস্থানে অনড় আছে। আওয়ামী
লীগের বক্তব্য হচ্ছে, সংবিধান মোতাবেক জনগণের ভোটে নির্বাচিত বর্তমান সরকার
পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকবে। অতএব, পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে অর্থাৎ ২০১৯ সালে
জাতীয় সংসদের পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তার একদিন আগেও নয় এবং ওই
নির্বাচনও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকারের অধীনেই হবে। দেশে মধ্যবর্তী
নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই আসে না। বিএনপি ৫ জানুয়ারি ২০১৪ নির্বাচনে
অংশগ্রহণ না করে যে ভুল করেছে, তার খেসারত তাদেরই দিতে হবে। বিএনপিকে আগামী
২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
পক্ষান্তরে বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে, জনমত উপেক্ষা করে ১৫তম সংশোধনী এনে সংবিধানকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় থেকে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ক্ষমতায় থাকার পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থা মেনে নেয়া যায় না। অতএব, দেশে অবিলম্বে দলনিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে।
২০১৪ সালব্যাপী চুপচাপ থাকার পর এ বছরের অর্থাৎ ২০১৫ সালের শুরু থেকেই বিএনপি উপরোক্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেছে। বলা বাহুল্য, বিএনপি জোটের এ আন্দোলন বর্তমানে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ, হরতাল ইত্যাদির মারফত জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক রূপ পরিগ্রহ করেছে। অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি এবং সম্পদের সীমাহীন ধ্বংসসাধন, জাতীয় অর্থনীতিতে ধস নামাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা জীবন বিপর্যস্ত হওয়া, গার্মেন্ট সেক্টরে অচলাবস্থা সৃষ্টিসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ রাজনৈতিক/সাংবিধানিক সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের জনগণ উৎকণ্ঠিত ও শংকাগ্রস্ত।
পর্যবেক্ষক মহল গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বলেছে, যদি বিদ্যমান সমস্যা সমাধানকল্পে দুই প্রধান দলের মধ্যে কোনো সমঝোতা-মীমাংসা না হয় তবে আগামীতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে; তখন তৃতীয় শক্তির আগমনের আশংকাও ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ পুনরায় ০১/১১-এর আবির্ভাবের কথাও বলেছেন।
এছাড়া, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের কথা বলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সব দলের অংশগ্রহণের দ্বারা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে আসছে বারবার। কিন্তু এতদসত্ত্বেও দুই প্রধান দল ও জোটের মধ্যে মতপার্থক্য দূর তো হচ্ছেই না বরং সার্বিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটছে যা উভয় দলের নেতা-নেত্রীদের প্রায় প্রতিদিনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এছাড়া আমাদের জন্য যে নবতম ভয়াবহ বার্তা তৈরি হয়েছে সম্প্রতি, তা হচ্ছে বাংলাদেশসহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উত্থান এবং এর ক্রম বিস্তার লাভ। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় আল কায়দার বর্তমান প্রধান আল-জাওয়াহিরি ভারতীয় উপমহাদেশে আল কায়দার নতুন শাখা খোলার কথা ঘোষণা করেছেন এবং এতদাঞ্চলে তাদের সংগঠনের কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছেন। যার কিছু কিছু আলামত ইতিমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সিরিয়া এবং ইরাকে আরেক জঙ্গি সংগঠন আইএস কী রকম ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তা প্রায় প্রতিদিনই প্রচার মাধ্যমের দ্বারা জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশে এসব জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করার কিছু কিছু আলামতের কথাও আমরা জানতে পারছি আমাদের প্রচার মাধ্যমে। কয়েকদিন আগে আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৪ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে দেশে। আল কায়দা জঙ্গিগোষ্ঠী উপমহাদেশের বর্তমান সীমানা মুছে দিয়ে বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিম বাংলা, অখণ্ড আসামের অঞ্চল এবং মিয়ানমারের পশ্চিমাংশ অর্থাৎ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত আরাকান অঞ্চল ইত্যাদি এলাকার সমন্বয়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে এবং সেই মর্মে কাজ করার সংকল্প ব্যক্ত করেছে। এছাড়া ঢাকাস্থ পাকিস্তানি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা অনেকদিন ধরে আমাদের দেশের জঙ্গিগোষ্ঠীকে আর্থিক ও অন্যান্য রকমের সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে আসছে বলে গোয়েন্দারা তথ্য দিয়েছেন। এ অবস্থায় শুধু পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার ইত্যাদি দিয়ে দেশে সক্রিয় ও ক্রমবিস্তার লাভকারী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমন করা যাবে না। এ সন্ত্রাসবাদ দমন করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে যা দরকার, তা হচ্ছে দেশে বিরাজমান সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা, যা একমাত্র জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সম্ভব।
উপরোক্ত সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক/সাংবিধানিক সংকট নিরসনকল্পে উভয় দল ও জোটের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তুলে ধরতে চাই। আমি মনে করি সংকট উত্তরণের জন্য সংলাপ কিংবা পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের প্রয়োজন নেই। বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সংসদে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করলেই সেই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা পাবে বলে মনে করি।
মোস্তফা হোসেন : আইনজীবী
পক্ষান্তরে বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে, জনমত উপেক্ষা করে ১৫তম সংশোধনী এনে সংবিধানকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় থেকে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ক্ষমতায় থাকার পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থা মেনে নেয়া যায় না। অতএব, দেশে অবিলম্বে দলনিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে।
২০১৪ সালব্যাপী চুপচাপ থাকার পর এ বছরের অর্থাৎ ২০১৫ সালের শুরু থেকেই বিএনপি উপরোক্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেছে। বলা বাহুল্য, বিএনপি জোটের এ আন্দোলন বর্তমানে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ, হরতাল ইত্যাদির মারফত জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক রূপ পরিগ্রহ করেছে। অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি এবং সম্পদের সীমাহীন ধ্বংসসাধন, জাতীয় অর্থনীতিতে ধস নামাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা জীবন বিপর্যস্ত হওয়া, গার্মেন্ট সেক্টরে অচলাবস্থা সৃষ্টিসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ রাজনৈতিক/সাংবিধানিক সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের জনগণ উৎকণ্ঠিত ও শংকাগ্রস্ত।
পর্যবেক্ষক মহল গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বলেছে, যদি বিদ্যমান সমস্যা সমাধানকল্পে দুই প্রধান দলের মধ্যে কোনো সমঝোতা-মীমাংসা না হয় তবে আগামীতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে; তখন তৃতীয় শক্তির আগমনের আশংকাও ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ পুনরায় ০১/১১-এর আবির্ভাবের কথাও বলেছেন।
এছাড়া, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের কথা বলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সব দলের অংশগ্রহণের দ্বারা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে আসছে বারবার। কিন্তু এতদসত্ত্বেও দুই প্রধান দল ও জোটের মধ্যে মতপার্থক্য দূর তো হচ্ছেই না বরং সার্বিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটছে যা উভয় দলের নেতা-নেত্রীদের প্রায় প্রতিদিনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এছাড়া আমাদের জন্য যে নবতম ভয়াবহ বার্তা তৈরি হয়েছে সম্প্রতি, তা হচ্ছে বাংলাদেশসহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উত্থান এবং এর ক্রম বিস্তার লাভ। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় আল কায়দার বর্তমান প্রধান আল-জাওয়াহিরি ভারতীয় উপমহাদেশে আল কায়দার নতুন শাখা খোলার কথা ঘোষণা করেছেন এবং এতদাঞ্চলে তাদের সংগঠনের কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছেন। যার কিছু কিছু আলামত ইতিমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সিরিয়া এবং ইরাকে আরেক জঙ্গি সংগঠন আইএস কী রকম ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তা প্রায় প্রতিদিনই প্রচার মাধ্যমের দ্বারা জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশে এসব জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করার কিছু কিছু আলামতের কথাও আমরা জানতে পারছি আমাদের প্রচার মাধ্যমে। কয়েকদিন আগে আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৪ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে দেশে। আল কায়দা জঙ্গিগোষ্ঠী উপমহাদেশের বর্তমান সীমানা মুছে দিয়ে বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিম বাংলা, অখণ্ড আসামের অঞ্চল এবং মিয়ানমারের পশ্চিমাংশ অর্থাৎ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত আরাকান অঞ্চল ইত্যাদি এলাকার সমন্বয়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে এবং সেই মর্মে কাজ করার সংকল্প ব্যক্ত করেছে। এছাড়া ঢাকাস্থ পাকিস্তানি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা অনেকদিন ধরে আমাদের দেশের জঙ্গিগোষ্ঠীকে আর্থিক ও অন্যান্য রকমের সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে আসছে বলে গোয়েন্দারা তথ্য দিয়েছেন। এ অবস্থায় শুধু পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার ইত্যাদি দিয়ে দেশে সক্রিয় ও ক্রমবিস্তার লাভকারী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমন করা যাবে না। এ সন্ত্রাসবাদ দমন করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে যা দরকার, তা হচ্ছে দেশে বিরাজমান সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা, যা একমাত্র জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সম্ভব।
উপরোক্ত সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক/সাংবিধানিক সংকট নিরসনকল্পে উভয় দল ও জোটের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তুলে ধরতে চাই। আমি মনে করি সংকট উত্তরণের জন্য সংলাপ কিংবা পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের প্রয়োজন নেই। বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সংসদে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করলেই সেই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা পাবে বলে মনে করি।
মোস্তফা হোসেন : আইনজীবী
No comments